প্রবন্ধ

ফযীলতপূর্ণ যিলহজ্ব মাস:

লেখক:'মুসলিম বাংলা' সম্পাদকীয়
২৫ জুন, ২০২২
১০২৮২ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

হিজরী বর্ষের সর্বশেষ মাস যিলহজ্ব। বড়ই ফযীলত পূর্ণ মাস এটি। 

‘আশহুরে হুরুম’ তথা ইসলামের সম্মানিত চার মাসের অন্যতম এই যিলহজ্ব মাস। পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِیْ كِتٰبِ اللهِ یَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ.

আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৬

আর এ চার মাসের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল যিলহজ্ব মাস। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أَلَا وَإِنّ أَحْرَمَ الشّهُورِ شَهْرُكُمْ هَذَا.

জেনে রেখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হল, তোমাদের এই মাস (যিলহজ্ব)। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১৭৬২

তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এ মাস খুবই মহিমান্বিত ও তাৎপর্যমণ্ডিত।

এ মাসেই পালিত হয় ইসলামের মহান দুটি শিআর (নিদর্শন)- হজ্ব ও কুরবানী। 

এ মাস হজ্বের মাস, কুরবানীর মাস।  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ মাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ্বের বিধান রেখেছেন, যা ইসলামের পঞ্চম রুকন।এ মাসের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ইবাদত কুরবানী, যা ইসলামের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। 

৮ই যিলহজ্ব থেকে ১২ই যিলহজ্ব পর্যন্ত হজ্বের যাবতীয় বিধি-বিধান আদায় করে থাকেন হাজ্বী সাহেবগন এবং ১০ই যিলহজ্ব উদযাপিত হয় বার্ষিক দুটি ঈদের দ্বিতীয়টি তথা ঈদুল আযহা, এদিন সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমেরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কুরবানী করে থাকি। 

এমাসে আরো রয়েছে- ইয়াওমু আরাফা, আইয়ামে তাশরীক এবং যিলহজ্বের ফযীলতপূর্ণ প্রথম দশক। 

কুরআন ও হাদীসে এ মাসের ফযীলতপূর্ণ  কিছু দিবস ও আমলের কথা বিবৃত হয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে তা তুলে ধরছি:

 

১- আশারায়ে যিলহজ্ব বা যিলহজ্বের প্রথম দশক :

এ মাসের প্রথম দশক অত্যন্ত ফযীলত পূর্ণ। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে প্রথম দশকের  কসম খেয়ে বলেনঃ 

وَ الْفَجْرِ،  وَ لَیَالٍ عَشْرٍ.

শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির। -সূরা ফাজর (৮৯) : ১-২

আয়াতে শপথের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে দশ রাত্রি ।

এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজ্বের প্রথম দশক উদ্দেশ্য। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা ), কাতাদাহ্ এবং মুজাহিদ ( র ) সহ অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কিরামের মতে এতে যিলহজ্জের প্রথম দশ রাত্রই বোঝানো হয়েছে। কেননা,হাদীসে এসব রাত্রির ফযীলত বর্ণিত রয়েছে । নবীজী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : 

ما من أيام أفضل عند الله من أيام عشر ذي الحجة .

ইবাদত করার জন্য আল্লাহর কাছে যিলহজ্জের দশদিন সর্বোত্তম দিন। (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৮৪২)

হযরত জাবের ( রা ) বর্ণনা করেন যে , রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং وَلَيَالٍ عَشْر এর তফসীর করেছেন, যিলহজ্জের দশদিন ।

হযরত ইবনে আব্বাস ( রা ) বলেনঃ হযরত মূসা আ.এর ঘটনায় وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ বলে এই দশ রাতকেই বোঝানো হয়েছে । 

কুরতুবী বলেনঃ হযরত জাবের ( রা ) -এর হাদীস থেকে জানা গেল যে, যিলহজ্জের দশ দিন সর্বোত্তম দিন এবং এ হাদীস থেকে জানা গেল যে , মূসা ( আ ) -র জন্যও এই দশ দিনই নির্ধারিত করা হয়েছিল। (তাফসীরে মারেফুল কুরআন, সূরাতুল ফাজর)

হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ أَيّامٍ الْعَمَلُ الصّالِحُ فِيهَا أَحَبّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ يَعْنِي أَيّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ.

আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয় কি? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৫৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭২৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৯৬৮

অতএব মুমিন বান্দার উচিত যিলহজ্ব মাসে নেক আমলের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া।


২- প্রথম দশকে অধিক পরিমাণে তাক্ববীর-তাহমীদ পড়াঃ 

হাদীস শরীফে এসেছে-

مَا مِنْ أَيّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ وَلَا أَحَبّ إِلَيْهِ الْعَمَلُ فِيهِنّ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ الْعَشْرِ، فَأَكْثِرُوا فِيهِنّ مِنَ التّهْلِيلِ وَالتّكْبِيرِ وَالتّحْمِيدِ.

আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজ্বের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ তাসবীহ পাঠ কর। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৪৪৬; তবারানী, হাদীস ৫৩৪

এই দশকের নেক আমল, বিশেষত আল্লাহর যিকির সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

ويذكروا اسم الله في أيام معلومات على ما رزقهم من بهيمة الأنعام....

(অনুবাদ) নির্দিষ্ট দিনসমূহে তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সেই সকল পশুর উপর, যা তিনি তাদের দিয়েছেন।-সূরা হজ্ব (২২) : ২৮

ইমাম বুখারী রাহ. বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট দিনসমূহ’’ দ্বারা যিলহজ্বের দশ দিনই উদ্দেশ্য। অনুরূপভাবে হযরত ইবনে উমর রা., হাসান বসরী রাহ.,আতা রাহ.,মুজাহিদ রাহ., ইকরিমা রাহ.,কাতাদাহ রাহ., ইমাম নাখায়ী রাহ., ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ রাহ.সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের অভিমত, সুনির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা এখানে যিলহজ্বের প্রথম দশকই বোঝানো হয়েছে।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৮৯; লাতাঈফুল মাআরিফ ৩৬১


৩- যিলহজ্বের প্রথম ৯ দিনে রোযা রাখার ইহতেমাম করাঃ 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত প্রথম ৯ দিন রোযা রাখতেন। হাদীস শরীফের মৌলিক গ্রন্থগুলোতে এ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। 

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصُومُ تِسْعَ ذِي الْحِجّةِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্বের নয়টি দিবসে (সাধারণত) রোযা রাখতেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৩৩৪; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৮৩৯৩

উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা রা. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন-

أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: صِيَامَ عَاشُورَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ.

চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্বের প্রথম দশকের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৫; সহীহ ইবনে হিব্বান,হাদীস ৬৪২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৩৩৯

অতএব, প্রথম দশকে রোযা রাখার চেষ্টা করা। পুরো নয় দিন রোযা রাখতে না পারলে যে কয়টি সম্ভব রাখলে তাতেও সাওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ।


৪- কুরবানী করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা।

এ দশকের আরেকটি বিশেষ আমল হল- যিলহজ্বের চাঁদ ওঠা থেকে শুরু করে ঈদের দিন কুরবানী করা পর্যন্ত নখ-চুল এবং শরীরের অবাঞ্চিত লোম ইত্যাদী না কাটা। এতে হাজ্বীগনের সাথে সাদৃশ্য প্রকাশ পায়। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارهِ.

যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩

যিলহজ্ব মাস আসার পূর্বেই নখ-চুল-পশম  কেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়। যারা কুরবানী করবেন তারা এ আমলের প্রতি তো যত্নবান হবেনই। আর বিভিন্ন বর্ণনা ও সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল থেকে এটাও বুঝে আসে যে, যারা কুরবানী করবেন না তারাও এ ফযীলতপূর্ণ আমলে শরীক হতে পারেন। এমনকি এসময় বাচ্চাদের চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকাও ভালো। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০; আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮)

আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত-

 أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلّ لِهَذِهِ الْأُمّةِ، فَقَالَ الرّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزّ وَجَلّ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫

এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার কথা বুঝা যায়।

২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ. বলেছেন-

أَنّ ابْنَ عُمَرَ، مَرّ بِامْرَأَةٍ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِ ابْنِهَا فِي أَيّامِ الْعَشْرِ فَقَالَ: لَوْ أَخّرْتِيهِ إِلَى يَوْمِ النّحْرِ كَانَ أَحْسَنَ.

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০

৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল-

قال مسدد وحدثنا المعتمر بن سليمان التيمي سمعت أبي يقول: كان ابن سيرين يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر.

মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী  বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুন্ডন করাকেও অপছন্দ করতেন। -আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮

এসব দলীলের কারণে অনেক উলামায়ে কেরামের মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ,গোঁফ ও চুল না-কাটা উত্তম।


৫- হজ্বঃ

হজ্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং শাআইরুল ইসলামের অন্যতম প্রধান শিআর। হজ্বের মূল কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় মূলত যিলহজ্ব মাসেই। এদিকে নিসবত করে এ মাসের নামকরণ হয়েছে যুল হিজ্জাহ বা যিলহজ্ব মাস।  আল্লাহ তাআলা এ বিধানকে ফরয করে দিয়েছেন তাঁর সামর্থ্যবান বান্দার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ لِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ.

মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্ব করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য। আর যে (এই নির্দেশ পালন করতে) অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭

অতএব, হজ্ব ফরয হওয়ার পর দ্রুত পালন করা চাই। হজ্ব আদায়ে গড়িমসি করা অন্তত মুমিনের শান হতে পারে না।

প্রেমাস্পদের/ মাহবুবের ঘরে যাবার সুযোগ এসেছে, তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অথচ তাতে আগ্রহ উদ্দীপনা ও ব্যাকুলতার প্রকাশ নেই, এই মুহাব্বাত কীভাবে খাঁটি হতে পারে? এক্ষেত্রে উদাসীনতা ও গড়িমসি করা তো মাহবুবকে অপমান করার শামিল।

আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাই।

মুমিন মাত্রই আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্যে ব্যাকুল থাকবে। সাদা ধবধবে দু টুকরো কাপড় গায়ে জড়িয়ে বলতে থাকবে -

لَبّيْكَ اَللّٰهُمّ لَبّيْكَ، لَبّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبّيْكَ، إِنّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.

আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিআমত আপনারই এবং সকল রাজত্ব। আপনার কোনো শরীক নেই।

হাদীসে এসেছে,

مَنْ حَجّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمّهُ.

যে ব্যক্তি একমাত্র অল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব করে এবং কোনো অশ্লীল কাজ বা গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে যেন সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়ী ফেরে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১

আরো বর্ণিত হয়েছে,

الحَجّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلّا الجَنّةُ.

মাবরূর (মকবুল) হজ্বের প্রতিদান তো কেবল জান্নাতই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে মাবরূর হজ্ব নসীব করুন এবং বারবার নসীব করুন- আমীন।


৬- ইয়াওমু আরাফাঃ

যিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস হল নবম তারিখ। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘ইয়াওমু আরাফা’। এ দিনটি হজ্বের মূল দিন। আল্লাহ তাআলা এ দিনকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন এ দিনেই। ইরশাদ হয়েছে:

اَلْیَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِیْنَكُمْ وَ اَتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِیْ وَ رَضِیْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا .

আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। -সূরা মায়েদা (৫) : ৩


এ দিনে অসংখ্য বান্দাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করে থাকেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النّارِ، مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَإِنّهُ لَيَدْنُو، ثُمّ يُبَاهِي بِهِمِ الْمَلَائِكَةَ، فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ؟

আরাফার দিনের মত আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৮

জাবের রা. থেকে বর্ণিত আরেক বর্ণনায় রয়েছে-

يَنْزِلُ اللهُ إِلَى السّمَاءِ الدّنْيَا فَيُبَاهِي بِأَهْلِ الْأَرْضِ أَهْلَ السّمَاءِ، فَيَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عبادي شعثا غبرا ضاحين، جاؤوا مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ يَرْجُونَ رَحْمَتِي، وَلَمْ يَرَوْا عَذَابِي، فَلَمْ يُرَ يَوْمٌ أَكْثَرُ عِتْقًا من النار من يوم عرفة.

আল্লাহ তাআলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসামানের অধিবাসী অর্থাৎ ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন। বলেন, দেখ তোমরা- আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোয় মলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আযাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মত আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৮৫৩

আরাফার দুআ শ্রেষ্ঠ দুআ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

خَيْرُ الدّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي: لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.

শ্রেষ্ঠ দুআ (-যিকির) আরাফার দুআ। এ দিনের দুআ-যিকির হিসেবে সর্বোত্তম হল ঐ দুআ, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হল-

لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৭৭৮

এ দিনের একটি রোযায় বান্দার পূর্বাপর দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ، وَالسّنَةَ الّتِي بَعْدَهُ.

আরাফার দিনের (নবম যিলহজ্বের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২

প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহজ্বের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। অতএব বিশ্বের যে অঞ্চলে যখন যিলহজ্বের নয় তারিখ উপনীত হবে সে এলাকায় তখন এ বিধান প্রযোজ্য হবে।

প্রথম দশকে রোযা রাখার ব্যাপারে আগেই বলা হয়েছে।

পুরো দশক সম্ভব না হলে কমপক্ষে বরকতময় এ দিনে রোযা রাখার অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত।


৭- কুরবানী করা:

ইয়াওমুন নাহর বা কুরবানীর দিন এ মাসের সবচে মহিমান্বিত দিবস।

মুসলিম উম্মাহ গোটা বিশ্বজুড়ে এ দিনে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাছিলের জন্য পশু কুরবানী করে থাকে। বস্তুত এটা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিআর তথা পরিচয় চিহ্ন। 

الأُضحيَّةُ التي تُذبَحُ في أيَّامِ عيدِ الأضْحَى شَعيرةٌ مِن شعائرِ اللهِ تعالى، يَتقرَّبُ بها المسلمُ إلى اللهِ عزَّ وجلَّ، وقد ضحَّى النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ عن نفْسِه وعن أُمَّتِه..

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ الْبُدْنَ جَعَلْنٰهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآىِٕرِ اللهِ لَكُمْ فِیْهَا خَیْرٌ  فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَیْهَا صَوَآفَّ،  فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَ اَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَ الْمُعْتَرَّ،  كَذٰلِكَ سَخَّرْنٰهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.

কুরবানীর উট (ও গরু)কে তোমাদের জন্য আল্লাহর ‘শাআইর’ (নিদর্শনাবলি)-এর অন্তর্ভুক্ত করেছি। তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং যখন তা সারিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়ানো থাকে, তোমরা তার উপর আল্লাহর নাম নাও। তারপর যখন (যবেহ হয়ে যাওয়ার পর) তা কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, তখন তার গোশত হতে নিজেরাও খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও, এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৬

বস্তুত কুরবানীর জন্য উৎসর্গিত পশু আল্লাহ তাআলা নিজ মেহেরবানীতে বান্দার জন্য হালাল করে দিয়েছেন; পূর্ববর্তী উম্মতের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য ছিল না। এটা মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে তাঁর হাবীবের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মতের জন্য মেহমানদারি। 

আর আমাদের কুরবানী হবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ  كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ  وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.

আল্লাহর কাছে না পৌঁছে তাদের (কুরবানীর পশুর) গোশত আর না তাদের রক্ত, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। এমনিভাবে তিনি সেগুলো (পশুগুলো) তোমাদের জন্য বশ করে দিয়েছেন। যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। কারণ, তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন। আর আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

قُلْ اِنَّنِیْ هَدٰىنِیْ رَبِّیْۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ  دِیْنًا قِیَمًا مِّلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًا  وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ قُلْ اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ  وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ.

আপনি বলে দিন, নিশ্চয় আমার রব  আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করেছেন, (যা) বিশুদ্ধ ধর্ম, ইবরাহীমের দ্বীন, যিনি ছিলেন (আল্লাহর আনুগত্যে) একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। আপনি বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী (ব্যাপক অর্থে সকল ইবাদত), আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি। এবং আমি মুসলিমদের একজন। -সূরা আনআম (৬) : ১৬১-১৬৩

আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআনে কারীমে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলেন-

اِنَّاۤ اَعْطَیْنٰكَ الْكَوْثَرَ   فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَ انْحَرْ.

আমি অবশ্যই তোমাকে কাউসার দান করেছি। সুতরাং তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। -সূরা কাউসার (১০৮) : ১-২

এজন্য নবীজী সারা জীবন কুরবানী করে গেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-

أَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِالمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي كُلّ سَنَةٍ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দশ বছরের প্রতি বছরই কুরবানী করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৯৫

যিলহজ্ব মাসের ১০-১১-১২ এই তিন দিনই কুরবানীর দিন। তবে উত্তম এবং সুন্নাহ হল দশ তারিখেই কুরবানী করা। অতএব,যে ব্যক্তি এ তিন দিনে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবে, তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করলে তার জন্য হাদীসে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنّ مُصَلّانَا.

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৬৬


৮- ১০ই যিলহজ্ব এ উম্মতের ঈদঃ

ইয়াওমে আরাফায় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ব্যাপক ক্ষমা প্রাপ্তির ঘোষণা, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর নামে নিজের প্রিয় পশু উৎসর্গ করার সৌভাগ্য অতঃপর উৎসর্গিত পশু থেকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেহমানদারি লাভের আনন্দ ও শুকরিয়া আদায়ের জন্য এ দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদ সাব্যস্ত করেছেন মহান রাব্বুল আলামীন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى، جَعَلَهُ اللهُ عِيدًا لِهَذِهِ الْأُمّةِ.

আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহা’র আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিবসকে আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৯১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫


৯- আইয়ামুত তাশরীকঃ

যিলহজ্ব মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে পরিভাষায় আইয়ামে তাশরীক বলে। আইয়ামে তাশরীক-এর অন্যতম প্রধান আমল হল, আল্লাহর যিকির-তাকবীর উচ্চারণ করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَيّامُ التّشْرِيقِ أَيّامُ أَكْلٍ، وَشُرْبٍ، وَذِكْرِ اللهِ.

আইয়ামে তাশরীক পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের দিন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৭২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৪১

সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে তাকবীর ধ্বনি তুলতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও হযরত আবু হুরাইরা রা. বাজারে গিয়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীরের ধ্বনি তুলত।

নয় যিলহজ্ব ফজর থেকে নিয়ে তের যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্তে  প্রতি ফরয নামাযের পর সারা বিশ্বের সকল মুসলিম নারী-পুরুষ তাকবীরে তাশরীক বলে থাকে। সকলের জন্য একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।

কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ اذْكُرُوا اللهَ فِیْۤ اَیَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ.

তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ কর। -সূরা বাকারা (২) : ২০৩

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এখানে اَیَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ দ্বারা উদ্দেশ্য- আইয়ামে তাশরীক। (দ্র. সহীহ বুখারী, বাবু ফাদলিল আমাল ফী আইয়ামিত তাশরীক; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, হাদীস ১০৮৭২)

তাকবীরে তাশরীক হল-

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الْحَمْدُ.


১০- হাজ্বীদের খেদমত :

এটি এ মাসের একটি পুণ্যময় আমল।

হাজ্বীগণের খেদমত বড় সৌভাগ্যের আমল। হাজ্বীগণ হলেন সরাসরি আল্লাহর মেহমান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ، وَالْحَاجّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللهِ، دَعَاهُمْ، فَأَجَابُوهُ، وَسَأَلوهُ، فَأَعْطَاهُمْ. قال البوصيري : إسناده حسن

অর্থাৎ আল্লাহর রাহে (ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে) জিহাদকারী, হজ্ব ও উমরা আদায়কারী- এরা আল্লাহর ওয়াফ্দ (মেহমান)। আল্লাহ তাদের ডেকেছেন আর তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তারা আল্লাহর কাছে চেয়েছেন আর আল্লাহ তাদের দিয়েছেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৬১৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৮৯৩

এক হাদীসে এসেছে-

 الْحَاجّ وَفْدُ اللهِ، وَالْحَاجّ وَفدُ أَهْلِه. مرسلا عن أبي قلابة، بإسناد رجاله ثقات.

অর্থাৎ, হাজ্বী আল্লাহর মেহমান। এবং নিজের ‘আহলের’ পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬৫৯

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও উক্ত খেদমতে শরীক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে এসেছে-

ثُمّ أَتَى زَمْزَمَ وَهُمْ يَسْقُونَ وَيَعْمَلُونَ فِيهَا، فَقَالَ: اعْمَلُوا فَإِنّكُمْ عَلَى عَمَلٍ صَالِحٍ ثُمّ قَالَ: لَوْلاَ أَنْ تُغْلَبُوا لَنَزَلْتُ، حَتّى أَضَعَ الحَبْلَ عَلَى هَذِهِ يَعْنِي: عَاتِقَهُ، وَأَشَارَ إِلَى عَاتِقِهِ.

অতপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযমের কাছে আসলেন। দেখলেন, লোকেরা হাজ্বীদের যমযম পান করানোর খেদমতে নিয়োজিত। এ দেখে তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের কাজে ব্যস্ত থাকো; কারণ, তোমরা নেক কাজের মধ্যে রয়েছ। যদি এ কাজে আমার উপস্থিতির কারণে লোকদের ভিড় বেড়ে গিয়ে তোমাদের কাজে ব্যাঘাৎ হওয়ার আশংকা না হত তাহলে আমি কূপ থেকে পানি তোলার রশি এখানে চড়িয়ে নিতাম, অর্থাৎ নিজ কাঁধে উঠিয়ে নিতাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৩৫

আল্লাহ তাআলা বেশি করে হজ্বগামীদের খেদমত করার তাওফীক দান করুন।


১১- গুনাহের মাধ্যমে এই মাসের সম্মান বিনষ্ট না করি:

আমরা নেক আমল যতটুকু করতে পারি আলহামদুলিল্লাহ, তবে গুনাহের মাধ্যমে যেন যিলহজ্বের অসম্মান না করি। 

ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. লাতাঈফুল মাআরিফে যিলহজ্বের আলোচনায় বলেন-

احذروا المعاصي فإنها تحرم المغفرة في مواسم الرحمة.

রহমতের মওসুমসমূহে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে। -লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ৩৭৯

আর যে আয়াতে আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন সে আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ

...তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত...সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৬

আল্লাহর নাফরমানী নিজের উপর সবচেয়ে বড় যুলুম। কাজেই গুনাহে জড়িয়ে নিজের উপর যুলুম এবং এই মাসের হুরমত নষ্ট না করি।


১২- ঈদুল আযহার কিছু সুন্নত ও আদব:


১- ঈদের রাতে যথাসম্ভব জাগ্রত থেকে নফল নামায,তিলাওয়াত,যিকির ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে অতিবাহিত করা। ভোরে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা।

২- মিসওয়াক করা।

৩- গোসল করা। (ঈদুল আযহায় গোসলের পূর্বে নখ, চুল ইত্যাদি পরিষ্কার করবে না। বরং প্রত্যেকে নিজের কুরবানী করার পর এগুলো পরিষ্কার করবে)

৪- যথাসাধ্য উত্তম পোষাক পরিধান করা।

৫- শরীয়ত সম্মতভাবে সাজসজ্জা করা।

৬- খুশবু লাগানো।

৭- ঈদুল আযহার দিন নামাযের পরে খাওয়া মুস্তাহাব। 

আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ حَتّى يَطْعَمَ، وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتّى يُصَلِّيَ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কোনো কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন নামায না পড়ে কিছু খেতেন না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৪২

কোনো বর্ণনায় আছে-

وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ النّحْرِ حَتّى يَذْبَحَ.

আর কুরবানী ঈদের দিন যবেহ করার আগে কিছু খেতেন না। -সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১৪২৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৬১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩০৪২

কোনো কোনো বর্ণনায় আছে-

وَلَا يَأْكُلُ يَوْمَ الْأَضْحَى حَتّى يَرْجِعَ فَيَأْكُلَ مِنْ أُضْحِيّتِهِ.

আর ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার আগে কিছু খেতেন না; (কুরবানীর পশু যবেহ হওয়ার পর) নিজ কুরবানীর পশুর গোস্ত থেকে খেতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৪; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ১৭১৫; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার, হাদীস ৬৮৪৬

৮- আগে আগে মুসল্লায় (ঈদগাহে)যাওয়া।

৯- পায়ে হেঁটে মুসল্লায় (ঈদগাহে)যাওয়া।

১০-ঈদের নামাযের আগে কুরবানী না করা:

বারা ইবনে আযিব রা. বলেন-

خَطَبَنَا النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَوْمَ النّحْرِ، قَالَ: إِنّ أَوّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَإِنّمَا هُوَ لَحْمٌ عَجّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النّسُكِ فِي شَيْءٍ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামায আদায় করা, এরপর কুরবানী করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কাজ আমাদের তরীকা মতো হবে। আর যে আগেই যবেহ করেছে (তার কাজ তরীকা মতো হয়নি অতএব) তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) কুরবানী নয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৯০৭

১১- সশব্দে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া:

নাফে রাহ. ইবনে উমর রা.-এর আমল বর্ণনা করেন-

أَنّهُ كَانَ إِذَا غَدَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ يَجْهَرُ بِالتّكْبِيرِ حَتّى يَأْتِيَ الْمُصَلّى ثُمّ يُكَبِّرُ حَتّى يَأْتِيَ الْإِمَامُ.

ইবনে ওমর রা. ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সকালে সশব্দে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যেতেন এবং ইমাম আসা পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকতেন। -সুনানে দারাকুতনী, বর্ণনা ১৭১৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৬১২৯

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

১২- ঈদের দিন পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা:

জুবায়র ইবনে নুফাইর রাহ. বলেন-

كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا الْتَقَوْا يَوْمَ الْعِيدِ يَقُولُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ تَقَبّلَ اللّهُ مِنّا وَمِنْكَ.

সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন-

تَقَبَّلَ اللّٰهُ مِنَّا وَ مِنْكُمْ

উচ্চারণ : তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।

অর্থ : আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে সমস্ত নেক আমল কবূল করুক।ফাতহুল বারী ২/৫১৭

১৩- শরীয়তের গন্ডির ভিতর থেকে ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা।

১৪- এক রাস্তায় মুসল্লায় (ঈদগাহে) যাওয়া, অন্য রাস্তায় প্রত্যাবর্তন করা। 

১৫- মুসল্লায় (ঈদগাহে) গিয়ে ঈদের নামাযের পূর্বে অথবা পরে কোন নফল নামায আদায় করা মাকরূহ। 

অবশ্য কারো ইচ্ছে হলে ঈদের নামাযের পর বাসায় ফিরে ইশরাক ও অন্যান্য নফল নামায পড়তে পারবে।


হাওয়ালা ও অনুবাদ আল কাউসার থেকে সংগৃহীত।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →