প্রবন্ধ
ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা; কিছু ফাযাইল ও মাসাইল
ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা; কিছু ফাযাইল ও মাসাইল
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা) করে সৃষ্টি করেছেন এবং আল্লাহ্র বাকী সকল সৃষ্টির উপর মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
মানুষ সামাজিক জীব, মানুষকে তার জীবন যাপনের প্রতিটি স্তরে শৃঙ্খলা ও বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন অনুযায়ী চলতে হয়।
কীভাবে মানুষ তার গোটা জীবনটা আল্লাহ্র আনুগত্য ও তার সন্তুষ্টি মোতাবেক পরিচালিত করতে পারে তারজন্যে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য রাসুল ও আম্বিয়ায়ে কিরামকে মানুষের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন।
রাসুলগন স্বীয় উম্মতের নিকট আল্লাহ্ প্রদত্ত শরীআত (জীবন ব্যবস্থা) নিয়ে এসেছেন এবং যারা আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার অনুসরণ করে চলবে তাদের জন্য চির সুখের ঠিকানা জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন।
রাসুলগনের আগমনের এধারা আখেরী রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে।
আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শেষ নবী তদ্রূপ তার আনীত শরীআত বা জীবন ব্যবস্থা তথা দীনে ইসলামও সর্বশেষ জীবন ব্যবস্থা যা তার পূর্বেকার সকল জীবন ব্যবস্থাকে রহিত করে দিয়েছে এবং তার আবির্ভাবের পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হলো দীনে ইসলাম।
আল্লাহ্র মনোনীত এ দ্বীনে ইসলাম যে পাঁচটি রুকনের উপর তার ভিত্তি স্থাপন করেছে তন্মধ্যে অন্যতম একটি রুকন হলো ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা।
এটি ইসলামের তৃতীয় রুকন।
আমরা জানি, Islam is the Complete Code of Life অর্থাৎ মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে ইসলামের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলার সুযোগ রয়েছে।প্রতিটি ক্ষেত্রেই শরীআতের নির্দেশনা বিদ্যমান যা আমাদের আদর্শ মানব হিসেবে গড়ে উঠার জন্য যথেষ্ট। মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সম্পদ আয়-ব্যয়ের গুরুত্ব অপরিসীম, সে কোথায় কতটুকু কীভাবে খরচ করবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা বজায় রাখতে ব্যক্তির কী করণীয় তার সকল সমাধান দেয়া হয়েছে ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার মধ্যে।
শরীআতসম্মতভাবে যাকাত তার উপযুক্ত ক্ষেত্রে দেয়া হলে সমাজে-দেশে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ, ভিক্ষাবৃত্তির হ্রাসকরণসহ দেশকে দারিদ্র সীমার রেখা থেকে বের করে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তর করা সম্ভবপর হবে।
এপর্যায়ে আমরা যাকাত সক্রান্ত কিছু আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্।
যাকাত শব্দের অর্থঃ
ইমাম মাজদুদ্দীন ইবনুল আছীর(৬০৬হি) রহঃ তার النهاية في غريب الحديث والأثر গ্রন্থে “যাকাত” সম্পর্কে লিখেন,
(هـ) قد تكرر في الحديث ذكر «الزكاة والتزكية» وأصل الزكاة في اللغة الطهارة والنماء والبركة والمدح، وكل ذلك قد استعمل في القرآن والحديث،
অর্থঃ অভিধানে যাকাত শব্দ চারটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ও প্রশংসা।
এবং এসব কয়টি অর্থই কুরআন হাদীসে উদৃত হয়েছে।(পৃষ্ঠা-২/৩০৭)
ইমাম সারাখসী (৪৮৩হি) রহঃ তার আল-মাবসুত কিতাবে বলেন,
(قال) الشيخ الإمام الأجل الزاهد شمس الأئمة أبو بكر محمد بن أبي سهل السرخسي - رحمه الله تعالى -: الزكاة في اللغة عبارة عن النماء والزيادة ومنه يقال زكا الزرع إذا نما فسميت الزكاة زكاة لأنها سبب زيادة المال بالخلف في الدنيا والثواب في الآخرة قال الله تعالى {وما أنفقتم من شيء فهو يخلفه} [سبأ: 39] وقيل أيضا إنها عبارة عن الطهر قال الله تعالى {قد أفلح من تزكى} [الأعلى: 14] أي تطهر وإنما سمي الواجب زكاة؛ لأنها تطهر صاحبها عن الآثام، قال الله تعالى {خذ من أموالهم صدقة تطهرهم وتزكيهم بها} [التوبة: 103]
অভিধানে যাকাত শব্দটি বৃদ্ধি পাওয়া,বেড়ে যাওয়া অর্থেই বেশী ব্যবহৃত হয়।
শরীয়াতের পরিভাষায় যাকাত বলা হয়,
সামর্থ্যবান ব্যক্তির সম্পদে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক ফরযকৃত অংশ উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট সময়মতো হস্তান্তর করা।
ধনী ব্যক্তির সম্পদে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক ফরযকৃত অংশ হলো,তার প্রয়োজন অতিরিক্ত মালের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হবার পর তাতে আড়াই শতাংশ যাকাতের জন্য ওয়াজিব হয়।
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রয়োজন অতিরিক্ত মালের মধ্যে কেবল আড়াই শতাংশ যাকাতের জন্য ধার্য করেছেন।ব্যক্তির প্রয়োজন অতিরিক্ত মালের উপর এক বছর অতিবাহিত হলে তাকে স্বীয় সম্পদের আড়াই শতাংশ যাকাতের মাসরাফ ব্যক্তিবর্গকে প্রদান করতে হবে।
অভিধানে যাকাত শব্দটি বৃদ্ধি পাওয়া,বেড়ে যাওয়া অর্থেই বেশী ব্যবহৃত হয়।
যাকাতকে এইজন্যে যাকাত বলা হয় যে,
যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তির সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং নেকীতে প্রবৃদ্ধি ঘটে।
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তির মালে বরকত হয়, মাল বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাআলা তাকে এর বদলে দুনিয়াতে ও আখেরাতে উত্তম বিনিময় দান করেন।
আল্লাহর ইরশাদ,
قال الله تبارك وتعالى:{وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ} [سبأ: 39]
অর্থঃ এবং তোমরা যা কিছুই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করছ তিনি তদস্থলে তোমাদের উত্তম বিনিময় দিবেন।তিনিই সর্বোত্তম রিযিকদাতা।সুরা সাবা-৩৯
যাকাত ইসলামের ফরজ বিধানঃ
যাকাত ইসলামের তৃতীয় ফরজ বিধান। যাকাতের ফরজিয়্যাত কুরআন, হাদীস এবং ইজমার দারা প্রমাণিত। এতে সন্দেহ বা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। যে ব্যক্তি যাকাতের অস্বীকার করবে বা এর এমন ব্যাখ্যা করবে যা সাহাবা তাবেইগনের বুঝের পরিপন্থী তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।
যাকাত সম্পর্কে কুরআনের ভাষাঃ
قال الله تبارك وتعالى: {وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ} [البقرة: 43]
অর্থঃ আর তোমরা সালাত যথাযথভাবে আদায় কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর। বাকারা-৪৩
قال الله تبارك وتعالى: {وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ} [البقرة: 110]
অর্থঃ আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। বাকারা-১১০
قال الله تبارك وتعالى: { إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ} [البقرة: 277]
অর্থঃ নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত প্রদান করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।বাকারা-২৭৭
قال الله تبارك وتعالى:{إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ} [المائدة: 55]
অর্থঃ তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। মায়েদা-৫৫
قال الله تبارك وتعالى:{فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ} [التوبة: 11]
অর্থঃ অতএব যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই। আর আমি আয়াতসমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য যারা জানে।সুরা তাওবা-১১
قال الله تبارك وتعالى:{ إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ} [التوبة: 18]
অর্থঃ একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, ওরা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।সুরা তাওবা- ১৮
قال الله تبارك وتعالى:{ الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ} [الحج: 41]
অর্থঃ তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।সুরা হাজ্জ- ৪১
قال الله تبارك وتعالى:{وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ} [النور: 56]
অর্থঃ আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার। সুরা নুর- ৫৬
قال الله تبارك وتعالى:{الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ} [النمل: 3]
অর্থঃ যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়। আর তারাই আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।সুরা নামল- ০৩
قال الله تبارك وتعالى: {وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ}[البينة: 5]
অর্থঃ তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে আর যাকাত দিবে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন। সুরা বাইয়্যিনা- ০৫
যাকাত সম্পর্কে হাদীসের ভাষ্যঃ
عن ابن عباس رضي الله عنهما: أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث معاذا رضي الله عنه إلى اليمن، فقال: «ادعهم إلى شهادة أن لا إله إلا الله، وأني رسول الله، فإن هم أطاعوا لذلك، فأعلمهم أن الله قد افترض عليهم خمس صلوات في كل يوم وليلة، فإن هم أطاعوا لذلك، فأعلمهم أن الله افترض عليهم صدقة في أموالهم تؤخذ من أغنيائهم وترد على فقرائهم» صحيح البخاري-1395
অর্থঃ
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণকালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ)সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর প্রতি দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সা’দকা (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের নিকট থেকে (যাকাত) উসূল করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। বুখারী - ১৩৯৫
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، والحج، وصوم رمضان " صحيح البخاري 8 و صحيح مسلم 16
হাদীসের অর্থঃ
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা। বুখারী-০৮
মুসলীম শরীফের বর্ণনায় এসেছেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া, রামাযানের রোযা পালন করা এবং হাজ্জ করা। এক ব্যাক্তি (এ ক্রম পরিবর্তন করে) বলল, হাজ্জ করা ও রামাযানের রোযা পালন করা। হযরত ইবনে উমর (রাঃ)বললেন, না রামাযানের রোযা পালন করা ও হাজ্জ করা এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।মুসলীম শরীফ-১৬
যাকাত সম্পর্কে ইজমায়ে উম্মতঃ
সাহাবায়ে কিরাম থেকে শুরু করে উম্মতের সকল যুগের সকল উলামায়ে কিরাম যাকাত ফরজ হবার বিষয়ে একমত । এতে কেউ দ্বিমত করেননি।
যাকাত কখন ফরজ হয়ঃ
সাধারন দান সাদকা ইত্যাদিও যাকাত শব্দের ব্যপকতার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা পূর্বের উম্মত সমূহের শরীয়াতেও যাকাতের বিধান দিয়েছিলেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন,
قال الله تبارك وتعالى: {وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ} [الأنبياء: 73]
অর্থঃ আর তাদেরকে আমি নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত। আমি তাদের প্রতি সৎকাজ করার, সালাত কায়েম করার এবং যাকাত প্রদান করার জন্য ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর তারা আমারই ইবাদাত করত। আম্বিয়া-৭৩
قال الله تبارك وتعالى: { وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ} [البقرة: 83]
অর্থঃ আর স্মরণ কর, যখন আমি বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তোমরা সকলে উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিলে। বাকারা- ৮৩
ইসলামের প্রথম যুগেহিজরতের পূর্বেও সাহাবাগন যাকাতের পরিভাষার সাথে পরিচিত ছিলেন।
হাবশার বাদশা নাজাশীর দরবারে হযরত জাফর বিন আবী তালীব তার ভাষণে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
এবং অনেক মাক্কী আয়াতেও যাকাতের কথা এসেছে বারবার।
قال الله تبارك وتعالى: {وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ} لِّلسَّآئِلِ وَ الۡمَحۡرُوۡمِ [المعارج: 24]
অর্থঃ আর যাদের ধন-সম্পদে রয়েছে নির্ধারিত হক, প্রার্থী এবং বঞ্চিতদের জন্য।মাআরিজ-২৪,২৫
যদ্দরুন কতেক উলামায়ে কিরাম (ইমাম ইবনে খুজাইমা ও ইবনে হাযম রহঃ প্রমুখ)এ মত পোষণ করেন যে, যাকাত হিজরতের পূর্বেই ফরজ হয়েছিল।
তবে, বিশুদ্ধ মতানুসারে যাকাতের ফরজ বিধান হিজরতের পরে নাযিল হয়েছে।
হিজরতের পূর্বে নফল যাকাত সাদকার বিধান ছিল।ধনীদেরকে দান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, তাদের মালের মধ্যে গরীব ভাইদেরও হক রয়েছে।
এবং সাহাবায়ে কিরাম সময়ে সময়ে ঐচ্ছিকভাবে নিজেদের মাল থেকে যাকাত আদায় করতেন।
যার কোন নির্দিষ্ট শর্ত ও নিসাব ছিলোনা।
হিজরতের পরে দ্বিতীয় মতান্তরে তৃতীয় হিজরীতে মদীনাতে যাকাত ফরজ হয়।
হাফিজ ইবনে হাজার (৮৫২হি) রহঃ এবিষয়ে ফাতহুল বারীতে সবিস্তারে লিখেছেন।[1]
যাকাতের বিবিধ ফাযাইল সমূহঃ
যাকাতের অসংখ্য ফাযাইল কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত হয়েছে।
এছাড়াও আমরা যাকাতের অনেক পার্থিব ফায়েদা চিন্তা করলেই বের করতে পারি। আমাদের ব্যক্তিজীবন এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের স্থায়ী সুখ শান্তি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লুকিয়ে আছে যাকাতের ফরজ বিধান শরীয়তসম্মত ভাবে আদায় করার মধ্যে। নিম্নে যাকাতের কিছু ফযীলত উল্লেখ করা হলোঃ
১- পবিত্র কুরআনে নামাজের সাথে মিলিয়ে যাকাতকেই বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যা যাকাতের অপরিসীম গুরুত্ব নির্দেশ করে।
২- মুমীনের গুণাবলীসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো যাকাত আদায় করা।সুরা মুমিনুন-০৪
৩- যাকাত তার আদায়কারীকে পবিত্র করে।
যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
قال الله تبارك وتعالى: { خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ} [التوبة: 103]
‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’-সূরা তাওবা : ১০৩
৪- হেদায়েতপ্রাপ্তদের জন্য স্মর্তব্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত যাকাত আদায় করা।
قال الله تعالى:{الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ}[لقمان: 4]
৫- মসজিদ আবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইলে নামাজ ও যাকাত আদায় অপরিহার্য। সুরা তাওবা-১৮
৬- যাকাত ইসলামের তৃতীয় রুকন।
৭- যাকাত ছাড়া অন্য সকল প্রকারের সাদকা নফলের অন্তর্ভুক্ত।
আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে ফরজ আমলসমূহ নফলআমল অপেক্ষা অগ্রগণ্য এবং বেশী শক্তিশালী।
হাদীসে পাকে এসেছে,
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " إن الله قال: من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب، وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضت عليه، وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته: كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني لأعطينه، ولئن استعاذني لأعيذنه، وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن، يكره الموت وأنا أكره مساءته " صحيح البخاري 6502
যার অর্থঃ
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। আমার বান্দা আমি যা তার উপর ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন-- করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়াল করে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে এটাতে কোন রকম দ্বিধা সংকোচ করি-না যতটা দ্বিধা সংকোচ মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে করি। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি। বুখারী- ৬৫০২
৮- মালের মধ্যে নিহিত যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় মালের যাকাত দেয়া।
হযরত জাবির রা থেকে বর্ণিত,
عن جابر قال: قال رجل من القوم: يا رسول الله، أرأيت إذا أدى رجل زكاة ماله؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من أدى زكاة ماله، فقد ذهب عنه شره» الطبراني في الاوسط 1579
وعند ابن خزيمة بلفظ : «إذا أديت زكاة مالك، فقد أذهبت عنك شره» -2258-
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করলো সে মালের মধ্যে নিহিত যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পেয়ে গেলো।[2] আল-মুজামুল আউসাত-১৫৭৯, সহীহ ইবনে খুযাইমা- ২২৫৮
ইমাম আবু দাউদ রহঃ তার মারাসীলে হাসান বসরী রহঃ সুত্রে একটি মুরসাল হাদীস এনেছেন।
عن الحسن، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «حصنوا أموالكم بالزكاة، وداووا مرضاكم بالصدقة، واستقبلوا أمواج البلاء بالدعاء والتضرع» المراسيل لأبي داود 105
অর্থঃ ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা নিজেদের মালকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত করো………।
৯- যাকাত মুমীনের অন্তরে দানশীলতা পয়দা করে এবং কৃপণতার থেকে হেফাযত করে ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
قال الله تبارك وتعالى: {وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [الحشر: 9]
অর্থঃ যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।
সুরা হাশর-০৯
১০-যাকাত প্রদানের দ্বারা সমাজ থেকে দারিদ্রতা বিমোচন হবে।
সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা বজায় থাকবে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হবে।
১১- সঠিকভাবে যাকাত দেয়ার মাধ্যমে পথে ঘাটে ভিক্ষাবৃত্তি কমে যাবে, যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত হবে।
ইদানিং বিভিন্ন অভিজাত পাড়ায় “ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা” এজাতীয় স্লোগান প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের “ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা” এসব স্লোগান পরিহার করে সবাই যেন ঠিকমতো যাকাত আদায় করে এবং কারও যেন ভিক্ষাবৃত্তি না করতে হয় এ ব্যপারে জনসচেতনতা তৈরি করা উচিত।
কারন স্লোগানের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তির সমাধান হবে না,এর সুন্দর সমাধান তো নিহিত আছে যাকাত ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগ ও অনুশীলনের মধ্যে।
১২- যাকাতের মাধ্যমে সমাজকে চুরি, ছিনতাই,প্রতারণা ইত্যাদি অপরাধ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব, যেগুলোর সুত্রপাত হয় শুধুমাত্র অভাবের তাড়না থেকে।
মোটকথা, সমাজে অশান্তি-বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ অর্থ এবং এর অপব্যবহার। কোথাও বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে রয়েছে সম্পদের আধিক্য আবার কোথাও সম্পদের অভাবে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। সেজন্য চাই ভারসাম্যপূর্ণ সহাবস্থান।
আর এসব সমস্যা সমাধানে আর্থিক ইবাদত যাকাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
১৩- যাকাত ধনী গরীবের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, হৃদ্যতা ও পরস্পরে জোর মিল মুহাব্বাত পয়দা করে।
এক শ্রেনীর দরিদ্র লোকের মনে ধনীদের প্রতি সর্বদাই হিংসাত্মক মনোভাব এবং চরম বিতৃষ্ণা থাকে, যার ফলে পথে ঘাটে গালিগালাজ, ঝগড়া বিবাদ থেকে শুরু করে প্রচুর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এ সমস্যার সমাধান হলো শরীয়াতসম্মত উপায়ে যাকাত দেয়া।
একমাত্র সুষ্ঠুভাবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমেই এধরনের সামাজিক ব্যাধি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এভাবে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
১৪- যাকাত ব্যক্তির মালকে পবিত্র করে।
হাদীসে পাকে এসেছে,
عن ابن عباس، قال: لما نزلت هذه الآية: {والذين يكنزون الذهب والفضة} [التوبة: 34] ، قال: كبر ذلك على المسلمين، فقال عمر رضي الله عنه: أنا أفرج عنكم، فانطلق، فقال: يا نبي الله، إنه كبر على أصحابك هذه الآية، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن الله لم يفرض الزكاة، إلا ليطيب ما بقي من أموالكم، وإنما فرض المواريث لتكون لمن بعدكم» ، فكبر عمر، ثم قال له: «ألا أخبرك بخير ما يكنز المرء؟ المرأة الصالحة، إذا نظر إليها سرته، وإذا أمرها أطاعته، وإذا غاب عنها حفظته» سنن أبي داود 1664
হাদীসের অর্থঃ
হযরত ইব্নে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, "যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভুত করে ...",তখন মুসলিমদের নিকট তা খুবই গুরতর মনে হল। উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি তোমাদের এই উদ্বেগ দূরীভুত করব। অতপর তিনি গিয়ে বলেনঃ ইয়া নবীআল্লাহ্! এই আয়াত আপনার সাহাবীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের অবশিষ্ট ধন-সম্পদ পবিত্র করতে যাকাত ফরয করেছেন। আর তিনি মীরাছ এইজন্য ফরয করেছেন, যাতে পরিত্যক্ত মাল তোমাদের পরবর্তী বংশধরেরা পেতে পারে।
তখন উমার (রাঃ) "আল্লাহু আকবার" ধ্বনি দেন। অতঃপর তিনি উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ আমি কি তোমাকে লোকদের পুঞ্জীভুত মালের চেয়ে উত্তম মাল সর্ম্পকে অবহিত করব না? তা হল পূন্যবতী নারী যখন সে (স্বামী) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে তখন সে সন্তুষ্ট হয়। আর যখন সে (স্বামী) তাকে কিছু করার নির্দেশ দেয়, তখন সে তা পালন করে। আর যখন সে (স্বামী) তার নিকট হতে অনুপস্থিত থাকে তখন সে তার (ইজ্জত ও মালের) হেফাযত করে। (আবু দাউদ-১৬৬৪)।
১৫- ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যাকাতঃ
দীনে ইসলামের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি দিক হলো ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা।
ইসলামে ধনী দরিদ্রে কোন বৈষম্য নেই। সুখে দুঃখে সবার একত্রে মিলে কাজ করা এবং আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে যাকাতের গুরুত্ত অপরিসীম।
অন্য কোন ধর্মে যাকাতের মতো ব্যবস্থা নেই।
১৬- ইমাম ইবনে হিব্বান রহঃ তার হাদীসের গ্রন্থে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম এভাবে দিয়েছেন
ذكر إيجاب الجنة لمن آتى الزكاة مع إقامة الصلاة وصلته الرحم
অর্থঃ যাকাত আদায়কারীর জন্য (নামাজ এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার শর্তে) জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার বর্ণনা।[3] ইবনে হিব্বান-৩২৪৫
১৭- দ্বীনের মৌলিক পরিচয় পেতে চাইলে সালাত-যাকাত ছাড়া পরিচয় দান অসম্ভব(সূরা বাইয়েনা : ৫)
উপরের পয়েন্টগুলো থেকে পাঠকের সামনে যাকাত প্রদানের সীমাহীন ফযীলত ও বহুবিধ পার্থিব ফায়েদা উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়াও যাকাত সঠিকভাবে আদায় করার অসংখ্য দ্বীনী-দুনিয়াবী ফায়েদার কথা উলামায়ে কিরাম কিতাবাদীতে সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন।
যাকাত কোথায় কীভাবে আদায় করবোঃ
কুরআনে হাদীসে যাকাত আদায়কারীর ব্যপারে যেরকম নির্দেশনা দেয়া আছে ঠিক তদ্রূপ যাকাত গ্রহীতার বিষয়েও কুরআনে কারিমে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে।
সুরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
قال الله تبارك وتعالى: {إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ} [التوبة: 60]
অর্থঃ যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।-সূরা তাওবা : ৬০
কীভাবে যাকাত দিতে হবেঃ
আমার আদায়কৃত যাকাত কীভাবে আল্লাহর নিকট কবুল হবে এবং এই ইবাদতের পূর্ণ প্রতিদান আমি কিভাবে পাবো তার জন্য কিছু আভ্যন্তরীণ শর্তাদি রয়েছে।
১- বিনয় অবলম্বন করা যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা তার অনুগত বান্দাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন-
قال الله تبارك وتعالى: وَ الَّذِیْنَ یُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّ قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰی رَبِّهِمْ رٰجِعُوْن
আর তারা যা কিছু দান করে এভাবে দান করে যে, তাদের হৃদয় ভীতকম্পিত থাকে (একথা ভেবে) যে, তারা তাদের রবের নিকটে ফিরে যাবে।’ -সূরা মুমিনূন : ৬০
২- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়্যাত অন্তরে জাগরুক রাখা।
এক আয়াতে মু’মিনদের সম্বোধন করে বলেন-
قال الله تبارك وتعالى: وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ فَلِاَنْفُسِكُمْ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ یُّوَفَّ اِلَیْكُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ ۲۷۲
... এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই ব্যয় করে থাক। যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় কর তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরোপুরিভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। -সূরা বাকারা-২৭২
৩- ইখলাসের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হওয়া এবংশয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে অনুগ্রহ প্রদর্শন বা খোটা দেয়া ইত্যাদি অসংযত আচরণের মাধ্যমে নিজের দান-সদকাকে ব্যর্থ না করে দেয়া।
আল্লাহ তাআলা এব্যপারে মুমিনদের সতর্ক করেছেন।
এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
قال الله تبارك وتعالى: یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی ۙ كَالَّذِیْ یُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা অনুগ্রহ ফলিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-সদকাকে বিনষ্ট করো না। ওই লোকের মতো যে লোক দেখানোর জন্য সম্পদ ব্যয় করে আর ঈমান রাখে না আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের উপর।-সূরা বাকারা-২৬৪
উপরোক্ত আয়াতসমূহের স্পষ্ট শিক্ষা যে, বিনয় অবলম্বন, খোদাভীতি ও ইখলাস হল যাকাত এবং সর্বপ্রকার দান আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার অভ্যন্তরীণ শর্ত। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো যাকাত আদায় করে দেওয়া কর্তব্য।
যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণামঃ
কোন ব্যক্তি যদি যাকাতের অস্বীকার করে সে তৎক্ষণাৎ কাফির হয়ে যাবে।
আর যারা সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যাকাত আদায় করছে না, স্বীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে তাদের শিক্ষা নেবার জন্য সুরা তাওবার নিম্নোক্ত আয়াতই যথেষ্ট।
قال الله تبارك وتعالى: {وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (34) يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ} [التوبة: 34، 35]
অর্থঃ আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
যেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে এবং সে সব দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেয়া হবে, বলা হবে, এগুলোই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ ভোগ কর। তাওবা- ৩৪,৩৫
হাদীসে পাকে ইরশাদ হচ্ছে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه، يقول: قال النبي صلى الله عليه وسلم: «تأتي الإبل على صاحبها على خير ما كانت، إذا هو لم يعط فيها حقها، تطؤه بأخفافها، وتأتي الغنم على صاحبها على خير ما كانت إذا لم يعط فيها حقها، تطؤه بأظلافها، وتنطحه بقرونها» ، وقال: «ومن حقها أن تحلب على الماء» قال: " ولا يأتي أحدكم يوم القيامة بشاة يحملها على رقبته لها يعار، فيقول: يا محمد، فأقول: لا أملك لك شيئا، قد بلغت، ولا يأتي ببعير يحمله على رقبته له رغاء فيقول: يا محمد، فأقول: لا أملك لك من الله شيئا، قد بلغت " صحيح البخاري ( 1402)
অর্থঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি নিজের উটের (উপর দরিদ্র, বঞ্চিত, মুসাফিরের) হক আদায় না করবে, (কিয়ামত দিবসে) সে উট দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করতে আসবে এবং যে ব্যাক্তি নিজের বকরীর হক আদায় না করবে, সে বকরী দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে মালিককে খুর দিয়ে পদদলিত করবে ও শিং দিয়ে আঘাত করবে। উট ও বকরীর হক হল পানির নিকট (জনসমাগম স্থলে) ওদের দোহন করা (ও দরিদ্র বঞ্চিতদের মধ্যে দুধ বন্টন করা)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন কিয়ামত দিবসে (হক অনাদায়জনিত কারণে শাস্তিস্বরূপ) কাঁধের উপর চিৎকাররত বকরী বহন করে (আমার নিকট) না আসে এবং বলে, হে মুহাম্মদ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলবঃ তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমিতো (শেষ পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি। বুখারী- ১৪০২
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " من آتاه الله مالا، فلم يؤد زكاته مثل له ماله يوم القيامة شجاعا أقرع له زبيبتان يطوقه يوم القيامة، ثم يأخذ بلهزمتيه - يعني بشدقيه - ثم يقول أنا مالك أنا كنزك، ثم تلا: (لا يحسبن الذين يبخلون) " الآية
صحيح البخاري (1403)
অর্থঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কমড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেনঃ “আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথছ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।” বুখারী- ১৪০৩
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় এবং হাদীসদুটি থেকে ভয়াবহ শাস্তির যে বিবরণ আমরা পেলাম তাতে স্পষ্ট হয়ে যায়, কত ভয়াবহ হবে সেই শাস্তি এবং সেই কঠিন আযাব ভোগ করার মতো কোন শক্তিও আমাদের নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন এবং আমাদের মধ্যকার সামর্থ্যবানদের যথাসময়ে হিসাব করে যাকাত আদায় করার তাওফিক দান করেন। আমীন।
[1]قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري:
اختلف في أول وقت فرض الزكاة فذهب الأكثر إلى أنه وقع بعد الهجرة فقيل كان في السنة الثانية قبل فرض رمضان أشار إليه النووي في باب السير من الروضة وجزم بن الأثير في التاريخ بأن ذلك كان في التاسعة وفيه نظر فقد تقدم في حديث ضمام بن ثعلبة وفي حديث وفد عبد القيس وفي عدة أحاديث ذكر الزكاة وكذا مخاطبة أبي سفيان مع هرقل وكانت في أول السابعة وقال فيها يأمرنا بالزكاة لكن يمكن تأويل كل ذلك كما سيأتي في آخر الكلام وقوى بعضهم ما ذهب إليه بن الأثير بما وقع في قصة ثعلبة بن حاطب المطولة ففيها لما أنزلت آية الصدقة بعث النبي صلى الله عليه وسلم عاملا فقال ما هذه إلا جزية أو أخت الجزية والجزية إنما وجبت في التاسعة فتكون الزكاة في التاسعة لكنه حديث ضعيف لا يحتج به وادعى بن خزيمة في صحيحه أن فرضها كان قبل الهجرة واحتج بما أخرجه من حديث أم سلمة في قصة هجرتهم إلى الحبشة وفيها أن جعفر بن أبي طالب قال للنجاشي في جملة ما أخبره به عن النبي صلى الله عليه وسلم ويأمرنا بالصلاة والزكاة والصيام انتهى وفي استدلاله بذلك نظر لأن الصلوات الخمس لم تكن فرضت بعد ولا صيام رمضان فيحتمل أن تكون مراجعة جعفر لم تكن في أول ما قدم على النجاشي وإنما أخبره بذلك بعد مدة قد وقع فيها ما ذكر من قصة الصلاة والصيام وبلغ ذلك جعفرا فقال يأمرنا بمعنى يأمر به أمته وهو بعيد جدا وأولى ما حمل عليه حديث أم سلمة هذا إن سلم من قدح في إسناده أن المراد بقوله يأمرنا بالصلاة والزكاة والصيام أي في الجملة ولا يلزم من ذلك أن يكون المراد بالصلاة الصلوات الخمس ولا بالصيام صيام رمضان ولا بالزكاة هذه الزكاة المخصوصة ذات النصاب والحول والله أعلم ومما يدل على أن فرض الزكاة كان قبل التاسعة حديث أنس المتقدم في العلم في قصة ضمام بن ثعلبة وقوله أنشدك الله آلله أمرك أن تأخذ هذه الصدقة من أغنيائنا فتقسمها على فقرائنا وكان قدوم ضمام سنة خمس كما تقدم وإنما الذي وقع في التاسعة بعث العمال لأخذ الصدقات وذلك يستدعي تقدم فريضة الزكاة قبل ذلك ومما يدل على أن فرض الزكاة وقع بعد الهجرة اتفاقهم على أن صيام رمضان إنما فرض بعد الهجرة لأن الآية الدالة على فرضيته مدنية بلا خلاف وثبت عند أحمد وبن خزيمة أيضا والنسائي وبن ماجه والحاكم من حديث قيس بن سعد بن عبادة قال أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بصدقة الفطر قبل أن تنزل الزكاة ثم نزلت فريضة
الزكاة فلم يأمرنا ولم ينهنا ونحن نفعله إسناده صحيح رجاله رجال الصحيح إلا أبا عمار الراوي له عن قيس بن سعد وهو كوفي اسمه عريب بالمهملة المفتوحه بن حميد وقد وثقه أحمد وبن معين وهو دال على أن فرض صدقة الفطر كان قبل فرض الزكاة فيقتضي وقوعها بعد فرض رمضان وذلك بعد الهجرة وهو المطلوب
[2]
إسناده ليس بذاك. ابن جريج وأبو الزبير هما مدلسان وقد عنعنا في التحديث فتوقف الاحتجاج به على التصريح بسماعهما أو بمتابعة غيرهما عليه كما هو مقرر في اصول الحديث.
[3] أصل الحديث:
قال - أخبرنا أبو خليفة، حدثنا محمد بن كثير العبدي، أخبرنا شعبة، عن عثمان بن عبد الله بن موهب، عن موسى بن طلحة عن أبي أيوب الأنصاري أن رجلا أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: حدثني بعمل يدخلني الجنة. فقال النبي صلى الله عليه وسلم: "اعبد الله لا تشرك به شيئا، وتقيم الصلاة، وتؤتي الزكاة، وتصل الرحم. ذرها" - يعني الناقة-.
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
যাকাতের সপ্তম খাত “ফী সাবীলিল্লাহ” দ্বারা উদ্দেশ্য কী? একটি পর্যালোচনা
...
احکام رمضان المبارک و مسائل زکوٰة
رمضان المبارک کے روزے رکھنا اسلام کا تیسرا فرض ہے۔ جو اس کے فرض ہونے کا انکار کرے مسلمان نہیں رہتا ا...
রোযা ও যাকাত : প্রচলিত কয়েকটি মাসআলা
প্রসঙ্গ : রোযা একস্থানে রোযা শুরু করে অন্যস্থানে যাওয়ায় রোযা কম-বেশি হলে ধরে নেওয়া যাক, কোনো ব্যক...
রোযা ও যাকাত বিষয়ে প্রচলিত কয়েকটি মাসআলার সমাধান
...