আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মেসওয়াক কি অজুর সুন্নত না নামাজের সুন্নত?

প্রশ্নঃ ৪০৬৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হানাফী মাযহাবের ফতোয়া অনুযায়ী প্রত্যেক নামাজের আগে মেসওয়াক করার ব্যাপারে কি বলে? আর প্রত্যেক নামাজের আগে মেসওয়াক করা যে সুন্নত এটা তেমন কাউকে পালন করে দেখি না কিন্তু কেউ যখন এই সুন্নত পালন করে তখন অন্য মুসল্লিরা কেমন করে তাকায় তার দিকে আরা বাধা দেয় এটা পালন করতে। এ ব্যাপারে সঠিক উত্তর জানতে চাই। জাযাকাল্লাহ শায়েখ🤍,

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

৭০০৬، ৪৫৪৯، الجزيرة، الرياض ১৪২৬২، السعودية (SA)

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


- حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ»

আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তা হলে প্রত্যেক নামাযের সাথে তাদের মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ (সহীহ বুখারী)
হাদীস নং: ৮৪৩ আন্তর্জাতিক নং: ৮৮৭

হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/843

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
ইসলামী শরী'আতে মিস্ওয়াক করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে ফকীহগণের কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু মিস্ওয়াকের এ আমলটি অযূর সুন্নাত, না নামাযের সুন্নাত-এ বিষয়ে হাদীসের বক্তব্যে বিভিন্নতা আছে। অধিকাংশ হাদীসের বক্তব্য (المتن) প্রমাণ করে যে, মিস্ওয়াক করা অযূর সুন্নাত। বর্ণিত হাদীসসমূহ নিম্নরূপ :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ أَنَّهُ قَالَ لَوْ لَا أَنْ أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك مع كل وضوء . أخرجه مالك وأحمد والنسائي وصححه بن خزيمة وذكره البخاري تعليقا كذا في بلوغ المرام

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন : আমি যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টকর হয়ে যাওয়ার আশংকা না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক অযূর সঙ্গে মিস্ওয়াক করার আদেশ দিতাম।

উপরোক্ত হাদীস স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, মিস্ওয়াক অযূর সাথে সম্পর্কিত বিষয় এবং অযূর সুন্নাতসমূহের থেকে একটি সুন্নাত। এটিই ইমাম আযম আবূ হানীফা (র) ও হানাফী ফকীহগণের অভিমত। এ ব্যাপারে আরো বহু হাদীস থেকেও সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন :

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَا كَانَ رَسُولُ يَخْرُجُ مِن بَيْتِهِ لِشَيءٍ مِّنْ الصَّلَوَاتِ حَتَّى يَستَاك
رواه الطبراني باسناده لا بأس به كذا في الترغيب ج ۱، ص ٤٣ ومجمع الزوائد للهيثمي ورجاله الموثقون ، ج ۱، ص ۱۸۱

হযরত যায়িদ ইবন খালিদ আল-জুহানী, (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মিস্ওয়াক করা ব্যতিরেকে কোন ধরনের নামায আদায়ের জন্য গৃহ থেকে বের হতেন না।

وَعَنْ عَلى رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ قَالَ لَوْ لَا أَنْ أَشْقُ على أمتي لأمرتهم بالسواك مع الوضوء عِنْدَ كُلِّ صَلواة . رواه الطبراني في الأوسط وفيه ابن اسحاق وهو ثقة مدلس وقد صرح بالتحديث و اسناده حسن و رواه مجمع الزوائد ج ۱، ص ۸۹ باب
في السواك

হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন : যদি আমি...... প্রত্যেক অযূর সঙ্গে মিস্ওয়াক করার আদেশ দিতাম।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ قَالَ لَوْ لَا أَنْ أَشْقُ عَلَى أمتي لأمرتهم بِالسَّوَاكِ مَعَ الْوُضُوءِ عِنْدَ كُلَّ صَلوة ، رواه ابن حبان في صحيحه كذا فى التخليص الحبير ج ۱، ص ۲۳

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন : আমি যদি.... তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় অযুর সঙ্গে মিস্ওয়াক করার আদেশ দিতাম।'

وَعَنْ عَائِشَةَ رضى اللهُ عَنْهُ مَرْفُوعًا السَّوَاكَ مِطْهَرَةُ لِلْقَمِ وَمُرْضَاةً للوب . رواه أبو يعلى باسنادين في أحدهما ابن إسحاق وهو ثقة مدلس ورجال الاخر رجال الصحيح كذا في مجمع الزوائد ورواه أحمد والنسائي باسناد صحيح والبخارى تعليقا كذا في اثار السنن .

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন : মিস্ওয়াক মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি আনয়নের উপায় ।

উপরোক্ত হাদীসগুলো কোন প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়াই স্পষ্ট নির্দেশ করছে যে, মিস্ওয়াক করা অযূর সুন্নাত। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদীস এমনও আছে যেখানে মিস্ওয়াকের সংশ্লিষ্টতা অযূর সাথে—একথা স্পষ্ট বলা হয়নি। তবে ঐ সকল স্থানে হাদীসগুলোকে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদির সাথে মিলিয়ে চিন্তা করলে অযূর সংশ্লিষ্টতাই ফুটে উঠে। যেমন :

عن أبي هريرة رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله ﷺ لَوْ لَا أن أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك عِنْدَ كُلِّ صَلواة . أخرجه الترمذي وقال هذا
حديث صحيح ، كذا في نيل الأوطار - ج ۱، ص ۱۰۱

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আমি যদি,...... তা হলে তাদেরকে আমি প্রত্যেক নামাযের সময়ে মিস্ওয়াক করার আদেশ দিতাম

এ হাদীসে মিস্ওয়াক-এর আমল 'নামাযের সময়ে' সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে।” মুহাদ্দিসগণ বলেন, এখানে 'নামাযের সময়ে' বলা হলেও বাক্যটির প্রকৃত বক্তব্য হল 'নামাযের অযূর সময়ে'। অর্থাৎ(كُلِّ صَلواة) শব্দের পূর্বে একটি (مضاف) উহ্য আছে। মূল বাক্যটি হল (عند وضوء كُلِّ صَلواة) (প্রত্যেক নামাযের অযূর সময়ে)। অতএব উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুসারে হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সাথে পূর্বে বর্ণিত হাদীসগুলোর কোন বৈপরীত্য অবশিষ্ট থাকে না।

হাদীসটির মতনে (مضاف) উহ্য থাকার মর্মে মুহাদ্দিসগণ কয়েকটি প্রমাণ পেশ করে। থাকেন। যেমন : ১. এই হাদীস মুস্তাদরাকে হাকিম গ্রন্থেও (খণ্ড-১, পৃ. ১৪৬) বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মতনটির রূপ হল :
لولا أن أشق على أمتي لفرضت عليهم السواك مع الوضوء

আমি যদি ..... তাহলে আমি তাদের উপর অযুর সঙ্গে মিস্ওয়াক করা ফরয ঘোষণা দিতাম ।

হাদীসখানার সনদ সম্পর্কে হাফিয শামসুদ্দীন যাহাবী (মৃ.৭৪৮ হি.) বলেন, (هو علي شرطهما ليس له علة) এটি সহীহদ্বয়ের (বুখারী ও মুসলিম) শর্তে উন্নীত হাদীস, তাতে কোন ধরনের ত্রুটি (علة) নেই। অনুরূপ এই হাদীস হযরত আয়েশা (রা)-এর সূত্রে সহীহ ইবন হিব্বান গ্রন্থে এবং হযরত আলী (রা)-এর সূত্রে মু'জামে তাবরানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। সে সব বর্ণনায় নামাযের সাথে অযূর কথাও উল্লেখ রয়েছে। কাজেই একই রিওয়ায়াতের অন্যান্য সূত্রে যেহেতু অযূর কথা বলা আছে সেহেতু এ বর্ণনার মধ্যেও অযূর বিষয়টি উহ্য (محذوف) আছে বলে ধরে নেওয়া স্বাভাবিক। তাতে কোন আপত্তি থাকতে পারে না।

সুনানে নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, মুস্তাদরাকে হাকিম, সহীহ ইবন খুযায়মা, সহীহ ইবন হিব্বান প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত হাদীসগুলোর কোনটিতে একই সঙ্গে অযূ ও নামায উভয়ের কথা উল্লেখ আছে। মুহাদ্দিসগণ এ ধরনের বিভিন্নতার ক্ষেত্রে মর্মার্থ নির্ণয়ের জন্য সমন্বয়করণ-এর নীতি অবলম্বন করে থাকেন। আলোচ্য হাদীসে সে নীতি প্রয়োগ করতে হলে (كُلِّ صَلواة)-এর পূর্বে (مضاف) উহ্য থাকার বিষয়টি অবশ্যই মেনে নিতে হয় ।

আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী (মৃ. ১০১৪ হি.) বলেন, সামগ্রিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, এখানে হাদীসের মতনগুলো (মূলপাঠ) প্রধানত দুই রকমের ।

এক,عند كُلِّ صَلواة এর নির্দেশকারী, দুই. ; مع كُلِّ وضوء -এর নির্দেশকারী। তন্মধ্যে ফকীহগণ مع كُلِّ وضوء -কে প্রাধান্য দিয়ে এটিকে মূল (اصل) তথা প্রকৃত বক্তব্য এবং عند كُلِّ صَلواة -কে প্রাধান্য দেওয়া এবং এটিকে মহানবী (সা)-এর প্রকৃত বক্তব্য নিরূপণের কয়েকটি প্রমাণ আছে। যেমন :

এক. আরবী ব্যাকরণে مع ও عند উভয় শব্দই 'মুকারানাহ' অর্থাৎ ‘সাথে'-এর অর্থ বুঝায়। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এতটুকু যে, مع বুঝায় হাকীকী মুকারানাহ, যথা- مع زيد অর্থ যায়দের সঙ্গে; অর্থাৎ যায়দের সাথে সংযুক্ত ও মিলিত। পক্ষান্তরে عند বুঝায় ইযাফী মুকারানা; যথা عند زيد অর্থ যায়দের নিকট; অর্থাৎ যায়দের কাছে ও অধিকারে। এখানে অর্থ যায়দের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া জরুরী বোঝায় না। নিয়ম অনুসারে হাকীকী ও ইযাফী অর্থের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিলে হাকীকী অর্থকে প্রাধান্য দিতে হয় বিধায় হাকীকী অর্থ নির্দেশকারী হাদীস مع كُلِّ وضوء কে মূলপাঠ সাব্যস্ত করা হবে এবং ইয়াকী অর্থের নির্দেশকারী হাদীস عند كُلِّ صَلواة কে প্রাসঙ্গিক পাঠ নির্ণয়পূর্বক উপযুক্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে মূল পাঠের অনুকুলস্থ করা হবে।

দুই, অযূ ও নামায দুটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আমল। উভয় আমলের প্রকৃতি ও গঠন ভিন্ন ভিন্ন। অযূ হল পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা সংশ্লিষ্ট আমল। পক্ষান্তরে নামায হল ইবাদত পর্যায়ের আমল। এখন বিবেচনা করতে হবে যে, মিস্ওয়াকের আমল-এতদুভয়ের মধ্যে কোনটির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। নিরপেক্ষ বিচারে বুঝা যায় যে, মিস্ওয়াক প্রত্যক্ষভাবে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সাথেই সম্পর্কিত একটি আমল। এটি ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট হলেও সেটা সম্পূর্ণ পরোক্ষভাবে। মিস্ওয়াক পবিত্রতা বিষয়ের সাথে সংযুক্ত আমল-এর দলীল মহানবী (সা)-এর হাদীস থেকেও পাওয়া যায়। হাদীসে মহানবী (সা) মিস্ওয়াকের প্রকৃতি নির্দেশ করে বলেছেন ঃ

السواك مطهرة للفم وَمِرْضَاةُ الرُّب

মিস্ওয়াক মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায় ।

এ ব্যাখ্যা থেকেও বুঝা যায় যে مع كُلِّ وضوء এর বর্ণনাই মুলপাঠ বিবেচিত হওয়ার জন্য অগ্রাধিকার প্রাপ্তির উপযুক্ত।

তিন. অযূর সময়ে মিস্ওয়াক করার মধ্যে কোন ঝুঁকি নেই। পক্ষান্তরে অযূর পরে নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বক্ষণে মিস্ওয়াক করার মধ্যে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। কারণ মিস্ওয়াকের ফলে কখনো কখনো মাড়ি থেকে রক্ত বেরিয়ে পড়ে। আর হানাফী ফিক্-হ অনুসারে শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত বের হলে অযূ ভেঙ্গে যায়।” এমতাবস্থায় নামাযে দাঁড়িয়ে মিস্ওয়াক করার অর্থ হল—অযূ, নামাযের তাকবীরে উলা এবং পরিচ্ছন্ন মুখে নামায আদায়-এর মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া। কেননা ঘটনাক্রমে যদি মাড়ি থেকে রক্ত বেরিয়ে পড়ে তা হলে অযূ ভেঙ্গে যাবে। আর অযূ করতে গেলে তাকবীরে উলা ছুটে যাবে। এমনকি অযূ না ভাঙ্গলেও অন্তত অপরিচ্ছন্ন মুখ নিয়ে নামায পড়তে হবে। এটি মাকরূহ। কাজেই ইখতিলাফী মতনের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যায় এমন কোন বিকল্প অবলম্বন করা যায় না যে, বিকল্প অবলম্বন করলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির দিক প্রবল হয়ে যায়। এ হিসাবেও مع كُلِّ وضوء কে প্রাধান্য দিতে হয়।

চার. হাদীস বিজ্ঞানের নীতি হল جمع بين الروايات -এর উপর আমল করা। অর্থাৎ কোথাও মতনের ইখতিলাফ দেখা দিলে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্য থেকে এমন একখানা হাদীসকে মূল হাদীস নির্ধারণ করা যার অনুকূলে অন্যান্য হাদীসকে দ্বিধাহীনভাবে মিলানো যায় । আলোচ্য হাদীসে সেই নীতি করতে হলেও مع كُلِّ وضوء -এর মতনকেই মূল পাঠ হিসাবে প্রাধান্য দিতে হয় ।

পাঁচ. মতনের ইখতিলাফ দেখা দিলে এর সমাধানের জন্য মহানবী (সা)-এর সীরাত তথা বাস্তব জীবনের আমল কিরূপ ছিল তা লক্ষ্য করা হয়। তাতেও দেখা যায় যে, মহানবী (সা) অযূর পূর্বে মিস্ওয়াক সর্বদা করেছেন বলে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। কিন্তু নামাযের পূর্বে অযূ না করে শুধু মিস্ওয়াক করে নামায আদায় করেছেন-এমন একটি উদ্ধৃতিও কোথাও পাওয়া যায় না। মহানবী (সা)-এর এ আমলী দলীল থেকেও مع كُلِّ وضوء এর প্রাধান্য প্রতীয়মান হয়।

আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী (মৃ. ১৩৫২ হি.) উপরোক্ত মতভিন্নতার একটি সমন্বয়মূলক সমাধান পেশ করেছেন। তিনি বলেন, মিস্ওয়াক নামাযের সুন্নাত, না অযূর সুন্নাত-এর ব্যাপারে ফকীহগণের মতভিন্নতা বস্তুত আক্ষরিক মতভিন্নতা। এটিকে প্রকৃত মতভিন্নতা বলা যায় না। হাদীসে মিস্ওয়াক করার বিষয়টি অযূ ও নামায উভয়ের সাথে সংশ্লিষ্টভাবে পাওয়া যায়। তাই মিস্ওয়াক করার উদাহরণ এ জন্য পাওয়া যায় না যে, মহানবী (সা) কখনো পুরাতন অযূ দ্বারা নামায পড়তেন না। অযূ ভেঙ্গে না থাকলেও প্রত্যেক নামায তিনি নতুন অযূর মাধ্যমে আদায় করতেন।

ফকীহগণের মতভিন্নতা আক্ষরিক বলে দাবী করার কারণ হল যে, হানাফী ফকীহগণের সামগ্রিক বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁদের মতে মিস্ওয়াক করা অযূর সুন্নাত । আর নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে পুনরায় মিস্ওয়াক করে মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া মুস্তাহাব। উল্লেখ্য যে, সুন্নাত আর মুস্তাহাবের মধ্যে মৌলিক কোন তফাৎ নেই। কেননা মুস্তাহার মূলত সুন্নাতেরই একটি বর্ধিত শাখা। কাজেই হানাফী ফকীহগণ যখন নামাযের পূর্বেও মিস্ওয়াকের ব্যবহার স্বীকার করে নিচ্ছেন তখন মিস্ওয়াক অযূর সময় করা হবে, না নামাযের সময় করা হবে-এ নিয়ে বিতর্কের কোন সুযোগই থাকে না। বরং বলা হবে যে, মিস্ওয়াক অযূ ও নামায উভয়ের সাথেই সংশ্লিষ্ট। কাজেই যেভাবে অযুর পূর্বে করা হবে সেভাবে নামাযের পূর্বেও করা হবে। এটিই মহানবী (সা)-এর হাদীসে ভিন্ন ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৫৭৪৫

ইল্লাল্লাহ জিকির করার বিধান


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

কালিয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৪৫৯২০

একটি “নকল বিবাহ”


১৬ নভেম্বর, ২০২৩

৮VPC+৫P৩

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৭৬৬৫৬

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির বিয়ে সহীহ হয়?


২৬ অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy