আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কাল্পনিক গল্প নির্মাণ করা কি জায়েজ?

প্রশ্নঃ ৮২৪০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি যুব সমাজের জন্য লেখালেখি করতে চাই। গল্পকারে মূল বিষয়টা তুলে ধরতে চাই।বিভিন্ন কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে গল্পটা সাজাতে চাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই যে কাল্পনিক চরিত্র বা কাল্পনিক কাহিনী এগুলো এক প্রকার মিথ্যা কাহিনি। তো এগুলো লেখালেখি কি জায়েজ হবে?,

১০ আগস্ট, ২০২৪

Sakhipur

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রথম কথা হচ্ছে- কাল্পনিক কাহিনী,গল্প, উপন্যাস ইত্যাদির শারয়ি বিধান নির্ভর করে তার বিষয়বস্তুর ওপর। যদি এর মাধ্যমে উদ্দেশ্য হয় মানুষকে ইসলাম পালনে উদ্বুদ্ধ করণ, ভাষাজ্ঞান, সাহিত্যচর্চা, চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন তথা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও উপকারী কিছু শেখানো, তাহলে তা জায়েয। এসব গল্প তখন উদাহরণ ও উপমা হিসেবে পরিগণিত হবে। অর্থাৎ উদাহরণ পেশ করার উদ্দেশ্যে কাল্পনিক ঘটনা পেশ করলে তা মিথ্যার অন্তর্ভূক্ত হবে না।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এমন অনেক উদাহরণ পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
ضَرَبَ اللَّـهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا
“আল্লাহ এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন: এক লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়েকজনের মালিকানা রয়েছে, আরেক ব্যক্তির মালিকানা মাত্র একজনের-এদের উভয়ের অবস্থা কি সমান?” -সুরা যুমার: ২৯

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا

“আপনি তাদের কাছে দুই ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং সেই দুটিকে খেজুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং এতদ্বয়ের মাঝখানে রেখেছি শস্যক্ষেত্র...।” (পুরা ঘটনা দেখুন সুরা কাহাফ, আয়াত : ৩২-৪৭)

হাদিসেও এই ধরণের অসংখ্য শিক্ষণীয় গল্পের উদাহরণ পাওয়া যায়। তম্মধ্যে তাওবা সংক্রান্ত একটি গল্প উল্লেখ করছি।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একলোক মরুভূমির সফরে বের হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর সে এক বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে পৌঁছালো। তখন ছিল ভরদুপুর। পথচলা বেশ কঠিন। তাই ক্লান্তির অতিশয্যে বাহনের উটটাকে দাঁড় করিয়ে সেটার ছায়ায় সে বিশ্রাম নিল। অমনি তার দু'চোখ লেগে আসল। এরপর হঠাৎ তার ঘুম ভাঙল। তাকিয়ে দেখল, উটটা নেই।
তখন সে উটের খোঁজে বের হলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও উটের দেখা মিলল না। ইতোমধ্যে সে পিপাসার্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু পানির মশক'টা ছিল উটের পিঠে বাঁধা। উটের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত পানিও জুটবে না। অগত্যা উটের খোঁজে সে পাগলের মতো দিগ্বিদিক ছুটতে থাকল। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকল তার পানির পিপাসাও। একপর্যায়ে সে মরুভূমির বালিতে লুটিয়ে পড়ল। এই অচেতন হয় তো এই জ্ঞান ফেরে। সে বুঝতে পারে, তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই মরুভূমির বালিতে অন্তিম অসিয়তনামা লিখতে শুরু করে।
এমন সময় কোথা থেকে উটটা দৌড়ে আসে। প্রথমত সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। ভালো মতোন তাকিয়ে দেখে সত্যিই তার উট ফিরে এসেছে। খুশিতে তার দু'চোখ চকচক করে ওঠে। কোনোরকমে পানির মশক'টা হাতড়ে নেয় সে।
মরুভূমির পিপাসার্ত লোকটির গল্প শোনানোর পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত সাহাবিদের লক্ষ করে বললেন, তোমাদের কি মনে হয় উটটা ফিরে পেয়ে এই লোক তখন কতটা আনন্দিত হয়েছে? সাহাবিগণ বললেন, সে তখন ভাবনাতীত আনন্দিত হয়েছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কারণ সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। নবিজি বললেন, জেনে রেখো, গুনাহ করার পর বান্দা যখন আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তখন এই পিপাসার্ত লোকটির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন।
[সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮০৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৭১২৮]

কিন্তু যদি এসব কাল্পনিক চরিত্র বা কাল্পনিক কাহিনী গল্প-উপন্যাস ও কবিতায় অশ্লীলতা ছড়ানো হয়, মানুষের চিন্তাকে বিকৃত করা হয় কিংবা নিছক হাস্যকৌতুক করা হয় যেখানে শেখার মতো কিছুই নেই, বরং এর মাধ্যমে অন্তরকে গাফিল করা হয়, তাহলে তা রচনা করা জায়িয হবে না। পবিত্র কুরআনে এই সম্পর্কে বলা হয়েছে-
وَالشُّعَرَاء يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُون.
‘বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে।‘
এরপর আল্লাহ বলেন,
‘আপনি কি দেখেন না, তারা প্রতি ময়দানে কেমন উদভ্রান্ত হয়ে ফিরে?
এবং এমন কথা বলে, যা তারা করে না।‘ -সুরা শুয়ারা: ২২৪-২২৬
উল্লেখ্য, এখানে জাহিলি যুগের সেসমস্ত কবিদের কথা বলা হয়েছে, যারা প্রশংসা ও নিন্দায় কোনোপ্রকার নিয়ম-নীতির ধার ধারতো না এবং কবিতা রচনায় অতিরঞ্জন, বাড়া-বাড়ি ও অতিশয়োক্তির আশ্রয় নিতো। কবিত্ব কল্পনায় এদিক ওদিক নিরুদ্দেশ ভ্রমণ করতো। এজন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, তাদের অনুসরণ যারা করবে তারাও পথভ্রষ্ট। এই ধরনের কবিতা সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, কবিতা দ্বারা নিজের উদর পূর্ণ করার চেয়ে রক্ত-পুঁজ দিয়ে উদর পূর্ণ করাই উত্তম। (তিরমিযি)


দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, সেটি হচ্ছে- এসব গল্প, উপন্যাস ও কবিতার মধ্যে কোনোপ্রকার অনৈতিক উপাদান যেন না থাকে। যেমন,
১। পূর্ববর্তী কোনো ইতিহাসকে বিকৃত করা।
২। কারো নামে মিথ্যা ছড়ানো, কিংবা কারো নাম উল্লেখপূর্বক তার সমালোচনা করা যা গীবতের পর্যায়ে পড়ে।
৩। কোনো ভ্রান্ত মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, ইত্যাদি।
মোটকথা, গল্প, উপন্যাস ও কবিতার মাঝে যদি এমন কোনো বিষয় থাকে যা শারয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থনযোগ্য নয়, তাহলে তা রচনা করা এবং জেনেশুনে তা পড়া কোনোভাবেই জায়িয হবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১০৫৯

মৃত্যুর পর কি শরীর এর কোনো অঙ্গ মানুষকে দান করা যাবে


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Sylhet ৩১০০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৪৫৬৩০

হরতাল-অবরোধ:ইসলামী দৃষ্টিকোণ


১৩ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ১২১৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৫০৩০৫

শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায়


৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

চাঁদপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৯১৩৬৩

তলাবায়ে কেরাম যেন নিজের ‘শুরু’ না ভোলেন


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ভৈরব

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy