আল্লামা মুফতী শহীদুল্লাহ

Blog Writer Image
খান্দানী ঐতিহ্য

হযরতের আব্বাজান মৌলভী আলী আকবর সাহেব বহু বড় বুযুর্গ ও বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। তিনি সময়ের কুতুব সূফী সদরুদ্দীন সাহেব রহ. এর সুযোগ্য খলিফা ছিলেন। আমৃত্যু তিনি লস্করহাট ইসলামীয়া মাদরাসায় বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। এবং দাদাজানও অত্যন্ত সরলমনা, বীনদার, পরহেজগার ও খোদাভীরু ছিলেন। হযরতের আম্মাজান মরহুমা আমেনা খাতুন। তিনিও বড় নেককার ও খোদাভীরু ছিলেন। একমাত্র মামাজান মাওলানা মাহমুদুর রহমান সাহেব যিনি এলাকায় বড় হুজুর' হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত লস্করহাট ইসলামীয়া মাদরাসার এহতেমামের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। নানাজানও উচ্চ পর্যায়ের বুযুর্গ ছিলেন। পুরো এলাকায় তিনি কারী সাহেব হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন এবং এলাকার সর্বস্তরের প্রায় সকলেই তাঁর থেকে  ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেছেন। আল্লাহপাকের ফজলে ও করমে হযরতের উভয় খান্দানে অনেক আলেম ও বুযুর্গ ছিলেন ও আছেন।

তিনি ৩  শাওয়াল মোতাবেক ১৩৮৩ হি. (১২ জুলাই ১৯৬৩ ইং) সনের জুলাই মাসের ১২ তারিখে ফেনী সদর থানার কালিদহ ইউনিয়নের অন্তর্গত মৌলভী বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন

বাল্যকাল ও প্রাথমিক শিক্ষা 

পরিবারে দুই সন্তানের মাঝে ছোট হওয়াতে পিতামাতার অতি মুহাব্বত ও স্নেহের পাত্র ছিলেন। তিনি যখন আট বছর বয়সে উপনিত হন, তখন থেকেই হযরতের আব্বাজান রহ. প্রানপ্রিয় ছেলেকে নিজের তত্ত্বাবধানে রেখে এলাকার সুপ্রসিদ্ধ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'লস্করহাট ইসলামীয়া মাদরাসায় লেখাপড়া করান। পরে যাতায়াতের অসুবিধার কারণে বাড়ীর পাশে অন্য একটি সুপরিচিত কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান *ভালুকিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। এখানেও তিনি কয়েকবছর প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।

মেখল মাদরাসায় গমন

এরপর 'নাহু-সরফ' অর্থাৎ আরবী ব্যাকরণে ভাল দক্ষতা অর্জন করার জন্য হযরতের বড় ভাই মাও. ইসহাক সাহেব রহ. আব্বাজানের অনুমতি সাপেক্ষে ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'মেখল হামিউসসুন্নাহ মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে দীর্ঘ ৬ বছর লেখাপড়া করেন এবং প্রায় ক্লাসেই ১ম স্থান অধিকার করেন। এতে ফেনীর ছাত্ররা হযরতকে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মুফতিয়ে আযম, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ. এর নিকট দোয়ার জন্য নিয়ে যেতেন। (হযরত ওয়ালা দা.বা. প্রায় সময় এ কথা স্মরণ করে শুকরিয়া আদায় করেন যে, একজন 'মাদরজাত' ওলির হাত আমার মাথার উপর অনেকবার লেগেছে।)

৬ষ্ঠ বছরের মাঝের দিকে উক্ত মাদরাসায় একটি মুনাযারায় (বিতর্ক অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠিত হয়। মুনাযারার বিষয়বস্তুটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। সেই মুনাযারায় আলেম-উলামা, তালিবে ইলম ছাড়াও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল প্রচুর। মুনাযারায় শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে কুরআন, হাদীস ও উসুলে ফিক্হ দ্বারা হযরতের মাধ্যমেই সঠিক সিদ্ধান্তের উপর ফায়সালা হয়। এতে উপস্থিত আসাতেযায়ে কেরামগণ হযরতকে অনেক অনেক দোয়া দেন। (হযরত প্রায় সময় বলে থাকেন যে, আসাতেযায়ে কেরামের দোয়ার বরকতেই এখন পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা আমাকে ইলমী লাইনের সাথে জড়িত রেখেছেন।

আব্বাজানের ইন্তেকাল

এ বছরের শেষের দিকে ১৩৯৮ হি. মোতাবেক ১৯৭৮ ইং সনে হযরতের আব্বাজান প্রায় ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)

হাটহাজারী মাদরাসায় গমন

মেখলে দীর্ঘ ৬ বছর লেখা-পড়া শেষে তিনি এশিয়ার ২য় বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম হাটহাজারী আরবী বিশ্যবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে কোরআন, হাদিস, ফিকহ, মানতেক ও হেকমতসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। পরিশেষে ১৪০৪ হি. মোতাবেক ১৯৮৪ ইং সনে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। পরবর্তী বছর উক্ত জামেয়ার তাফসীর বিভাগে ভর্তি হয়ে প্রায় তিন মাস পড়াশুনা করেন। ঘটনাক্রমে হযরতের শ্রদ্ধাভাজন দুই উস্তাদ: হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ আবদুল আজিজ সাহেব রহ. ও আল্লামা শেখ আহমদ সাহেব দা.বা. হযরতকে কক্সবাজারে উখিয়া নামক স্থানে ডিগুলিয়া কাসেমুল উলূম মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য পাঠিয়ে দেন। এদিকে হযরতের বড় ভাই মাও, ইসহাক সাহেব উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ইলমের শহর 'করাচী' পাঠানোর সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

উচ্চ শিক্ষার জন্য করাচি গমন

আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে হযরতের বড় ভাইয়ের আন্তরিক চেষ্টা ও প্রচেষ্টায় আর্থিক সত্ত্বেও করাচি যাওয়ার সু-ব্যবস্থা হয়ে যায়। ১৪০৫হি, মোতাবেক ১৯৮৫ ইং সনের রমজান মাসে করাচি, গমন করেন। সেখানে গিয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর খবরাখবর নিতে থাকেন। এর মধ্য দিয়ে এক খায়েরখাহ আলেম পরামর্শ দিলেন যে, আপনি যদি করাচির সুপ্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন ও বড় বুযুর্গ মুফতিয়ে আযম, মুফতি রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ. এর প্রতিষ্ঠিত 'দারুল ইফতা ওয়াল ইরশাদ এ ভর্তি হতে পারেন তাহলে অত্যন্ত ভাল হবে। উক্ত পরামর্শ অনুপাতে হযরত ওয়ালা দা.বা. সেখানে যান। হযরত মুফতী রশীদ আহমদ রহ. কে প্রথমবার দেখেই আত্মপ্রশান্তি অনুভব করেন এবং একটি বয়ান শুনেই এ সিন্ধান্তে উপনীত হন যে, আমাকে এখানেই ভর্তি হতে হবে। কিন্তু ভর্তি তো আর নির্ধারিত সময়ের পূর্বে হওয়া যায়না। তাই পুরো রমজান মাস পাশের এক আত্মীয়ের বাসায় রাত্রিযাপন করতেন আর দিনে এসে হযরতের বয়ানে শরীক হতেন। রমজানের পর ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দারুল ইফতায় ভর্তি হয়ে যান।

বাইয়াত গ্রহণ

ভর্তির পর ইলমী জযবা এমন ভাবে বৃদ্ধি পায় যে, হযরত বলেন: 'আলহামদুলিল্লাহ বহুরাত্র এমন হয়েছে যে, ইশার নামায পড়ে মুতালায়া'তে বসেছি আর ফজরের আযানের পর সে বসা থেকে উঠেছি। এভাবে ইলমী তরক্কী ও উন্নতির পাশাপাশি হযরতের আমলী জযবাও খুব বৃদ্ধি পায়। ফলে কিছুদিন পরই কুতুবে আলম রশীদে সানী হযরত মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ. এর খেদমতে বাইয়াতের দরখাস্ত করলে ১৫ই মুহররম ১৪০৬ হি. মঙ্গলবার বাদে আসর বাইয়াতের মাধ্যমে সিলসিলার অন্তর্ভুক্ত করে নেন। এভাবে শুরু হয় আধ্যাত্যিক জগতের এক নতুন অধ্যায়।

এ পথে তিনি দীর্ঘ সময় মুজাহাদা ও মেহনত করেন। এ নয় শুধু ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন কঠিন পরিক্ষারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। বলাবাহুল্য যে, পাকিস্তান হযরত রহ. ইসলাহে জাহের ও বাতেনের ক্ষেত্রে থানভী রহ. এর ন্যায় অত্যন্ত কঠোরতার সাথে মুরীদ ও মুতাআল্লেকীনদেরকে সংশোধন করতেন। ছোট খাট ত্রুটির জন্যও খুব তাম্বীহ করতেন। এধরণেরই এক বড় পরীক্ষায় পাশ হওয়ায় আপন শায়খ হযরতকে খুব দোয়া দেন। আর মাঝে মাঝে হযরতের ব্যাপারে এভাবেও বলতেন: شهيد الله كا تو اس دن كام بن گيا
শহীদুল্লাহ তো সেদিনই কামিয়াব হয়ে গেছে।
  অর্থাৎ হযরতের শায়খ রহ. এমন দোয়া দিয়েছিলেন যা হযরতকে আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।

খেলাফত

হযরত ওয়ালা দা.বা. আপন শায়খের সোহবতে টানা ৩ বছর মুজাহাদা, সাধনা ও কঠিন পরিক্ষার মধ্য দিয়ে অবস্থান করে তৃতীয় বছর ০৭ই রবিউল আউয়াল ১৪০৯ হি. রোজ শুক্রবার বাদে আসর এজাযতে বাইয়াত তথা খেলাফতের মর্যাদায় ভূষিত হন। এরপরও শায়খের সোহবতে আরো পাঁচ বছর থেকে। আত্মশুদ্ধির শীর্ষ চূড়ায় আরোহন করেন।

কর্মজীবন 

এরপর হযরত নিজ শায়খের পরামর্শে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান " জামেয়া রশীদিয়া " ফেনী।

জামেয়ার সূচনা

হযরতের বড় ভাই পিতা-মাতার দায়িত্ব পালনে ব্রতী হন। এবং হযরত সম্পর্কীয় বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং পেরেশানি করতে লাগলেন। বিশেষকরে খেদমতের ব্যাপারেঃ কোথায় কিভাবে খেদমতের ব্যবস্থা করা যায়। হযরত বড় ভাইয়ের পেরেশানি দেখে বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আপনি কোন চিন্তা করবেননা। বাড়ীর দরজার ছোট মসজিদটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি নিজে কিছু মুতালাআ' করব। আর দুই চার জন ছাত্র হলে এবং আল্লাহপাক তাওফীক দিলে কিছু পড়াবো অন্যথায় 'আল্লাহ্-আল্লাহ' করব। এভাবে বড় ভাইকে সান্ত্বনা দেন। আর বিস্তারিত অবস্থা লিখে পাকিস্তান হযরতের নিকট চিঠি পাঠান। অতপর আল্লাহ তায়ালার দিকে মুতাওয়াজ্জেহ হয়ে দোয়া করতে লাগলেন এবং শায়খের পক্ষ থেকে কি হুকুম আসে তার অপেক্ষায় থাকেন। এদিকে বিভিন্নস্থান থেকে অনেক ওলামায়ে কেরাম আনাগোনা করতে থাকেন। আর কিছু ছাত্র এসে হযরতের নিকট বিভিন্ন কিতাবাদি পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন । হযরত ওয়ালা দা. বা. তাঁদেরকে মুহাব্বতের সাথে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে থাকেন । ইত্যবসরে সে প্রেরিত চিঠির জবাব এসে পৌঁছে। সেখানে শায়খের পক্ষ থেকে হুকুম দেয়া হয় جهيں هو وهيں رهو অর্থাৎ যেভাবে আছ সেভাবে থাক।
কথিত আছে: আল্লাহ ওয়ালারা যা বলেন দেখেশুনে বলেন। উত্তরটি যেন হযরতের মনের সাথে পুরোপুরি মিলে গেল। অত্যন্ত আনন্দের সাথে আগত সাথী ভাইদের থাকার অনুমতি দিয়ে দেন। তবে উক্ত মসজিদের এলাকা বিভিন্ন দিক দিয়ে মাদরাসার জন্য উপযোগী ছিলনা । তারপরও এলাকাবাসীর উদ্যোগে ও সার্বিক সহযোগিতায় কাজ চলতে থাকে। জামেয়া কোথায় প্রতিষ্ঠিত হবে

মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্নে না ছিল জায়গার কোন ব্যবস্থা। না ছিল অর্থের ব্যবস্থা। আর না ছিল কোন বেতন ভাতার ব্যবস্থা। হযরত দা.বা. শুধু তাওয়াক্কুল আর তা'য়াল্লুক মা’আল্লাহ এর উপর ভিত্তি করে খেদমত করতে শুরু করেন। এদিকে হযরতের নাহু ছরফসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাহারত ও অভিজ্ঞতার সাথে ইজরাভিত্তিক এক অভিনব পদ্ধতিতে পড়ানোর কথাটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্ররা মৌমাছির ন্যায় আসতে শুরু করে। এভাবে শুরু হয়ে যায় লেখা-পড়ার এক সুন্দর পরিবেশ। এক পর্যায়ে তিন চার বছরের মধ্যে ছাত্র বেড়ে যায় অনেক। ফলে মসজিদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এতদসত্ত্বেও ছাত্ররা লেখা-পড়া ও আমল আখলাক অর্জনের ক্ষেত্রে যে কোরবানী করেছে। তা যেন। অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর কাফিয়া পর্যন্ত সকল কিতাব হযরত একাই পড়াতেন। তবে উপরের জামাতের ছাত্র ভাইদের দ্বারা নিচের ছাত্রদের পড়ানো ও ইজরা করানোর নেজাম করে দিতেন। “আলহামদুলিল্লাহ, মাদ্রাসায় এখন পর্যন্ত উক্ত নেজাম চালু আছে। আর সাথে সাথে তিনি ছাত্রদের তরবিয়তসহ অন্যন্য বিষয়গুলির প্রতিও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন। যখনি কোন বিষয় যেহেনে আসতো সাথে সাথে সকল ছাত্রদেরকে ডেকে তা বিস্তারিত আলোচনা করে দিতেন। এভাবেই কেটে গেল প্রায় চারটি বছর।

ইত্যবসরে ১৯৯৭ ইং সনের মাঝের দিকে পার্শ্ববর্তী এলাকার দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হযরতের এক প্রাক্তনছাত্র অভিভাবকসহ এসে হযরতের নিকট ছাত্র হিসেবে থাকার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। এতে হযরত অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কয়েকদিন পর অনুমতি দেন। তবে এ কথাও বলে দেন যে, বেতন ভাতার কোন ব্যবস্থা নেই। আমি যেভাবে আছি সেভাবে পড়ে থাকতে হবে। ব্যস, এ শর্ত মেনে নিয়ে তিনি সেখানে অবস্থান করতে থাকেন।

এদিকে মক্কা প্রবাসী এলাকার এক দ্বীনদার, হৃদয়বান, মুখলিছ, ধনী ব্যক্তি যিনি 'হাজী সাহেব, হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ দিন থেকে বাড়ীর পাশের মসজিদে লেখা-পড়ার এ অবস্থা জনতেছিলেন। তিনি হযরতকে সরাসরী না দেখলেও শোনাশুনির মাধ্যমে আন্তরিকভাবে খুব মহলত করতেন। তাই চিঠির মাধ্যমে হযরতের নিকট মাদ্রাসার জন্য জমি ক্রয় করতে কিছু টাকা পাঠানোর অনুমতি চান। কিন্তু উত্তরে হযরত 'না' বলে দেন। এবং বলেন, আপনি দেশে এলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা-বার্তা ও আলোচনা আছে। অতঃপর তিনি যখন দেশে আসেন, হযরতের সাথে কওমী মাদ্ররাসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং নিঃশর্তে অর্থায়ন করতে রাজি হন।

হাজী সাহেবের নিঃশর্ত এ প্রশংসনীয় উদ্যোগের পিছনে তাঁর দ্বীনদার, পরহেজগার, মরহুমা আম্মাজানের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। হযরত ওয়ালা দা. বা. প্রায় সময় বলে থাকেন: এ জামেয়ার প্রতিষ্ঠা থেকে উত্তোরত্তর উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে খালাম্মার অর্থাৎ হাজী সাহেবের আম্মাজানের অবদান অতুল্য ও অপরিসীম।

এরপর এ ব্যাপারে হযরত ওয়ালা দা.বা. পাকিস্তানের হযরতের রহ. নিকট পরামর্শ চাইলে তিনি।

এরশাদ করেন:

ٹھیک ہے اگر وہ بلا شرط راضی ہو جا ئیں تو قبول کر سکتے ہیں۔ انکے مال بھی کام میں لگ جائے آپکی خدمت میں بھی آسان ہو جائے

অর্থ: ঠিক আছে, যদি সে নিঃশর্তে রাজি হয় তাহলে কবুল করতে পারেন। তার সম্পদ ও ভাল কাজে লেগে যাবে। আপনার খেদমত ও সহজ হবে।

মাদরাসার জন্য জমিক্রয় ও ঘরনির্মাণ

হাজী সাহেব অনুমতি পাওয়ার পর অত্যন্ত আগ্রহের সাথে চারদিকে জায়গা খোঁজ করতে লাগলেন। অবশেষে  কালিদাস পাহালিয়া নদীর পশ্চিম পাশের মনোরম পরিবেশে রাস্তা সংলগ্ন একটি জমি খরিদ করেন। এর পর এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক উস্তাযুল আসাতিয়া, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব রহ.  ও উক্ত মাদরাসার স্বনামধন্য মুহাদ্দিস উস্তাযুল আসাতিযা আল্লামা শেখ আহমদ সাহেব দা.বা. এর বরকতময় হাতে ২১/০৭/১৯৯৭ইং সনে দারে আবু বকর রা. নামক একটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আল্লাহ পাকের ফজল ও করমে ভবনের আংশিক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ১০/১০/১৯৯৭ইং সনে এলাকার মসজিদ থেকে ছাত্ররা মাদরাসায় চলে আসে।

আল্লামা মুফতী শহীদুল্লাহ-এর বয়ানসমূহ