প্রবন্ধ
শরীয়তের দৃষ্টিতে ফেসবুক ব্যবহার
সামাজিক যোগাযোগের অতি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল জগতে আগমন ঘটেছিল ফেসবুকের। কিন্তু ইতোমধ্যে ফেসবুক তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীকে মাদকাসক্তের ন্যায় নেশাগ্রস্ত করে দিয়েছে। সময়ের অপচয়, আড্ডাবাজি, অশ্লীল পত্রালাপ, বেগানা ছেলে-মেয়ের ছবি আদান-প্রদান, বিনা কারণে প্রাণীর ফটো আপলোড করা এবং নাজায়েয প্রেম নিবেদনসহ যাবতীয় অনৈতিক ও অহেতুক কাজে লিপ্ত করা এখন এর বড় অবদান। বখাটে চরিত্র, বিভ্রান্ত চিন্তাধারা প্রকাশের এক অতি সহজ মাধ্যম এ ফেসবুক। এর বিষাক্ত ছোবলে অসংখ্য তরুণ- তরুণীর ভবিষ্যত বিপন্ন হতে চলেছে। পরকীয়ায় আসক্তির মাধ্যমে সংসার ভাঙ্গতে শুরু করেছে বহু দম্পতির। অশ্লীল কিংবা পরপুরুষ ও পরনারীর ছবি দেখা ছাড়া অহেতুক সময়ের অপচয় বাদ দিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা যখন শতকরা একজনও নয় তখন ইসলামী শরীয়া মতে ফেসবুক ও এ জাতীয় যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার জায়েয হতে পারে না। কারণ এতে উপকারের তুলনায় অপকার অনেক বেশি এবং হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার রয়েছে পরিপূর্ণ ঝুকি। বৈধ যতটুকু ব্যবহার সম্ভব তার জন্য রয়েছে এর চেয়ে নিরাপদ বিকল্প। এ অবস্থায় শরীয়তের কোনো মূলনীতিই যোগাযোগের এ মাধ্যম ব্যবহারের বৈধতা দান করে না ।
কারো কারো ধারণায় বৈধ উপায়ে ফেসবুক ব্যবহার করে অতি সহজে অসংখ্য লোকের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছানো যায়। তাদের ধারণা সঠিক হলে দীনের দাওয়াত পৌঁছানোর অজুহাতে বর্তমান টেলিভিশনকে ফেসবুকের চেয়েও অধিক কার্যকর মাধ্যম হিসেবে স্বীকার করতে হয়। অথচ বিবেক ঠিক থাকলে কেউ এমনটা বলতে পারবে না। আজ পর্যন্ত কোন হক্কানী আলেম বা মুফতী টিভির মাধ্যমে দীন প্রচারকে জায়েয ফতওয়া দেননি।
কারো কারো দাবী, ফেসবুক ব্যবহার করলে নাস্তিক-বদমায়েশদের হাত দিয়ে যে মল-মূত্র নির্গত হয় সে সম্পর্কে অবগত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়। তাদের এ দাবী গ্রহণযোগ্য হলে কিছু দীনদার লোককে সিনেমা দেখার অনুমতি দিতে হয় (?) কেননা সিনেমার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে বর্তমানে আরো বেশি হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। তার প্রতিরোধে দীনদার কোন লোককে সিনেমা হলে গিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে বা দর্শকদেরকে তিন চিল্লার দাওয়াত দিতে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে? কখনও নয়।
কিছু অবিবেচক ফেসবুকের ব্যবহারকে দৈনিক পত্রিকা পড়ার সাথে তুলনা করতে চেষ্টা করে। অথচ পত্রিকায় যখন-তখন ছবি আপলোড করার সুযোগ নেই। পত্রিকার মাধ্যমে যার তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার সুবিধা নেই। সহজে ফ্রেন্ড সার্কেল তৈরি করে রাত-বিরাতে আড্ডা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা পত্রিকার মূল প্রতিপাদ্য নয়। এতগুলো পার্থক্য থাকাবস্থায় ফেসবুককে দৈনিক পত্রিকার সাথে তুলনা করা মোটেও সঠিক নয়। মোটকথা, লাভ-ক্ষতি উভয়টি একত্রিত হলে শরীয়তের মূলনীতিতে ক্ষতির দিকটি প্রাধান্য পায়। শরয়ী প্রয়োজন না থাকলে গুনাহের ঝুঁকি তৈরি করে এমন বস্তুও পরিত্যাগ করতে হয়। কুরআন-হাদীসে অনুল্লেখিত বিষয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত সর্বসাধারণের ব্যবহারের ভিত্তিতে বৈধ-অবৈধ বিবেচিত হয়। গুনাহের পথ বন্ধ করার স্বার্থে গুনাহের মাধ্যমকেও বন্ধ করা আবশ্যক। শরীয়তের স্পষ্ট এ সকল মূলনীতির আলোকে বর্তমান ফেসবুক ও এ জাতীয় গণমাধ্যমের ব্যবহার নাজায়েয ও হারাম। সুতরাং কোন মুসলমানের জন্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা জায়েয হবে না। আর যারা না জেনে এ যাবত ব্যবহার করেছে তাদের জন্য এ অপশন বন্ধ করে অতীতের জন্য তওবা করা জরুরী। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে গুনাহমুক্ত যিন্দেগী নসীব করেন।
সূত্রসমূহ:
(۱) عن النعمان بن بشير قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن الحلال بين والحرام بين وبينهما مشتبهات لا يعلمهن كثير من الناس فمن اتقى الشبهات فقد استبرأ لدينه وعرضه. ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام كالراعي يرعى حول الحمى يوشك أن يقع ألا وإن لكل ملك حمى ألا وإن حمى الله محارمه (سبل السلام : (۱۳۸۱)
(۲) عن ابن مسعود أنه قال ما اجتمع الحرام والحلال إلا غلب الحرام على الحلال. (سنن البيهقي الكبرى : ١٣٧٤٧ المكتبة الشاملة)
(۳) عن أبي أمامة عن النبي صلى الله عليه وسلم ما من مسلم ينظر إلى محاسن امرأة أول مرة ثم يغض بصره إلا أحدث الله له عبادة يجد حلاوتها. (مسند احمد : ۲۲۳۳۲ [مجمع الزوائد ٦٣ المكتبة الشاملة])
(٤) عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم النظرة سهم مسموم من سهام إبليس من تركها من مخافتي أبدلته أحيانا يجد له حلاوته في قلبه. (كنز العمال : ١٣٠٦٨ المكتبة الشاملة)
(٥) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن من حسن إسلام المرأة تركه ما لا يعنيه. (سنن الترمذي : ۲۳۱۷
(٦) اذا تعارضا مفسدتان روعي اعظمها ضررا بارتكاب اخفها (المجلة : ماده ۲٨)
(۷) واعلم أن ما يتعلق بسد الذرائع ينقسم الى ثلاثة أقسام: (۱) ذرائع أجمع العلماء على سدها وهى الذرائع المؤدبة إلى الفساد والخلل في اعور الدين والدنيا. (المعاملات المالية المعاصرة ١٤/١)
(۸) وضابط منع الذريعة أن تكون فيه شانها الإفضاء إلى المفسدة لا محالة [قطعا] او كثيرا او تكون مفسدة الفعل ارجح مما قد يترتب على الوسيلة من المصلحة. (الفقه الإسلامي ٥٢٥٨/٧)
(۹) الذريعة هي المسألة التي ظاهرها الإباحة ويتوصل بها إلى فعل المحظور.(إرشاد الفحول ۲۸۱/۲)
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
حرمتِ تصویر کی نوعیت
...
ব্যবসা-বাণিজ্য : ইসলামে অনেক বড় একটি নেক আমল
...
টাই এর কথা কুরআনে আছে?
...
করোনার টিকা : শরঈ দৃষ্টিকোণ
...