আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মাহরাম ছাড়া নরীদের হজ করার বিধান

প্রশ্নঃ ৯৭৮৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা জানি হজ্বের ব্যাপারে নারীদের ক্ষেত্রে যে মাহারাম ছাড়া নারীদের হজ্ব পালন হয় না। কিন্তু সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, দলগত ভাবে নারীদের মাহারাম ছাড়া হজ্ব করতে পারবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মাহারাম ছাড়া কি নারীদের হজ্ব পালন হবে? মাহারাম ছাড়া নারীদের হজ্ব পালনের ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে কি বলা আছে? জাজাকাল্লাহ

২৭ জুলাই, ২০২৫
নওয়াপাড়া

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মাহরাম ছাড়া নারীরা হজ করতে পারবেন কি?
পুরুষের চেয়ে একটি শর্ত বেশি পালন সাপেক্ষে নারীর জন্য হজ ফরজ। আর তাহলো- ‘মাহরাম’। মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজ পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। চাই সে যত সম্পদশালীই হোক না কেন। তবে নারীদের হজ পালন প্রসঙ্গে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।


নারীদের জন্য মাহরাম কারা? নারীর জন্য প্রথম মাহরাম হলো- স্বামী। অতঃপর যাদের সঙ্গে ইসলামি বিধান মোতাবেক দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েজ এবং যাদের সঙ্গে বিবাহ হওয়া হারাম। ইসলামের পরিভাষায় তারাই নারীর জন্য মাহরাম। এ সব লোকদের সঙ্গে সামর্থবান নারীরা হজে গমন করতে পারবে।

হজ পালনে স্বামীর অনুমতিকোনো নারীর ওপর যদি হজ ফরজ হয় এবং স্বামী ছাড়াও তাকে নিয়ে হজের যাওয়ার মতো মাহরাম থাকে; আর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে হজে যাওয়ার অনুমতি না দেয়; সেক্ষেত্রে নারীর করণীয় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য তো কেবল ভালো কাজের জন্য। (বুখারি ও মুসলিম)

সুতরাং মাহরাম থাকলে নারীর হজে যাওয়ার জন্য স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ আদায় করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে স্বামী অনুমতি ছাড়াই নারী হজে যেতে পারবে।

নারীদের হজ পালনে ইমামদের বক্তব্য- ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, নারীর হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো ‘মাহরাম’। মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন, নারীর ওপর হজ ফরজ হবে না।’ (বাদায়িউস সানা)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতিত সফর করবে না।

এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)


- ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, ‘নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য ‘মাহরাম’ শর্ত নয়। বরং নারীর হজ পালনে শর্ত হলো তার (হজে গমনকারী নারীর দীর্ঘ সফরের) নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামবিহীন একজন নারী একদল মাহরামওয়ালী নারীর সঙ্গে হজে যেতে পারবে।


হজরত আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আদি! যদি তোমার জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন নারী একাকি উটের হাওদায় বসে কাবা তওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

- ইলমে ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় এসেছে, ‘কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে ওই নারীর হজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ব্যতিত হজের দীর্ঘ সফর করার কারণে ওই নারী গোনাহগার হবে ‘

- আবার কেউ কেউ বলেন, ‘নারীর উচিত মাহরাম পাওয়ার জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোনো মাহরাম না পান তবে তিনি নিজে না গিয়ে অন্যের মাধ্যমে বদলি হজের ব্যবস্থা করা। আর এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।

উল্লেখ্য যে, নারীদের হজের এ শর্তাদি ওমরার বেলায়ও প্রযোজ্য।

পরিশেষে...সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় বর্তমান সময়ে হজ আদায়ে নারীর জন্য মাহরাম একান্ত আবশ্যক। মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর পক্ষে পর্দা মেনে হজ সম্পাদন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং এটা অসম্ভব নয় যে মাহরাম না থাকায় নারীরা হজের সফরে বিভিন্নধরনের শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হবেন। এমনকি কোনো নারী সেচ্ছায় গুনাহ জড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয় । তাই মাহরাম ব্যতিত কোনো নারীর জন্যই হজে যাওয়া উচিত নয়। হজের সফর দীর্ঘ দিনের হয়। এ সফর মাহরাম ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কথিত আধুনিকতা বা গ্লোবালাইজেশনে ঠুনকো যুক্তি দেখিয়ে নারীদের মাহরাম ছাড়া হজে যাওয়া উচিত নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে মাহরামের সঙ্গে হজ সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। হজের সময় পর্দার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

(এমএমএস/জেআইএম এর সৌজন্যে।
ঈষৎ সংযোজিত)

والله اعلم بالصواب

সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন