আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

যে যুবক ভালোবাসার মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পেতে চায়; তার প্রতি উপদেশ

প্রশ্নঃ ২৬১১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। হুজুর, আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। মেয়েটার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। শুধু এমনি তাকে আমি মনে মনে ভালোবাসি। এখন আমি কি তাকে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে পারবো? যে, হে আল্লাহ! আমার কাছে অমুককে ভালো লাগে। আমি তাকে দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণসহ আপনার হুকুম রসুল সাঃ-এর তরিকা মত চলার হিম্মতসহ চাই। আপনি আমাদের একজনের জন্য আরেকজনকে উপযুক্ত করে দিন। আমাদের একে এপর জনের জন্য হালাল করে দিন। এই ভাবে তাকে আল্লাহর কাছে মুনাজাতে চাইতে পারবো কি?

৪ ডিসেম্বর, ২০২২
লক্ষ্মীপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, ইসলাম নির্দিষ্ট কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে কামনা করার প্রতি অনুৎসাহিত করেছে। সুতরাং প্রথমত চেষ্টা করুন, উক্ত মেয়ের চিন্তা অন্তর থেকে বের করে দিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তমটা কামনা করা। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারা ২১৬)
দুই. মনে রাখবেন, এটা নেক সুরতে আপনার জন্য পরীক্ষা। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর ভাষায়,
ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أضَرَّ علَى الرِّجالِ مِنَ النِّساءِ
পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফেতনা আমি রেখে গেলাম না। (সহীহ বুখারী ৫০৯৬)
সুতরাং সতর্ক থাকুন এবং উক্ত চিন্তা থেকে বের হওয়ার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে মনের বিরোধিতা করুন। আমি বলছি না, এক দিনে আপনি উক্ত চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। তবে সবর ও সাহসকিতার সঙ্গে চলতে পারলে ফজিলত শুনুন, রাসুলুল্লাহ ﷺ কত চমৎকারভাবে আমাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে ফজিলত বাজেট করিয়ে নিয়েছেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহাবায়ে কেরামকে শুনাচ্ছেন যে,
إنَّ مِنْ ورائِكُمْ أيامَ الصبرِ الصبرُ فيهِنَّ كَقَبْضٍ علَى الجمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهَا أَجْرُ خَمْسِينَ قالوا يا رسولَ اللهِ أجْرُ خمسينَ منهم أَوْ خمسينَ مِنَّا قال خمسينَ مِنْكُمْ
তোমাদের পর এমন যুগ আসবে, যখন দীনের উপর সবর করে থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার মুষ্টিবদ্ধ করে রাখার মতো কষ্টকর হবে। ওই সময় দীনের উপর আমলকারীর প্রতিদান হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান প্রতিদান। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! পঞ্চাশ জন পুরুষ তাদের মধ্য থেকে না আমাদের মধ্য থেকে? নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, বরং তোমাদের মধ্য হতে! (সুনান আবু দাউদ ৪৩৪১)
তিন. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন-
هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ
‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’
এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।
চার. হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. বলতেন, ‘কোনো নারীর প্রতি আকর্ষণ হলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো কুশ্রীব্যক্তির কল্পনা করুন। এমন ব্যক্তির কল্পনা করুন যার রঙ কালো, চেহারায় দাগ, চোখ অন্ধ, চুল এলোমেলো, দাঁতালো চোয়াল, ঠোঁট মোটা, নাক থেকে পানি বেয়ে ঠোঁট অবধি পৌঁছেছে- যেখানে মাছি বসে আছে। এভাবে কল্পনা করলে রুচিতে একপ্রকার ঘেন্না সৃষ্টি করে, যা আপনার অন্তর থেকে সুন্দরীর প্রতি আকর্ষণকে নষ্ট করে দিবে। কখনও কখনও ভাবুন, কল্পিত সুন্দরীটি মারা গেলে তাকে কবরে রাখা হবে। তার দেহ গলে মাটির সাথে মিশে যাবে। পোকামাকড় দেহটাকে খেয়ে ফেলবে। দুর্গন্ধ বের হবে। সুতরাং একে দেখে নিজের মালিককে অসন্তুষ্ট করব কেন?’
প্রিয় দীনী ভাই, সুতরাং আপনি এই চিকিৎসাটাও কাজে লাগাতে পারেন।
পাঁচ. এরপরেও যদি উক্ত মেয়েকে ভুলতে না পারেন এবং তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেতে চান তাহলে এভাবে দোয়া করুন যে, ‘হে আল্লাহ! যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে তাকে আমার জন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করুন।
ইবনুল জাওযী রহ. বলেন,
 فإياك أن تسأل شيئًا إلا وتقرنه بسؤال الخيرة ، فرب مطلوب من الدنيا كان حصوله سببًا للهلاك
আল্লাহ তাআলার কাছে কোন কিছু নির্দিষ্ট করে চাওয়া থেকে বিরত থাকবে। তবে (কোন কিছু নির্দিষ্ট করে চাওয়ার) সময় কল্যাণের দোয়া যুক্ত থাকলে অসুবিধা নেই। কেননা, অনেক সময় অনেক দুনিয়াবি কাম্য বস্তু অর্জন ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়। (চায়দুল খাতির ৩৫২)
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

والله اعلم بالصواب

শাইখ উমায়ের কোব্বাদী সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

#১২৪৮২
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি এখজন শিক্ষক আমাকে পড়াত ২০০০ টাকার বিনিময় আমার মা বাবার সাথে চুক্তি করে কিন্তু ওই শিক্ষক আমার থেকে জোড় করে, নানা ধরনের কথা বলে যৌন হয়রানি করত। প্রতি মাসে ১০০০ টাকা বেশি নিত তবে শেষ এর তিন মাস আমি ওনাকে আর কোনো টাকা দেয়নি ওনার খারাপ আচরণ এর কারনে তবে উনি এখনো এই টাকা দাবি করে বলে দিতে নাহলে উনি দাবি রাখবে এটা সেটা,,, তবে উনি মা বাবার সাথে চুক্তি ২০০০ এর ই করেছিল,, এখন কি করনীয়?? আর উনাকে টাকা দিতে গেলে আবার উনার যৌন হয়রানি শিকার হতে হবে,, আর উনি কি এটি পাওনা হবে,,
question and answer iconউত্তর দিয়েছেন: মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
৮ জানুয়ারী, ২০২২
Brahmanbaria