আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর করণীয়

প্রশ্নঃ ২৬৩০৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শিশু জন্মগ্রহণের সময় কি কি কাজ করা উচিত, আর কি কি কাজ না করা উচিত জানালে উপকার হতাম। এ সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহ কি বলে? [ আর তাহনিক কি জিনিস যা আমি ফেসবুক থেকে দেখে এই প্রশ্ন করার ইচ্ছা জাগলো। ],

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২১৬

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সন্তান জন্ম হওয়া যেমন আনন্দের, সে সন্তানের প্রাথমিক কাজগুলো সুন্নাতের আলোকে পালন করা আরো বেশি আনন্দের। কেননা এ সুন্নাতের অনুসরণ সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে সঠিক, সুন্দর জীবনের দিকে ধাবিত করবে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অভিভাবকদের করণীয়গুলো বর্ণনা করেছেন। সন্তানের জন্য তা পালন করা অনেক জরুরি। আর তাহলো-
সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রসংশা করা ও তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা এবং সন্তানের জন্য কল্যাণের দোয়া করা। যেভাবে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দোয়া করেছিলেন-الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ - رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ - رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দোয়া শ্রবণকারী। হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব! আমার দোয়া কবুল করুন। হে আল্লাহ! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৯-৪১)

> সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম কাজ হলো নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামাত দেয়া।

হজরত আবু রাফে রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘ফাতেমার ঘরে হাসান ইবনে আলি ভূমিষ্ঠ হলে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার কানে আজান দিতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম দিন বা সপ্তম দিন নব জাতকের নাম রাখা সুন্নত।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আজ রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, আমার পিতা ইবারাহিমের নামানুসারে আমি তার নামকরণ করেছি ইবরাহিম।’ (মুসলিম)অন্য হাদিসে এসেছে, নবজাতকের সুন্দর নাম রাখা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নিজ নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে আহ্বান করা হবে, অতএব তোমরা তোমাদের (সন্তানদের) নাম সুন্দর করে নাও।

> নবজাতকের বয়স ৭দিন হলে আকিকা দেয়া।হজরত সামুরা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। অতএব সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, তার চুল কাট ও তার নাম রাখ।’ মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)( যদি কেউ ৭ দিন পর আকিকা দিতে না পারে তবে সে ১৪ কিংবা ২১ দিন পর আকিকা করবে। যদি তাতেও সমর্থ না হয় তবে পরে তা আদায় করে নেবে।)

> নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিন মাথা মুণ্ডন করে চুলের ওজন পরিমাণ রূপা (অর্থ) দান করা।হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তম দিন হাসান ও হুসাইনের চুল কাটার নির্দেশ দেন এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করেন। (তিরমিজি)হজরত আলি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসানের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতিমা, তার মাথা মুণ্ডন কর ও তার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা কর।’ (তিরমিজি)
নবজাতকের মাথা মুণ্ডনের পর মাথায় জাফরান লাগানোও সুন্নাত।

> তাহনিক করা। অর্থাৎ নবজাতকের মুখে খেঁজুর চিবিয়ে দেয়া। ইমাম নববি বলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত।

- হজরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে গেলাম, তিনি বললেন, তোমার সঙ্গে কি খেজুর আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর চিবালেন, অতঃপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিব্বা দিয়ে চুষে চুষে ও ঠোটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃশ্য দেখে বললেন, দেখ! আনসারদের খেজুর কত প্রিয়!।’ (মুসলিম)
হজরত আবু মুসা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমার এক সন্তানের জন্ম হলে, আমি তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাম রাখেন ইবরাহিম। অতঃপর খেজুর দিয়ে তাহনিক করেন, তার জন্য বরকতের দোয়া করেন এবং আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

> সন্তান ভূমিষ্ঠের ৭দিন পর খৎনা করা সুন্নাত।হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তম দিন হাসান এবং হুসাইনের আকিকা দিয়েছেন ও খাৎনা করিয়েছেন।’ (তাবারানি, বায়হাকি)নবজাতকের জন্মের ৭ দিন থেকে শুরু করে ৩ বছরের মধ্যে খৎনা করা উত্তম। আর ৭ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই খৎনা করে নেয়া ভালো। তবে সাবালক হওয়ার আগেই খৎনা করা জরুরি।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরবিয়া মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪৯৩৮৭

মাথা বা হাতের ইশারায় সালাম আদান-প্রদান জায়েজ?


২২ ডিসেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৫৮৯৮৩

শাওয়ালের ছয় রোযা


২৮ মার্চ, ২০২৪

West Bengal ৭৪৩৪২৮

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯২২০০

খতমে তারাবীহ কি বিদআত?


৩ মার্চ, ২০২৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy