আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের এলাকায় কারও জন্মবার্ষিকী এবং মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার প্রচলন খুবই কম। কিছুদিন আগে ঢাকার একজন আলেম বয়ানের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সকল মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মবার্ষিকী পালন করা জায়েয বলে ফতোয়া দেন। এতে আমাদের এলাকায় সকলে একটা দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব পড়ে যায়। সুতরাং উক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে শরীয়াতের দলীল উল্লেখ করে আমাদেরকে উপকৃত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।,

৮ অক্টোবর, ২০২০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রশ্নোক্ত আলেমের কথা ঠিক নয়। জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা এবং একে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ইসলামের শিক্ষা নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। এসকল অহেতুক কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা আবশ্যক। শরীয়তে জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবসের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। বিশেষভাবে এই দিনে কোনো ধরনের আমল বা ইবাদতের বিধান নেই।

আর মৃতব্যক্তিদের জন্য ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত স্বীকৃত। তবে এর জন্য কোনো দিনক্ষণ নির্দিষ্ট নেই। বরং যে কোনো সময় বা দিনে নফল নামায, দান-সদকা, দুআ ইত্যাদির মাধ্যমে ঈসালে  সাওয়াব করা যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে করলে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যাবে- এমন নয়। সালাফে সালেহীন তথা স্বর্ণযুগেও নির্দিষ্ট দিনে মৃতের জন্য এ ধরনের ঈসালে সাওয়াবের আয়োজন করার কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস পালন বা এ সংক্রান্ত কোনো অনুষ্ঠান শরীয়তসম্মত নয়।

তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মদিবস ও ওয়াফাতদিবস পালন করাটাও শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। এটা যদি জায়েয হত তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পরে সাহাবায়ে কেরামই সর্বাগ্রে করতেন। কারণ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাঁদের মহব্বত পরবর্তীদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের পদ্ধতি যেহেতু তাদের ভালোভাবে জানা ছিল তাই তারা এর জন্য ঐসকল পন্থাই অবলম্বন করেছেন, যেগুলো সুন্নাহ-নির্দেশিত। কোনো একজন সাহাবী থেকেও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য জন্মদিবস ও ওফাতদিবস পালন করার কথা প্রমাণিত নেই। তদ্রূপ তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগেও এর কোনো চর্চা ছিল না।

প্রকাশ থাকে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় রহমত ও সাআদাত। তাঁকে স্মরণ করে তাঁর জন্য দুআ করা এবং দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা একদিকে যেমন ইবাদত অপরদিকে আমাদের জীবনে বরকতেরও কারণ। এবং তাঁর জীবনাদর্শ আলোচনা করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু তা হতে হবে সে পদ্ধতিতে, যা সাহাবায়ে কেরাম তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। আর কোনোক্রমেই এ আমলগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট মাস বা দিনের সাথে সম্পৃক্ত করে নেয়া যাবে না; বরং তা হবে মুমিনের জীবনের অংশ। সে প্রতিদিনই নামাযের বাইরেও সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর রাসূলের উপর দরূদ শরীফ পড়বে। এবং নিজ জীবনকে তাঁর আদর্শ ও এবং সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত করবে। এতেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি তার মহব্বতের প্রমাণ মিলবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ  وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْم.

আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ  তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১)]


والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মাসিক আলকাউসার

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৪১৩০

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা অনেক সময় লক্ষ করি অনেক আলেম দের নামের পর দা:বা: লেখা হয় ।এই শব্দটির অর্থ কী...

২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,

৩৪৬৭৯

বিদআতি ইমাম কুরবানীর পশু জবাই করতে পারবে?


২৮ জুন, ২০২৩

শ্রীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৫৯৭০৬

আকিদা


২৬ মে, ২০২৪

বরিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy