পূর্ণ নামাজ
প্রশ্নঃ ৩৮৪৮০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সকল ফরজ নামাজ সঠীক কিভাবে পরবো জানালে ভালো হতো।,
১৪ আগস্ট, ২০২৩
ময়মনসিংহ ২২০০
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলিমই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। তাই হানাফি মাজহাব অনুসারেই নিচে নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম উল্লেখ করা হলো।
নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। এরপরে তাকবিরে তাহরিমা পড়ার পর বাম হাতের ওপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে। এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে পড়তে হবে।
ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। (নাসায়ি, হাদিস নং : ৮৮৯)
এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন। (তাহাবি : ১/৩৪৭)
এবার সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
সূরা আল ফাতিহা
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ
ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص
মাজহাব মতে, আমিন আস্তে পড়া উত্তম। তবে জোরে আমিন বলার ব্যাপারেও ইমামদের মতামত পাওয়া যায়।
সূরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে একটি সূরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয়, তাই পড়তে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৬৯৫)
লাওয়াত সালাত বা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক। তবে নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের সুন্নত পরিমাণের বিষয়ের বিবরণ ফিকহের কিতাবে উল্লেখ করা আছে।
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৭২৯)
রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
রুকুতে তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার; কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২)
এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতে হবে। এরপর তাকবির পড়ে অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৪৭)
সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে প্রথমে নাক এবং পরে কপাল মাটিতে রাখতে হবে। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৫)
সিজদায় তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার; কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২)
এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়তে হবে। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদায়ও এরপর কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও তাসবিহ পড়া যাবে। এরপর জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এ পর্যন্ত আমাদের প্রথম রাকাত সম্পন্ন হয়েছে।
এবার দ্বিতীয় রাকাত আরম্ভ হলো। এতে হাত উঠাতে হবে না, ছানাও পড়বেন না, আউজুবিল্লাহও পড়তে হবে না। তবে আগের মতো সূরা ফাতিহা ও এর সাথে অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু-সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাম পা জায়নামাজে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যেতে হবে। তখন হাত রাখতে হবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। (মুসলিম, হাদিস নং : ৯১২)
অতঃপর তাশাহুদ পড়তে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৮)
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু দোয়া
– اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَن لَّاإِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. –
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু এর উচ্চারণ
‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’
তাশাহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করতে হবে। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলতে হবে।
তবে তাশাহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মও ইমামদের বক্তব্যে দেখা যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা কাম্য নয়।
যদি নামাজ দুই রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—ফজরের নামাজ, তাহলে তাশাহুদের পর নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে (মুসলিম, হাদিস নং : ৬১৩)–
তাশাহুদের পর দরুদ শরীফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, وبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِْيدٌ مَجِيْدٌ . –
দরুদ শরীফ এর উচ্চারণ
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যে কোনো দোয়া পাঠ করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)
যেমন— দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে পারেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৯)
দোয়ায়ে মাসুরা বা দোয়া মাসুরা
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
দোয়ায়ে মাসুরা বা দোয়া মাসুরার উচ্চারণ
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’
অতঃপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর সময় পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন।
যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর আর কিছু পড়বে না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)
তবে তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে দুই রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবেন। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরাতে হবে।
والله اعلم بالصواب
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৭০২০৭
নামাজে ঢেকুরের সাথে মুখে খাবার চলে আসলে নামাজের বিধান
৯ অক্টোবর, ২০২৪
ঘোড়াশাল

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
৭৫৮০৯
প্রথমে কেরাত শুদ্ধ পড়ে পরে ভুল পড়লে নামায হবে?
২০ অক্টোবর, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৬৬৫১৬
জুমার নামাজে ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয়
৫ জুলাই, ২০২৪
চট্টগ্রাম

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে