প্রবন্ধ
শা'বান ও শবে বরাত : ফযীলত, করণীয় ও বর্জনীয়
লেখক:মুফতী ওমর আহমদ
১৫ মার্চ, ২০২২
৭১৭১ বার দেখা হয়েছে
০ মন্তব্য
ফযীলত ও বরকতময় মাসসমূহের একটি হল শা‘বান মাস। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় পুরো শা‘বান মাসই রোযা রাখতেন। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ১৯৬৯, ১৯৭০)
এ মাসে বনী আদমের ‘আমল আল্লাহ তা‘আলার দরবারে পেশ করা হয়। তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইতেন, তাঁর ‘আমল এমন সময় পেশ হোক যখন তিনি রোযাদার। (নাসায়ী শরীফ হাদীস নং- ২৩৫৭) শা‘বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্র (অর্থাৎ, ১৫ শা‘বানের রাত্র) মুসলিম সমাজে ‘শবে বরাত’ বা ‘লাইলাতুল বরাআত’ হিসেবে প্রসিদ্ধ। হাদীস শরীফে এ রজনীকে ليلة النصف من شعبان বা ‘অর্ধ শা‘বানের রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘লাইলাতুল বরাআত’ নামটিও হাদীস শরীফের মর্মার্থ থেকেই গৃহীত। অর্থাৎ, মুক্তির রজনী।
এ রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমজে বিভিন্ন মতামত, রসম-রেওয়াজ ও বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ হয়ত এ রাতের ফযীলতকে একেবারেই অস্বীকার করছে এবং এ রাতের নফল ইবাদত-বন্দেগীকে বিদ‘আত বলছে; আবার কেউ মনগড়া বিভিন্ন রসম-রেওয়াজ চালু করছে। তাই এখানে খুব সংক্ষেপে এ রজনী সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হচ্ছে:-
শবে বরাআতের ফযীলত সম্পর্কে কতিপয় হাদীস







এ রাতে করণীয়
এ রাতে আল্লাহ তা‘আলার যিকরে মশগুল থাকা, একনিষ্ট মনে কৃত পাপাচারের জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করা, নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, দরূদ শরীফ পাঠ করাসহ বিভিন্ন নফল ‘আমলে মশগুল থাকা এবং সকল পেরেশানী, রোগ, বিপদাপদ থেকে মুক্তি, হালাল রুজি-রুজগার ও সকল প্রকার প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে বিশেষভাবে দু‘আ করা।
ঐসকল গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং বেঁচে থাকা যা এই বরকতময় রাতের ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ ও দু‘আ কবূলের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত রাখে।
সকল মুমিন-মুসলমান একে-অপরের জন্য দু‘আ করা। মৃতদের জন্য দু‘আ করা।
নফল ইবাদত ঘরে করা উত্তম। তবে অলসতা বা ঘুমের আশংকা হলে মসজিদেও ইবাদত করা যাবে।
হাক্কানী উলামায়ে কিরামের ওয়াজ-নসীহত শুনা।
১৫ শা‘বান নফল রোযা রাখা।
এ রাতে বর্জনীয়
মনগড়া সকল রসম-রেওয়াজ, হালুয়া-রুটি, শিরনী-তবারক তৈরি ও বিতরণ করা, আতশবাজি, পটকাবাজি, ঘর-বাড়িতে আলোকসজ্জা করা, মাজারে মোমবাতি জালানো।
মাইকে মিলাদ-শবীনা পড়ে অন্যদের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো, মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করা, গল্প করা, দলবেধে সারা রাত হৈহুল্লোর ও আনন্দ উল্লাস করা।
নফল নামাযের নির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যা, নির্দিষ্ট সূরা, নামাযের বিশেষ পদ্ধতিকে আবশ্যক মনে করা ও মনগড়া ফযীলত বর্ণনা করা ইত্যাদি সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।
মোট কথা, এ রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা কোন ভিত্তিহীন কাজ নয়। এ রাতে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ রহমত নাযিল হয়ে থাকে, দু‘আ কবূল হয়ে থাকে ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির সাধারণ ঘোষণা হয়ে থাকে। তাই গাফেল ও অলসভাবে এ রাত কাটানো নিতান্তই বোকামী। বরং সকল ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত ‘আমল ও ইবাদতসমূহের পাবন্দ হওয়ার পাশাপাশি সমাজে প্রচলিত সকল মনগড়া কাজ, গর্হিত ও অহেতুক কর্মকান্ড বর্জন করে শবে বরাতের ‘আমলকে নফল ও মুস্তাহবের পর্যায়ে রেখে শবে বরাত উপলক্ষে ইবাদত বন্দেগী করা সাওয়াব ও বরকতের কাজ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
রজব ও শা’বান : প্রেক্ষিত মধ্যপন্থা বনাম প্রান্তিকতা
মহিমান্বিত রমাযান মাসের পূর্বে আমাদের সামনে রয়েছে দুটি মাস; রজব ও শা’বান। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা রজব এ...
মুফতী হাফিজুর রহমান
৯ নভেম্বর, ২০২৪
৮৩০৪ বার দেখা হয়েছে
হাদীসের আলোকে মিরাজুন্নবীর ঘটনা
[ইসরা ও মিরাজের ঘটনা নবী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, নবীজীর রিসালাতের অনেক বড় মুজিযা আর উম্মতে ...
বিবিধ
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৪৫৫৯ বার দেখা হয়েছে