প্রবন্ধ
অর্থহীন আকাঙ্ক্ষা নিষিদ্ধ
এসব কল্পনা অর্থহীন। ইসলামের এসব অর্থহীন কল্পনা পরিহার করতে বলেছেন। তাই মানুষের সাধ্য নেই এমন বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা করা অহেতুক কাজ।
যেসব জিনিস হওয়া অসম্ভব প্রায়, তা নিয়ে কল্পনা-জল্পনা করা নিষিদ্ধ।
যেমন—পুরুষ হয়ে নারী হওয়ার কল্পনা করা কিংবা নারী হয়ে পুরুষ হওয়ার কল্পনা করা এ জাতীয় অসম্ভব কল্পনা ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ।
সাধারণ কোনো পরিবারের সন্তান, দেশের সেরা পরিবারে জন্মগ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা করা বা নিজেকে অত্যন্ত সুশ্রী হওয়ার বাসনা করা—এসব কল্পনাও নিষিদ্ধ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যা দ্বারা আমি তোমাদের কতককে কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তার আকাঙ্ক্ষা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩২)
অর্থাৎ : কতিপয় নারী আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিল, তারা যদি পুরুষ হতো, তবে তারাও জিহাদ ইত্যাদিতে শরিক হয়ে অধিকতর সওয়াব অর্জনে সক্ষম হতো। এ আয়াত মূলনীতি জানিয়ে দিয়েছে যে যেসব বিষয়ে মানুষের কোনো এখতিয়ার নেই, তাতে আল্লাহ তাআলা কারো ওপর কাউকে এক হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, আবার অন্যকে অন্য হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন—যেমন কেউ নর, কেউ নারী; কেউ শক্তিমান, কেউ দুর্বল; আবার কেউ অন্যের তুলনায় বেশি সুন্দর। (কেউ খাটো, দেখতে সুন্দর নয়—এমন লোক সুঠাম সুন্দর হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা বা তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অহেতুক) এসব জিনিস যেহেতু মানুষের এখতিয়ারে নয়, তাই এর আকাঙ্ক্ষা করার দ্বারা অহেতুক দুঃখবোধ ছাড়া কোনো ফায়দা নেই (তা ছাড়া এতে পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়)। সুতরাং এসব জিনিসে তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা চাই। হ্যাঁ, যেসব ভালো জিনিসে মানুষের ইখতিয়ার আছে, তা অর্জনে সচেষ্ট থাকা অবশ্য কর্তব্য। তাতে আল্লাহ তাআলার রীতি হলো, যে ব্যক্তি যেমন কাজ করবে, তার ক্ষেত্রে তেমনই ফল প্রকাশ পাবে। তাতে নর-নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। (তাওজিহুল কোরআন)
তেমনি মৃত্যুর কামনা করা নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা সে পুণ্যবান হলে সম্ভবত, সে পুণ্য বৃদ্ধি করবে। আর পাপী হলে (পাপ থেকে) তাওবা করতে পারবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭২৩৫)
সহিহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে কেউ যেন তার জন্য দোয়া না করে। কারণ সে মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ মুমিনের আয়ু কেবল মঙ্গলই বৃদ্ধি করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৯৫)
অন্যের নিয়ামত শেষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা। এটি হিংসার বহিঃপ্রকাশ। অন্যের ওপর ক্রোধান্বিত হয়ে, হিংসার বশবর্তী হয়ে, তার ওপর আল্লাহ তাআলা যেসব নিয়ামতরাজি দিয়েছেন তা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কামনা করা নিষিদ্ধ।