প্রবন্ধ
সুন্নাতে খাতনা : করণীয়-বর্জনীয়
একটি হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পাঁচটি বিষয় ইসলামের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। তার মধ্যে একটি হল, খাতনা করা। (সুনানে আবূ দাউদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ১/৪৪)
অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, চারটি কাজ সুন্নাতুল আম্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে একটি হল, খাতনা করা। (সুনানে তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ: ৪৪-৪৫)
এ কারণে ফুকাহায়ে কেরাম খাতনাকে শি‘আরে ইসলাম তথা ইসলামের অপরিহার্য নিদর্শন ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। (ফাতাওয়া আলমগীরী ৪/৩৫৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২০৮, আদ্দুররুল মুখতার ৫/২৫৬)
একটি রিওয়ায়াত দ্বারা বোঝা যায়, ৮০ বৎসর বয়সে হযরত ইবরাহীম আ. আল্লাহ তা'আলার নির্দেশে খাতনা করেছেন। (ফাতহুল বারী ১১/৫৩২)
ফলে খাতনাকে সুন্নাতে ইবরাহীমী বলেও আখ্যায়িত করা হয়। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মাদীকে ইবরাহীম আ. এর অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে,
ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا
অর্থ: অতঃপর আমি আপনার প্রতি এ মর্মে নির্দেশ করেছি যে, আপনি একনিষ্ঠভাবে মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণ করুন। (সুরা নাহল- ১২৩)
এছাড়াও ফাতাওয়া শামীতে কয়েকজন নবীর খাতনাকৃত অবস্থায় জন্ম নেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। (ফাতাওয়া শামী ৫/৪২৭)
খাসাইসুল কুবরা নামক গ্রন্থে আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব নবীজীর বাল্যকালে তার খাতনা করান। (ফাতাওয়া শামী ৫/৪২৭,ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ২৮/১৭১)
উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে খাতনা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এবং এটা নবীদের থেকে ধারা পরম্পরায় চলে আসা এমন একটি সুন্নাত, যা পালন না করা হলে গুনাহগার হবে বলে ফুকাহায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। (হাশিয়াতুত ত্বহত্বাবী আলা মারাকিল ফালাহ; পৃষ্টা ৭৮)
এমনকি কোন এলাকার সকল অধিবাসী যদি খাতনার সুন্নাতকে বর্জন করে তাহলে ইমামুল মুসলিমীনের কর্তব্য হল, এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা। (ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ১৬/২৬২) সুতরাং শরয়ী অপারগতা ব্যতিরেকে খাতনার সুন্নাত ছাড়া যাবে না।
খাতনার উপকারিতা
খাতনার মাধ্যমে একজন মুসলিমকে অমুসলিম থেকে আলাদা করা যায়। কারণ, মুসলমান খাতনা করে, অমুসলিম খাতনা করে না। তাই খাতনা না করা হলে অমুসলিমের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি হয়, যা হাদীসের ভাষায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৫৫৯)
খাতনা করার মাধ্যমে ইস্তিঞ্জা থেকে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা উত্তমরূপে অর্জন করা যায়।
খাতনার সময় ও পরিমাণ
অনেক ফকীহর মতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিন থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় খাতনা করানো জায়েয আছে। তবে উত্তম হল, যখন বাচ্চার খাতনার কষ্ট সহ্য করার মত সামর্থ্য হয় তখন তার খাতনা করানো। ফুকাহায়ে কেরাম সন্তানের বয়স ৭ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত সময় খাতনার জন্য উত্তম মুস্তাহাব সময় বলে উল্লেখ করেছেন। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২০৮)
খাতনার ক্ষেত্রে নিয়ম হল, পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ যে চামড়া দিয়ে আবৃত থাকে সে চামড়া পুরোপুরি কেটে ফেলা। যাতে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ পরিপূর্ণ উন্মুক্ত হয়ে যায়। অবশ্য ঐ চামড়া যদি পুরোপুরি না কেটে অধিকাংশ কেটে ফেলা হয়, তবুও খাতনা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি অর্ধেক বা তারও কম পরিমাণ কাটা হয় তাহলে খাতনা হবে না। এক্ষেত্রে পুনরায় খাতনা করতে হবে। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়াআদিল্লাতুহ ১/৩৯৫, ফাতাওয়া রহীমিয়া ৯/১৩৪, ইমদাদুল আহকাম ৪/২৫৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৭ )
নওমুসলিমের জন্য খাতনা
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, খাতনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত ও ইসলামের বিশেষ নিদর্শন। সুতরাং শরয়ী অপারগতা ব্যতীত এ সুন্নাতকে বর্জন করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গুনাহগার হবে। এ কারণে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি খাতনাবিহীন অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকেও খাতনা করাতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী খাতনার উদ্দেশ্যে ডাক্তার বা হাজামের সামনে স্বীয় সতর খুলতে পারবে। যেমনিভাবে অপারেশন বা অন্য কোন চিকিৎসার স্বার্থে ডাক্তারের সামনে সতর খোলা শরীয়তে বৈধ। অবশ্য এক্ষেত্রে ডাক্তার বা হাজামের করণীয় হল, প্রয়োজনাতিরিক্ত সতর না দেখার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। খাতনার জন্য ডাক্তার বা হাজামের মুসলমান হওয়া আবশ্যক নয়। অমুসলিম ডাক্তার দ্বারা খাতনা করাতে পারে। এতে শরয়ী কোন বাধ্যবাধকতা নেই। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ২৮/১৭৩, মিশকাতুল মাসাবীহ: পৃষ্ঠা ৩৬৬)
ওযরের কারণে খাতনা না করা
কোন নওমুসলিম যদি এতই বৃদ্ধ হয় যে, সে খাতনার কষ্ট সহ্য করতে সক্ষম নয় এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ যদি মনে করে যে, উক্ত ওযর বাস্তবসম্মত, তাহলে তার জন্য খাতনা না করানোর অবকাশ আছে। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২০৮)
অনুরূপভাবে কোন বাচ্চার পুরুষাঙ্গ যদি এমন হয় যে, তার অগ্রভাগ সর্বদা বের হয়ে থাকে; দেখলে খাতনাকৃত মনে হয়, অথচ বাস্তবে সে খাতনা করেনি এবং তার পুরুষাঙ্গের চামড়া কাটতে হলে খুব শক্তভাবে টেনে ধরা ছাড়া সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হাজাম বা ডাক্তার যদি তাকে খাতনা করানোর অনুপযোগী মনে করে তাহলে সেই বাচ্চার খাতনা করানোর জন্য পীড়াপীড়ি করার প্রয়োজন নেই। বরং তার খাতনা না করানোর অবকাশ আছে। এমনিভাবে কোন বাচ্চা যদি এমন পাগল হয় যে, তার খাতনা করানো সম্ভব নয়, তাহলে তারও খাতনা না করানোর সুযোগ আছে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৬)
সুন্নাতে খাতনার অনুষ্ঠান
আমাদের দেশের অনেক এলাকায় এ প্রথা আছে যে, বাচ্চাদের খাতনা উপলক্ষে সপ্তম দিন সুন্নাতে খাতনা বা খাতনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ উপলক্ষে কার্ড ছাপিয়ে, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়, দাওয়াত করা হয়। সেখানে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সমাজের বিশিষ্টজনকে দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়ানো হয়। কখনো কখনো এ উদ্দেশ্যে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নেয়া হয় এবং ঐ কমিউনিটি সেন্টারসহ ঘর-বাড়ি নানা রকম সাজে সজ্জিত করা হয়। প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে এ অনুষ্ঠানের হুকুম কি?
এর উত্তর হল, খাতনা উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান করা হয় তা শরীয়তস্বীকৃত নয়। এটা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একদা হযরত উসমান বিন আবিল আস রাযি.-কে খাতনা উপলক্ষে দাওয়াত করা হয়। তিনি সেই দাওয়াত এ কথা বলে প্রতাখ্যান করেন যে,
إنا كنا لا نأتي الختان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا ندعى له
অর্থ: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমরা খাতনাকে কেন্দ্র করে সমবেত হতাম না এবং আমাদেরকে এ উপলক্ষে দাওয়াত দেয়া হত না। (মুসনাদে আহমাদ ৪/ ২১৭)
এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে কাজকে প্রসিদ্ধ করা জরুরী নয়, তার জন্য মানুষকে দাওয়াত করা সুন্নাত পরিপন্থী। (বেহেশতী যেওর ৬/১৫)
মনে রাখা জরুরী, খাতনা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শরীয়ত বিরোধী কোন কার্যকলাপ না পাওয়া গেলেও তা নতুন সংযোজন হিসেবে শরীয়তে অপছন্দনীয় কাজ। তদুপরি বর্তমানে এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে যেসব কবীরা গুনাহ ও গর্হিত কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে এ অনুষ্ঠানকে বৈধ বলা যায় না। বরং তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ প্রথমত এ দাওয়াতের জন্য সপ্তম দিন নির্ধারণ করার পক্ষে কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই। দ্বিতীয়ত, এ উপলক্ষে যে আলোকসজ্জা করা হয় শরীয়তে তা অপচয়ের শামিল। আর অপচয় শরীয়তে জায়েয নেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৭, ফাতাওয়া শামী ২/২৪০) তৃতীয়ত, খাতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কোন দৃষ্টান্ত শরীয়তে নেই, যেমনটি পূর্বে হাদীসের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি খাতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান করাকে সুন্নাত বা ওয়াজিব মনে করে কিংবা কেউ এ অনুষ্ঠান না করলে তাকে তিরস্কার ও ভৎসনা করার ভয়ে এমনটি করে এবং এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে যাতে দাওয়াতে অংশগ্রহণকারী উপহার বা প্রেজেন্টেশন নিয়ে আসতে বাধ্য হয়, তাহলে এ অনুষ্ঠান করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়া উসমানী ১/১০৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৮/১৫৫, ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ১৬/০০০, ফাতওয়া মাহমুদিয়া ২৮/১৭৮)
অবশ্য কেউ যদি নিজ সন্তানের খাতনার ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে স্বেচ্ছায় এ ধরনের অনুষ্ঠান করে এবং তাতে উল্লিখিত শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ না পাওয়া যায়, তাহলে কেউ ইচ্চা করলে শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করে খাওয়াতে পারবে। ( ইমদাদুল মুফতীন ১৬/১১৬)
খাতনা অনুষ্ঠানের উপহার
খাতনার দাওয়াতে আমন্ত্রিত মেহমানদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। তারা স্বেচ্ছায় আসেন না। তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে এনে খাবার খাওয়ানোর পর তাদের থেকে উপহার আদায় করা পরোক্ষভাবে খাবারের প্রতিদান উসুল করার নামান্তর। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা এটা প্রথা হিসেবে বা লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে অথবা সামর্থ্যের বাইরে করে থাকে। অনুরূপভাবে যারা এ ধরনের উপহার না দেয় তাদেরকে তিরস্কার করা হয় কিংবা তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় অথবা সমালোচনা করা হয়। অনেক সময় চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে তাতে উপহারের প্রদর্শনী করা হয়। কে কি উপহার দিল তা লিখে রেখে পরবর্তীতে তা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করা হয়। আর এ সবই শরীয়তে নাজায়েয। কারণ, অধিকাংশ লোকই এ ধরনের উপহার উপরোক্ত সমালোচনা ও তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য থেকে বাঁচার জন্য দিয়ে থাকে; আন্তরিক সন্তুষ্টির জন্য নয়। আর হাদীসে আছে, কারো সম্পদ তার আন্তরিক সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে বৈধ নয়। (সুনানে বাইহাকী, মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৫৫)
সুতরাং উল্লিখিত উপহার আদান- প্রদান শরীয়তে জায়েয নেই। তাই প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, এ সকল কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকা। অবশ্য কোথাও যদি উপহার সামগ্রী লেনদেনের বিষয়টি জরুরী মনে না করা হয় বা সুস্পষ্টভাবে উপহার বা হাদিয়া না দেয়ার কথা বলে দেয়া হয় এবং দাওয়াত দাতাদের মনেও হাদিয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা না থাকে, এতদসত্ত্বেও কেউ বাচ্চাকে মহব্বত করে কোন কিছু উপহার দেয় তাহলে তা নাজায়েয হবে না। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১০/৪৪১, আপকে মাসাইল আওর উনকা হল; পৃষ্ঠা ১১৭, কিতাবুল ফাতাওয়া ৪/১৮১)
খাতনা উপলক্ষে রসম রেওয়াজ
কখনো কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, সে জন্মগতভাবেই কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় কুদরতীভাবে খাতনাকৃত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঐ শিশুকে আল্লাহর খাস বুযুর্গ ভেবে তার নিকট থেকে পানি পড়া নেয়ার জন্য ভীড় লেগে যায়। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। অথচ কোন কোন এলাকায় এমনটি হতে দেখা যায়, যা পরিত্যাজ্য।
কোন কোন এলাকায় ঘাতনার ২১ দিন পর বাচ্চাকে গোসল দেয়ার রেওয়াজ আছে। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। যখন প্রয়োজন হয় তখনই বাচ্চাকে গোসল দেয়া যায়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঠিক করার প্রথা পরিত্যাজ্য। কেউ কেউ মনে করে, খাতনা করা ব্যতীত বিবাহ করালে বিবাহ শুদ্ধ হয় না। এ ধারণা সঠিক নয়; বরং খাতনা ছাড়া বিবাহ করলেও ঐ বিবাহ সহীহ হয়ে যায়। (ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ১৫/৪০১ )
বর্তমানে কথিত অভিজাত শ্রেণী তাদের বাচ্চাদের খাতনা উপলক্ষে কমিউনিটি সেন্টার কিংবা হলরুম ভাড়া করে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে থাকে। এ ধরনের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রায়শই শরীয়ত পরিপন্থী কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে। যেমন, অর্থের অপচয়, গান-বাদ্য, বেপর্দা মহিলানের সমাগম ইত্যাদি। সবচেয়ে আপত্তিকর হচ্ছে, এভাবে কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করার উদ্দেশ্য হয় সাধারণত নাম, যশ ও খ্যাতি অর্জন করা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের থেকে উপহার গ্রহণ করা। অথচ এ সকল উদ্দেশ্যে কোন কাজ করার ব্যাপারে শরীয়তে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ আছে।
এছাড়া এসব অনুষ্ঠান সাধারণত মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয়। কাজেই এরূপ অনুষ্ঠান শরীয়তে জায়েয হতে পারে না। সুতরাং এ ধরনের প্রথাগত দাওয়াতে কোন অবস্থাতেই উপস্থিত হওয়া যাবে না। কারো ঘরে এ অনুষ্ঠানের খাবার পৌঁছে দেয়া হলে ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে তা ফিরিয়ে দিবে। অন্যথায় গ্রহণ করতে পারবে। (ফাতাওয়া রশীদিয়া; পৃষ্ঠা ১৬৩)
অবশ্য খাতনার ঘা শুকানোর পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে যে দাওয়াত করা জায়েয আছে নিজ বাড়িতে তার স্থান সংকুলান না হলে অপারগতার কারণে খাবার পরিবেশনের স্বার্থে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে এ দাওয়াতের আয়োজন করা জায়েয হবে। তবে এর জন্য শর্ত হল, সেখানে উপরে বর্ণিত শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপসহ সকল প্রকার নাজায়েয ও গর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া। (সূরা লুকমান- ১৮, সূরা আ'রাফ- ৩১, সুনানে বাইহাকী ৬/১০০, মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৫৫, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭/৩১৮)
কখনো কখনো খাতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান করাকে এতই জরুরী মনে করা হয় যে, অনুষ্ঠান করার সামর্থ্য হওয়ার অপেক্ষায় খাতনাকে বিলম্ব করা হয় এমনকি বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়, তখন উপস্থিত লোকজন ঐ বাচ্চার সতর দেখে থাকে। অথচ এ অবস্থায় খাতনাকারী ব্যতীত অন্য কারো জন্য সতর দেখা হারাম। আর এর মূলে রয়েছে অনুষ্ঠান করার সামর্থ্যের অপেক্ষায় খাতনাকে বিলম্ব করা। সুতরাং এমনটি করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। ( ইমদাদুল মুফতীন ১/২১)
খাতনা উপলক্ষে শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে বাচ্চাদেরকে উত্তম কাপড় পরিধান করানো জায়েয আছে। কিন্তু কোথাও কোথাও দেখা যায়, এ উপলক্ষে বাচ্চাদেরকে স্বর্ণের চেইন, আংটি পরানো হয়, মাথায় রং- বেরঙের পুতির তৈরি টুপি পরানো হয়। এ উপলক্ষে আতশবাজী, পটকা ইত্যাদি ফাটানো হয়। শরীয়তে এ সব গর্হিত কাজ বলে বিবেচিত। সুতরাং এগুলো থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ১৩/৪৬৩)
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে করণীয়গুলো করার ও বর্জনীয়গুলো বর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ঈমান-আমল সুরক্ষিত রাখতে হক্কানী উলামায়ে কেরামের সঙ্গে থাকুন, অন্যদের সঙ্গ ছাড়ুন
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত] হামদ ও সালাতের পর... قال الله تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتّ...
টুপি পরিধান করার কোন প্রমাণ কি হাদীস বা আছারে সাহাবায় নেই?
...
কাছরাতে যিকির
...