প্রবন্ধ

অসুস্থতার দিনগুলোতে মুমিনের উপলব্ধি

লেখক:মুফতি জাওয়াদ তাহের
১০ জুন, ২০২৩
৭৭০৫ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি জীবন এবং মৃত্যু দান করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। ভালো জিনিস দিয়ে যেমন পরীক্ষা করেন, আবার দুঃখ-কষ্ট দিয়েও তিনি পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদের মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি এবং তোমাদের সবাইকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)


তিনি আমাদের মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন। আমরা আমাদের অজ্ঞতাবশত অনেক সময় নানা মন্তব্য করে থাকি, বিরক্ত হয়ে অধৈর্য হয়ে যাই। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করে আল্লাহ তাআলা থেকে নিরাশ হয়ে যাই। আর এই ফাঁকে শয়তান আমাদের নানাভাবে প্ররোচণা দিতে থাকে।


আমাদের কৃতকর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে সে আমাদের আল্লাহ থেকে নিরাশ করে দেয়। অথচ প্রকৃত মুমিন কখনো আল্লাহ তাআলা থেকে নিরাশ হতে পারে না। অসুস্থ অবস্থায় সে ধৈর্য ধারণ করবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার কল্যাণের জন্যই ছোট-বড় বিভিন্ন মুসিবত দিয়ে থাকেন। এই অসুস্থতা কল্যাণের জন্যই।


আত্মাকে শোধন করার জন্য


অসুস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে পরিশোধন করে থাকেন। বান্দার যখন পাপ বেড়ে যায় আর তার পাপ মোচন করার জন্য সে কোনো আমল না করে তখন বান্দার কল্যাণের জন্যই আল্লাহ তাআলা তাকে ছোট ছোট মুসিবতে আক্রান্ত করেন। দুঃখ-কষ্ট দিয়ে, অসুস্থতা দিয়ে। এর মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষণিকের কষ্টের মাধ্যমে পরকালের নির্মল সুখ লাভ করবে।


আবু সাইদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিঁধে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪২)


সবরের পরীক্ষা করা হয়


অসুস্থতা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বান্দার ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি বান্দার বিশ্বাস কতটুকু, তা পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ চান বান্দা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হয়ে যাক। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান, তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাঁর কোনো বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান, তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন। তিনি আরো বলেন, বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদের (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ তাআলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ তাআলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)


সুস্থতার নিয়ামত অনুভব


প্রবাদ আছে যেকোনো জিনিসের মূল্য তার বিপরীত জিনিস দ্বারাই প্রতিভাত হয়। সুস্থতা, আল্লাহ তাআলার কত বড় নিয়ামত এবং তার মূল্য কত! তা বোঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা বান্দাকে মাঝেমধ্যে অসুস্থতা দিয়ে থাকেন। আর অসুস্থ ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বেশি স্মরণ করে থাকেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটিতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। আর তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)


দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ


অনেক সময় আল্লাহ তাঁর বান্দাকে অসুস্থতা দিয়ে থাকেন এ জন্য যে সে যেন তার আমলের প্রতিদান কয়েক গুণ লাভ করে। কারণ বান্দা সুস্থ অবস্থায় নিয়মিত যেসব আমল করত, অসুস্থ হওয়ার কারণে তা না করতে পারে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য সেই আমলের সওয়াব আরো বাড়িয়ে দেন। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশাল অনুগ্রহ। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ঈমানদার ব্যক্তির শরীরে একটি মাত্র কাঁটার আঘাত কিংবা তার চেয়েও কোনো নগণ্য আঘাত লাগলে আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন কিংবা তার একটি গুনাহ মোচন করে দেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৫৬)


আবু মুসা আশআরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন বান্দা পীড়িত হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তাঁর জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় আমল করত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৬)


অসহায় মানুষের কথা স্মরণ


আমাদের চারপাশে অনেক দুঃখী মানুষ আছে, যারা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দিন গুজরান করছে, আমরা তাদের ভুলে থাকি। আল্লাহ তাআলা মাঝেমধ্যে আমাদের অসুস্থ করেন, তাদের স্মরণ করানোর জন্য। আর্তমানবতায় যাদের দিন অতিক্রম হচ্ছে, তাদের বিপন্ন জীবন স্মরণ করানোর জন্য।


বান্দার অক্ষমতার কথা স্মরণ


মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হয়ে অনেক চেষ্টা করেও সে সুস্থ হতে পারে না, তখন সে তার অক্ষমতা অনুভব করে। দুনিয়াতে সে যতই বীরদর্পে ঘুরে বেড়াক না কেন, আল্লাহর সামনে সবই তুচ্ছ; এ কথা সে হারে হারে অনুভব করতে পারে। তখন তার দিল কোমল হয়, অসহায়দের প্রতি তার সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য মন আকুলিবিকুলি করে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি

 করা হয়েছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৮)


মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ

শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহঃ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ

মাওঃ উবাইদুল্লাহ সিন্ধী রহঃ

সায়্যিদ সাবেক রহঃ

আল্লামা আব্দুল মজীদ নাদীম রহঃ

মাওলানা আসলাম শাইখুপুরী

শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

মাওঃ আবু আম্মার যাহেদ রাশেদী

মাওঃ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী

আল্লামা আবুল কালাম আযাদ রহঃ

মাওলানা সাঈদ আহমদ

মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ

হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহঃ

মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

মাওলানা সাঈদ আহমাদ বিন গিয়াসুদ্দীন

মাওঃ আবু বকর সিরাজী

শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার [রহ.]

মাওঃ এনামুল হাসান