প্রশ্নঃ ৮৩৪৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।হুযুরআমি প্রশ্ন করেছিলাম অনেক কয়েকদিনই হলো উত্তর করেননি, আশা করি একটু তাড়াতাড়ি উত্তর করবেন প্লিজ।অনেকে এগুলো বিভ্রান্ত করছে মানুষকে।১! মুহাম্মাদ নাম রাখা কি নিষেধ আছে?২! বাসায় প্রতিবন্ধী বাচ্চা কি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, বিস্তারিত জানাবেন প্লিজ?
২১ আগস্ট, ২০২১
Dhaka
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
و عَلَيْــــــــــــــــــــكُمْ السلام ورحمة الله
১- অবশ্যই না, আপনি নিজের বা সন্তানের নাম মুহাম্মাদ রাখতে পারেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল নাম পছন্দ করতেন এবং সেগুলো রাখতে উৎসাহিত করতেন- সে সম্পর্কেও আমাদের জানা থাকা দরকার। কেমন নাম রাখা উচিত। কোন্ ধরনের নাম আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: تَسَمّوْا بِأَسْمَاءِ الْأَنْبِيَاءِ، وَأَحَبّ الْأَسْمَاءِ إِلَى اللهِ عَبْدُ اللهِ، وَعَبْدُ الرّحْمَنِ، وَأَصْدَقُهَا حَارِثٌ، وَهَمّامٌ، وَأَقْبَحُهَا حَرْبٌ وَمُرّةُ. رواه أبو داود في سننه، برقم ৪৯৫০
এ হাদীসের চারটি অংশ। প্রথম অংশ-
تَسَمَّوْا بِأَسْمَاءِ الْأَنْبِيَاءِ
(তোমরা নবীগণের নামে নাম রাখ।)
নবীগণ হচ্ছেন সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। রিসালাতের মহান দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তাঁদের উপর। মানুষকে অন্ধকার ছেড়ে সত্যের আলোকিত পথ তারা প্রদর্শন করেন। তাদের প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণ মানব জাতির জন্য অনুপম আদর্শ। এজন্য তাদের নামও হয়ে থাকে সুন্দর ও অনুকরণীয়। আম্বিয়ায়ে কেরামের সংখ্যা অনেক। কিন্তু তাদের সবার নাম ও অবস্থা আমাদের জানা নেই।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَ رُسُلًا قَدْ قَصَصْنٰهُمْ عَلَیْكَ مِنْ قَبْلُ وَ رُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَیْكَ وَ كَلَّمَ اللهُ مُوْسٰی تَكْلِیْمًا.
অনেক রাসূলের বৃত্তান্ত আমি আপনাকে জানিয়েছি। আর অনেক রাসূলের বৃত্তান্ত জানাইনি। আল্লাহ তাআলা মূসার সাথে কথা বলেছেন। -সূরা নিসা (৪) : ১৬৪
সে সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের নাম ও বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক সম্মানিত হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
যে সকল নবীর নাম পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে তারা হলেন- আদম, ইদরীস, নূহ, হূদ, সালেহ, শুয়াইব, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা, হারুন, ঈসা, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ইলিয়াস, আলইয়াসা‘, ইউনুস, সোলাইমান, দাউদ, আইয়ূব, যুলকিফল আলাইহিমুস সালাম।
এগুলো আম্বিয়ায়ে কেরামের ব্যক্তিগত নাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন নবীর গুণবাচক নাম ও উপাধি পবিত্র কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ হযরত ইবরাহীম আ.-এর উপাধি খলিলুল্লাহ ও খলিলুর রহমান। ইসমাঈল আ.-এর উপাধি যাবিহুল্লাহ। মূসা আ.-এর উপাধি কালীমুল্লাহ। ঈসা আ.-এর উপাধি রুহুল্লাহ ও কালীমুল্লাহ।
তবে সর্বাধিক গুণবাচক নাম ও উপাধি হচ্ছে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি উপাধি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِنّ لِي أَسْمَاءً، أَنَا أَحْمَدُ، وَأَنَا مُحَمّدٌ، وَأَنَا الْمَاحِي الّذِي يَمْحُو اللهُ بِي الْكُفْرَ، وَأَنَا الْحَاشِرُ الّذِي يُحْشَرُ النّاسُ عَلَى قَدَمِي، وَأَنَا الْعَاقِبُ قَالَ مَعْمَرٌ: قُلْتُ لِلزّهْرِيِّ: مَا الْعَاقِبُ؟ قَالَ: الّذِي لَيْسَ بَعْدَهُ نَبِيّ.
আমার অনেক নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি মাহী-যার মাধ্যমে আল্লাহ মিটিয়ে দেবেন কুফরকে। আমি হাশের, আমার পর সমস্ত মানুষের হাশর হবে। (অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমি কবর থেকে উঠব। এরপর অন্যান্য লোক উঠবে।) আমি আকীব-শেষে আগমনকারী। তিনি সর্বশেষ নবী। যার পর আর কোনো নবী নেই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৭৭১
হযরত আবু মূসা আশআরী রা.-এর সূত্রে অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُسَمِّي لَنَا نَفْسَهُ أَسْمَاءً، فَقَالَ: أَنَا مُحَمّدٌ، وَأَحْمَدُ، وَالْمُقَفِّي، وَالْحَاشِرُ، وَنَبِيّ التّوْبَةِ، وَنَبِيّ الرّحْمَةِ.
আবু মূসা আশআরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাঁর নাম বর্ণনা করে বলেছেন- আমি মুহাম্মাদ, আহমাদ, মুক্কাফী (পরবর্তীতে আগমনকারী) হাশের। নাবীয়্যুত তাওবা (তাওবার নবী। যার হাতে অসংখ্য মানুষ তাওবা করেছে এবং অন্যদের জন্য তাঁর তাওবা কবুল হয়েছে) নবীয়্যুর রাহমাহ্ (দয়ার নবী, রহমতের নবী)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৫৫
উপরোক্ত বর্ণনাদ্বয়ের উল্লেখিত নামসমূহের অন্যতম হলো মুহাম্মাদ নামটি।
২- 'বাসায় প্রতিবন্ধী বাচ্চা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ' এ মর্মে কোন হাদীস আমার জানা নেই।
তবে প্রতিবন্ধী বাচ্চার অধিকার সম্পর্কে ইসলাম খুবই সোচ্চার।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার সমস্যার বিনিময়ে তাঁর সন্তুষ্টি, দয়া, ক্ষমা ও জান্নাত দিতে চান। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি যার প্রিয় চোখ নিয়ে নিই, অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা করে; আমি তার জন্য এর বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হই না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ১৯৫৯)।
ইসলামে প্রতিবন্ধীদের অধিকার
নবী করিম রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও এবং বন্দীকে মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি)। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে সদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক। প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি ও ইমানি দায়িত্ব। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে অসদাচরণ বা তাদের উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বা ঠাট্টা-তামাশা করা স্রষ্টাকে তথা আল্লাহকে উপহাস করার শামিল। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করেন।’ (মুসলিম)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘আর তাদের ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের হক বা অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। আল্লাহর কাছে প্রিয় সৃষ্টি সে, যে তাঁর সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করে।’ প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে ফল খাওয়াবেন। যে তৃষ্ণার্তকে পানি পান করায়, আল্লাহ জান্নাতে তাকে শরবত পান করাবেন। যে কোনো দরিদ্রকে বস্ত্র দান করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে উত্তম পোশাক দান করবেন।’ (তিরমিজি)।
জন্মগত প্রতিবন্ধী হোক কিংবা দুর্ঘটনাজনিত প্রতিবন্ধীই হোক; ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের বিভেদ ভুলে তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য। প্রিয় নবী (সা.) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-কে তাঁর অপার ভালোবাসায় ধন্য করেছেন। তিনি যখনই তাঁকে দেখতেন, তখনই বলতেন, ‘স্বাগত জানাই তাকে, যার সম্পর্কে আমার প্রতিপালক আমাকে সতর্ক করেছেন।’ পরে মহানবী (সা.) এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবিকে দুবার মদিনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভালোবাসা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় সুন্নত। (মুসলিম)।
বিঃদ্রঃ আমাদের লোকবলের তুলনায় প্রশ্নের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে তাই আপনার উত্তরের জন্য দয়া করে ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ।
والله اعلم بالصواب
মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১