আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২০৭২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কিভাবে বিবাহ দিলেন সুন্নাহ বিবাহ হবে,মোহরানা তো শুধু স্ত্রীর অধিকার,মেয়ে মোহরানা কোন কোন খাতে ব্যয় করবে, এবং চাইলে কিছু জমিয়ে রাখতে পারবে!,নিজ পরিবারেই জন্য কি ব্যয় করা যাবে,আর মোহরানা বেশি হলে অনেক সময় মেয়ে কে সব দেওয়া হয় না,বলে থাকে এতো মোহরানা দিয়ে মেয়ে কি করবে,এতে কি কোনো গুনাহ, অপরাধ হবে। মোহরানা পুরোটাই কি মেয়ে দিতে হবেমোহরানা কি ভরন পোষনের খরচ কোনো খরচ ,নাকি অন্য কোনো বিষয়ে,মোহরানা দেওয়ার পর কি আর স্ত্রী আর কোনো খরচ দিতে হবে, মোহরানা দিয়ে কি স্ত্রী বিবাহের সরঞ্জাম দিতে হবে,নাকি খরচটা মোহরানার বাহিরে, মোহরানার দেওয়া উদ্দেশ্যে কি, মেয়েকে মোহরানা দেওয়ার পর মেয়ের করনীয় কি!সর্বশেষে আরবি ভাষায় কেমন করে দোয়া করা যায়,যেমন; আমার জন্য দোয়া করবেন, দোয়া চাই, দোয়া কামনা, দোয়া রাখিও, ইত্যাদি আরবি ভাষায়!প্রিয় শায়খ!আমার জন্য দোয়া করবেন।مع السلام..,

২৪ জুলাই, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





মোহর আদায় করা আবশ্যক। না করলে স্বামী গুনাহগার হবে। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। সুতরাং স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে এবং যত দ্রুত সম্ভব মোহর পরিশোধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً

অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। (সূরা নিসা ২৪)

অন্যত্র তিনি বলেন,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً

এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। (সূরা নিসা ৪)

মোহরের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হল, স্ত্রীর বংশে তার সমমানের নারীদের বাস্তবসম্মত মোহর এবং স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য এ দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে মোহর নির্ধারণ করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ত্রীকে তা পরিশোধ করে দেওয়া।

বাইহাকী (১৪৭২১) বর্ণনা করেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, خَيْرُ الصَّدَاقِ أَيْسَرَهُ “সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা”। একই হাদিস আবু দাউদ (২১১৭) বর্ণনা করেছেন এ ভাষায়- خير النكاح أيسره “সর্বোত্তম বিবাহ হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা”

আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলা হয়েছে-أيسره শব্দের অর্থ হচ্ছে- মোহরানা ও অন্যান্য খরচ কমানো, যাতে করে পুরুষের জন্য সহজসাধ্য হয়।

ইমাম আহমাদ (২৩৯৫৭) ও ইবনে হিব্বান (৪০৯৫) আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, إِنَّ مِنْ يُمْنِ الْمَرْأَةِ : تَيْسِيرَ خِطْبَتِهَا ، وَتَيْسِيرَ صَدَاقِهَا ، وَتَيْسِيرَ رَحِمِهَا“কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভ ধারণ সহজ হওয়া।”

সুনানে তিরমিযি গ্রন্থে (১১১৪) ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন,
أَلَا لَا تُغَالُوا صَدُقَةَ النِّسَاءِ , فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا أَوْ تَقْوَى عِنْدَ اللَّهِ لَكَانَ أَوْلَاكُمْ بِهَا نَبِيُّ اللَّهِ ﷺ مَا عَلِمْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ نَكَحَ شَيْئًا مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أَنْكَحَ شَيْئًا مِنْ بَنَاتِهِ عَلَى أَكْثَرَ مِنْ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً
“সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন। আমার জানামতে, রাসূল ﷺ যে নারীদেরকে বিয়ে করেছেন কিংবা তাঁর মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন তাদের কারো মোহরানা ১২ উকিয়ার বেশি ছিল না।

এক উকিয়া হচ্ছে- ৪০ দিরহাম। গ্রামের হিসেবে দিরহামের ওজন হচ্ছে- ২.৯৭৫ গ্রাম।

মোহরের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হল, বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ত্রীকে তা পরিশোধ করে দেওয়া এবং সহবাসের পূর্বে পরিশোধ করা। তবে স্বামীর কাছে নগদ না থাকলে যদি পরবর্তীতে পরিশোধের ইচ্ছা স্বামীর থাকে তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে সময় নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে বিয়ের দিনই পরিশোধের তারিখ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে নেয়া উচিত। যেমন, যদি ধীরে ধীরে কিস্তিতে পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে তাও পরিষ্কার করে নিতে হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এধরণের মোহরকে مهر مؤجل (মোহরে মুয়াজ্জাল) বা ‘বাকি মোহর’ বলে।

যদি স্ত্রী মোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে স্ত্রী মোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় মোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

সুতরাং তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে তাকে তার নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ২৪)

আমাদের সমাজে সাধারণত কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু এটুকু বলে দেওয়া হয় যে, এই পরিমাণ মোহরে মুয়াজ্জাল (বাকি মোহর)। আর সামাজিক প্রচলন অনুযায়ী তার অর্থ দাঁড়ায়, তা পরিশোধ করা হবে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে কিংবা স্বামী-স্ত্রী কারো মৃত্যু হলে। এটি একটি ভুল প্রচলন।

মনে রাখবেন, মোহর নির্ধারণের বিষয়টি নিছক কথার কথা বা ঐচ্ছিক কোনো আচার পালনের বিষয় নয়; বরং তা একটি ফরয বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী দায়িত্ব, যা পূর্ণ মনোযোগ ও বিচার-বিবেচনার দাবি রাখে। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ লেনদেন। অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। এটি বড়ই অন্যায় কথা যে, সারা জীবন উদাসীন থেকে মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীর নিকট মাফ চাওয়া হয়, যখন পরিস্থিতির চাপে স্ত্রীরও মাফ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

স্ত্রী তার মোহর হাতে পাওয়ার পর এর মালিকানা সম্পূর্ণ তার। এই টাকা দিয়ে ঘরবাড়ি, গহনা বানানো, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। কিংবা সদাকাহ করলেও বাধা নেই।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪০০৭

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মোহর আংশিক বা সম্পূর্ণ বাকি থাকতে পারে এটার সোর্সটা যদি বলতেন .....

১৯ ডিসেম্বর, ২০২০

৮৬৪৫-৮৬৮১ اليمانية، حوايا الشمالية، الطائف ২৬৫১৩، السعودية (SA)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

৩৬৫৮০

মহরে ফাতেমী বর্তমান সময় কত টাকা?


২১ জুলাই, ২০২৩

Char Madhur

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy