প্রবন্ধ

সীরাতে নববীর সফল অধ্যয়ন, কীভাবে?

লেখক:'মুসলিম বাংলা' সম্পাদকীয়
৫ অক্টোবর, ২০২২
৩৬০১ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

চলছে মহিমান্বিত রবিউল আউয়াল মাস, সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাস এটি। তাই রবিউল আউয়ালকে ঘিরে মাসব্যাপী সীরাত বিষয়ক নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকি আমরা। মসজিদের মিম্বর, দ্বীনি মাহফিল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলতে থাকে সীরাত বিষয়ক আলোচনা, আমাদের লেখালেখিতেও এবিষয়টিই প্রাধান্য পায়।সীরাতের সাথে এমাসের নিবিড় সম্পর্ক আছে। সীরাতে নববীর উল্লেখযোগ্য অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে মাহে রবিউল আউয়াল।


১- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমাসেই জন্ম গ্রহণ করেন।

উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু কত তারিখ ছিল সেই সোমবার? এসব নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না।

ولادة الحبيب المصطفى – صلى الله عليه وسلم – 

أنه ولد يوم الاثنين، وفي شهر ربيع الأول، إلا أنه لم ترد رواية صحيحة في تحديد التاريخ لليوم الذي ولد النبي – صلى الله عليه وآله وسلم – فيه، "فالاختلاف وقع فيما ذكر في قضية متى وُلد النبي – صلى الله عليه وسلم -، ويجب أن يُعلم أن المُتفق عليه أنه ولد في الاثنين، وفي شهر ربيعٍ الأول.

আগ্রহী পাঠকগণ প্রয়োজনে শাইখ মাওলানা তাহমীদুল মাওলা হাফি: রচিত 'নবীজির সা. জন্মতারিখ ও ঈদে মীলাদুন্নবী' কিতাব টি অধ্যয়ন করতে পারেন।


২- এক বর্ণনা অনুযায়ী এমাসেই নবীজির নবুওয়্যাত প্রাপ্তি হয়েছিল।

হযরত ইবনে আব্বাস রা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে যে, এমাসেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছেন। যদিও প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী নবীজির উপর রমযান মাসে ওহীর সূচনা হয়েছিলো।


ثبت في صحيح مسلم عن أبي قتادة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم‏:‏ سئل عن صوم يوم الاثنين‏؟‏ فقال‏:‏ ‏(‏‏(‏ذاك يوم ولدت فيه، ويوم أنزل عليّ فيه‏)‏‏)‏

وقال ابن عباس‏:‏ ولد نبيكم محمد صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين، ونبئ يوم الاثنين‏.‏

وهكذا قال عبيد بن عمير، وأبو جعفر الباقر، وغير واحد من العلماء‏:‏ أنه عليه الصلاة والسلام أوحي إليه يوم الاثنين، وهذا ما لا خلاف فيه بينهم‏.‏ ‏

ثم قيل‏:‏ كان ذلك في شهر ربيع الأول، كما تقدم عن ابن عباس وجابر، أنه ولد عليه السلام، في الثاني عشر من ربيع الأول يوم الاثنين، وفيه بعث، وفيه عرج به إلى السماء، والمشهور أنه بعث عليه الصلاة والسلام في شهر رمضان، كما نصَّ على ذلك عبيد بن عمير، ومحمد بن إسحاق، وغيرهما‏.‏

قال ابن إسحاق مستدلاً على ذلك بما قال الله تعالى‏:‏ ‏{‏شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ‏}‏ ‏[‏البقرة]‏ 


৩- নবীজীর হিজরত এমাসেই সংঘটিত হয়েছিল। 

রবিউল আউয়াল মাসেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন।

নবীজীর হিজরতের তাৎপর্য থেকেই আরবী হিজরি বর্ষের গণনা শুরু হয়।যা এই মাসে হয়েছিল। হিজরতের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ফলেই হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র পঞ্জিকা প্রণয়নের কথা উঠে আসে তখন তাঁরা সর্বসম্মতভবে হিজরত থেকেই এই পঞ্জিকার গণনা শুরু করেন। যার ফলে চান্দ্রমাসের এই পঞ্জিকাকে বলা হয় ‘হিজরী সন’। (ফাতহুল বারী ৭/৩১৪-৩১৬)

ولأهمية هذا الحدث أرَّخ به عمر بن الخطاب رضي الله عنه والمسلمون بعده التاريخ الإسلامي، كما روى ابن أبي شيبة عن الشعبي أنَّ أبا موسى رضي الله عنه كتب إلى عمر رضي الله عنه: إنّه يأتينا منك كُتب ليس لها تاريخ، فجمع عمر رضي الله عنه النَّاس، فقال بعضهم: أرِّخ بالمبعث، وبعضهم: أرِّخ بالهجرة، فقال عمر: "الهجرة فرّقت بين الحقّ والباطل فأرّخوا بها" [المصنف (7/26)].


৪- ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ এমাসেই নির্মিত হয়।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে প্রথমে কুবা নগরীতে আগমন করেন এবং এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। নবীজী কুবায় অবস্থানকালে ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। যা ছিল রবিউল আউয়াল মাসেই। এটি মসজিদে কুবা নামে পরিচিত।

يُعتبر مسجد قباء أول مسجدٍ بُني في الإسلام؛ حيث أسّسه النبي -عليه السلام- بعد قدومه إلى المدينة المنورة، حيث أقام في بني عمرو بن عوف مدّة أربعة عشر ليلةً، بُني خلالها المسجد قبل أن يستكمل النبي مسيرة هجرته


৫- নবীজীর ওফাত এমাসেই হয়েছিল। 

এবং ১১তম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। 

এছাড়াও সীরাতে নববীর আরো অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে মাহে রবিউল আউয়াল।


সীরাতে নববীর অধ্যয়ন; পথ ও পন্থা:


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে,

لَقَدۡ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِیْرًا . 

বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। সূরা আহযাব-২১ 

নবীজীর সীরাত অধ্যয়ন ও অনুসরণ প্রতিটি মুসলিমের জন্য জরুরী।আল্লাহর সকল আহকাম নবীজীর সীরাত ও সুন্নাহ মোতাবেক পালন করার মধ্যেই প্রকৃত সফলতা নিহিত রয়েছে।


আমরা অনেকেই নবীজীর জীবনী অধ্যয়ন করতে চাই কিন্তু অধ্যয়নের পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং উপযোগী গ্রন্থ নির্বাচন করতে না পারার দরুন নিজস্ব খেয়াল খুশিমতো এদিক সেদিকের বিভিন্ন বই থেকে জানার চেষ্টা করি যার দরুন উপকৃত হবার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ি, এজন্য আদর্শ অধ্যয়নের বিকল্প নেই। সীরাতে নববী অধ্যয়নের ক্ষেত্রে কিছু অনুসৃত নীতিমালার অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে আমার অধ্যয়ন যথার্থ ও শিক্ষনীয় হবে।

সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোত্থেকে অধ্যয়ন করবো এবং কীভাবে করবো?

করণীয় হলো, হক্কানী উলামায়ে কেরাম রচিত সীরাত বিষয়ক কিতাবাদী থেকে আমাকে অধ্যয়ন করতে হবে এবং অবশ্যই অধ্যয়নের স্তর নির্বাচন করত পর্যায়ক্রমে সীরাতে নববী অধ্যয়ন করতে হবে। 

এক্ষেত্রে উত্তম হলো, আপনার নিকটস্থ নির্ভরযোগ্য আলিমে দ্বীনের সাথে পরামর্শ করে সীরাত অধ্যয়ন করুন, এই অধ্যয়ন আপনার জন্য উপকারী সাব্যস্ত হবে।

তথাপি প্রাথমিক অধ্যয়নের জন্য সীরাত বিষয়ক কিছু নির্ভরযোগ্য কিতাবের তালিকা এখানে পেশ করা হলো। প্রথমে নবীজীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ুন এবং পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত অধ্যয়ন করুন।

সংক্ষিপ্ত অধ্যয়নের জন্য:

১- আসসীরাতুন নববীয়্যাহ- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

২-সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া- হযরত মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শফী (রহ.) , মাওলানা মোহাম্মদ যুবায়ের (অনুবাদক) 

৩- নবীয়ে রহমত- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

৪- আর রহীকুল মাখতুম- সফিউর রহমান মোবারকপুরী।

৫- রাসূল (সাঃ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী একনজরে সিরাহ্ - মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী.

৬- নবীজি (সা.) কেমন ছিলেন- মাওলানা মুফতী উবায়দুর রহমান খান নদভী.

৭- মুহাম্মাদ সা. ব্যক্তি ও নবী- শায়খ সালেহ আহমদ আশ-শামী।


বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য:


১- আসাহ্‌হুস্ সিয়ার : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনচরিত- হযরত মাওলানা হাকীম আবুল বারাকাত আবদুর রউফ দানপুরী ,  মাওলানা আ. ব. ম. সাইফুল ইসলাম (অনুবাদক)

২- সীরাতে মুস্তফা (সা.) (১-৩ খণ্ড) by মাওলানা মুহাম্মদ ইদরীস কান্দলভী

৩- মাওসুয়াতু নাযরাতিন নাইম ফী মাকারিমি আখলাকির রাসুলিল কারীম সা. (১-১২ খণ্ড)।

৪- সিরাতুন নবি সা. (১-৩ খণ্ড পূর্ণ) by ড. আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাবী (একাধিক অনুবাদক)

৫- সীরাত বিশ্বকোষ ( উন্নত সংস্করণ ১-১১ খণ্ড) by মাকতাবাতুল আযহার.

৬- সীরাত বিশ্বকোষ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

সংক্ষেপে বাংলায় অনূদিত কিছু নির্ভরযোগ্য কিতাবের উল্লেখ করা হলো, এছাড়াও আরো অনেক কিতাবাদী রয়েছে। উলামায়ে কেরামের পরামর্শ নিয়ে পড়া যেতে পারে।


শিশুদের জন্য:

১- কাসাসূন নাবিয়্যিন সিরিজ- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

২- শিশু সীরাত সিরিজ (১ থেকে ১০ খণ্ড)

by মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ

৩- শিশু-কিশোর সীরাতুন্নবী স. সিরিজ (১-১০ খণ্ড) by ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী

৪- গল্পে আঁকা সীরাত- আবদুত তাওয়াব ইউসুফ , ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী (অনুবাদক)


সীরাতে নববীর অধ্যয়নে চাই পূর্ণ সতর্কতা; পশ্চিমা গবেষকদের বিষাক্ত লেখনী থেকে সাবধান: 


নবীজীর সীরাত পড়ার জন্য উপযুক্ত গ্রন্থ নির্বাচন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আজকাল অনেককে দেখা যায় তারা সীরাত অধ্যয়নের জন্য সরাসরি পশ্চিমা লেখকদের ইংরেজী গ্রন্থাবলী কিংবা অনুবাদ পড়ে থাকেন এবং তাতে প্রদত্ত তথ্যের আলোকেই সীরাতে নববীকে অনুধাবনের চেষ্টা করেন।

কিন্তু আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি এসব গ্রন্থের উৎসমূল এবং লেখক সম্পর্কে? এদের অনেকেই ভিন্ন ধর্মের অনুসারী,পশ্চিমা গবেষকদের অনেক লেখনী রয়েছে সীরাত বিষয়ে।

সম্প্রতি অনলাইনে বাংলায় নবীজীর সীরাত সংক্রান্ত বেষ্ট সেলার কিছু বইয়ের তালিকায় একটি বইয়ের নাম দেখে খুব দুঃখ হলো, বইয়ের নাম: মুহাম্মদ (সা.): অ্যা বায়োগ্রাফি অব দ্য প্রফেট। 

অনূদিত নাম: মুহাম্মদ : মহানবীর (স:) জীবনী by ক্যারেন আর্মস্ট্রং , শওকত হোসেন (অনুবাদক)

এরকম আরেকটি গ্রন্থ নজরে পড়ল:

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম : নিকটতম সূত্রনির্ভর জীবনী by মার্টিন লিংস।

আফসোস,নবীজীর সীরাত পড়ার জন্য মুসলিম সন্তানদের আজ এসব পশ্চিমা গবেষকদের শরনাপন্ন হতে হচ্ছে, যাদের কেউ ইহুদি তো কেউ খ্রিষ্টান। এসব ওরিয়েন্টালিষ্টদের গবেষণাধর্মী রচনাবলীতে রয়েছে অসংখ্য ভূল ও অসত্য তথ্যের ছড়াছড়ি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সূক্ষ্ম ও মারাত্মক জালিয়াতি যা পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারী ছাড়া বুঝা অসম্ভব। সাধারণ পাঠকের এসব পড়ে বিভ্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। 

এরা নবীজীর জীবনী লিখছে আর আমরা মুসলিমরা আমাদের হাজারো নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থাবলী ছেড়ে এসব অসত্য তথ্যে ভরপুর গ্রন্থাদী গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছি তাও এভাবে যে, এসব বই বেষ্ট সেলার পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। 

এখানে একটি বিষয় অনুধাবনযোগ্য: 

নবীজীর জীবনী নিয়ে বিধর্মী লেখকদের লিখনীর দুটো ধরণ আছে:

১- সাধারণ রচনা।

২- গবেষণাধর্মী রচনা।

১- যারা গবেষণাধর্মী লিখা লিখছেন না বরং নকল নির্ভর গ্রন্থ রচনা করছেন।

এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় এদিক থেকে যে, তিনি বিধর্মী হয়েও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত লিখছেন এবং নবীজীর সম্পর্কে জানছেন ও নবীর প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভাললাগার বহিঃপ্রকাশ করছেন। 

যেরকম লেখক গুরুদত্ত সিং রচিত 'তোমাকে ভালবাসি হে নবী' মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ (অনুবাদক),এসব গ্রন্থ পড়া যেতে পারে তাও আমি বলবো, অবশ্যই একজন প্রাজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিয়ে পড়ুন। এতে বিচ্যুতিমুক্ত থাকা সম্ভব হবে। 


২- যারা সরাসরি গবেষণাধর্মী লিখা লিখছেন, যেরকম পশ্চিমা গবেষকদের সীরাত বিষয়ক রচনাবলী।

এসব গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে হয় খুব সতর্কতার সাথে, যা একজন সাধারণ পাঠকের জন্য কখনোই সমীচিন নয়।এটাতো সীরাত বিষয়ে একজন প্রাজ্ঞ আলেমের কাজ, উনি এসব গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারেন যেহেতু এসব গ্রন্থে প্রদত্ত তথ্য এবং উপস্থাপিত গবেষণার সঠিক ও ভূলের মাঝে পার্থক্য করার যোগ্যতা তার আছে।

কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্য, অনেক জেনারেল শিক্ষিত ভাইরা আমাদের উলামায়ে কেরাম কর্তৃক রচিত নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থাবলী উপেক্ষা করে এসব পশ্চিমা লেখকদের বই থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে যারফলে নিজে বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং সমাজেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।আল্লাহ তাআলা আমাদের ঈমানের হেফাজত করুন আমীন।


একটি উদাহরণ দিচ্ছি:

একজন পশ্চিমা গবেষক নবীজীর বায়োগ্রাফি লিখেছেন। বইয়ে নবীজীর জীবনীর বিভিন্ন দিক আলোচনা করতে যেয়ে ইসলামের ফরজ বিধান নামাযের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন যে, এটা খ্রিষ্টানদের গীর্জার ইবাদতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এখন একজন সীরাত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ সাধারণ পাঠক এটা পড়ে যাবেন এবং এখান থেকে এই চিন্তা গ্রহণ করবেন যে, ইসলাম ও খ্রিষ্টবাদ সবই যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তখন ইবাদতের পদ্ধতিগত সামঞ্জস্য থাকাটা স্বাভাবিক, এটা গুরুতর কোনো ব্যপার নয়।

কিন্তু সীরাত বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন আলেম কিন্তু এভাবে চিন্তা করবেন না।

উনি উক্ত লেখা পড়েই প্রথমে থমকে যাবেন এবং বুঝে যাবেন,এটা নিছক একটি মন্তব্য বা গবেষণা নয়, এটা এক বিষাক্ত চিন্তার প্রতিফলন যা মুসলিমের ঈমানকে সন্দেহযুক্ত করতে ভূমিকা রাখবে।এখানে ইসলামের মহান বিধান নামাযকে গীর্জায় ইবাদতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ উল্লেখ করে সুকৌশলে পাঠকের মনে নবীজীর নবুওয়্যাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করে দেয়া হলো যে, নামায তো সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধান হওয়া আবশ্যক নয় বরং এটাতো নবীজি পূর্বেকার ধর্মগুলো থেকেও নিয়ে থাকতে পারেন। এবং পাশাপাশি ত্রিত্ত্ববাদে বিশ্বাসী খ্রিস্টবাদের পৌত্তলিকতার গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের অপচেষ্টাও এতে দৃশ্যমান।আল্লাহ মাফ করুন।

এজন্য খেয়াল রাখা উচিত, আমাদের সীরাতে নববীর অধ্যয়ন যেন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলী থেকে নীতিমালা অনুসারে হয়। আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম তাওফীক দাতা।


মন্তব্য (...)

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →