প্রবন্ধ

বিশ রাকাত তারাবী কি বিদআত!

লেখক:শায়েখ মুহাম্মাদ আলী আসসাবুনী রহঃ
২১ মার্চ, ২০২৩
২৩৫৩ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

প্রজন্ম পরম্পরায় চলে আসা হারামাইন শরীফাইনের আমল

তারাবীর বিষয়ে প্রজন্ম পরম্পরায় চলে আসা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর আমল অনুসরণীয় বাস্তবতা। এ দুই মসজিদের মাকাম ও মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কাবা শরীফ তো এমন যেআল্লাহ তাআলা তাকে মাশরিক থেকে মাগরিব তথা সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের কেবলা বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা এর ফযীলত সম্পর্কে বলেছেনÑ

اِنَّ اَوَّلَ بَیْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیْ بِبَكَّةَ مُبٰرَكًا وَّ هُدًی لِّلْعٰلَمِیْنَ.

মানুষের (ইবাদতের) জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়নিশ্চয় তা সেটিযা মক্কায় অবস্থিতযা বরকতময় এবং সমগ্র জগতের মানুষের জন্য হিদায়াতের উপায়। Ñসূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৬

মসজিদে নববী তো হল ঐ মসজিদযার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে তাকওয়ার উপর। আল্লাহ তাআলা মসজিদে নববীর আবাদকারীদের প্রশংসা করেছেন এভাবেÑ

لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَی التَّقْوٰی مِنْ اَوَّلِ یَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِیْهِ  فِیْهِ رِجَالٌ یُّحِبُّوْنَ اَنْ یَّتَطَهَّرُوْا  وَ اللهُ یُحِبُّ الْمُطَّهِّرِیْنَ.

যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছেসেটাই তোমার দাঁড়ানোর বেশি উপযুক্ত। তাতে এমন লোক আছেযারা পাক-পবিত্রতাকে বেশি পছন্দ করে। আল্লাহ তাআলা পাক-পবিত্র লোকদের পছন্দ করেন। Ñসূরা তাওবা (৯) : ১০৮

এই হারামাইন শরীফাইনে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কত রাকাত তারাবী চলে আসছেএ দুই মসজিদযেখান থেকে সারা বিশ্বের মসজিদগুলোতে ঈমান ও আমলের আলো ছড়িয়েছেসেখানে কি যুগ যুগ ধরে বিশ রাকাত তারাবী পড়া হচ্ছে না?

বিশ রাকাত তারাবী’ যদি বিদআত হত তাহলে কি এটা সম্ভব যেদ্বীনের মধ্যে একটা মুনকার ও বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটবে আর সকল মুসলমান একমত হয়ে তা গ্রহণ করে নেবেএমনকি এর উপর সমস্ত ফকীহমুহাদ্দিস ও অন্যান্য উলামায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে?

এটা কি বিশ্বাস করা যায় যেএই মুনকার কাজ’ শতাব্দীর পর শতাব্দী চলতে থাকবেপ্রজন্মের পর প্রজন্ম এর উপর আমল করবেকিন্তু কেউই এর বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না?!

বর্তমান সালাফী’ নামে যে দাওয়াত চলছেযাদের দাওয়াতের সূচনা হয়েছে নাজদ ও মক্কা-মদীনায় Ñতারা তো সালাফে সালেহীন তথা মহান পূর্বসূরীদের আমল ও আদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার দাওয়াত দেনÑ তাদের আলেমগণ কীভাবে সৌদি আরবে এই বিদআতের উপর নীরব থাকেনএবং সমগ্র বিশ্বের উলামায়ে কেরামও তাদের সাথে একমত পোষণ করেনকেন তাঁরা এই মুনকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান না?

আমি মক্কা মুর্কারমায় বিশ বছর১ যাবৎ অবস্থান করছিপ্রত্যেক রমযানে মসজিদুল হারামে জামাতের সাথে বিশ রাকাত নামায পড়ছি এবং জামাতের সাথেই তিন রাকাত বিতর পড়ছি। এমনিভাবে নাজদমক্কা-মদীনা ও মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের বড় বড় উলামায়ে কেরামও এখানে বিশ রাকাত তারাবীই পড়ছেন। কেউ তো কোনো প্রশ্ন করেননি। বিশ রাকাতের উপর কেউই তো কোনো আপত্তি  উত্থাপন করেননি। এতে কি প্রমাণিত হয় না যেতাদের নিকট উমর রা.-এর সুন্নাহর অনুসরণ করে বিশ রাকাত তারাবী পড়া শুধু বৈধ নয়বরং উত্তম?

সারা দুনিয়ার মসজিদগুলো মুসল্লীদের দ্বারা ভরে যায়বিশেষত রমযান মাসে। ঐ শায়েখদের প্রোপাগান্ডা সত্তে¡ও আজও মরক্কোমিসরসিরিয়াপাকিস্তান ও সৌদিআরবসহ বিশ্বের অধিকাংশ মসজিদে বিশ রাকাত তারাবীই পড়া হয়। এখন কী বলবেনতারা সকলেই কি মূর্খতা ও ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিতযেমনটা সালাফী বা আহলে হাদীস হওয়ার দাবিদার ঐ বন্ধুরা মনে করেন!

এটা কীভাবে সম্ভব যেনবীজীর সমস্ত উম্মত বিদআত ও গোমরাহির উপর একমত হয়ে যাবে। অথচ নবীজীর ঘোষণাÑ

إِنّ أُمّتِي لَا تَجْتَمِعُ عَلَى ضَلَالَةٍ.

এটা নিশ্চিত যেআমার গোটা উম্মত গোমরাহির উপর একমত হবে না।২  Ñসুনানে আবু দাউদহাদীস ৪২৫৩: সুনানে তিরমিযীহাদীস ২১৬৭সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস ৩৯৫০

তাহলে কি সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদী গোমরাহ?

আশ্চর্যের ব্যাপার হলএসব সালাফী শায়েখযারা প্রসিদ্ধি লাভ করতে চায় এবং বিদ্যা-বুদ্ধিমেধা ও প্রতিভায় বিখ্যাত হতে চায়তারা এমন সব শায ও মুনকার (উম্মাহ-বিচ্ছিন্ন ও চরম আপত্তিকর) কথাবার্তা বলেযেগুলো গ্রহণ করলে একথা মানতে হয় যেসালাফে সালেহীন তথা আমাদের মহান পূর্বসূরীগণ জাহেল ও মূর্খ ছিলেন এবং উমর রা.-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সকল উলামায়ে কেরাম এবং নবীজীর সমস্ত উম্মত গোমরাহীতে নিমজ্জিত আছেন।

এরা বলেযে-ই বিশ রাকাত তারাবী পড়ে সে-ই গোমরাহসে-ই পথভ্রষ্ট। তাদের বিরল প্রতিভা (?) তাদেরকে এত উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে যেতারা বলেতারাবীর নামায (বিতরসহ) এগার রাকাতের বেশি পড়ার দৃষ্টান্ত হল যোহরের নামায চার রাকাতের স্থলে পাঁচ রাকাত পড়া বা ফজরের নামায দুই রাকাত না পড়ে চার রাকাত পড়া। অথচ এই যুক্তি ভুল হওয়ার বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার।  এই  কিয়াস তাদের বুঝ-বিবেচনার অপরিপক্বতা এবং আকল-বুদ্ধির স্থূলতার স্পষ্ট প্রমাণ। কথায় বলেÑ

عِشْ رجباً ترى عجباً.

যায় দিন ভালোই যায়আসে দিন যে কী হয়Ñ কে জানে!৩

এক শায়েখের লেখায় আমি পড়েছি, ‘যে ব্যক্তি তারাবীর নামায এগার রাকাতের বেশি পড়ে তার দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির মতযে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে প্রমাণিত নামাযকে অন্যভাবে পড়ে। যেমন যোহরের ফরয পাঁচ রাকাত পড়াফজরের সুন্নত চার রাকাত পড়া কিংবা প্রত্যেক রাকাতে দুই রুকু বা তিন সিজদা করা...!

আল্লাহর কসম! এই কিয়াস তার মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতার জ¦লন্ত প্রমাণ। একজন আলেমযে ইলমের দাবিদারবরং নিজেকে ইজতিহাদের যোগ্য জ্ঞান করেÑ সে কীভাবে নফলের উপর ফরযকে কিয়াস করে কিংবা তারাবীর নামাযে রাকাত বাড়ানোকে ফরয নামাযে রাকাত বাড়ানোর সাথে তুলনা করেএটা কি ডিমকে বেগুনের সাথে তুলনা করার মত নয়?

সাধারণ মানুষযার শরীয়তের জ্ঞান নেই সেও বোঝে যেচাশতের নামায আর মাগরিবের নামায এক না। চাশতের নামায নফল। তাতে যত ইচ্ছা রাকাত সংখ্যা বাড়ানো যাবে। মাগরিবের নামায ফরয। এতে তিন রাকাতের বেশি পড়া যাবে না।

একজন নিরক্ষর সাধারণ মানুষও এশার নামায ও তারাবীর নামাযের পার্থক্য বোঝে। সে বলেএশার নামায ছেড়ে দিলে গোমরাহ হয়ে যাবে। কেননা এখানে ফরয বর্জন করা হয়েছে। কিন্তু তারাবীর নামায তরক করলে (ফরয তরক করার মত) বড় গুনাহ হবে না।

সুতরাং অনন্য মেধা-প্রতিভার দাবিদারযে নিজেকে ইজতিহাদের আসনে অধিষ্ঠিত করছেসে কীভাবে তারাবীর নামাযের রাকাত সংখ্যাকে ফরয নামাযের রাকাত সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তুলনা করছেআপনাদের ইজতিহাদ কি তাহলে এভাবেই হয়?

সম্মানিত পাঠক! এদের অসার দাবির খÐনে আপনাদের সামনে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। এতে ভোরের আলোর ন্যায় চক্ষুষ্মানের সামনে সত্য প্রকাশিত হয়ে উঠবে এবং স্পষ্ট হয়ে যাবে আলেমের কথা ও জাহেলের কথার মধ্যে পার্থক্য। আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেনÑ

وَ مَا یَسْتَوِی الْاَعْمٰی وَ الْبَصِیْرُ،  وَ لَا الظُّلُمٰتُ وَ لَا النُّوْرُ.

অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান হতে পারে না এবং অন্ধকার ও আলোও না। Ñসূরা ফাতির (৩৫) : ১৯-২০

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর ফতোয়া

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. মাজমূউল ফাতাওয়ায় (২২/২৭২) বলেনÑ

إِنّ نَفْسَ قِيَامِ رَمَضَانَ لَمْ يُوَقِّتْ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِيهِ عَدَدًا مُعَيّنًا؛ بَلْ كَانَ هُوَ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا غَيْرِهِ عَلَى ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، لَكِنْ كَانَ يُطِيلُ الرّكَعَاتِ.

মূলত তারাবীর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাকাতের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি রমযান ও রমযানের বাইরে তের রাকাতের বেশি পড়তেন না৪.কিন্তু তাতে কেরাত অনেক দীর্ঘ করতেন।৫

فَلَمّا جَمَعَهُمْ عُمَرُ عَلَى أبي بْنِ كَعْبٍ كَانَ يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً ثُمّ يُوتِرُ بِثَلَاثِ، وَكَانَ يُخِفّ الْقِرَاءَةَ بِقَدْرِ مَا زَادَ مِنْ الرّكَعَاتِ، لِأَنّ ذَلِكَ أَخَفّ عَلَى الْمَأْمُومِينَ مِنْ تَطْوِيلِ الرّكْعَةِ الْوَاحِدَةِ.

উমর রাযখন উবাই ইবনে কা রা.-এর ইমামতিতে জামাতের ব্যবস্থা করলেন তখন উবাই ইবনে কা রাসাহাবীদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তবে তিনি যে পরিমাণ রাকাত বৃদ্ধি করেছেন সে পরিমাণ কেরাত হালকা করতেন। কেননা এক রাকাতের মধ্যে কেরাত দীর্ঘ করার চেয়ে দীর্ঘ কেরাতকে ভাগ করে কয়েক রাকাতে পড়লে মুসল্লীদের জন্য সহজ হয়।

ثُمّ كَانَ طَائِفَةٌ مِنْ السّلَفِ يَقُومُونَ بِأَرْبَعِينَ رَكْعَةً وَيُوتِرُونَ بِثَلَاثِ، وَآخَرُونَ قَامُوا بِسِتِّ وَثَلَاثِينَ وَأَوْتَرُوا بِثَلَاثِ. وَهَذَا كُلّهُ سَائِغٌ، فَكَيْفَمَا قَامَ فِي رَمَضَانَ مِنْ هَذِهِ الْوُجُوهِ فَقَدْ أَحْسَنَ.

উমর রা.-এর যমানার পর সালাফের এক জামাত চল্লিশ রাকাত তারাবী পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আরেক জামাত ছত্রিশ রাকাত তারাবী পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন।  সব তরীকাই জায়েয। যে রাকাত-সংখ্যাই গ্রহণ করা হোক তা- উত্তম হবে।

এরপর ইবনে তাইমিয়া রাহবলেনÑ

وَالْأَفْضَلُ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ أَحْوَالِ الْمُصَلِّينَ، فَإِنْ كَانَ فِيهِمْ احْتِمَالٌ لِطُولِ الْقِيَامِ فَالْقِيَامُ بِعَشْرِ رَكَعَاتٍ وَثَلَاثٍ بَعْدَهَا كَمَا كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي لِنَفْسِهِ فِي رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ هُوَ الْأَفْضَلُ، وَإِنْ كَانُوا لَا يَحْتَمِلُونَهُ فَالْقِيَامُ بِعِشْرِينَ هُوَ الْأَفْضَلُ، وَهُوَ الّذِي يَعْمَلُ بِهِ أَكْثَرُ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنّهُ وَسَطٌ بَيْنَ الْعَشْرِ وَبَيْنَ الْأَرْبَعِينَ، وَإِنْ قَامَ بِأَرْبَعِينَ وَغَيْرِهَا جَازَ ذَلِكَ، وَلَا يُكْرَهُ شَيْءٌ مِنْ ذَلِكَ. وَقَدْ نَصّ عَلَى ذَلِكَ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ الْأَئِمّةِ كَأَحْمَدَ وَغَيْرِهِ. وَمَنْ ظَنّ أَنّ قِيَامَ رَمَضَانَ فِيهِ عَدَدٌ مُوَقّتٌ عَنْ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يُزَادُ فِيهِ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُ فَقَدْ أَخْطَأَ.

কত রাকাত তারাবী পড়া উত্তমতা নির্ভর করে মুসল্লীদের অবস্থা বিবেচনার উপর। যে মুসল্লীদের নবীজীর মত দীর্ঘ কেরাত পড়ে দশ রাকাত তারাবী  তিন রাকাত বিতর পড়ার সহন ক্ষমতা আছে তাদের জন্য বিতরসহ তের রাকাত পড়াই উত্তম। যদি এত দীর্ঘ কেরাতে ধৈর্যধারণ করতে মুসল্লীদের কষ্ট হয় তাহলে কেরাতকে ভাগ করে বিশ রাকাত তারাবী পড়া উত্তম।  অনুযায়ীই অধিকাংশ মুসলমান আমল করে আসছে। কারণদশ রাকাত  চল্লিশ রাকাতের মধ্যে বিশ রাকাত হল মধ্যম সংখ্যা। আর যদি ছত্রিশ বা চল্লিশ রাকাত পড়ে তাও জায়েয হবে। এর কোনো সংখ্যাই নাজায়েয নয়। ইমাম আহমাদ রাহ.-সহ একাধিক ইমাম স্পষ্টভাবে একথা বলেছেন।৬যে মনে করেতারাবীর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করেছেনএতে কমবেশি করার কোনো সুযোগ নেই সে ভুল বুঝেছে। Ñফাতাওয়া শায়খিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া /৪০১

ইবনে তাইমিয়া রাহছিলেন ইলমের শীর্ষ চূড়ায় এবং মেধা-প্রতিভায় আলোর মিনার। তাঁর উক্ত ফতোয়া  লোকদের কথা Ð করেযারা নিজেদের ব্যাপারে বড় বড় দাবি করে এবং আলেমদের নির্বোধ  স্বল্পজ্ঞানী আখ্যা দেয়।

হায়তিনি যদি আজ পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন এবং ঐসব মুজাদ্দিদ  মুজতাহিদদের দেখতে পেতেনযারা স্বর্ণকে ওযন করে পাথর  লাকড়ি মাপার পাল্লা  দিয়েএই মুজাদ্দিদেরা এমন এমন শায  উম্মাহ-বিচ্ছিন্ন ফতোয়া প্রকাশ করে যা সর্বসাধারণের দিল-দেমাগকে অস্থির করে দেয়। এবং এমন মুনকার  আপত্তিকর ইজতিহাদ নিয়ে হাযির হয়যেগুলো থেকে মনে হয় তারা যেন সালাফে সালেহীন  মুজতাহিদ ইমামগণকে গোমরাহ  ভ্রান্ত প্রমাণ করছে। অথচ তারা ছিলেন হেদায়েতের আলোদ্বীনের অতন্দ্র প্রহরী। আল্লাহ তাআলা ইমাম শাফিঈ রাহ.-এর প্রতি রহম করুন। তিনি বাস্তব কথা বলেছেন যেÑ

مَا جَادَلْتُ عَالِمًا إِلّا وَغَلَبْتُه، وَمَا جَادَلَنِيْ جَاهِلٌ إِلّا وَغَلَبَنِيْ.

আমি যখনই কোনো আলেমের সাথে মুনাযারা করেছি তখন আমি বিজয় লাভ করেছি। আর যখনই কোনো জাহেল আমার সাথে মুনাযারা করতে এসেছে তখন সে আমার উপর জয়ী হয়েছে।

কোনো কোনো সালাফী শায়েখের ঔদ্ধত্য এই পযর্ন্ত পৌঁছে গেছে যেসে বলেএগার রাকাতের বেশি তারাবী পড়া বিদআতযদিও এটা উমর রা. শুরু করেন!!

আমি নিজ কানে কোনো কোনো সালাফীকে এমনও বলতে শুনেছি যেÑনাউযুবিল্লাহÑ উম্মাহর ইমামগণ ছিলেন গোমরাহির প্রচারক। তারা উম্মতকে গোমরাহ করেছে এবং দ্বীনকে খÐ-বিখРকরেছে। 

এরপর ইমামগণের গোমরাহীর দলীল হিসাবে ঐ আয়াত পেশ করেনযা আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ব্যাপারে নাযিল করেছেন। সে বলেদেখআল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইমামদের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেনÑ

اِنَّ الَّذِیْنَ فَرَّقُوْا دِیْنَهُمْ وَ كَانُوْا شِیَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِیْ شَیْءٍ .

(হে নবী!) নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেতাদের সাথে তোমার কোনও সম্পর্ক নেই। Ñসূরা আনআম (৬) : ১৫৯

আহাম্মকরা বলেএই আয়াতে আইম্মায়ে কেরামের নিন্দা করা হয়েছে। অথচ সমস্ত মুফাসসির একমত যেএতে ইহুদী-খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের নিন্দা করা হয়েছে।

এই মূর্খরা কি মুজতাহিদ ইমাম সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীস শোনেনিÑ

إِذَا حَكَمَ الحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْر.

(মুজতাহিদ) বিচারক যদি ইজতিহাদ করে ফায়সালা করে এবং তা সঠিক হয়তাহলে দুই সওয়াবের অধিকারী হবে। আর যদি ইজতিহাদ করে ফায়সালা দেওয়ার পর তাতে ভুল হয়তাহলেও এক সওয়াবের হকদার হবে। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ৭৩৫২সহীহ মুসলিমহাদীস ১৭১৬

এসব বোকা কি এবিষয়ে রফউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আলাম’-এ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর বক্তব্য পড়েনি?

আমাদের তো আশঙ্কা হয়না জানি ঐ যমানা এসে গেছেযার সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন যেএমন সময় আসবেযখন জাহেলরা ইলমের আসন দখল করে বসে থাকবে এবং দ্বীনী বিষয়ে ফতোয়া দেবে। হাদীস শরীফের ভবিষ্যদ্বাণীÑ

إِنّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتّخَذَ النّاسُ رُءُوسًا جُهّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلّوا وَأَضَلّوا.

আল্লাহ তাআলা এভাবে ইলম উঠিয়ে নেবেন না যেতার বান্দাদের নিকট থেকে ইলম ছিনিয়ে নেবেনবরং আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেবেন। অবশেষে যখন আর কোনো আলেম বাকি থাকবে না তখন মানুষ তাদের মুকতাদা’ (অনুসরণীয়বানাবে জাহেলদের। জাহেল লোকদের কাছে দ্বীনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। তারা যোগ্য না হয়েও সে বিষয়ে সমাধান পেশ করবে। ফলে এরা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ১০০সহীহ মুসলিমহাদীস ২৬৭৩

আরেকটি সহীহ হাদীসের বক্তব্য হলÑ

إِنّ مِنْ أَشْرَاطِ السّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ، وَيَكْثُرَ الجَهْلُ، وَيَكْثُرَ الزِّنَا، وَيَكْثُرَ شُرْبُ الخَمْرِ، وَيَقِلّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ حَتّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً القَيِّمُ الوَاحِدُ.

কিয়ামতের আলামতসমূহ থেকে কিছু হল এইইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং মূর্খতা বেড়ে যাবে। যিনা-ব্যাভিচার  মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে। (ফেতনা-ফাসাদ  যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণেপুরুষদের সংখ্যা কমবে এবং নারীদের সংখ্যা বাড়বে। এমনকি পঞ্চাশজন মহিলার দায়িত্বভার গ্রহণ করবে মাত্র একজন পুরুষ। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ৫২৩১সহীহ মুসলিমহাদীস ২৬৭১

বিশ রাকাত তারাবীর প্রসঙ্গে যারা সাহাবাতাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনকে গোমরাহীর সনদ দেয় এবং উম্মাহর পূর্বসূরী ও উত্তরসূরী সকলের গায়ে ভ্রষ্টতার কালিমা লেপন করেÑকোনো সন্দেহ নেই যেÑ এরাই বোকাএরাই মূর্খ এবং এরাই বিদআতী এবং কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণকারী। আহাম্মক না হলে কেউ কি সাহাবা-তাবেঈনদের বিদআতী আখ্যা দিতে পারে?

ভালো করে বুঝে রাখুনএসব হল আত্মপ্রবঞ্চনাউম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং জাহালত ও নির্বুদ্ধিতা। এধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে উম্মাহর ঐক্যের ভুবনে ফাটল সৃষ্টি হয় এবং যারা এসব করে তারা মুসলমানদের পথ ও দল থেকে বের হয়ে যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা সাবীলুল মুমিনীন’ তথা মুসলমানদের পথ ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে কঠিনভাবে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ

وَ مَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَ یَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصْلِهٖ جَهَنَّمَ  وَ سَآءَتْ مَصِیْرًا.

যে ব্যক্তি তার সামনে হেদায়েত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে ও মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য কোনও পথ অবলম্বল করবেআমি তাকে সেই পথেই ছেড়ে দেবযা সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবযা অতি মন্দ ঠিকানা। Ñসূরা নিসা (৪) : ১১৫

তাদের এসব কর্মকাণ্ডের উৎস হল প্রসিদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা এবং নিজের প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ، وَغَمْطُ النّاسِ.

কিব্র বা অহঙ্কার হলসত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ মনে করা। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ১৪৭সুনানে আবু দাউদহাদীস ৪০৯২

হাদীসের বাতারুল হক’-এর অর্থ হলসত্যকে ঠেলে দেওয়াসত্যকে প্রত্যাখ্যান করাগ্রহণ না করা। আর গামতুন নাস’-এর অর্থ হলঅন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করা এবং নিজের মত নিয়ে প্রফুল্ল থাকা।

আট রাকাতের দলীল ও এর খÐ

যারা বলেনতারাবীর নামায আট রাকাতের বেশি পড়া যাবে না তাদের দলীল হল নিম্নোক্ত হাদীসটি। আয়েশা রা. বলেনÑ

مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান বা রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না।৭ Ñসহীহ বুখারীহাদীস ১১৭৪সহীহ মুসলিমহাদীস ৭৩৮

এই হাদীস তাদের দলীল হতে পারে না। এর একাধিক কারণ রয়েছে। 

এক. আয়েশা রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যত রাকাত পড়তে দেখেছেন তত রাকাতের বর্ণনা দিয়েছেন। এর দ্বারা এটা জরুরি নয় যেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে বেশি পড়তেন না। নবীজী তো সবসময় আয়েশা রা.-এর ঘরে থাকতেন না যেনবীজীর কোনো রাতের আমলই তাঁর অজানা থাকবে না। দেখুন নাআয়েশা রা. বলেছেনÑ

مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي سُبْحَةَ الضّحَى قَطّ، وَإِنِّي لَأُسَبِّحُهَا، وَإِنْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَيَدَعُ الْعَمَلَ وَهُوَ يُحِبّ أَنْ يَعْمَلَ بِهِ، خَشْيَةَ أَنْ يَعْمَلَ بِهِ النّاسُ فَيُفْرَضَ عَلَيْهِمْ.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশতের নামায পড়তে আমি কখনো দেখেনি। কিন্তু আমি পড়ি। কারণঅনেক সময় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা আমল করতে চাইতেন। কিন্তু উম্মতের উপর ফরয হয়ে যাবেÑ এই আশঙ্কায় আর করতেন না। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ৭১৮

লক্ষ করুনআয়েশা রাকত পরিষ্কারভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে,  কোনো দিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশতের নামায পড়তে দেখেননিঅথচ এটা সুপ্রমাণিত যেতিনি নিয়মিত চাশতের নামায পড়তেন এবং অন্যদেরকে এর প্রতি উৎসাহ দিতেন। এমনকি আবু হুরায়রা রা.কে নিয়মিত চাশতের নামায আদায়ের ওসিয়তও করেছেন। আবু হুরায়রা রাবলেনÑ

أَوْصَانِي حَبِيبِي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِثَلَاثٍ، لَنْ أَدَعَهُنّ مَا عِشْتُ: بِصِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلَاةِ الضّحَى، وَبِأَنْ لَا أَنَامَ حَتّى أُوتِرَ.

আমার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি আমলের ওসিয়ত করেছেন। যতদিন বেঁচে থাকি কখনো আমি তা ছাড়ব না। (এক.) প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোযা রাখা। (দুই.) চাশতের নামায পড়া। (তিন.) এবং ঘুমানোর আগে বিতর পড়া। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ৭২২

আবদুর রহমান ইবনে আবী লায়লা রাহবলেনউম্মে হানী রাব্যতীত কেউ আমাকে বলতে পারেননি যেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশতের নামায পড়তে দেখেছেন। উম্মে হানী রাবর্ণনা করেছেনÑ 

إِنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكّةَ، فَصَلّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ، مَا رَأَيْتُهُ صَلّى صَلَاةً قَطّ أَخَفّ مِنْهَا، غَيْرَ أَنّهُ كَانَ يُتِمّ الرّكُوعَ وَالسُجُودَ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফতহে মক্কার দিন আমার ঘরে দাখেল হয়েছেন এবং আট রাকাত নামায পড়েছেন। তাঁকে এত সংক্ষিপ্ত নামায পড়তে আর কোনো দিন আমি দেখিনি। তবে রুকু-সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করতেন। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ৩৩৬

এখন আয়েশা রারাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশতেন নামায পড়তে দেখেননিÑ শুধু এজন্য কি এই নামায অস্বীকার করা যাবে?  তো যেমনভাবে আয়েশা রা.-এর না দেখার কারণে চাশতের নামাযকে অস্বীকার করা যাবে না তেমনি তিনি নবীজীকে এগার রাকাতের বেশি পড়তে দেখেননি।’ এখানেও একই কথা। অর্থাৎ তিনি যা দেখেছেন সে অনুযায়ী বিবরণ দিয়েছেন। এর দ্বারা এটা জরুরি হয়ে যায় না যেঅন্য স্ত্রীদের কাছেও এগার রাকাতের বেশি পড়েননি। বরং ইবনে আব্বাস রা.যায়েদ রা অন্যান্য সাহাবীর বিবরণে আরো অধিক রাকাত নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। আলী রাথেকে এক বর্ণনায় এসেছেÑ

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي مِنَ اللّيْلِ سِتّ عَشْرَةَ رَكْعَةً سِوَى الْمَكْتُوبَةِ.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা ফরয নামায ছাড়াও আরো ষোল রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন।৮ Ñমুসনাদে আহমাদহাদীস ১২৪১

দুইআবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রা.-এর হাদীস আয়েশা রা.-এর এই হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। ইবনে আব্বাস রাবর্ণনা করেছেনÑ

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي مِنَ اللّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বিতরসহ তের রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ১১৩৮সহীহ মুসলিমহাদীস ৭৬৪৭৬৩

যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রাবলেনÑ

لَأَرْمُقَنّ صَلَاةَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اللّيْلَةَ، فَصَلّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ، ثُمّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ طَوِيلَتَيْنِ، ثُمّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ، وَهُمَا دُونَ اللّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ، وَهُمَا دُونَ اللّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ، وَهُمَا دُونَ اللّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمّ أَوْتَرَ فَذَلِكَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.

একদা আমি পণ করলামআজ রাতে অবশ্যই আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামায দেখব। ( রাতেতাঁকে দেখেছিপ্রথমে সংক্ষিপ্তভাবে দুই রাকাত নামায পড়েছেন। এরপর দুই রাকাত নামায পড়েছেনযা অনেক অনেক দীর্ঘ। এরপর দুই রাকাত নামায পড়েছেনযা পূর্বের দুই রাকাত থেকে সংক্ষিপ্ত। এরপর দুই রাকাত নামায পড়েছেনযা আরেকটু সংক্ষিপ্ত। এরপর দুই রাকাত নামায পড়েছেনযা আরো সংক্ষিপ্ত। এরপর খুব সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত নামায পড়েছেন। সব শেষে বিতর করেছেন। এভাবে তিনি মোট তের রাকাত নামায পড়েছেন। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ৭৬৫

 দুটি সহীহ হাদীস আয়েশা রা.-এর উক্ত বর্ণনার বিপরীত।৯

এসব রেওয়ায়েত থেকে  তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে, (তিন রাকাত বিতরসহতাহাজ্জুদের নামায রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এগার রাকাতের বেশিও পড়তেন। এজন্য কাযী ইয়ায রাহতাহাজ্জুদের বিষয়ে বাহ্যিক বৈপরীত্যপূর্ণ হাদীসসমূহ সম্পর্কে বলেছেনÑ

قال العلماء: فى هذه الأحاديث إخبار كل واحد من ابن عباس وزيد بن خالد وعائشة ما شاهده ولاخلاف أنه ليس فى ذلك حد لايزاد عليه ولاينقص منه، واْن صلاة الليل من الفضائل والرغائب التى كلما زيد فيها زيد فى الأجر والفضل، وإنما الخلاف فى فعل النبى صلى الله عليه وسلم وما اختاره لنفسه.

এইসব হাদীসে আয়েশা রা.ইবনে আব্বাস রা যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রাযা দেখেছেন তার বিবরণ দিয়েছেন। তবে  বিষয়ে কোনো আলেমের দ্বিমত নেই যেতাহাজ্জুদ নামাযের রাকাত সংখ্যার বিষয়ে নির্ধারিত কোনো সীমা নেই যেএর থেকে কমও করা যাবে না এবং বেশিও পড়া যাবে না। এতেও কারো দ্বিমত নেই যেতাহাজ্জুদের নামায হল অনেক ফযীলতপূর্ণ নামায। যত বেশি রাকাত পড়া হবে ততই সওয়াব বেশি হবে। হাদীসসমূহের মধ্যে এখতেলাফ হল  বিষয়ে যেরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। Ñইকমালুল মুলিম /৮১৮২ 

হাফেয ওলীউদ্দীন ইরাকী রাহবলেনÑ     

وَقَدْ اتّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنّهُ لَيْسَ لَهُ حَدّ مَحْصُورٌ وَلَكِنْ اخْتَلَفَتْ الرِّوَايَاتُ فِيمَا كَانَ يَفْعَلُهُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.

উলামায়ে কেরাম  ব্যাপারে একমত যেতাহাজ্জুদের নামাযের রাকাতসংখ্যা নির্ধারিত নেই। তবে  রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত পড়তেন?   সম্পর্কে হাদীস শরীফের বর্ণনাগুলো  বিভিন্ন ধরনের। Ñতরহুত তাছরীব /৪৩

তাহাজ্জুদ নামাযের রাকাতসংখ্যা যে নির্ধারিত নেই এর স্পষ্ট প্রমাণ হল আবু হুরায়রা রা.-এর বর্ণিত নি¤œ হাদীসটি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ أَوْ بِسَبْعٍ، أَوْ بِتِسْعٍ، أَوْ بِإِحْدَى عَشْرَةَ وَأَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ.

তোমরা তাহাজ্জুদ  বিতর মিলে পাঁচ রাকাতসাত রাকাতনয় রাকাতএগার রাকাত বা এর চেয়ে আরো বেশি রাকাত নামায পড়।১০ Ñমুখতাসারু কিয়ামিল লাইলপৃ২৭৭আল-আওসাতইবনুল মুনযির /১৮০ (২৬৪৩)মুস্তাদরাকে হাকেমহাদীস ১১৩৭সুনানে বায়হাকী /৩১

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহবলেনÑ

إِنّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنّ أُبَيّ بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ. فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ الْعُلَمَاءِ أَنّ ذَلِكَ هُوَ السّنّةُ؛ لِأَنّهُ أَقَامَهُ بَيْنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ، وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ.

وَاسْتَحَبّ آخَرُونَ: تِسْعَةً وَثَلَاثِينَ رَكْعَةً؛ بِنَاءً عَلَى أَنّهُ عَمَلُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ الْقَدِيمُ. وَقَالَ طَائِفَةٌ: قَدْ ثَبَتَ فِي الصّحِيحِ عَنْ عَائِشَةَ أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَمْ يَكُنْ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا غَيْرِهِ عَلَى ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.

 কথা সুপ্রমাণিত যেউবাই ইবনে কা রাসাহাবাদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন।  জন্য অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেনবিশ রাকাত তারাবীই সুন্নাহ। কেননাউবাই ইবনে কাব রাবিশ রাকাত তারাবী পড়িয়েছেন মুহাজির  আনসার সাহাবীদের উপস্থিতিতে। তখন তাঁদের কেউই এর উপর কোনো আপত্তি করেননি।১১ 

অন্যান্য আলেমের মতে তারাবীর নামায উনচল্লিশ রাকাত। কেননামদীনা শরীফে প্রথম দিকে উনচল্লিশ রাকাতই পড়া হত।

একদল আলেম বলেছেনসহীহ হাদীসে এসেছে যেরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান  রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না।

ইবনে তাইমিয়া আরো বলেনÑ

وَاضْطَرَبَ قَوْمٌ فِي هَذَا الْأَصْلِ، لِمَا ظَنّوهُ مِنْ مُعَارَضَةِ الْحَدِيثِ الصّحِيحِ لِمَا ثَبَتَ مِنْ سُنّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ، وَعَمَلِ الْمُسْلِمِينَ.

আলেমদের একশ্রেণি তারাবীর রাকাত সংখ্যার বিষয়ে দ্বিধা-দ্বেদ্বর শিকার। কারণতাঁরা দেখছেন যেসহীহ হাদীসে এসেছে এক সংখ্যা আর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ এবং যুগ পরম্পরায় চলে আসা মুসলমানদের আমল দ্বারা প্রমাণিত অন্য সংখ্যা।*

সামনে গিয়ে তিনি সমাধান দিয়েছেন এভাবেÑ

وَالصّوَابُ أَنّ ذَلِكَ جَمِيعَهُ حَسَنٌ، كَمَا قَدْ نَصّ عَلَى ذَلِكَ الْإِمَامُ أَحْمَدُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَأَنّهُ لَا يَتَوَقّتُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ عَدَدٌ، فَإِنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَمْ يُوَقِّتْ فِيهَا عَدَدًا. وَحِينَئِذٍ فَيَكُونُ تَكْثِيرُ الرّكَعَاتِ وَتَقْلِيلُهَا، بِحَسَبِ طُولِ الْقِيَامِ وَقِصَرِهِ. فَإِنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يُطِيلُ الْقِيَامَ بِاللّيْلِ، حَتّى إنّهُ قَدْ ثَبَتَ عَنْهُ فِي الصّحِيحِ مِنْ حَدِيثِ حُذَيْفَةَ: أَنّهُ كَانَ يَقْرَأُ فِي الرّكْعَةِ بِالْبَقَرَةِ، وَالنِّسَاءِ، وَآلِ عِمْرَانَ، فَكَانَ طُولُ الْقِيَامِ يُغْنِي عَنْ تَكْثِيرِ الرّكَعَاتِ. وَأُبَيّ بْنُ كَعْبٍ لَمّا قَامَ بالمسلمين وَهُمْ جَمَاعَةٌ وَاحِدَةٌ فِي زَمَنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ قَامَ بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً. لأن طول القيام كان يشق على الناس فَكَانَ تَضْعِيفُ الْعَدَدِ عِوَضًا عَنْ طُولِ الْقِيَامِ.

সঠিক কথা হল Ñযেমনটা ইমাম আহমাদ রাহ. বলেছেনÑ এই সুরতগুলোর সবই জায়েয।১২ তারাবীর রাকাতের নির্ধারিত কোনো সংখ্যা নেই। কেননানবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীর ব্যাপারে কোনো রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করেননি।

অতএব রাকাত সংখ্যা কম ও বেশি হওয়া নির্ভর করে কেরাত লম্বা ও ছোট হওয়ার উপর। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক দীর্ঘ কেরাত পড়তেন। হুযায়ফা রা. থেকে একটি সহীহ হাদীসে  এসেছে যেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের নামাযের এক রাকাতেই পড়তেন সূরা বাকারাসূরা নিসা ও সূরা আলে ইমরান। (সহীহ মুসলিমহাদীস ৭৭২) (যার পরিমাণ পাঁচ পারা থেকে বেশি।) এত দীর্ঘ কেরাত পড়ার কারণে রাকাতের পরিমাণ বাড়ানোর আর প্রয়োজন ছিল না।

উমর রা.-এর যমানায় উবাই ইবনে কাব রা. যখন সবাইকে নিয়ে এক জামাতে দাঁড়ালেন তখন তিনি বিশ রাকাত পড়েছেন। কেননাদীর্ঘ কেরাত মুসল্লীদের জন্য কষ্টের কারণ। তাই তিনি কেরাত দীর্ঘ না করে রাকাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন। Ñমাজমূউল ফাতাওয়া ২৩/১১২-১১৩১২০

বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আহলে ইলমের এসব উক্তি স্পষ্ট প্রমাণ করে যেঐসব লোকদের বক্তব্য ভুল যারা বলেএগার রাকাতের বেশি তারাবী পড়া বিদআত এবং বিশ রাকাত পড়ার মানে হল যোহরের নামায চার রাকাতের স্থলে পাঁচ রাকাত পড়া। মূর্খতা ও বিশৃঙ্খলার অনিষ্ট থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুনÑ আমীন।

উমর রা.-এর সুন্নাহ নবীজীরই সুন্নাহ

কথা আর লম্বা করছি না। সংক্ষিপ্তভাবে বর্তমানের মুজতাহিদ ইমামদের (?) যে কথা বলতে চাচ্ছি তা হলউমর রা. যা করেছেন বা যা করার নির্দেশ দিয়েছেন তা বিদআত নয়সুন্নাহ। উমর রা.-এর আমল ও সুন্নাহকে গ্রহণ করা মূলত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও আদর্শকেই গ্রহণ করা। কেননাÑ

এক. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপাধি দিয়েছেন ফারূক১৩  তথা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে হক ও বাতিল এবং হেদায়েত ও গোমরাহির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। সুতরাং তিনি হলেন হক বাতিলের মানদÐ। হে আল্লাহ! আপনি তার প্রতি রাযি হয়ে যান এবং তাকে রাযি করে দিন।

দুই. তিনি মুলহাম। মুলহাম বলা হয় এমন ব্যক্তিকেঅন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন নূরের কল্যাণে যার যবান থেকে কেবল সত্য ও সঠিক কথাই বের হয়যার হৃদয়ে গচ্ছিত রাখা হয়েছে শুধু খায়রশুধু হেদায়েত। স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

إِنّ اللهَ جَعَلَ الحَقّ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ.

উমর (রা.)-এর যবান ও কলবে আল্লাহ তাআলা হক ও সত্য গচ্ছিত রেখেছেন। Ñজামে তিরমিযীহাদীস ৩৬৮২মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৩২৬৪৯মুসনাদে আহমাদহাদীস ৫১৪৫২১২৯৫২১৪৫৭সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৬৮৮৯

তিনি আরো বলেছেনÑ

لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ مُحَدّثُونَ، فَإِنْ يَكُ فِي أُمّتِي أَحَدٌ، فَإِنّهُ عُمَرُ.

পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে কিছু মুহাদ্দাস১৪  থাকতেন। এই উম্মতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস থেকে থাকে তাহলে সে লোকটি হল উমর। Ñসহীহ বুখারী ৩৬৮৯সহীহ মুসলিমহাদীস ২৩৮৯

তিন. বেশ কিছু ক্ষেত্রে উমর রা. যেমনটা ভেবেছেন দেখা গেছে পরে ঐভাবেই কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। উমর রা. বলেনÑ

وَافَقْتُ رَبِّي فِي ثَلَاثٍ، فِي مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ، وَفِي الْحِجَابِ، وَفِي أُسَارَى بَدْرٍ.

তিনটি বিষয়ে আমার রবের ইচ্ছার সাথে আমার ইচ্ছা এক হয়েছে। ১. মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান বানানোর ক্ষেত্রে। ২. হিজাবের বিধান নাযিল হওয়ার বিষয়ে। ৩. বদরের বন্দীদের বিষয়ে ফয়সালা দেওয়ার ব্যাপারে। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ২৩৯৯

আরেক বর্ণনায় এসেছেউমর রা. বলেছেনতিনটি বিষয়ে আমার মত আমার রবের মতের সাথে মিলে গেছে। আমি আবেদন করলামইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান নির্ধারণ করতাম! তখন আয়াত নাযিল হয়েছেÑ

وَ اتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرٰهٖمَ مُصَلًّی.

তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানিয়ে নাও। [সূরা বাকারা (২) : ১২৫]

আমি বললামহে আল্লাহর রাসূল! আপনার ঘরে সৎ-অসৎ সবধরনের মানুষ আসে। আপনি যদি আপনার স্ত্রীদের পর্দা করার নির্দেশ দিতেন! এ কথার পর এই আয়াত নাযিল হয়েছেÑ

وَ اِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَسْـَٔلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ .

নবীর স্ত্রীগণের নিকট তোমরা কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। [সূরা আহযাব [৩৩) : ৫৩]

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ সবাই মিলে তাঁর সাথে অভিমান করলেন। আমি তাদেরকে বললামআপনারা যদি এসব আচরণ থেকে বিরত না হন তাহলে হয়ত আল্লাহ তাআলা আপন রাসূলকে আপনাদের থেকে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। তখন নাযিল হয়েছে এই আয়াতÑ

عَسٰی رَبُّهٗۤ اِنْ طَلَّقَكُنَّ اَنْ یُّبْدِلَهٗۤ اَزْوَاجًا خَیْرًا مِّنْكُنَّ

সে যদি তোমাদের সকলকে তালাক দিয়ে দেয়তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে শীঘ্রই তাকে দিতে পারেন এমন স্ত্রীযারা হবে তোমাদের চেয়ে উত্তম,...। [সূরা তাহরীম (৬৬) : ৫] Ñসহীহ বুখারীহাদীস ৪০২৪৪৮৩

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেনÑ

مَا نَزَلَ بِالنّاسِ أَمْرٌ قَطّ فَقَالُوا فِيهِ: وَقَالَ فِيهِ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ: أَوْ قَالَ عُمَرُ إِلّا نَزَلَ الْقُرْآنُ عَلَى نَحْوٍ مِمّا قَالَ عُمَرُ.

قال الترمذي: وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.

যখনই মুসলমানদের কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে আর সাহাবায়ে কেরাম কোনো মত দিয়েছেনকিন্তু উমর ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন তখন দেখা যেত উমরের মত অনুযায়ীই কুরআন নাযিল হয়েছে। Ñজামে তিরমিযীহাদীস ৩৬৮২মুসনাদে আহমাদহাদীস ৫৬৯৭

যখন উমর রা.-এর ভাবনা কুরআনের আয়াত দ্বারা সত্যায়িত হয়সেখানে সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে তার মত গ্রহণ করবেন নাতাঁর মতের উপর একমত হবেন না?

চার. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন খুলাফায়ে রাশেদীন বিশেষ করে আবু বকর রা. ও উরম রা.-এর সুন্নাহ ও আদর্শকে দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করে। তিনি বলেছেনÑ

إِنّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنّتِي وَسُنّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسّكُوا بِهَا، وَعَضّوا عَلَيْهَا بِالنّوَاجِذِ.

قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

কোনো সন্দেহ নেইআমার পর যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাহ এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে গ্রহণ করবে। এই আদর্শকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং মাঢ়ীর দাঁত দিয়ে কামড়ে থাকবে। Ñজামে তিরমিযীহাদীস ২৬৭৬সুনানে আবু দাউদহাদীস ৪৬০৭মুসনাদে আহমাদহাদীস ১৭১৪৪১৭১৪৫

আরেক হাদীসের নির্দেশÑ

اقْتَدُوا بِاللّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ.

قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.

আমার পর তোমরা আবু বকর ও উমরের অনুসরণ করবে। Ñজামে তিরমিযীহাদীস ৩৬৬২৩৬৬৩মুসনাদে আহমাদহাদীস ২৩২৪৫২৩২৭৬২৩৩৮৬সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৬৯০২

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেনÑ

مَنْ كَانَ مِنْكُمْ مُتَأَسِّيًا فَلْيَتَأَسّ بِأَصْحَابِ مُحَمّدٍ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ؛ فَإِنّهُمْ كَانُوا أَبَرّ هَذِهِ الْأُمّةِ قُلُوبًا وَأَعْمَقَهَا عِلْمًا وَأَقَلّهَا تَكَلّفًا وَأَقْوَمَهَا هَدْيًا وَأَحْسَنَهَا حَالًا، قَوْمٌ اخْتَارَهُمُ اللهُ تَعَالَى لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، ولإقامة دينه، فَاعْرِفُوا لَهُمْ فَضْلَهُمْ وَاتّبِعُوهُمْ فِي آثَارِهِمْ وتمسكوا بما استطعتم من أخلاقهم وسيرهم؛ فَإِنّهُمْ كَانُوا عَلَى الْهَدْىِ الْمُسْتَقِيمِ.

তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কারো অনুসরণ করতে চায় সে যেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অনুসরণ করে। কেননাসমস্ত উম্মতের মধ্যে তাঁদের হৃদয় সবচে পবিত্র এবং তাঁদের ইলম সবচে গভীর। তাঁরা লৌকিকতা থেকে অনেক দূরে। এবং তাঁরা ছিলেন শ্রেষ্ঠতম জীবনাদর্শ ও সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী।

তাঁদেরকে আল্লাহ তাআলা নির্বাচন করেছেন আপন নবীর সোহবত গ্রহণ এবং নিজের মনোনীত দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা বোঝার চেষ্টা করতাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ কর এবং যতদূর সম্ভব তাঁদের আখলাক-চরিত্র ও রীতি-নীতি দ্বারা নিজেদের জীবনকে সুসজ্জিত কর। কারণতাঁরা ছিলেন হেদায়েত ও সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। Ñজামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়াফাযলিহি ২/৯৭: লামহাতুম মিন তারীখিস সুন্নাহপৃ. ৩৭-৩৮

সুতরাং ধারণ করার জন্য আবু বকর ও উমরের আদর্শের পরিবর্তে আর কার আদর্শ অধিক উপযুক্তউমর রা. যে বিষয় মুসলিমদের জন্য চালু করলেন সে বিষয় কীভাবে বিদআত হতে পারেঅথচআলেম হওয়ার দাবিদার কিছু জাহেল একথাই বলছে! (ইন্ন লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

ইবনুল আসীর রাহ. বলেছেনبدعة (বিদআতহল নতুন কিছু চালু করা। নতুন বিষয়টি যদি কুরআন  সুন্নাহর বিপরীত হয় তাহলে তা নিন্দিতগর্হিত। এর বিপরীত নব-উদ্ভাবিত বিষয়টি যদি এমন হয়যার প্রতি কুরআন বা হাদীসে উৎসাহ এসেছে তাহলে তা নন্দিতপ্রশংসিত। যেমন দান-সদকার বিশেষ পদ্ধতি বা অন্য কোনো ভালো কাজ চালু করা। এসব করাতে দোষের কিছু নেই।

শরীয়তসম্মত ভালো কাজের প্রচলন করাকে নিম্নের হাদীসটি সমর্থন করেÑ

مَنْ سَنّ سُنّةً حسَنَة، كان له أجرُها وأجرُ من عمل بها.

যে ব্যক্তি ভালো কোনো নিয়ম চালু করল সে এর প্রতিদান পাবে এবং যারা এ অনুযায়ী আমল করবে তাদের প্রতিদানও পাবে। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ১০১৭

উমর রা.-এর নিম্নোক্ত উক্তিটিও ভালো কাজ প্রচলনের সমর্থন করেযা তিনি তারাবীর জামাতের ক্ষেত্রে বলেছেন যেÑ

نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هذِهِ.

(এটি উত্তম বিদআত)

তারাবীর জামাত যেহেতু ভালো ও প্রশংসনীয় কাজ তাই এটাকে তিনি ভালো বিদআত’ বলে অবহিত করেছেন এবং এর প্রশংসা করেছেন।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও তারাবীর জামাত করেছেনতবে তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিয়মিত পড়েননি এবং উম্মতকে এর জামাতের জন্য একত্র করেননি। সুতরাং তারাবীর জন্য জামাতের ব্যবস্থা করানিয়মিত জামাতের সাথে আদায় করা এবং মানুষকে জামাতের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করাÑ সবই বিদআত। তবেতা নন্দিত ও প্রশংসিত বিদআত। Ñজামিউল উসূল ১/২৮১

ইবনুল আসীর রাহ. আরো বলেনÑ

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকদিন জামাত করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেননা নিয়মিত জামাতের সাথে আদায় করলে উম্মতের উপর তা ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। (তাঁর ইনতিকালের পর এ আশঙ্কা আর বাকি নেই। তাই) উমর রা. লোকজনকে এর প্রতি সজাগ করেছেন এবং নিয়মিত জামাতের নিয়ম প্রবর্তন করেছেন। সুতরাং তিনি এর সওয়াব লাভ করবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা এভাবে জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়বে তাদের সকলের সওয়াবও তাঁর আমলনামায় য্ক্তু হতে থাকবে। Ñজামিউল উসূল ৬/১২৩

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেছেনÑ

وَالْبِدْعَةُ أَصْلُهَا مَا أُحْدِثَ عَلَى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ وَتُطْلَقُ فِي الشّرْعِ فِي مُقَابِلِ السّنّةِ فَتَكُونُ مَذْمُومَةً وَالتّحْقِيقُ أَنّهَا إِنْ كَانَتْ مِمّا تَنْدَرِجُ تَحْتَ مُسْتَحْسَنٍ فِي الشّرْعِ فَهِيَ حَسَنَة وَ إِنْ كَانَت مِمّا تَنْدَرِجُ تَحْتَ مُسْتَقْبَحٍ فِي الشّرْعِ فَهِيَ مُسْتَقْبَحَةٌ وَإِلّا فَهِيَ مِنْ قِسْمِ الْمُبَاحِ.

আভিধানিক অর্থে বিদআত হলএমন নতুন বিষয়পূর্বে যার দৃষ্টান্ত ছিল না। শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত শব্দটি সুন্নাহ’-এর বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এমন বিদআত মাযমূম ও নিন্দনীয়।

এক্ষেত্রে সঠিক কথা হলনব-উদ্ভাবিত বিষয়টি যদি শরীয়তে বাঞ্ছিত বিষয়গুলোর আওতায় পড়ে তাহলে তা উত্তম ও প্রশংসনীয়। যদি শরীয়তে অবাঞ্ছিত বিষয়গুলোর তালিকায় চলে যায় তাহলে তা নিন্দিত ও বর্জনীয়। আর যদি কোনোটার মধ্যে শামিল না হয় তাহলে বিষয়টি মুবাহ। Ñফতহুল বারী ৪/২৫৩

ইবনে হাজার রাহ. আরো বলেনÑ

قِيَامُ رَمَضَانَ سُنّةٌ لِأَنّ عُمَرَ إِنّمَا أَخَذَهُ مِنْ فِعْلِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَإِنّمَا تَرَكَهُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ خَشْيَةَ الِافْتِرَاضِ فَلَمّا مَاتَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَصَلَ الْأَمْنُ مِنْ ذَلِكَ وَرَجَحَ عِنْدَ عُمَرَ ذَلِكَ لِمَا فِي الِاخْتِلَافِ مِنَ افْتِرَاقِ الْكَلِمَةِ وَلِأَنّ الِاجْتِمَاعَ عَلَى وَاحِدٍ أَنْشَطُ لِكَثِيرِ مِنَ الْمُصَلِّينَ.

তারাবীর জামাত সুন্নত। কারণউমর রা. মূলত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল থেকেই এটাকে গ্রহণ করেছেন। নবীজী কয়েক রাতে জামাত করার পর উম্মতের উপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তা ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর ইনতেকালের পর এখন আর ফরয হওয়ার আশঙ্কা নেই। তাই উমর রা.-এর নিকট সবাইকে এক জামাতে দাঁড় করানোটাই অধিক উপযুক্ত মনে হয়েছে। কেননাএকই মসজিদে একাধিক ইমামের পিছনে জামাত হলে মুসলমানদের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। তাছাড়া সবাই মিলে এক ইমামের পিছনে নামায পড়া অনেকের জন্য উদ্যম ও উৎসাহেরও কারণ বটে।

এরপর ইবনে হাজার রাহ. বলেনÑ

لَمْ يَقَعْ فِي هَذِهِ الرِّوَايَةِ عَدَدُ الرّكَعَاتِ الّتِي كَانَ يُصَلِّي بِهَا أُبَيّ بْنُ كَعْبٍ وَقَدِ اخْتُلِفَ فِي ذَلِكَ فَفِي الْمُوَطّأِ عَنْ مُحَمّدِ بْنِ يُوسُفَ عَنِ السّائِبِ بْنِ يَزِيدَ أَنّهَا إِحْدَى عَشْرَةَ وَرَوَاهُ سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ مِنْ وَجْهٍ آخر وَزَاد فِيهِ وَكَانُوا يقرؤون بِالْمِائَتَيْنِ وَيَقُومُونَ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ وَرَوَاهُ مُحَمّدُ بْنُ نَصْرٍ الْمَرْوَزِيّ مِنْ طَرِيقِ مُحَمّدِ بْنِ إِسْحَاقَ عَنْ مُحَمّدِ بْنِ يُوسُفَ فَقَالَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ وَرَوَاهُ عَبْدُ الرّزّاقِ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ مُحَمّدِ بْنِ يُوسُفَ فَقَالَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ وَرَوَى مَالِكٌ مِنْ طَرِيقِ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ عَنِ السّائِبِ بْنِ يَزِيدَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَهَذَا مَحْمُولٌ عَلَى غَيْرِ الْوِتْرِ وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ قَالَ كَانَ النّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ وَرَوَى مُحَمّدُ بْنُ نَصْرٍ مِنْ طَرِيقِ عَطَاءٍ قَالَ أَدْرَكْتُهُمْ فِي رَمَضَانَ يُصَلّونَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَثَلَاثَ رَكَعَاتِ الْوِتْرَ وَالْجَمْعُ بَيْنَ هَذِهِ الرِّوَايَاتِ مُمْكِنٌ بِاخْتِلَافِ الْأَحْوَالِ وَيُحْتَمَلُ أَنّ ذَلِكَ الِاخْتِلَافَ بِحَسَبِ تَطْوِيلِ الْقِرَاءَةِ وَتَخْفِيفِهَا فَحَيْثُ يُطِيلُ الْقِرَاءَةَ تَقِلّ الرّكَعَاتُ وَبِالْعَكْسِ.

উবাই ইবনে কাব রা. কত রাকাত নামায পড়িয়েছিলেন তা ঐ রেওয়ায়েতে১৫  বিবৃত হয়নি। তিনি সাহাবীদের নিয়ে কত রাকাত তারাবী পড়েছিলেনÑ এ বিষয়ে কয়েক ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। সাইব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ তিনভাবে বর্ণনা করেছেন। ১. বিতরসহ এগার রাকাত। তখন একেক রাকাতে দুইশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। দীর্ঘ কেরাতের কারণে লাঠির উপর ঠেক দিয়ে দাঁড়াতে হত। ২. বিতরসহ তের রাকাত। ৩. বিতরসহ একুশ রাকাত।১৬

সাইব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা বর্ণনা করেছেন যেসাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাত তারাবী পড়তেন। ইয়াযীদ ইবনে রূমান রাহ.ও বলেনউমর রা.-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম বিতরসহ তেইশ রাকাত নামায পড়তেন। আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেছেনআমি মক্কার সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের দেখেছিতারা বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।

এসব রেওয়ায়েতের মাঝে এভাবে সমন্বয়১৭  করা যায় যেএকেক সময় একেক সংখ্যার তারাবী পড়তেন। অথবা এমনও হতে পারে যেকেরাত দীর্ঘ করলে রাকাত কম পড়তেন আর কেরাত হালকা করলে রাকাত সংখ্যা বাড়াতেন। Ñফতহুল বারী ৪/২৫২২৫৩

তাঁরা হলেন মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম। তাঁদের বক্তব্য হলÑ তারাবী সম্পর্কে নবীজী থেকে নির্ধারিত কোনো সংখ্যা প্রমাণিত নয়। অপরদিকে খায়রুল কুরূন  থেকে বিশ ও বিশের অধিক রাকাত তারাবীর আমল চলে আসছে। সুতরাং কীভাবে বলা যায় যেবিশ রাকাত বা এর অধিক রাকাত পড়া বিদআত?১৮

ভাষান্তর ও টীকা : মাওলানা ইমরান হুসাইন

 

 

টীকা

১. তিনি পুস্তিকাটি রচনা করেছেন আজ থেকে উনচল্লিশ বছর আগে ১৪০৩ হিজরীতে। এখন ১৪৪২ হিজরী। সে হিসাবে ৫৯ বছর যাবৎ মসজিদে হারামের বিশ রাকাত তারাবী তার সামনে।

২. এ ধরনের হাদীস অনেক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। একজন হলেন ইবনে আব্বাস রা.। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

لَا يَجْمَعُ اللهُ أُمّتِي عَلَى ضَلَالَةٍ أَبَدًا وَيَدُ اللهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ.

আল্লাহ তাআলা কখনো আমার উম্মাতকে গোমরাহির উপর একমত করবেন না। আল্লাহর হাত (সাহায্য-সন্তুষ্টি) মুসলিমদের ঐক্যের উপর। Ñমুস্তাদরাকে হাকেমহাদীস ৩৯৮৩৯৯আলআসমা ওয়াস সিফাতবায়হাকীহাদীস ৭০২

হাদীসটির সনদ হাসান। ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটির দ্বিতীয় অংশ বর্ণনা করে এর সনদকে হাসান’ বলেছেন। শায়েখ শুআইব আরনাউত টীকায় এটিকে সহীহ’ বলেছেন। Ñজামে তিরমিযীহাদীস ২৩০৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সিদ্দীক আলগুমারী রাহ. বলেনÑ

إسناده حسن إن شاء الله.

হাদীসটির সনদ হাসান। Ñতাখরীজু আহাদীসিল লুমাপৃ. ২৪৬ (৭২)

আবু মাসউদ রা. বলেনÑ

وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنّ اللهَ لَا يَجْمَعُ أُمّةَ مُحَمّدٍ عَلَى ضَلَالَةٍ.

তোমরা জামাতকে আঁকড়ে থাক। কেননা আল্লাহ তাআলা নবীজীর সকল উম্মতকে ভ্রষ্টতার উপর জমা (একমত) করবেন না। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাআসার ৩৮৩৪৭,

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেনÑ

إسْنَادُهُ صَحِيحٌ وَمِثْلُهُ لَا يُقَالُ مِنْ قِبَلِ الرَّأْيِ.

আসারটির সনদ সহীহ। আর এধরনের কথা নবীজী থেকে না শুনে সাহাবী নিজের পক্ষ থেকে বলতে পারেন না। Ñআততালখীসুল হাবীর ৩/১৪১

৩. অর্থাৎ আজ পর্যন্ত তাদের দীপ্তিমান(!) ইজতিহাদ আমাদেরকে এই পর্যন্ত দেখিয়েছে। সামনে আরো কত কিছু যে দেখায়Ñ আল্লাহ্ই ভালো জানেন!

৪.  . রমযানের বাইরে তারাবী নেইÑ একথা সকলের জানা। আর ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর এই উক্তির ভিত্তি এই কথার উপর যেতারাবী ও তাহাজ্জুদ একই নামায। অথচ সালাফে সালেহীন তথা সাহাবাতাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের কর্মপন্থা প্রমাণ করেতারাবী ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন দুই নামায। এজন্য তাদের কেউই বিশ থেকে কম রাকাতের মত গ্রহণ করেননি। যদি তাহাজ্জুদ ও তারাবী একই নামায হত তাহলে অবশ্যই তাদের কেউ না কেউ বিশের কম রাকাতের প্রবক্তা হতেন।

তারাবী ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন দুই নামায হওয়ার কারণে রাতের প্রথমাংশে তারাবী পড়ার পর শেষ অংশে তাহাজ্জুদ পড়া কোনো আলেমের নিকট মাকরূহ নয়। ইমাম বুখারী রাহ রমযান মাসে শুরু রাতে জামাতের সাথে তারাবী পড়তেন এবং এতে কুরআন শরীফ এক খতম করতেন। আর শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং এতে প্রতি তিন রাতে এক খতম করতেন। Ñফাতহুল বারী (মুকাদ্দিমা)পৃ. ৫০৫

৫. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীর নামাযে কেরাত কী পরিমাণ দীর্ঘ করতেনÑ এ সম্পর্কে খোদ ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর বক্তব্য সামনে আসছে যেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীর এক রাকাতে সূরা বাকারাসূরা আলে ইমরান ও সূরা নিসা শেষ করেছেনযার পরিমাণ হল পাঁচ পারা সাড়ে পাঁচ পৃষ্ঠা। অর্থাৎ তিনি পাঁচ পারা থেকে বেশি তিলাওয়াত করেছেন এক রাকাতেই। এত দীর্ঘ কেরাতে তারাবী পড়া কয়জনের সাধ্যে কুলাবে?

৬. ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর বক্তব্য থেকে বাহ্যত মনে হচ্ছেআহমাদ রাহ. ও অন্যান্য ইমামগণের নিকট বিশ রাকাতছত্রিশ রাকাত ও চল্লিশ রাকাতের পাশাপাশি দশ রাকাত তারাবীরও সুযোগ আছে। অথচ বাস্তবতা এমন নয়। বিশ রাকাতের নিচেও তারাবী পড়া যাবেÑ এটা এসব ইমামের মাকসাদ নয়। তাঁদের মাকসাদ হলবিশ ও এর অধিক রাকাতের যত মত পাওয়া যায় সে গুলোর ব্যাপারে যে কোনো একটা সংখ্যা গ্রহণ করার অবকাশ আছেÑ একথা বোঝানো। বিশ ও বিশের অধিক সংখ্যাগুলো থেকে যার নিকট যে সংখ্যা উত্তম বিবেচিত হয় সে সেটা গ্রহণ করতে পারবে। ইমামগণের মূল বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। আহমাদ রাহ.-এব বক্তব্যটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী রাহ.। তিনি বলেনতারাবীর রাকাত সংখ্যার বিষয়ে এখতেলাফ আছে। মদীনাবাসীর মত হল বিতরসহ একচল্লিশ রাকাত আর অধিকাংশ ইমামের মতে বিশ রাকাত। ইসহাক  ইবনে রাহুইয়াহ রাহ. বলেছেনআমাদের মতে বিতরসহ একচল্লিশ রাকাত। কিন্তু আহমাদ রাহ. কোনো একটা নির্ধারণ করেননি। বরং বলেছেনÑ رُوِيَ فِي هَذَا أَلْوَانٌ

তারাবীর রাকাত সংখ্যার বিষয়ে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। (জামে তিরমিযীহাদীস ৮০৬-এর আলোচনা)

তিরমিযী রাহ.-এর পূর্ণ বিবরণ থেকে স্পষ্ট যেআহমাদ রাহ.-এর উদ্দেশ্য  কথা বলা যেবিশ রাকাত এবং এর অধিক রাকাতের ব্যাপারে একাধিক রেওয়ায়েত আছে। তিনি এর মধ্যে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করেননি। অন্যত্র তিনি স্পষ্ট শব্দে বলেছেনÑ

لَا بَأْس بِالزِّيَادَةِ على عشْرين رَكْعَة.

তারাবীর নামায বিশ রাকাত থেকে বেশি পড়লে কোনো সমস্যা নেই। Ñআলফুরূ‘, আবু আবদুল্লাহ ইবনে মুফলিহ ১/৪৮৮আলমুবদি‘ শারহুল মুকনি‘ ২/২২আননুকাত ওয়াল ফাওয়াইদুস সানিয়্যা ১/৯০আলইনসাফমুরদাভী ২/১৮০

আহমাদ রা.-এর পুত্র আবদুল্লাহ বলেনআব্বাজীকে এত বেশি রাকাত তারাবী পড়তে দেখেছিযার সংখ্যা উল্লেখ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। Ñমাসাইলুল ইমাম আহমাদ (৪৫৫)আলমুবদি‘ ২/২২

ইমাম শাফিঈ রাহ. বলেছেনÑ

رَأَيْتُ النّاسَ يَقُومُونَ بِالْمَدِينَةِ تِسْعًا وَثَلَاثِينَ رَكْعَةً قَالَ: وَأَحَبّ إِلَيّ عِشْرُونَ، قَالَ: وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكّةَ، قَالَ: وَلَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنْ هَذَا ضِيقٌ وَلَا حَدّ يَنْتَهِي إِلَيْه.

মদীনাবাসীদের দেখেছিউনচল্লিশ রাকাত নামায পড়ে। আমার নিকট তারাবী বিশ রাকাত পড়া উত্তম। কেননামক্কাবাসীরা বিশ রাকাত পড়ে। তবে এসব সংখ্যার কোনটি নির্ধারিত নেই যেএর বেশি পড়া যাবে না। Ñমুখতাছারু কিয়ামিল লাইলপৃ. ২০২মারিফাতুস সুনানবায়হাকী ৪/৩৯,৪২

দেখুন শাফিঈ রাহ. একথা বলছেন না যেবিশ রাকাতের কমও পড়া যাবেবরং পরিষ্কার বলছেন যেতিনি যদিও বিশ রাকাতের মত গ্রহণ করেছেনতবে কেউ চাইলে এর বেশিও পড়তে পারবে।

মোটকথাতারাবীর রাকাত সম্পর্কে যেসব বর্ণনা আছে এর যে কোনো একটা গ্রহণ করা যেতে পারেÑ ইমামগণের এধরনের বক্তব্যের ক্ষেত্র হল বিশ ও বিশের অধিক রাকাত। বিশছত্রিশচল্লিশ ইত্যাদির মধ্যে কোনো একটা সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তাই এর থেকে যে কোনো একটা সংখ্যা গ্রহণ করে এ অনুযায়ী আমল করা যাবে। তাঁদের উক্তির অর্থ এ নয় যেবিশ রাকাতের কম রাকাত সম্পর্কেও কোনো বর্ণনা আছে আর সে বর্ণনা অনুযায়ী বিশ রাকাতের কম তারাবী পড়াও অবকাশ আছে।

৭.  এই হাদীস যে আট রাকাত তারাবীর দলীল হতে পারে না তা তো স্পষ্ট। কেননাএখানে রমযান ও রমযানের বাইরের তথা বার মাসের নামাযের বিবরণ এসেছে। আর সারা বছর তো তারাবী পড়া হয় নাতাহাজ্জুদ পড়া হয়। সুতরাং এখানে তারাবী নয়তাহাজ্জুদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

হাদীসটিতে যদি তারাবীর কথা বলা হত তাহলে সালাফের যুগে কেউ না কেই এর উপর আমল করতেন এবং আট রাকাত তারাবীর প্রবক্তা হতেন। অথচ সাহাবায়ে কেরামতাবেঈনতাবে তাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের মধ্যে একজনও পাওয়া যায় নাযিনি আট রাকাত তারাবীর মত গ্রহণ করেছেন। এর থেকে স্পষ্ট যেতাদের কারো মতেই এই হাদীস তারাবী সংক্রান্ত নয়বরং সকলের মতেই এটি  তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত হাদীস।

বরং হাদীসটির রাবী স্বয়ং আয়েশা রা.-এর নিকটও এই হাদীস তারাবীর বিষয়ে নয়। তাই তো তাঁর হুজরা সংলগ্ন মসজিদে নববীতে ১৪ হিজরী থেকে তাঁর মৃত্যুসন ৫৭ হিজরী পর্যন্ত চল্লিশ বছরের অধিককাল বিশ রাকাত তারাবীর জামাত হয়েছেকিন্তু কখনো এতে কোনো আপত্তি করেননি। তাঁর কাছে আট রাকাত তারাবী সম্পর্কে অকাট্য হাদীস থাকবে আর তাঁর সামনে এর বিরোধিতা করা হবেতারপরও তিনি চুপ করে থাকবেন! কোনো আপত্তি করবেন না! এটা কি সম্ভব? 

যাইহোকযদি মেনে নেওয়া হয় যেহাদীসটিতে তাহাজ্জুদের বিবরণ দেওয়া হয়েছেতাহলেও অনেক কারণে এর দ্বারা আট রাকাত তারাবীর দলীল দেওয়া যায় না। মুহতারাম লেখক এখানে দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

সহীহ বুখারীর প্রখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রাহবলেছেনÑ وَإِسْنَاده حسن হাদীসটির সনদ হাসান। Ñউমদাতুল কারী /২০৩

তাউস রাহ. বলেনÑ

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي سَبْعَ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنَ اللّيْلِ. (رجاله ثقات، وهو مرسل(

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সতের রাকাত নামায পড়তেন। Ñআযযুহদ ওয়ার রাকাইকইবনুল মুবারকহাদীস ১২৭৩

সুতরাং তারাবী ও তাহাজ্জুদকে এক নামায মনে করলেও তারাবীকে আট রাকাতে সীমিত করা যাবে না।

৯. বরং আবদুল্লাহ ইবনে কায়সের বর্ণনায় স্বয়ং আয়েশা রা. থেকেই সহীহ সনদে তের রাকাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। দেখুনÑ সুনানে আবু দাউদহাদীস ১৩৬২মুসনাদে আহমাদহাদীস ২৫১৫৯শরহু মাআনিল আসারতহাবীহাদীস ১৬৯৭

১০. ইবনে হাজার রাহ. বলেছেনÑ

وَرِجَالُهُ كُلّهُمْ ثِقَاتٌ وَلَا يَضُرّهُ وَقْفُ مَنْ أَوْقَفَهُ

Ñআততালখীসুল হাবীর ২/৩৮

ইরাকী রাহবলেছেনÑ وَإِسْنَاده صَحِيحٌ হাদীসটির সনদ সহীহ। Ñনাইলুল আওতারশাওকানী /৪৩

আরেকটি হাদীস লক্ষ করুন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

صَلاَةُ اللّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصّبْحَ صَلّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلّى.

তাহাজ্জুদের নামাযের নিয়ম হল দুই দুই রাকাত করে পড়তে থাকবে। এরপর যখন সুবহে সাদেক উদিত হওয়ার আশঙ্কা করবে তখন এক রাকাত যোগ করে নেবেযা পূর্বের নামাযগুলোকে বেজোড় করে দেবে। Ñসহীহ বুখারীহাদীস ৯৯০সহীহ মুসলিমহাদীস ৭৪৯

এসব হাদীস এবং আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্য দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছে যেতাহাজ্জুদের রাকাত সংখ্যার নির্ধারিত কোনো সীমা নেই। দুই দুই রাকাত করে যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যাবে এবং যত বেশি পড়া হবে ততই বেশি সাওয়াব হবে। সুতরাং যারা বলেনসারা বছরের তাহাজ্জুদ রমযান মাসে তারাবী হয়ে যায় তাদের বলা উচিৎ যেতাহাজ্জুদের যেমন কোনো রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত নেই তেমনি তারাবীরও কোনো নির্ধারিত রাকাত সংখ্যা নেই। যে যত বেশি রাকাত পড়বে সে তত বেশি সাওয়াবের অধিকারী হবে।

১১. পূর্বে ইবনে আবদুল বার রাহ. ও ইবনে কুদামা রাহ.-এর বক্তব্যও পড়েছেন যেতারা বিশ রাকাত তারাবীর বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ইজমার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ইবনে হাজার হায়তামী রাহ. বলেনÑ

أَجْمَعَ الصّحَابَةُ عَلَى أَنّ التّرَاوِيحَ عِشْرُونَ رَكْعَةً.

এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ইজমা প্রতিষ্ঠিত যেতারাবীর নামায বিশ রাকাত। Ñফতহুল ইলাহ ফী শারহিল মিশকাহ ৫/১৩০মিরকাতুল মাফতীহ ৩/৯৭৩

খুলাফায়ে রাশেদীন এবং যুগ পরম্পরায় চলে আসা উম্মাহর এই আমলও প্রমাণ করেরমযান ও রমযানের বাইরে এগার রাকাতের হাদীসটির সাথে তারাবীর কোনো সম্পর্ক নেই।

১২. পূর্বের কথাটি আবার স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি। আহমাদ রাহ. সবগুলো সুরত জায়েয বলে বিশ ও বিশের অধিক রাকাত সংখ্যা বুঝিয়েছেন। বিশের নিচের কোনো সংখ্যা বোঝাননি।

১৩. উমর রা. যে ফারূক’ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন তা একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। যেমনÑ

(ক) আয়েশা রা.। (তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/১৪৪তারীখুল মদীনাইবনে শাব্বাহ ২/৬৬২)

(খ) আবুদ দারদা রা.। (তারীখে ইবনে আসাকির ৩৯/২৯৫)

(গ) উমর রা.। (হিলইয়াতুল আউলিয়া ১/৭৫-৭৬ (৯৩)দালাইলুল নুবুওয়াহ ১/১৬৯)

(ঘ) ইবনে আব্বাস রা.। (তাফসীরে কালবীফতহুল বারীইবনে হাজার ৫/৩৭-৩৮)

(ছ) আইয়ুব ইবনে মূসা রাহ. (তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/১৪৪তারীখুল মদীনা ২/৬৬২)

১৪. হুমায়দী রাহ. বলেনÑ

الْمُحَدَّثُ الْمُلْهَمُ لِلصَّوَابِ.

মুহাদ্দাস এমন ব্যক্তিযার হৃদয়ে সত্য ও সঠিক বিষয় ঢেলে দেওয়া হয়। Ñশরহু মাযাহিবি আহলিস সুন্নাহইবনে শাহীনপৃ. ৯৮ (৮৫)ফাযাইলুল খুলাফাইর রাশিদীনআবু নুআইমপৃ. ৪২ (১৫)

ইমাম বুখারী রাহ. বলেনÑ

يَجْرِي الصَّوَابُ عَلَى أَلْسِنَتِهِمْ.

মুহাদ্দাস এমন ব্যক্তিযার যবান হতে সঠিক বিষয় প্রকাশ পায়। Ñশরহু মুসলিমনববী ১৫/১৬৬

১৫. যাতে বিবৃত হয়েছে যেউমর রা. এক রাতে বের হয়ে সাহাবীদেরকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় তারাবীর নামায পড়তে দেখেন। তখন তিনি উবাই ইবনে কাব রা.-এর ইমামতিতে সকলের জন্য এক জামাতের ব্যবস্থা করেন। এই রেওয়ায়েতটি পূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে।

১৬. এ তিনটি বর্ণনা একই রেওয়ায়েতের একাধিক বক্তব্য। সবগুলোই বর্ণনা করেছেন একা মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ। বোঝাই যাচ্ছেইবনে ইউসুফ এখানে ভুলের শিকার হয়েছেন। রেওয়ায়েতটিকে সঠিকভাবে ধারণ ও বর্ণনা করতে পারেননি। এজন্য

তার রেওয়ায়েতে অমিল ও বৈপরীত্যপূর্ণ কথা পাওয়া যাচ্ছে। কখনো বলেছেনএগার রাকাত। কখনো বলেছেনতের রাকাত। কখনো বলেছেনএকুশ রাকাত। এভাবে তাঁর বক্তব্যে গরমিল (ইযতিরাব) হয়ে গেছে। ইযতিরাব একটি ইল্লত (ত্রæটি)। এর কারণে রেওয়ায়েত যয়ীফ সাব্যস্ত হয়। সুতরাং ইযতিরাব থাকার কারণে ইবনে ইউসুফের এই রেওয়ায়েতটি যয়ীফ।

শায়েখ আলবানী রাহ. তিনটি রেওয়ায়েতের মধ্যে এগার রাকাতের রেওয়ায়েতটিকে প্রাধান্য দেওয়ার লক্ষ্যে একুশ রাকাতের রেওয়ায়েতটিকে যয়ীফ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন এবং তের রাকাতের রেওয়ায়েতটিতে ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

একুশ রাকাতের বর্ণনা সম্পর্কে বলেছেনএটি বর্ণনা করেছেন আবদুর রায্যাক। আবদুর রায্যাক শেষ বয়সে তাগায়্যুর’ (স্মৃতি-দুর্বলতা)-এর শিকার হয়েছিলেন। এ রেওয়ায়েতটি তিনি কখন বর্ণনা করেছেনতাগায়্যুরের আগে না পরেÑ তা জানা যায়নি। সুতরাং এ রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। 

আবদুর রায্যাক সম্পর্কে শায়েখ আলবানী রাহ.-এর মন্তব্য সঠিক নয়। আবদুর রায্যাক রাহ. এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর কিতাব আলমুসান্নাফ’-এ। ইমাম বুখারী রাহ. ও মুসলিম রাহ.-সহ সকল ইমামই তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন। শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে তাগায়্যুর’ (স্মৃতি-দুর্বলতা) বা ইখতিলাত’ (স্মৃতিবিভ্রম)-এর শিকার হয়েছিলেন। তবেসকল ইমামের মতেই তিনি কিতাব দেখে যা বর্ণনা করেন তা সহীহ। অর্থাৎ তাঁর কিতাবাদিতে যেসব হাদীস আছে তাতে তাগায়্যুরের কোনো

প্রভাব পড়েনি। ইমাম আহমাদ রাহ. বলেনÑ

من سمع مِنْهُ بعد مَا عمي فَلَيْسَ بِشَيْء وَمَا كَانَ فِي كتبه فَهُوَ صَحِيح.

যে মুহাদ্দিস আবদুর রায্যাক অন্ধ হওয়ার পর তাঁর থেকে হাদীস শুনেছেন তার হাদীস কোনো হাদীস নয়। হাঁআবদুর রায্যাকের কিতাবের মধ্যে যেসব হাদীস আছে তা সহীহ। Ñআলহাদইউস সারীপৃ. ৪৪০

আবদুর রায্্যাকের আলমুসান্নাফ’ কিতাবটি বর্ণনা করেছেন ইসহাক ইবনে ইবরাহীম দাবারী। তিনি আবদুর রায্যাক থেকে ইখতিলাতের পর হাদীস শুনেছেন। তবে আবদুর রায্যাক তার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন কিতাব থেকে। এজন্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম আবদুর রায্যাক থেকে তার বর্ণনাকে গ্রহণ করেছেন। খতীব বাগদাদী রাহ. বলেনÑ

روى الدبري عن عبد الرزاق عامة كتبه، ونقلها الناس عنه وسمعوها منه.

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম দাবারী আবদুর রায্যাক থেকে তার অধিকাংশ কিতাব বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসগণ সেসব কিতাব দাবারীর কাছে শুনেছেন এবং তার থেকে বর্ণনা করেছেন। Ñআলকিফায়াহ /২২৫

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম দাবারী আবদুর রায্যাক থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন তার তাগায়্যুরের পর। তা সত্তে¡ একাধিক ইমাম তার বর্ণিত হাদীস দিয়ে দলীল দিয়েছেন। হাফেয ইরাকী রাহ হাফেয সাখাভী রাহবলেনÑ

وَكَأَنّهُمْ لَمْ يُبَالُوا بِتَغَيّرِ عَبْدِ الرّزّاقِ، لِكَوْنِهِ إِنّمَا حَدّثَهُ مِنْ كُتُبِهِ، لَا مِنْ حِفْظِهِ.

অর্থাৎ আবদুর রায্যাক যেহেতু দাবারীর কাছে কিতাব থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেনতাই এসব ইমাম আবদুর রায্যাকের তাগায়্যুরের কোনো পরোয়া করেননি। Ñফাতহুল মুগীসইরাকীপৃ.

৪৬১ফাতহুল মুগীসসাখাভী /৩৮২-৩৮৩তাদরীবুর রাবী /৫৭৪-৫৭৫

হাফেয যাহাবী রাহবলেছেনÑ

رَاويَة عَبْد الرّزّاقِ، سَمِعَ تَصَانِيْفه مِنْهُ، وَسَمَاعه صَحِيْحٌ.

তিনি আবদুর রায্যাকের হাদীস বর্ণনাকারী। আবদুর রায্যাক থেকে তার কিতাবসমূহ শুনেছেন। এবং তার শোনাতে আবদুর রায্যাকের তাগায়্যুরের কোনো প্রভাব নেই। Ñসিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩/৪১৬

হাফেয ইবনে হাজার রাহইসহাক ইবনে ইবরাহীম দাবারীর জীবনীতে বলেছেনইসহাক ইবনে ইবরাহীম দাবারী যদিও আবদুর রায্যাকের ইখতিলাতের পর তার থেকে হাদীস শুনেছেন কিন্তু তিনি আবদুর রায্যাক থেকে মুসান্নাফসহ অন্যান্য যেসব কিতাব বর্ণনা করেন ইখতিলাতের কারণে তাতে কোনো কালাম করার সুযোগ নেই। Ñলিসানুল মীযান /৩৭-৩৮

শায়েখ আলবানী রাহ. তের রাকাতের রেওয়ায়েত সম্পর্কে বলেছেন। তের-এর মধ্যে দুই রাকাত ফযরের সুন্নত। তাঁর একথা স্পষ্ট ভুল। ফজরের সুন্নত এককভাবে আদায় করা হয়। এখানে বর্ণনাকারী এককভাবে আদায়কৃত নামাযের বিবরণ দেননি। উমরের (রা.) যামানায় তারাবীর জামাতে আদায়কৃত রাকাতগুলোর বিবরণ দিয়েছেন।

ইবনে ইউসুফের এই রেওয়ায়েতে আরো ইল্লত আছেযার প্রত্যেকটি এই বর্ণনাকে ভুল প্রমাণিত করার জন্য যথেষ্ট। এক. এর মতন যেমন মুযতাবির সনদও মুযতারিব। ইবনে ইউসুফ একবার এক উস্তাযের নামে বর্ণনা করলে অন্যবার আরেক উস্তাযের নাম উল্লেখ করেন। কখনো বলেনআমার কাছে বর্ণনা করেছেন সাইব ইবনে ইয়াযীদকখনো বলেনআমি এটি শুনেছি বারা ইবনে সাবেত ইবনে ইয়াযীদ থেকে। দেখুনÑ আলফাওয়াইদআবু বকর

নীশাপুরী (মাখতূত)পৃ. ৬

দুই. ইবনে ইউসুফের রেওয়ায়েত ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফার রেওয়ায়েতের বিপরীত। ইবনে খুসায়ফার বর্ণনা হলসাইব ইবনে ইয়াযীদ বিশ রাকাত তারাবীর কথা বর্ণনা করেছেন। দুজনের মধ্যে ইবনে খুসায়ফার রেওয়ায়েত সহীহ আর ইবনে ইউসুফের রেওয়ায়েত ভুল। কেননাইবনে খুসায়ফার রেওয়ায়েতের অনেক শাহেদ (সমর্থক) আছে। অর্থাৎ তাঁর এই রেওয়ায়েত ছাড়াও এমন আরো একাধিক রেওয়ায়েত আছেযেখানে বিশ রাকাত তারাবীর কথা এসেছে। খোদ ইবনে হাজার রাহ.-এর বক্তব্যেও কিছু শাহেদ উল্লিখিত হয়েছে।

কিন্তু মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের রেওয়ায়েতের কোনো শাহেদ নেই। উমর রা.-এর যমানায় বিতরসহ এগার রাকাততের রাকাত বা একুশ রাকাত তারাবী পড়া হতÑ এ তিন বর্ণনার কোনোটার কোনো সমর্থক নেই। নির্ভরযোগ্য সনদে একজন রাবীর বর্ণনায়ও পাওয়া যায় না যেউমর রা.-এর যুগে এগার রাকাততের রাকাত বা একুশ রাকাত পড়া হত।

তিন. আমলে মুতাওয়ারাস তথা সর্বযুগে উম্মাহর অবিচ্ছিন্ন সম্মিলিত আমল বিশ রাকাত’-এর উপর। এই আমল ইবনে খুসায়ফার রেওয়ায়েতের পক্ষেইবনে ইউসুফের রেওয়ায়েতের বিপক্ষে। উম্মাহর এই আমল ইবনে খুসায়ফার রেওয়ায়েতকে শক্তি যোগায় এবং ইবনে ইউসুফের রেওয়ায়েতের দুর্বলতাকে আরো বৃদ্ধি করে। কেননাহাদীস ও আসার সহীহ বা যয়ীফ হওয়ার ক্ষেত্রে উম্মাহর আমল অনেক বড় ও শক্তিশালী মানদÐ। আবু বকর হাযেমী রাহ. বলেনদুই রেওয়ায়েতের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা দিলে এক রেওয়ায়েতকে প্রাধান্য দেওয়ার একটি উপায় হলÑ

أَنْ يَكُونَ مَعَ أَحَدِ الْحَدِيثَيْنِ عَمَلُ الْأُمّةِ دُونَ الْآخَرِ؛ لِأَنّهُ يَجُوزُ أَنْ تَكُونَ عَمِلَتْ بِمُوجَبِهِ لِصِحّتِهِ، وَلَمْ تَعْمَلْ بِمُوجَبِ الْآخَرِ لِضَعْفِهِ، فَيَجِبُ تَقْدِيمُ الْأَوّلِ لِهَذَا التّجْوِيزِ.

এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী উম্মাহর আমল বিদ্যমান থাকাঅন্য রেওয়ায়েত অনুসারে উম্মাহর আমল না থাকা। কেননাএটাই তো স্বাভাবিক যেপ্রথমটি সহীহ হওয়ার কারণে এ মোতাবেক আমল চলে আসছেআর দ্বিতীয়টি যয়ীফ হওয়ার কারণে সে মাফিক আমল করা হয়নি। এজন্য যে রেওয়ায়েত অনুযায়ী আমল বিদ্যমান সেটাকে প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যক। Ñআলইতিবার ১/১৫০

১৭. ইবনে হাজার রাহ.-এর বক্তব্যে বিশ রাকাত তারাবীর বিবরণ এসেছে তিনজনের বর্ণনায় আর একা মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনায় এসেছে তিন ধরনের বক্তব্য : বিতরসহ এগার রাকাততের রাকাত ও একুশ রাকাত। ইবনে ইউসুফের বর্ণনা ইযতিরাব ও অন্যান্য কারণে ভুল ও মুনকার। রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে বাকি রইল শুধু বিশ রাকাতের বর্ণনা। রাকাতের সংখ্যা নিয়ে আর এখতেলাফ নেই। অতএব সমন্বয় বিধানের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

১৮. (মুহতারাম লেখকের টীকা) তারাবীর রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে তাসহীহু হাদীসি সালাতিত তারাবীহ ইশরীনা রাকাআতান’ নামে সৌদি আরবের দারুল ইফতা তথা ফতোয়া বিভাগের সদস্যবিশিষ্ট ফকীহ ও মুহাদ্দিসশায়েখ ইসমাঈল আনসারীর একটি পুস্তিকা আছে। এটি অতি মূল্যবান একটি গ্রন্থ। এতে আছে বক্র মস্তিষ্কের সুচিকিৎসা। সবাইকে এটি পড়ার অনুরোধ রইল। (বিশ রাকাত তারাবীর হাদীস সহীহ’ নামে মাকতাবাতুল আযহারের পক্ষ থেকে পুস্তিাকাটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে।)

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

মুফতী আতীকুল্লাহ

মাওলানা আইনুল হক ক্বাসেমি

মাওলানা মাসরূর বিন মনযূর

হযরত মাওলানা ইদরীস কান্ধলবী রাহ.

শাইখুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রহ.

আল্লামা ইউসুফ বানুরী রহঃ

মাওলানা মীযান হারুন

আল্লামা আনওয়ার জুনদী রহঃ

মাওঃ আসজাদ কাসেমী

আল্লামা সায়্যিদ সুলাইমান নদবী রহ.

ডঃ নজীব কাসেমী

আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ

মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা হাবীবুর রহমান আ'যমী রহঃ

মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার হুসাইন

মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রহঃ

শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ

মুফতী শুআইবুল্লাহ খান দাঃ

আল্লামা আব্দুর রাযযাক ইস্কান্দার রহঃ

আল্লামা ডঃ মুহাম্মাদ হামীদুল্লাহ্‌ রহঃ