হজ্বে দোয়া কবুলের স্থানগুলো কয়টি এবং কি কি?
প্রশ্নঃ ২৪৯৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মক্কা এবং মদিনার দোয়া কবুলের স্থানগুলো কয়টি এবং কি কি? সেখানে দোয়া করার নিয়ম কি?আমি ২০২৩ এর জানুয়ারি মাসে উমরাহ করতে যাব। ইন শা আল্লাহ
১১ নভেম্বর, ২০২২
চট্টগ্রাম
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
পবিত্র মক্কা-মদিনার বিভিন্ন জায়গায় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। সেসব স্থানে আল্লাহতায়ালার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রেখে- মনোযোগসহ বিনম্রচিত্তে, অশ্রুসজল নয়নে দোয়া করা দরকার।
দোয়ায়া দুনিয়ার যাবতীয় জায়েজ মকসুদ পূরণে
পবিত্র মক্কা-মদিনার এমন কয়েকটি স্থান ও সময়ের উল্লেখ করা হলো- যেখানে দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে।
এক. আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ দেখে দোয়া করা। বায়তুল্লাহ শরিফ দেখামাত্র দোয়া করা।
বর্ণিত আছে, বায়তুল্লাহ শরিফ প্রথম নজরে আসার পরে যে দোয়া করা হবে তা কবুল হবে।
দুই. মুলতাজাম দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে কাবা শরিফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাজাম বলে।
তিন. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দোয়া করা। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুই পাহাড়ের মাঝে সাঈ করা হাজিদের জন্য ওয়াজিব। উভয় পাহাড়ই দোয়া করা ও দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম স্থান।
চার. আরাফার মাঠে দোয়া করা। আরাফার মাঠে আরাফার দিবসের মূল অবস্থান ও আমলই দোয়া। এ দিন দোয়া-মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম। জোহর ও আসরের নামাজকে জোহরের প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে একত্রে আদায় করে নেবেন। কোনো সুন্নত বা নফল নামাজ আদায় না করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া-মোনাজাত ও কান্নাকাটিতে ব্যস্ত থাকবে। দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
হাদিসে এসেছে, উত্তম দোয়া, আরাফার দিবসের দোয়া এবং উত্তম কথা, যা আমি এবং আমার আগের নবীরা বলেছেন। ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তারই, প্রশংসাও তার, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। ’ –সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৫
পাঁচ. মুজদালিফায় দোয়া করা। মুজদালিফায় অবস্থানকালে দোয়া করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যখন আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, মাশআরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে। ’ –সূরা আল বাকারা: ১৯৮
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর ‘কুজা’ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং সেখানে তিনি অবস্থান করতেন। এ স্থানটি বর্তমানে মাশআরুল হারাম মসজিদের সম্মুখভাগে অবস্থিত। একেবারে আকাশ পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকতে হয়। মূলত এটিই হলো মুজদালিফার মৌলিক আমল।
ছয়. কঙ্কর নিক্ষেপের পর দোয়া করা। দোয়া কবুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করা।
সাত. বিদায়ী তাওয়াফ শেষে দোয়া করা। হজের সব কর্ম পালন শেষ করে দেশে ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। তাওয়াফ শেষে আপনি মুলতাজামের কাছে চলে যাবেন। মুলতাজামে চেহারা, বুক, দুই বাহু ও দুই হাত রেখে দোয়া করবেন। এটিই আপনার শেষ সুযোগ। একে কাজে লাগান। আল্লাহর কাছে যা খুশি আপনি চাইতে পারেন।
আট. জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করা। জমজমের পানি পান করার সময় আপনার যা খুশি আল্লাহর কাছে চাইবেন। এখানে আপনি যা দোয়া করবেন, আল্লাহতায়ালা তাই কবুল করবেন।
দোয়ার সময় বেশি বেশি কান্নাকাটি করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়ে দোয়া করতে হবে। কারণ, অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।
দোয়ায় কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে দোয়া করা খুবই জরুরি। দোয়ার সময় এ বিশ্বাস মনে পোষণ করবেন, আল্লাহ অবশ্যই আমার কথা শুনছেন এবং আমার দোয়া কবুল করছেন।
এ ছাড়া তওয়াফের স্থানে, কাবাঘরের ভেতরে, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে, মিনার মসজিদে খায়েফে, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানির মধ্যবর্তী স্থানে, হাতিমের (এলাকার) মধ্যে, মিজাবে রহমতের নিচে- যেখানে বায়তুল্লাহর ছাদের পানি পড়ে, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে বেশি বেশি দোয়া করবেন। এসব স্থানের দোয়াও কবুল করা হয়।
দোয়া আরবিতেই করতে হবে এটা জরুরি নয়। আপনি আপনার ভাষায় যতো চাওয়া-পাওয়া আছে সব আল্লাহর কাছে তুলে ধরবেন, চোখের পানি ফেলবেন- এ সুযোগ আপনার জীবনে আর নাও আসতে পারে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন
والله اعلم بالصواب
মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন
মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১