আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

৩ দিন, ৪০ দিন, ১২০ দিন, ১ সাল সময় নির্ধারণ করে চিল্লা দেওয়া কতটুকু শরীয়তসম্মত?

প্রশ্নঃ ৭৩৫৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, তাবলীগ জামাত এর কাজ খুবিই ভাল এইটা আমি বিশ্বাস করি কিন্তু আমি যতটুক জানি যে নবি সাঃ বা সাহাবাদের জিবনে কোনোদিন চিল্লাদিয়ে দ্বীন প্রচার করেনি বা সময় নির্ধারণ করে দ্বীন প্রচার করেননি। আর নবিজি (সাঃ) ও সাহাবাগনরা যেইটা করেননি অইটাকে দ্বীন মনে করে করাটাকেই বলা হয় বেদাত। এখন আমার প্রশ্ন যে, ৩দিন, ৪০ দিন, ১২০ দিন সময় নির্ধারণ করে যে চিল্লা দেয়া হয় এইটা কতটুকু সঠিক বা যুক্তিসংগত?,

১৮ অক্টোবর, ২০২৩

কেরানীগঞ্জ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আসলে তাবলীগ জামাতে চিল্লাকে কোন শরয়ী বিধান বলা হয় না। একথাও বলা হয় না যে, এটি রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত কোন সুন্নত। বরং এটি দ্বীনভোলা সাধারণ মুসলমানদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত একটি কোর্স মাত্র। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বীন বা দুনিয়াবী শিক্ষা অর্জনের জন্য ১২বছর বা ১৪বছর এমন কোর্স চালু করা হয়েছে। এমনকি মাদরাসায়ও এমন পদ্ধতি প্রচলিত। গোটা বিশ্বের দ্বীনী প্রতিষ্ঠানেই এমন সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হয়। সুনির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করা বা অবস্থান নেয়া বা প্রশিক্ষণ নেয়ার দ্বারা ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছার সার্টিফিকেট দেয়া হয়।

এসব কোনটিই রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত বিষয় নয়। আবার বিদআতও নয়। কারণ এসব পদ্ধতিকে কেউ সুন্নতও বলে না। সেই সাথে এই সংখ্যাটিতে সওয়াব জড়িতও বলা হয় না। বরং প্রশিক্ষণের সুবিধার্তে তা নির্ধারণ করা হয়েছে।

যদি তাবলীগের চিল্লা পদ্ধতি বিদআত হয়, তাহলে মক্কা মদীনা ভার্সিটিসহ পৃথিবীর সকল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বীনী কোর্স সম্পন্ন করার সময়সীমাও বিদআত হবে। কিন্তু কোন ব্যক্তি কি এমন আহমকী প্রশ্ন করে? যদি না করে তাহলে তাবলীগের চিল্লা নিয়ে কেন এ অহেতুক প্রশ্ন?

ইসলামী দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ যোগ্যতা অর্জনের জন্য যে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এর কোন দূরতম প্রমাণও কুরআনও হাদীসের কোথাও নেই। অথচ তাবলীগের চিল্লার খানিক হলেও প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে।

তাবলীগ জামাতের চিল্লার হিকমত

চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাগাতার কোন আমল করলে এর দ্বারা মানুষের আত্মিক অনেক পরিবর্তন সাধিত হয় মর্মে জানা যায়। সেই সাথে এই চল্লিশ সংখ্যাটিও ইসলামী শরীয়তে আলাদা বৈষিষ্টমন্ডিত। এ কারণে কোন সাধনার জন্য এ চল্লিশ সংখ্যাটি আলাদা বৈষিষ্টে রাখে। কয়েকটি দলীল-


الَ عَبْدُ اللَّهِ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ المَصْدُوقُ، قَالَ: ” إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ،

হযরত যায়দ বিন ওহাব রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত রাসূল সাঃ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপকরণ নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, এরপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। এরপর তা মাংসপিন্ডে পরিণত হয়ে [আগের মত চল্লিশ দিন] থাকে। এরপর আল্লাহ তাআলা ফিরিশতা প্রেরণ করেন। আর তাকে চারটি বিষয় নির্দেশ দেয়া হয়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২০৮, ৩০৩৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৪৩}

উক্ত হাদীসটিতে লক্ষ্য করুন। মানুষের শারিরিক গঠনপ্রণালীর এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তিত হতে সময় নির্দিষ্ট হল ৪০দিন। অর্থাৎ এক সূরত থেকে আরেক সূরতে পরিবর্তন হয় ৪০দিনে। এভাবে তিনটি স্তর পেরোতে হয় ৪০দিন করে করে।

এর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ৪০দিনে একটি ব্যক্তির মানসিক পরিবর্তন হতে পারে। যেমন জন্মলগ্নের স্তরগুলোতে পরিবর্তিত হয়েছিল।

এমনিভাবে আরেক হাদীসে এসেছে-

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يَدْخُلُ الْمَلَكُ عَلَى النُّطْفَةِ بَعْدَمَا تَسْتَقِرُّ فِي الرَّحِمِ بِأَرْبَعِينَ لَيْلَةً – وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً: أَوْ خَمْسٍ وَأَرْبَعِينَ لَيْلَةً – فَيَقُولُ: يَا رَبِّ، مَاذَا أَشَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ؟ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى؟ فَيَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، فَيَكْتُبَانِ، فَيَقُولَانِ: مَاذَا؟ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى؟ فَيَقُولُ

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬১৪২, মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৮৪৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩০৩৯}


আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আঃ থেকে ৪০দিনের ওয়াদা নিয়েছিলে। ইরশাদ হচ্ছে-

وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَى أَرْبَعِينَ لَيْلَةً

আর যখন তিনি মুসা থেকে চল্লিশ দিনের ওয়াদা নিলেন। {সূরা বাকারা-৫১}

ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেন,

وبهذا استدل الصوفية على الوصال وان أفضله أربعون يوما الخ ((تفسيرالقرطبي ج ۱ ص ۳۹۶))



عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَ لَهُ بَرَاءَتَانِ: بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ.

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি লাগাতার চল্লিশ দিন জামাতের সাথে তাকবীর উলার সাথে নামায পড়বে। তার জন্য দু’টি মুক্তির খোশখবরী রয়েছে। একটি হল জাহান্নাম থেকে মুক্তি আরেকটি হল মুনাফিকী থেকে মুক্তি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০২৫৩}

কাছাকাছি বক্তব্য নির্ভর আরেক হাদীসে এসেছে-

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى فِي مَسْجِدٍ جَمَاعَةً أَرْبَعِينَ لَيْلَةً، لَا تَفُوتُهُ الرَّكْعَةُ الْأُولَى مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ، كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا عِتْقًا مِنَ النَّارِ»

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৭৯৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-২৬১৬।

উল্লেখিত হাদীসের আলোকে একথা স্পষ্ট যে, চল্লিশ দিনের একটি আলাদা বৈশিষ্ট আছে মানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তনের উপর। যেহেতু দ্বীনভোলা মানুষগুলোর মন বিগড়ে গেছে। দিনের পর দিন গোনাহ করতে করতে মন গোনাহে নাপাক হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর ইবাদতের মজা মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে উঠে যেতে বসেছে। এ কারণে এসব আত্মভোলা দ্বীনভোলা মানুষকে চল্লিশ দিনের চিল্লায় পাঠিয়ে লাগাতার চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়ানোর মাধ্যমে যেন তাদের মাঝে আত্মিক পরিবর্তন আসে। তাদের মাঝে যেন মানসিক পরিবর্তন আসে, এ কারণে চল্লিশ দিনের চিল্লা দেয়া হয়। এটিকে শরয়ী কোন দলীল মনে করে করা হয় না। কেবলি হাদীসে বর্ণিত বৈশিষ্টের কারণে ওসীলা হিসেবে তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আর নেক বিষয়ের উসীলা বৈধতার প্রমাণ স্বতসিদ্ধ।

তাবলীগের চল্লিশ দিনের চিল্লা বিদআত হলে প্রথমে বিদআত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সের দলীলহীন সময়সীমা নির্ধারণ। সেসব যদি বিদআত না হয়, তাহলে চল্লিশ দিনের আলাদা বৈশিষ্ট সম্বলিত হাদীসে পাকে দলীল থাকা সত্বেও চিল্লা কি করে বিদআত হয়?
(মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫১০০

তাওহিদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও পুরস্কার


১৩ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২১৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

১৩২৪৩

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বর্তমানে যে সব ভাই রা তাবলীগ জামাতের সঙ্গে 4 মাস, 40 দিন সময় লাগায় সেটা কি জায়েজ??

১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy