আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

আল্লাহ তায়ালা কি সর্বত্র বিরাজমান

প্রশ্নঃ ৩৭৫৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১/আল্লাহ তা'অালা কি সব জায়গায় আছেন? নাকি শুধু আরশে আজিমে আছেন? ২/ আল্লাহকে খোদা বলে ডাকা যাবে কি না? ৩/ জসিম উদ্দিন রাহমানি সাহেব উনি কি হক পথে ছিলেন এখনও কি হক পথে আছেন উনি কি আহলে সুন্নাতওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত?,

৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

ত্রিশাল

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন এমন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পূর্ববর্তী মনীষীগণ নিষেধ করেছেন। বলা যায় এটি একটি বিদআতি আলোচনা। এ বিষয়ে কথা বলা বিদআত। এমনটিই আমরা পূর্ববর্তী মুহাক্কিক আলেমগণ থেকে দেখতে পাই।

হযরত ইমাম মালিক রহঃ বলেন,

الاستواء معلوم والكيفية مجهولة، والسؤال عنه بدعة، والايمان به واجب،

“আল্লাহ তাআলার আরশে ইস্তিওয়া এর বিষয়টি জানা যায়, কিন্তু অবস্থা অজানা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত। আর এ বিষয়ে ঈমান রাখা ওয়াজিব”।

এজন্য এ বিষয়ে অযথা কথনে লিপ্ত হ্ওয়া কিছুতেই কাম্য নয়। আমরাও এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছিলাম না। যেহেতু এটি খুবই সঙ্গীন একটি বিষয়। আর আল্লাহ তাআলা আছেন, তিনি সব কিছু দেখছেন, তিনি আমাদের উপর ক্ষমতাশীল এসব আমাদের মূল ঈমানের বিষয়। তিনি কোন অবস্থায় আছেন? এসব আমাদের ঈমানের মূল বিষয় নয়। তাই এটি নিয়ে অযথা ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া কিছুতেই উচিত নয়। খুবই গর্হিত কাজ।

কিন্তু কুরআনের মুতাশাবিহ তথা অস্পষ্ট আয়াত নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা এসবকে মূল প্রাতিপাদ্য বিষয় বানানো এক শ্রেণীর ফিতনাবাজদের মূল মিশন তা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনেই জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে-

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]

তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}

আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন? এটি কুরআনের একটি মুতাশাবিহাত তথা রূপক শব্দের অন্তর্ভূক্ত। তাই আমাদের পূর্ববর্তী মুহাক্কিকগণ এটির ব্যাপারে অতি গবেষণা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। কিন্তু যাদের মনে কূটিলতা আছে তারা ফিতনা বিস্তারের জন্য এসবকেই প্রচারণার মূল টার্গেট বানিয়ে কাজ করে যায়।

সেই কূটিল সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত প্রচলিত বিদআতি ফিরক্বা কথিত আহলে হাদীস। যাদের কাজই হল মুতাশাবিহ এবং মতভেদপূর্ণ বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরে ফিতনা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।

যেহেতু একের পর এক মেইল আমাদের কাছে আসছে এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে কলম ধরলাম। আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল। আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিয়ে তার প্রিয়ভাজন হবার পথে অগ্রসর হবার তৌফিক দান করুন। আমীন।

আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র রয়েছেন!

কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায় প্রচার করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান নয়। তারা দলিল হিসেবে পেশ করে থাকে সূরা হাদীদের ৩ নং আয়াত। যেখানে ঘোষিত হয়েছে আল্লাহ তায়ালা আরশের উপরে রয়েছেন। তারা কিছু আয়াত দিয়ে আরো অসংখ্য আয়াতকে অস্বিকার করে নাউজুবিল্লাহ। যেই সকল আয়াত দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহ তায়ালা আরশসহ সর্বত্র রয়েছেন।
কিছু আয়াতকে মানতে গিয়ে আরো ১০/১২টি আয়াত অস্বিকার করার মত দুঃসাহস আসলে কথিত আহলে হাদীস নামী ফিতনাবাজ বাতিল ফিরক্বাদেরই মানায়।
অসংখ্য আয়াতে কারীমাকে অস্বিকার করে আল্লাহ তায়ালাকে কেবল আরশে সীমাবদ্ধ করার মত দুঃসাহস ওরা দেখাতে পারলেও আমরা পারি না। আমরা বিশ্বাস করি-আল্লাহ তাআলার কুরসী আসমান জমিন সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তিনি স্থান কাল থেকে পবিত্র। আল্লাহর গোটা রাজত্বের সর্বত্র তিনি রয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা আরশে রয়েছেন একথা আমরা অস্বিকার করি না। তিনি আরশে রয়েছেন। তিনি এছাড়াও সর্বত্র রয়েছেন। তাহলে আমরা সকল আয়াতকেই মানি। আর ওরা শুধু আরশ সংশ্লিষ্ট কিছু আয়াত মানে, বাকিগুলোকে অস্বিকার করে।

কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকা সকল কিছুকে পরিবেষ্টনকারী স্রষ্টার জন্য কিছুতেই মানানসই হতে পারে না।

কিছু আয়াত দেখে নেইঃ

১-

ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
অতঃপর তিনি আরশের উপর ক্ষমতাশীল হোন। {সূরা হাদীদ-৩}

২-

قوله تعالى {وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ}

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। {সূরা বাকারা-১৮৬}
৩-

قوله تعالى {وَنَحنُ أَقرَبُ إِلَيهِ مِن حَبلِ الوَرِيدِ} [ق 16]

আর আমি বান্দার গলদেশের শিরার চেয়েও বেশি নিকটবর্তী। {সূরা কাফ-১৬}

৪-

فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (83) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (84) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لا تُبْصِرُونَ (85)

অতঃপর এমন কেন হয়না যে, যখন প্রাণ উষ্ঠাগত হয়। এবং তোমরা তাকিয়ে থাক। এবং তোমাদের চেয়ে আমিই তার বেশি কাছে থাকি। কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা {সূরা ওয়াকিয়া-৮৩,৮৪,৮৫}

৫-

{ وَللَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة-115]

পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও,সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত {সূরা বাকারা-১১৫}

৬-

قوله تعالى { وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَمَا كُنتُمْ } [ الحديد – 4 ] তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন {সূরা হাদীদ-৪}

৭-

وقال تعالى عن نبيه : ( إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا (التوبة من الآية40

যখন তিনি তার সাথীকে বললেন-ভয় পেয়োনা, নিশ্চয় আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন {সূরা হাদীদ-৪০}

৮-

قوله تعالى مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَى ثَلاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رَابِعُهُمْ وَلا خَمْسَةٍ إِلاَّ هُوَ سَادِسُهُمْ وَلا أَدْنَى مِن ذَلِكَ وَلا أَكْثَرَ إِلاَّ هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ( المجادلة – 7

কখনো তিন জনের মাঝে এমন কোন কথা হয়না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন, এবং কখনও পাঁচ জনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা কিছু করত। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন {সূরা মুজাদালা-৭}

৯-

وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ

আল্লাহ তায়ালার কুরসী আসমান জমিন ব্যাপৃত {সূরা বাকারা-২৫৫}

২. আল্লাহ তায়ালার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সেই নামে আল্লাহ তাআলাকে ডাকা উচিত।
তবে "খোদা" নামে তাকে ডাকলে নাজায়েজ হবে না।
পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

وَلِلّٰہِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی فَادۡعُوۡہُ بِہَا ۪ وَذَرُوا الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ اَسۡمَآئِہٖ ؕ سَیُجۡزَوۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।
সূরা আ'রাফ ১৮০

৩. জসিম উদ্দিন রহমানি সাহেবের চিন্তাগত কিছু ভিন্নতা থাকলেও তাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত থেকে খারিজ সাব্যস্ত করার কোন কারণ নেই।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫৮৪৫

খেলা দেখার বিধান কি?


২৮ নভেম্বর, ২০২২

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

২৩৩১৫

إذا صح الحديث فهو مذهبي কথাটি কি ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে প্রমাণিত?


২০ আগস্ট, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৩২৩০৭

মধ্য রমজানে বিকট আওয়াজের কথা হাদীসে এসেছে কি এবং তা এই রমজানে হওয়ার সম্ভাবনা আছে?


৬ এপ্রিল, ২০২৩

Brahmanbaria

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy