আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ইতেকাফ: ফজিলত, তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও বিধান

প্রশ্নঃ ৩১৩৪৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইতেকাফ সম্পর্কে জানতে চাই।,

২৩ মার্চ, ২০২৩

শরিয়তপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ভালো রেখেছেন। দোয়া করি, আল্লাহ আপনার হৃদয়কে তাঁর মহব্বত দ্বারা সিক্ত ও আলোকিত করে তুলুন। নিশ্চয় আল্লাহই তাওফিকদাতা।

প্রশ্নকারী দীনি ভাই, ইতিকাফ মুলতঃ তাদের জন্য যারা হৃদয়ের গহিনে আল্লাহর সঙ্গে সম্বন্ধের যোগসূত্র মুঠোয় পেতে আগ্রহী। রমজানের শেষ ১০ দিন দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে একান্ত আল্লাহর হয়ে যাওয়ার জন্যই ইতেকাফ। রমজানের শেষ দশকের এই ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। ইবনুল মুনযির তাঁর ‘আল-ইজমা’ নামক গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৫৩) বলেন,
وأجمعوا على أن الاعتكاف سنة لا يجب على الناس فرضا إلا أن يوجبه المرء على نفسه نذرا فيجب عليه
'আলেমগণ ইজমা করেছেন যে, ইতিকাফ সুন্নত; ফরয নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের উপর ওয়াজিব করে নেয় ওয়াজিব হয়।'

ইতিকাফের ফযিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে,
১. ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ ইতিকাফকারীর ব্যাপারে বলেছেন,
هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ ، وَيُجْرَى لَهُ مِنْ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا
ইতিকাফকারী গুনাহকে প্রতিরোধ করেন। ইতিকাফকারীকে সকল নেক আমলকারীর ন্যায় নেকী দেয়া হবে। (ইবন মাজাহ ১৭৮১)

২. তাবারানী (৭৪২০), হাকিম (৪/২৬৯) ও বায়হাকী (৩/৪২৪) ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেছেন,
مَنِ اعْتَكَفَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ جَعَلَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ ثَلاثَ خَنَادِقَ ، كُلُّ خَنْدَقٍ أَبَعْدُ مِمَّا بَيْنَ الْخافِقَيْنِ
যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ্‌ তার মাঝে ও জাহান্নামের আগুনের মাঝে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন; যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব।

দুই. যেহেতু লাইলাতুল কদরের সুমহান ফযিলত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ
লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকেও উত্তম। (সূরা কদর ৩)
সেহেতু রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ এর ইতিকাফের মূল লক্ষ্য ছিল- লাইলাতুল কদর পাওয়া। ইমাম মুসলিম (১১৬৭) আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ রমজানের প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করেছেন। এরপর তিনি মাঝের দশদিন তুর্কী ক্বুব্বাতে (এক ধরণের ছোট তাঁবুতে) ইতিকাফ করেছেন। যে তাবুর দরজার উপর একটি কার্পেট ঝুলানো ছিল। রাবী বলেন, তিনি তাঁর হাত দিয়ে কার্পেটটিকে ক্বুব্বার এক পাশে সরিয়ে দিলেন। এরপর তাঁর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বললেন। লোকেরা তাঁর কাছে আসল। অতঃপর তিনি বললেন,
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ، ثُمَّ أُتِيتُ فَقِيلَ لِي : إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ ، فَاعْتَكَفَ النَّاسُ مَعَهُ
আমি প্রথম দশদিন ইতিকাফ করেছি- এই রাতের (লাইলাতুল ক্দরের) খোঁজে, এরপর মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করেছি। এরপর আমাকে বলা হল, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে। সুতরাং আপনাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হয় তিনি ইতিকাফ করুন। তখন লোকেরা তাঁর সাথে ইতিকাফ চালিয়ে গেল।

তিন. প্রশ্নকারী দীনি ভাই, সত্যিকার অর্থে ইতিকাফের ইতিবাচক ফলাফল মানুষের জীবনে তাৎক্ষণিকভাবে, এমনকি ইতিকাফের দিনগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া পরবর্তী রমজান পর্যন্ত অনাগত দিনগুলোর উপরেও এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। আতা আল-খুরাসানি রহ. বলেন,
ইতিকাফকারীর উদাহরণ সে বান্দার মত, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে পেশ করে বলছে, হে আল্লাহ যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা কর, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না, হে আমার রব, যতক্ষণ না তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না। (শারহুল ইব্‌ন বাত্তাল আলাল বুখারি: ৪/১৮২)

চার. ইতেকাফের কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে। যেমন, ইতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। আবু দাউদের (২১১৫) হাদিসে আছে,
لا يخرج لحاجة إلا لما لا بد منه
একান্ত বাধ্য না হলে মসজিদ থেকে বের হবে না।

মনে রাখবেন, ইতিকাফ মানে বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহর হয়ে যাওয়া। মসজিদে সঙ্গিদের সঙ্গে গল্প করা, মোবাইলে ফোনালাপ, গোসল করতে বেশি সময় লাগানো এসব ইতিকাফের মেজাজের বরখেলাফ। ইতিকাফে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুর চিন্তা থেকে মনকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেবল আল্লাহর ধ্যান-খেয়ালে মগ্ন থাকতে হবে। তবেই ইতিকাফ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।

পরিশেষে আপনার জন্য একটি হাদিস পেশ করছি–
আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ
রাসূল ﷺ রমজানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না। (মুসলিম)

সুতরাং ইতিকাফের দিনগুলোতে আপনি সেটাই করবেন, যা রাসূল ﷺ করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহই তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৪৩৯৭

ইতিকাফের ফাজায়েল, মাসায়েল


২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

শংকরচন্দ্র

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

৯৫২৮৫

খানকায় ইতিকাফের হুকুম


১২ মার্চ, ২০২৫

West Bengal ৭৩৪০০১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy