প্রবন্ধ

অনিয়ন্ত্রিত রাগ অকল্যাণ বয়ে আনে

লেখক:মুফতি জাওয়াদ তাহের
১১ মে, ২০২৩
২৬১৩ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

রাগ মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। তবে তা ক্ষতিকর। রাগ শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি তা অনেক পাপের কারণ। রাগ মানব মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বেলে দেয়, যা অনেক সময় খুন-খারাবি পর্যন্ত নিয়ে যায়। শেখ সাদি (রহ.) যথার্থ বলেছেন, ক্রোধের আগুন প্রথমে রাগান্বিত ব্যক্তির ওপর পড়ে। যার ওপর রাগ করা হয় তার ওপর তার প্রভাব পড়তেও পারে, না-ও পড়তে পারে। যখন কারো রাগ এসে যায়, তখন তার কর্মকাণ্ড এমন হয় যে পরবর্তী সময়ে নিজেকে লজ্জিত হওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না। তখন সে ভাবে, আমার মতো লোক এই কাজ করেছে! নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না যে আমি এ কাজটি করেছি। তাই এ কাজ থেকে আমাদের দূরে সরে আসতে হবে।


আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) কখনো ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর নিকট মর্যাদাপূর্ণ বিষয়গুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হলে সে ক্ষেত্রে তিনি কোনো ছাড় দিতেন না। কারণ দ্বিনের জন্য রাগ করা, কঠোর হওয়া এটা আল্লাহর জন্য। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কখনো নিজের কোনো ব্যাপারে কারোর কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার জন্য যথাবিহিত শাস্তির ব্যবস্থা করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৬০)



আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)


রাগ সংবরণের প্রতিদান : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা উতকৃষ্ট ও স্থায়ী, তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৩৬-৩৭)


রাগ সামলানোর পদ্ধতি : রাগ যেহেতু স্বভাবজাত। তাই রাসূল (সা.) আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। নবী করিম (সা.) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরো বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)



এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কলেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম’ অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৩১৭)


তা ছাড়া যখন বুঝে যাচ্ছেন আপনি রেগে যাচ্ছেন, তখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থাতেই সেই পরিস্থিতি বা জায়গা দ্রুত ত্যাগ করুন বা কারো সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ হতে থাকলে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলুন অথবা তার সঙ্গে সেই মুহূর্তে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় কিছু মজার কিছু ভাবা, মনে মনে নিজেকে শান্ত হতে বলা ইত্যাদি আপনার অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে।


আল্লাহ তাআলা আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দান করুন।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (...)

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী

শাইখুল ইসলাম আল্লামা যাহেদ কাউছারী রহঃ

মুফতী আব্দুল হান্নান হাবীব

মুফতী সালমান মানসুরপুরী

শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস দাঃ

আল্লামা আহমাদ মায়মূন

মাওলানা আতাউল্লাহ আব্দুল জলীল

আল্লামা রফী উসমানী রহঃ

মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ.

মাওলানা নূর আলম খলীল আমিনী

হযরত মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী রহঃ

হযরতজী মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি রহঃ

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন

মাওলানা শাহাদাত সাকিব

আল্লামা ইসহাক ওবায়দী রহঃ

মাওলানা ওমর পালনপুরী

মুফতী আবুল কাসেম নোমানী

হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ)

আল্লামা মানাযির আহসান গিলানী রহঃ