আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭০৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বাচ্চা জন্মের পরের সুন্নত গুলো কি কি? বিস্তারিত বলবেন।,

২ জানুয়ারী, ২০২৩

Chittagong

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


শিশু জন্মের পর সুন্নত সমূহঃ

১- জন্মের পর আযান ইক্বামত
জন্মের পর শিশু সম্পর্কীয় সর্বপ্রথম বিধান হলো তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইক্বামত বলা। হযরত হাসান (রা.)-এর জন্মের পর রাসূল ﷺ তার কানে আযান ইক্বামত বলেছিলেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
তিনি নবজাতকের কানে আযান-ইক্বামত বলার নির্দেশও প্রদান করেছেন। (বায়হাকী)
শিশুর কানে আযান-ইক্বামত বলার উদ্দেশ্য হলো, তার কানে যেন আল্লাহ তাআলার মহত্ব ও বড়ত্বের আওয়াজ প্রথমেই পৌঁছে যায়। মানুষের কানে ও অন্তরে শয়তানের কথা পৌঁছার পূর্বেই যেন ইসলাম ও হেদায়াতের বাণী পৌঁছে যায়।
২- তাহ‌নীকঃ
তাহ‌নীক অর্থ খেজুর চিবানো। পরিভাষায় তাহ‌নীক বলা হয়, শিশুর জন্মের পর কোন বুযূর্গ ও নেককার ব্যক্তি খেজুর বা কোন মিষ্টান্ন চিবিয়ে মুখের লালাসহ বাচ্চার মুখের ভিতরে ডান বা বাম তালুতে লাগিয়ে দেওয়া। তাহ‌নীকের উদ্দেশ্য হলো, বরকত অর্জন। নবজাতক জন্মের পর তাহনীক করাও সুন্নত। যত তাড়তাড়ি সম্ভব আমলদার পরহেজগার আলেম দ্বারা নবজাতকের তাহনীক করানো। উক্ত ব্যক্তি মুখে খেজুর চিবিয়ে কিছু অংশ আঙ্গুলের আগায় করে শিশুর উপরের তালুতে হাল্কা ভাবে ঘষে দিবেন। ইসলামের পরিভাষায় একে তাহনীক বলে।
খেজুর চিবিয়ে পানির মত করে শিশুর মুখে দেয়া যেন এর কিছুটা তার পেটে প্রবেশ করে। তবে খেজুর না পাওয়া গেলে অন্য যে কোন মিষ্টি দ্রব্য যেমন মধু বা অন্য কিছু দ্বারাও এভাবে তাহনীক করা যায়। [নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯, ফাত্হুল বারী, ৯/৭২৮]
-- তাহনীক বুজুর্গ ব্যক্তি কর্তৃক হওয়া উত্তম। [ নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯]
তাহনীক করা সুন্নত। আবু মুসা (রাযি:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘‘আমার ছেলে সন্তান হলে আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসি, তিনি তার নাম রাখেন ইব্রাহীম এবং খেজুর দ্বারা তাহনীক করেন এবং তার জন্য বরকতের দুয়া দেন, তার পর বাচ্চাকে আমাকে ফিরিয়ে দেন।“ [বুখারী, অধ্যায়, আক্বীক্বা, অনুচ্ছেদ নং ১, হাদীস নং৫৪৬৭, মুসলিম নং ২১৪৫]

৩- ভূমিষ্ঠের সপ্তম দিনে তিনটি কাজ সুন্নত। যথাঃ

১)চুল মুন্ডন করে সমপরিমাণ রুপা বা রুপার মূল্য দান করা।
সপ্তম দিনে বাচ্চার চুলগুলো মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করাও সুন্নত। আলী (রায়িঃ) বলেন:
” عقّ رسول الله – صلى الله عليه و سلم – عن الحسَن بشاةٍ و قال يا فاطمة احلقي رأسه و تصدقي بزنةِ شعره فضّةً ” رواه الترمذي في كتاب الأضاحي، باب العقيقة بشاة.
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসানের পক্ষ হতে ছাগল আক্বীকা করেন এবং ফাতেমা (রাযি:) কে বলেন: তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করে দাও”।[ তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, হাদীস নং ১৫১৯]

২) সপ্তম দিনে ইসলামী নাম রাখা।

বাচ্চার জন্মের প্রথম দিনেও নাম রাখা যায়। নামের মধ্যে উত্তম হচ্ছে, যে নামে 'আবদ' থাকে। অর্থাৎ বান্দা অর্থ থাকে। যেমন আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান।
রাসূল সা. বলেন, তোমাদের নামগুলোর মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে 'আব্দুল্লাহ' ও 'আব্দুর রহমান'। (মুসলিম- ২১৩২) - আল্লাহ তায়ালা এই নামের মত এই বান্দাকেও যেন পছন্দ করেন। আমীন!
এরপর, নাবীদের নাম। রাসূল সা. নিজেও সন্তানের নাম রেখেছেন নবীর নামে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
” وُلد لي الليلةَ غلامٌ فسمّيته باسمِ أبي إبراهيم “
“রাতে আমার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আমি আমার পিতার নামে তার নাম ইব্রাহীম রেখেছি”। [ বুখারী , অধ্যায় জানাযাহ, হাদীস নং ১৩০৩, মুসলিম, অধ্যায়, ফাযাইল হাদীস নং ২৩১৫]
এছাড়া অন্য হাদিসে রাসূল সা. বলেন, তোমরা নবীদের নামে নাম রাখো। (আবু দাউদ-৪৯৫০ সহীহ)
এরপর সাহাবীদের নাম। তারপর ইসলামের বরেণ্য ব্যক্তিদের নাম বা সুন্দর অর্থবহ নাম।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।”
[তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১]

৩) আকীকা করা।

সপ্তম দিনে আকীকা করা মুস্তাহাব। কেও অবশ্য সামর্থ্যবানদের জন্যে আকীকা করাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাও বলেছেন।

* আকীকা কী? সন্তান জন্মগ্রহণের শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবাই করা হয় তাকে আকীকা বলে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مع الغلامِ عقيقةٌ فأهريقوا عنه دماً و أميطوا عنه الأذى “
অর্থ: ‘‘সন্তানের আক্বীকা করতে হয়। তাই তোমরা তার পক্ষ হতে কুরবানী করো এবং তার মাথার চুল পরিষ্কার কর। [ বুখারী, আক্বীকা, নং৫৪৭১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যার সন্তান ভূমিষ্ট হয় সে যদি শিশুটির পক্ষ থেকে আকীকা করা পছন্দ করে তাহলে যেন তাই করে। (সুনানে নাসায়ী ২/১৬৭)
* আকীকা কবে করবে?
আকীকার ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হচ্ছে সপ্তম দিনে করা। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম দিনে করা ভালো। কেননা হাদীস শরীফে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে। এ তিন দিনেও করা না হলে পরে যে কোনো দিন আকীকা করা যেতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘প্রত্যেক বাচ্চা তার আক্বীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং নাম রাখা হবে”। [ ইবনে মাজাহ,অধ্যায়, যাবাইহ, নং৩১৬৫, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ]
হযরত আমর ইবনে শুআইব-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবজাতকের সপ্তম দিনে আকীকা করা, নাম রাখা ও তার 'আযা' দূর করার (অর্থাৎ মাথার চুল কাটার) নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৬)
হযরত বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আকীকার পশু সপ্তম বা চৌদ্দতম বা একুশতম দিনে যবাই করা হবে। (আলমুজামুল আওসাত ৫/৪৫৭)
এমনকি, কারো আকীকা করা না হলে বড় হয়ে নিজের আকীকা নিজেও করতে পারবে।
হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত প্রাপ্তির পর নিজের আকীকা নিজে করেছেন। (প্রাগুক্ত ১/৫২৯; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৬২০৩; আলমুফাসসাল ফী আহকামিল আকীকা, ড. হুসামুদ্দীন ইবনে মূসা, জামেয়াতুল কূদস, পৃ. ১৪২)
হাসান বসরী রাহ. বলেন, তোমার যদি আকীকা না করা হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজের আকীকা করে নাও। যদিও তুমি ইতিমধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছ। (আলমুহাল্লা ৬/২৪০)
* কী দিয়ে আকীকা করবে?
পুত্র সন্তান হলে দুটি আর কন্যাসন্তান হলে একটি ছাগল/ভেড়া/দুম্বা দ্বারা আকীকা করা উত্তম। তবে পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে একটি যবাই করলেও আকীকার হক আদায় হয়ে যাবে। এছাড়া উট, মহিষ, গরু ইত্যাদি দ্বারা আকীকা করা যায়।
হযরত উম্মে কুরয রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” عن الغلامِ شاتان مكافئتان و عن الجارية شاة”
“পুত্র সন্তানের পক্ষ হতে দুটি বরাবর ধরনের ছাগল এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ হতে একটি ছাগল আক্বীকা দিতে হবে”। (আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৫৮, জামে তিরমিযী ১/১৮৩)
হযরত ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান ও হুসাইন রা-এর পক্ষ থেকে একটি একটি ভেড়া আকীকা করেছেন। (আবু দাউদ ২/৩৯২)
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার কোনো সন্তান জন্মলাভ করে সে যেন উট, গরু অথবা ছাগল দ্বারা আকীকা করে। (আলমুজামুল আওসাত ২/৩৭১,হাদীস : ৩৭১)
* আকীকা কারা খেতে পারবে?
আকীকার গোশত পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারবে।
হযরত আয়েশা রা. বলেন, (আকীকার গোশত) নিজে খাবে, অন্যদের খাওয়াবে এবং সদকা করবে।
(অন্যান্য সূত্র- মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৩৩৮; আলমুগনী ১৩/৩৯৩, ৩৯৭, ৪০০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৭, হাদীস : ২৪৭৪৩, ২৪৭৩৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩২৯, ৩৩০, ৩৩১; তুহফাতুল মাওদূদ বি আহকামিল মাওলূদ ৭৮)

# আল কাউসার ও অন্যান্য

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৫৮২০

আকিকার পশু কুরবানীর দিন জবাই করা যাবে কিনা?


২৭ জুন, ২০২৩

দেলদুয়ার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

১০৮৯১

আকিকা দেওয়ার মানে কি?


৯ আগস্ট, ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গ ৭৪১১৬০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

৪৫১৫৪

আকীকার পশু কেনার পর সন্তানের মৃত্যু হলে করণীয়!


৭ নভেম্বর, ২০২৩

Loknathpur

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy