আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফযীলত

প্রশ্নঃ ৮৬২০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হচ্ছে অসুস্থ ব্যাক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফযীলত কী? আর তার জন্যে কি দোয়া করতে হবে? এবং তার রোগ যেনো নিজের না হয় সে ক্ষেত্রে কি দোয়া পাঠ করতে হবে? অগ্রিম جزاك اللهُ خيراً‎,

২১ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্যের একটি বড় দিক হল ইসলাম হুকুকুল ইবাদ তথা বান্দা সংশ্লিষ্ট হকগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। অন্য কোনো ধর্মে এর নজির নেই। হুকুকুল ইবাদের ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা অনন্য।

ইসলামের এমনই একটি বিধান ও শিক্ষা হচ্ছে ‘ইয়াদাতুল মারীয’। অর্থাৎ কেউ অসুস্থ হলে তার দেখভাল করা, খোঁজ-খবর নেওয়া, হালপুরসী করা, সেবা-যতœ করা, তার উত্তম চিকিৎসা ও নিরাময়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। তেমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে জীবনের ব্যাপারে হতাশ না করে আশান্বিত করা, তাকে সাহস যোগানো, সান্ত¡না দেওয়া, স্বস্তির কথা শোনানো, অসুস্থ ব্যক্তিকে যথাসম্ভব প্রফুল্ল রাখা, তাকে প্রবোধ যোগানো, তার সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা- সবই ইয়াদাতুল মারীয তথা রোগীর সেবার অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মহতি আমল। ইসলাম একে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লামের পবিত্র সীরাতে দেখা যায়, কেউ অসুস্থ হলে নবীজী ছুটে যেতেন তাকে দেখতে, তার খোঁজ-খবর নিতে। গিয়ে তাকে সান্ত¡না দিতেন, গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন। তার আরোগ্যের দুআ করতেন, তাকে আশান্বিত করতেন। হাদীস ও সীরাতের সংকলনগুলো এ ধরনের উদ্ধৃতিতে ভরপুর।

খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. খুতবায় বলতেন-

إِنّا وَاللهِ قَدْ صَحِبْنَا رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي السّفَرِ وَالْحَضَرِ، فكَانَ يَعُودُ مَرْضَانَا، وَيَتْبَعُ جَنَائِزَنَا، وَيَغْزُو مَعَنَا، وَيُوَاسِينَا بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ.

আল্লাহ্র কসম, আমরা সফরে ও হযরে (এলাকায় অবস্থানকালীন মুহূর্তে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংশ্রব লাভ করেছি। তিনি আমাদের অসুস্থদের ইয়াদত (খোঁজ-খবর) রাখতেন। আমাদের জানাযার সাথে সাথে যেতেন। আমাদের সাথে জিহাদ করতেন। অল্প হোক বেশি হোক যা থাকত তা দিয়েই আমাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতেন, পাশে দাঁড়াতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫০৪

এক্ষেত্রে যেভাবে নবীজীর নিজ কর্মের বিবরণ পাওয়া যায় পাশাপাশি এ বিষয়ে নবীজীর নির্দেশনাও রয়েছে প্রচুর। হাদীসের কিতাবগুলোতে এ সংশ্লিষ্ট অসংখ্য বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ শিরোনামে স্বতন্ত্র অধ্যায় ও পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন। এছাড়া অন্যান্য শিরোনামের অধীনেও রয়েছে এ বিষয়ের অনেক বর্ণনা।

এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের যেসকল হক রয়েছে তার একটি হচ্ছে ইয়াদাতুল মারীয। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

حَقّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدّ السّلاَمِ، وَعِيَادَةُ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ العَاطِسِ.

এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক রয়েছে। সালামের জবাব দেওয়া, রোগীর শুশ্রষা করা, জানাযার সাথে চলা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির উত্তর দেওয়া। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬২

অতএব একজন মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের ভ্রাতৃত্বের দাবি হল, সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে। তার খোঁজ-খবর নিবে এবং তার আরোগ্য ও সেবা-শুশ্রষায় এগিয়ে আসবে।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَطْعِمُوا الجَائِعَ، وَعُودُوا المَرِيضَ، وَفُكّوا العَانِيَ.

তোমরা ক্ষুধার্তকে খাওয়াও, অসুস্থ ব্যক্তির শুশ্রষা কর এবং বন্দিকে মুক্ত কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৪৯

বিখ্যাত সাহাবী হযরত বারা ইবনে আযেব রা. বলেন-

أَمَرَنَا النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِسَبْعٍ، وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ فَذَكَرَ: عِيَادَةَ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعَ الجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتَ العَاطِسِ، وَرَد السّلاَمِ، وَنَصْرَ المَظْلُومِ، وَإِجَابَةَ الدّاعِي، وَإِبْرَارَ المُقْسِمِ.

নবীজী আমাদেরকে সাতটি বিষয় করতে নির্দেশ দিয়েছেন আর সাতটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। এরপর তিনি উল্লেখ করেন, রোগীর শুশ্রষা করা, জানাযার সাথে চলা, হাঁচির উত্তর দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, অত্যাচারিতের সাহায্য করা, দাওয়াতে সাড়া দেওয়া এবং কসমকারীর কসম পূরণ করা অর্থাৎ আল্লাহ্র কসম বা দোহাই দিয়ে কেউ কিছু বললে বা দাবি করলে তা পূরণে সহায়তা করা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৪৫

নবীজীর এ মহানুভবতা কেবল প্রিয় সাহাবীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল- এমন নয়। কাফের-মুশরিকরা অসুস্থ হলেও নবীজী তাদের দেখতে যেতেন। তাদের হালপুরসী করতেন। মদীনা মুনাওয়ারায় এক ইহুদী বালক ছিল। মাঝে মাঝে সে নবীজীর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন নবীজী তার ইয়াদতে গেলেন। নবীজী তার ঘরে গিয়ে তার মাথার নিকট বসলেন। বললেন, أَسْلِمْ - তুমি ইসলাম গ্রহণ করে নাও। পাশেই ছিল তার বাবা। নবীজীর এ কথা শুনে বালকটি মতামত জানার জন্য বাবার দিকে তাকাল। ইহুদীরা তো জানতই, নবীজী সত্য নবী। তাকে মানার মধ্যেই প্রকৃত সফলতা। তাই তার বাবা ইহুদী হওয়া সত্ত্বেও ছেলেকে বলল-

أَطِعْ أَبَا القَاسِمِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.

তুমি আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মেনে নাও। বাবার অনুমতি পেয়ে ছেলে ইসলাম গ্রহণ করে নিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ইয়াদত করে বের হয়ে বললেন-

الحَمْدُ لِلهِ الّذِي أَنْقَذَهُ مِنَ النّارِ.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি একে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৬)

হাদীস শরীফের এ ঘটনাতে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-

ক. অমুসলিম থেকে সেবা গ্রহণ করা যায়, যদি তাদের থেকে কোনো অনিষ্ট বা ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা না থাকে

খ. ইহুদী ছেলেটি যেহেতু নবীজীর টুকটাক কাজ করে দিত তাই নবীজী কৃতজ্ঞতা আদায় স্বরূপ তাকে দেখতে গিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

هَلْ جَزَآءُ الْاِحْسَانِ اِلَّا الْاِحْسَانُ.

উপকারের প্রতিদান উপকারই হয়ে থাকে। -সূরা আররহমান (৫৫) : ৬০

আর এক্ষেত্রে নবীজীর প্রতিদান ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদান। অর্থাৎ নবীজী তার জন্য চির সুখ তথা ঈমান এনে জান্নাতপ্রাপ্তি ও জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে মুক্ত হওয়ার ফিকির করেছেন।

গ. জাগতিক কোনো স্বার্থে নয়; দ্বীনী কল্যাণের বিবেচনায় মানুষের খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত।

ঘ. দ্বীনী কল্যাণকামিতার দিকে লক্ষ্য করে অসুস্থ অবস্থায় কাউকে সদুপদেশ দিলে তা অধিক কার্যকর হওয়ার আশা করা যায়। কেননা এ সময় মানুষের দিল নরম থাকে। তাই যে ঈমান থেকে দূরে তার জন্য ঈমানের ফিকির করা আর যে দ্বীন থেকে দূরে তার জন্য দ্বীনদারীর ফিকির করা বাঞ্ছনীয়। দ্বীনের দাঈর জন্য এ বিষয়গুলো লক্ষ করার মত।

ঙ. কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে, ইহুদীরা নবীজীকে খুব ভালোভাবেই চিনত। ছেলেটির বাবার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তাই সে নিজ সন্তানকে সত্য কবুল করতে পরামর্শ দিয়েছে। তো কখনও কখনও বাবা নিজে সত্য থেকে দূরে থাকলেও সন্তানের জন্য সত্যকে প্রাধান্য দেন।

চ. ছেলেটি ঈমান গ্রহণ করার পর নবীজী আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করেছেন। তেমনিভাবে যে কোনো ভালো কাজের তাওফীক হলে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা চাই। কেননা এমন ভালো কাজ আল্লাহ তাআলা নিজ মেহেরবানীতে করিয়ে নিয়েছেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। নতুবা তা কখনোই হবার ছিল না।

তো এ হাদীসে লক্ষণীয় হল, অসুস্থ হলে নবীজী কেবল সাহাবায়ে কেরামকেই দেখতে যেতেন না; বরং দ্বীনী কল্যাণকামিতার ভিত্তিতে তিনি অমুসলিমদেরও দেখতে যেতেন। বিপদে-আপদে সবার পাশে দাঁড়াতেন। জাগতিক বিপদ এবং এর চেয়ে কঠিন বিপদ পরকালীন বিপদ থেকে সবাই কীভাবে রক্ষা পেতে পারে সেই ফিকিরও করতেন। নবীজীর প্রিয় চাচা আবু তালেবের অন্তিম মুহূর্তে নবীজী তার শিয়রে ছিলেন এবং ঈমানের তালকীন করছিলেন।

সহজেই অনুমিত হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদত করা কত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাশীল একটি আমল। হাদীস শরীফে ইয়াদতের অনেক ফযীলত বিবৃত হয়েছে। এখানে কিছু উল্লেখ করা হল :

রোগীর সেবা যেন আল্লাহ্র সেবা

ইয়াদাতুল মারীযের মাঝে নিহিত রয়েছে মহান রবের সন্তুষ্টি। আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাকে যেভাবে ভালবাসেন তেমনি তার বান্দার জন্য কেউ এগিয়ে এলে তিনি তার প্রতিও অত্যন্ত খুশি হন। পক্ষান্তরে তার বান্দার অসহায়ত্ব ও বিপদের মুহূর্তে যদি কেউ হাত না বাড়ায় তবে তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। একজন বান্দার জন্য তার মহান রব, যিনি রাব্বুল আলামীন, তাঁর সন্তুষ্টির চেয়ে উত্তম প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! আর আল্লাহ হেফাযত করুন, তিনি কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে গেলে এর চেয়ে ক্ষতি আর দুর্গতি কী হতে পারে!

দেখুন, হাদীসে কুদসীতে কত চমৎকার বিবরণ এসেছে-

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي، قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ؟ وَأَنْتَ رَبّ الْعَالَمِينَ، قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنّ عَبْدِي فُلَانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ، أَمَا عَلِمْتَ أَنّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ؟...

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, ওহে আদম সন্তান! আমি পীড়িত ছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা করনি। বান্দা বলবে, ওগো আমার রব! আমি (বান্দা হয়ে) কীভাবে আপনার সেবা করব! অথচ আপনি হলেন রাব্বুল আলামীন- জগৎসংসারের প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না (দুনিয়াতে) আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, অথচ (তা জানা সত্ত্বেও) তুমি তার শুশ্রƒষা করনি; খোঁজ-খবর রাখনি। তুমি কি জানতে না, (সেদিন) তুমি তার সেবা করলে আমাকে (অর্থাৎ আমার কাছে আজ এর প্রতিদান এবং আমার পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি) পেতে!... -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৯

এ হাদীসে দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ্র অসহায় বান্দার প্রতি এগিয়ে আসা মূলত আল্লাহ্র দিকে এগিয়ে আসা। আল্লাহ্র বান্দার সেবা করাকে আল্লাহ নিজের সেবা বলে সাব্যস্ত করছেন। তো যে আমলের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আল্লাহ্র সেবা হয় তা কতটা মহিমান্বিত হতে পারে!

রোগীর সেবা : জান্নাতের বাগানে অবস্থান

কখনো কখনো রোগীর কাছে গেলে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়। তবে বাহ্যিক বিবেচনায় পরিবেশ প্রীতিকর মনে না হলেও আসমানে এর মূল্যায়ন ভিন্নরকম। শুনুন নববী যবানের ভাষ্য-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا لَمْ يَزَلْ فِي خُرْفَةِ الْجَنّةِ، قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا خُرْفَةُ الْجَنّةِ؟ قَالَ: جَنَاهَا.

যে ব্যক্তি কোনো রোগীর ইয়াদত করল সে (যেন) জান্নাতের বাগানে রইল। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাতের বাগান বলতে...? বললেন, অর্থাৎ তার পাকা ফল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৮

অর্থাৎ বাগানের ফল সংগ্রহকারী ব্যক্তিকে যেভাবে ঐ ফল থেকেই তাকে পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া হয়, ফলে তার পারিশ্রমিক আর বাদ পড়ার সুযোগ থাকে না, তেমনি অসুস্থ ব্যক্তির সেবাকারী এ ব্যক্তিও এভাবে সওয়ারেব অধিকারী হবে। মানে এ ব্যক্তি এমন আমল করল, আল্লাহর কাছে কবুল হলে, তার এ আমলই তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (দ্র. ফাতহুল বারী ১০/১১৮)

আল্লাহ তাআলার রহমত লাভ

আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভের একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে ইয়াদাতুল মারীয। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا خَاضَ فِي الرّحْمَةِ، حَتّى إِذَا قَعَدَ اسْتَقَرّ فِيهَا.

অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদতকারী ব্যক্তি আল্লাহ্র রহমতে ডুব দেয়। যখন সে তার পাশে বসে তখন সে আল্লাহ্র রহমতে অবগাহন করে। -আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫২২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৯৪২, ১০৯৩৯

আরেক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আনাস রা. অসুস্থ হলে তার সাক্ষাৎপ্রত্যাশী একজন এসে বলেন, হযরত! আপনার কথা তো আমাদের খুব মনে পড়ে। আপনাকে দেখতে মনে চায়, কিন্তু দূরে থাকার কারণে...! হযরত আনাস রা. শোয়া থেকে মাথা তুলে বলেন, তুমি এমন কথা বলছ! অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লামকে বলতে শুনেছি-

أَيّمَا رَجُلٍ يَعُودُ مَرِيضًا، فَإِنّمَا يَخُوضُ فِي الرّحْمَةِ، فَإِذَا قَعَدَ عِنْدَ الْمَرِيضِ غَمَرَتْهُ الرّحْمَةُ. قَالَ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، هَذَا لِلصّحِيحِ الّذِي يَعُودُ الْمَرِيضَ، فَالْمَرِيضُ مَا لَهُ؟ قَالَ: تُحَطّ عَنْهُ ذُنُوبُهُ.

কোনো ব্যক্তি যখন কোনো রোগীর ইয়াদত করতে যায় তখন সে রহমতে ডুব দেয়। আর যখন সে রোগীর কাছে বসে আল্লাহর রহমত তাকে ঘিরে নেয়। হযরত আনাস রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তির খবর নিলে এই ফযীলত। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তির কী সওয়াব? নবীজী বললেন, এর মাধ্যমে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। -মুসনাদে আহমাদ, বর্ণনা ১২৭৮২



সত্তর হাজার ফেরেশতা দুআ করতে থাকে

আল্লাহর বান্দার সেবায় এগিয়ে আসার দরুন আল্লাহ্র রহমতের ফেরেশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকেন। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, ফেরেশতাগণ তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত-

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاّ صَلّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتّى يُمْسِيَ، وَإِنْ عَادَهُ عَشِيّةً إِلاّ صَلّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتّى يُصْبِحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الجَنّةِ.

কোনো মুসলিম কোনো অসুস্থ মুসলিমকে সকালে দেখতে গেলে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দুআ করতে থাকে। আর যদি সে সন্ধ্যায় দেখতে যায় তাহলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দুআ করতে থাকে। এ কাজের দ্বারা ইয়াদতকারী যেন জান্নাতের ফল আহরণ করল। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৬৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩০৯৮, ৩০৯৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৪২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩/২৩৪, হাদীস ১০৯৪০, ১০৯৪১, ১০৯৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬১২

জান্নাতে ঠিকানা লাভ

জান্নাতে কে না যেতে চায়! মুমিন মাত্রই জান্নাতের প্রত্যাশী। এজন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদেরকে জান্নাতে যাওয়ার বিভিন্ন আমল বলে দিয়েছেন। এমনই একটি আমল হচ্ছে ইয়াদাতুল মারীয। নবীজী বলেন-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا، نَادَى مُنَادٍ مِنَ السّمَاءِ: طِبْتَ، وَطَابَ مَمْشَاكَ، وَتَبَوّأْتَ مِنَ الْجَنّةِ مَنْزِلًا.

যখন কোনো মুসলিম কোনো ভাইয়ের ইয়াদত করে তখন আসমানে এক ঘোষক ঘোষণা করে, তুমি ধন্য। তোমার পথচলা মসৃণ হোক। তুমি জান্নাতে ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছ। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৪৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৫৩৬, ৮৬৫১

অর্থাৎ এ আমলের কারণে আসমানে তার জন্য দুআ হতে থাকে এবং জান্নাতের ঘোষণা হতে থাকে।

একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করলেন-

مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟

তোমাদের মাঝে আজ রোযা রেখেছে কে? হযরত আবু বকর রা. বললেন, আমি। নবীজী আবার জিজ্ঞাসা করলেন-

فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟

আচ্ছা, তোমাদের কে আজ জানাযা-দাফনে শরীক হয়েছে? হযরত আবু বকর রা. বললেন, আমি। নবীজী আবার জিজ্ঞাসা করলেন-

فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟

আজ কোনো মিসকীনের জন্য আহারের ব্যবস্থা করেছে কে? হযরত আবু বকর রা. বললেন, আমি। নবীজী আবার জিজ্ঞাসা করলেন-

فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟

আজ অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদত (রোগীর সেবা-শুশ্রƒষা) করেছ কে? হযরত আবু বকর রা. বললেন, আমি। এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلّا دَخَلَ الْجَنّةَ.

যে ব্যক্তির মাঝে এ গুণগুলো একত্র হল সে তো জান্নাতে প্রবেশ করল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০২৮

আখেরাতের কথা স্মরণ হয়

একজন মুমিন তখনই ঈমানী যিন্দেগী যাপন করতে পারে যখন সে আখেরাতকে সামনে রেখে চলে। ঈমানের মৌলিক একটি শাখা হচ্ছে আখেরাতে বিশ^াস। কিন্তু পার্থিব চাকচিক্যের ধোঁকায় আমরা অনেক সময়ই তা স্মরণ রাখতে পারি না। এমন কিছু আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। মৃত্যুর স্মরণের মাধ্যমেই আখেরাতের কথা বেশি স্মরণ হয়; এজন্যই তো জানাযায় শরীক হলে আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। তেমনি ইয়াদাতুল মারীয-এর মাধ্যমেও আখেরাতের স্মরণ হয়। কারণ অসুস্থতা মৃত্যুর দুয়ার। অসুস্থ হলে, বিশেষ করে রোগযাতনা বেড়ে গেলে মানুষ মৃত্যুকে স্মরণ করতে থাকে। আর মৃত্যুর স্মরণ আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। রোগীর মত রোগীর সেবাকারীরও মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়, আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عُودُوا الْمَرِيضَ، وَاتّبِعُوا الْجَنَازَةَ تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ.

তেমরা অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং জানাযার সাথে সাথে চল। এগুলো তোমাদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। -মুসনাদে অহমাদ, হাদীস ১১২৭০

এজন্য বুযুর্গানে দ্বীন বলে থাকেন, মাঝে মাঝে সময় করে ইয়াদতের নিয়তে হাসপাতালগুলোতে দেখে আসো। অসুস্থ ভাইদের খোঁজ-খবর নাও। তাহলে দিল নরম হবে। আল্লাহ্র হুকুম মানতে আগ্রহ হবে। এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে যে কত নিআমতে ডুবিয়ে রেখেছেন সেই উপলব্ধি জাগ্রত হবে। বিশেষ করে সুস্থতার নিআমত পেয়ে যে গাফিলতি হয় তা দূর করা সহজ হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাকে যে সুস্থতার নিআমত দান করেছেন এর একটি দাবি এটাও যে, আমি যেন নিআমত পেয়ে অন্যদের কথা ভুলে না যাই। আল্লাহ আমাকে যতটুকু সুস্থ রেখেছেন এর জন্য আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করব এবং আল্লাহ্র বান্দাদের মাঝে যারা সুস্থতার নিআমত থেকে দূরে রয়েছে আমি তাদের পাশে দাঁড়াব। যখন যেভাবে প্রয়োজন আমি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসব। অর্থ, মেধা, শ্রম, সময় ও সুন্দর পরামর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে সার্বিকভাবে আমি ইয়াদতে শরিক হব।

বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরুন পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। দুই মিনিট ফোনে কথা বলে আমি আমার কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর খবরটা নিতে পারি। এতেই হয়ত আমার সেই ভাইটা প্রবোধ লাভ করবে। আশান্বিত হবে। একটু সান্ত¡না খুঁজে পাবে।

বিশেষকরে যেসকল বন্ধু চিকিৎসা সেবার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন একটু খেয়াল করলেই পেশাদারিত্বের সুবাদে ইয়াদাতুল মারীযের আমলটি খুব সহজেই করে নিতে পারেন। বরং বলা যায়, ইয়াদাতের এই আমলটির প্রতি যতœশীল হওয়ার মাধ্যমে আপনার পেশাদারিত্ব আরো নিপুণ হবে। একদিকে মানুষ যেভাবে আপনার সেবায় উপকৃত হবে অপরদিকে মানুষের দুআতেও আপনার দ্বীন-দুনিয়া আলোকিত হবে। প্রয়োজন একটু সদিচ্ছা, একটু আন্তরিকতা।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

وَاللهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ.

বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকবে আল্লাহ ততক্ষণ সেই বান্দার সহায় থাকবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯

مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ.

যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮০

নবীজীর এ বাণীগুলো যদি আমরা স্মরণে রাখি তাহলে আল্লাহ্র বান্দার উপকারে এগিয়ে আসা আমার জন্য সহজ হবে। (মাসিক আলকাউসার)

২- অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুআ পড়া

ইয়াদাতুল মারীযের একটি আদব হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুআ পড়া। হাদীস শরীফে এ সংক্রান্ত অসংখ্য দুআ বিবৃত হয়েছে। অন্যান্য মাছুর দুআর মত এ দুআগুলোও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বরকতময়। এর শব্দ-বাক্য এবং অর্থ-মর্মের মাঝে রয়েছে যবানে নবুওতের এজায এবং আসমানী করুণা লাভের আভাস। মুমিনমাত্রই এ সকল দুআর প্রতি মনোযোগী এবং যত্নবান হওয়া কাম্য। এখানে কয়েকটি দুআ উল্লেখ করা হল-

আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, আমাদের কেউ অসুস্থ হলে নবীজী তাকে ডান হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন। বলতেন-

أَذْهِبِ الْبَاسَ، رَبّ النّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشّافِي، لَا شِفَاءَ إِلّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا.

হে মানবকুলের রব, আপনি দুঃখ কষ্ট দুর্দশা দূর করে দিন। আপনি আরোগ্য-শেফা দান করুন। আপনিই আরোগ্যদাতা। আপনার শেফা ছাড়া কোনো শেফা নেই। এমন আরোগ্য দিন, যার পর আর রোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, ইন্তিকালের পূর্বে নবীজী যখন শয্যাশায়ী তখন আমি নবীজীর হাত ধরলাম। তিনি যেভাবে হাত বুলিয়ে দিতেন সেভাবে আমি তাঁর হাত দিয়ে তাঁকে বুলিয়ে দিব বলে। নবীজী তখন তাঁর হাত আমার হাত থেকে টেনে নিলেন। বললেন-

اللهُمّ اغْفِرْ لِي وَاجْعَلْنِي مَعَ الرّفِيقِ الْأَعْلَى.

এভাবে আমি দেখতে দেখতে নবীজী চলে গেলেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৯১; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৩

তিনি আরো বলেন, একবার নবীজী অসুস্থ হলেন। তখন আমি আমার হাত নবীজীর বুকে রেখে এই দুআ পড়ে ফুঁক দিতাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, কেউ অসুস্থ হলে নবীজীও এই দুআ পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন-

امْسَحِ الْبَأْسَ رَبّ النّاسِ، بِيَدِكَ الشِّفَاءُ، لَا كَاشِفَ لَهُ إِلّا أَنْتَ.

হে মানবকুলের রব, আপনি দুঃখ দুর্দশা দূর করে দিন। আপনার হাতেই শেফা। আপনি ছাড়া এটা দূর করার কেউ নেই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৯৯৫, ২৫৭৪০

নবীজী বলেন, তোমাদের কেউ যদি অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদতে যায়, যার এখনও মৃত্যুর ফয়সালা চলে আসেনি, তাহলে সে যেন তার নিকট গিয়ে এই দুআ সাতবার পড়ে-

أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيمَ رَبّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ.

মহান আল্লাহর নিকট আমি প্রার্থনা করছি, যিনি মহান আরশের অধিপতি, তিনি যেন তোমাকে সুস্থ করে দেন।

নবীজী বলেন, সাত বার এই দুআ পড়বে। এতে আল্লাহ তাআলা তাকে ওই অসুস্থতা থেকে আরোগ্য দান করবেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১০৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৩; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৮, ৩২৯৮

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবীজী অসুস্থ হলে হযরত জিবরীল আ. এসে ফুঁ দিয়ে যেতেন।

একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন-

يَا مُحَمّدُ اشْتَكَيْتَ؟

মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?

নবীজী বললেন-

نَعَمْ -হাঁ।

তখন হযরত জিবরীল আ. বললেন-

بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ.

আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি, প্রত্যেক ওই বস্তু থেকে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রত্যেক হিংসুক ব্যক্তি অথবা তার নজর থেকে, আল্লাহ আপনার শেফা করবেন। আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৮৫, ২১৮৬

হযরত জিবরীল আ. যে দুআ পড়ে নবীজীকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন, আমরাও কোনো রোগীকে সেই দুআ পড়ে ঝাড়-ফুঁক করতে পারি, বিশেষ করে নজর-আসরের রোগীকে।

এমনকি অসুস্থ ব্যক্তি নিজেও নিজের জন্য দুআ করতে পারে এবং পড়তে পারে। নবীজী আমাদেরকে সে দুআও শিখিয়ে দিয়েছেন।

এক সাহাবী নবীজীর নিকট এসে বললেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আমি শরীরে ব্যথা অনুভব করছি। নবীজী এ শুনে বললেন, তোমার শরীরের যে স্থানে ব্যথা অনুভব করছ সেখানে তুমি হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলে সাতবার এই দুআ পড়-

أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ.

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০২

এছাড়া কুরআনুল কারীমের ছোট্ট দুটি সূরা- সুরা ফালাক ও সুরা নাস। এ সুরা দুটিও অত্যন্ত বরকতময়।

হযরত আয়েশা রা. বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِهِ نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ، فَلَمّا مَرِضَ مَرَضَهُ الّذِي مَاتَ فِيهِ، جَعَلْتُ أَنْفُثُ عَلَيْهِ وَأَمْسَحُهُ بِيَدِ نَفْسِهِ، لِأَنّهَا كَانَتْ أَعْظَمَ بَرَكَةً مِنْ يَدِي. وَفِي رِوَايَةِ يَحْيَى بْنِ أَيّوبَ: بِمُعَوِّذَاتٍ.

নবী-পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নবীজী মুআববিযাত (তথা এই দুই সুরা অথবা তা‘বীয সংক্রান্ত অন্যান্য আয়াত ও দুআ) পড়ে তাকে ঝেড়ে দিতেন। এরপর নবীজী যখন মৃত্যু শয্যায় উপনীত হলেন তখন আমি তাঁকে এই দুই সুরা পড়ে ঝেড়ে দিতাম আর তাঁর হাত মুবারক দিয়েই তাঁকে মুছে দিতাম। কেননা তাঁর হাত আমার হাত অপেক্ষা অনেক বরকতময়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৯২

হাদীস শরীফে বর্ণিত এ সকল দুআ-দরূদ উম্মতের জন্য অনেক বড় তোহফা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক বড় ইহসান তিনি উম্মতকে এতসব মূল্যবান উপঢৌকন দিয়ে গিয়েছেন। তাই উম্মতের কর্তব্য, এ সকল মাসনূন দুআ-দরূদের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেবলমাত্র দাওয়ার দিকে মনোযোগী না হয়ে দুআর প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি।

৩- তার রোগ যেনো নিজের না হয় সে ক্ষেত্রে এই দোয়া পাঠ করতে হবে

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ عَافَانِىْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ وَ فَضَّلَنِىْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَنْ خَلَقَ تَفْضِيْلَا

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, তিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির ওপর আমাকে সম্মান দান করেছেন।

ফজিলত : যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে দেখলে এই দোয়া পড়বে, ইনশাআল্লাহ সে ওই রোগে কখনো আক্রান্ত হবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোগাক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে—সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, তিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির ওপর আমাকে সম্মান দান করেছেন, সে ওই ব্যাধিতে কখনো আক্রান্ত হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৩২)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬২৩৫

ব্যাথা উপশমের দোয়া


১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

সেবারহাট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৪২৬৮৬

হায়াত বৃদ্ধির তিন আমল


৯ অক্টোবর, ২০২৩

আশুলিয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

২৪৪৩২

কুফরি কালাম বা জাদু থেকে মুক্তির দোয়া ও আমল


১ নভেম্বর, ২০২২

পলাশ ১৬১০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy