জাহেরী ইবাদতেও শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান থাকতে হবে
প্রশ্নঃ ১৯০৭১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি শুনেছি বাড়িতে ঢুকার সময় সালাম দিয়ে ঢুকলে নাকি আল্লাহ তাকে হেফাজতে রাখে।তাই আমি স্কুল অথবা বাইরে থেকে আসলে আমি সালাম দিতে চাই না কারণ আমি যৌথ পরিবারের তো তাই আমি যদি সালাম যখন দিতে নেই তখন আমার মন বলে তুই শিরিক করতে ছোছ কারণ তুই তোদের পরিবারের কাছে ভালো সাজতে চাশ তাই শিরিকের চিন্তা করে আমি এরকম অনেক বড় বড় আমল শিরিকের জন্য ছেড়ে দেই। আবার আমি যখন মসজিদে নামাজ পরতে যায় আমি চায় আমার দ্বীনদারদের সাথে চলি তাদের কাছে কিছু শিখি কিন্তু যখনই আমি কথা বলতে যায় আমার মনে শিরিক এর কথা মনে চলে আশে তাই আমি আর কথা বলি না যদি তারা আমাকে অনেক প্রশংসা করে, ভালো বলে ছেলেটা কত ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি তখন আমার মনে খারাপ চিন্তা চলে আশে তাই আমি আমার দাদা,চাচা,স্যার এবং পরিচিত কেউকে নামাজে যাওয়ার সময় সালাম দেই না। একটা কারনে হাদিসে শিরিকের পাপ কখনো মাফ হয় না তাই আমি এই রকম আরো ইবাদত থেকে সরে যাচ্ছি। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি একটু বুঝিয়ে যদি বলতেন অনেক খুশি হতাম কারণ এই শিরিকের ভয়াবহতা আমাকে তিলে তিলে মেরে দিচ্ছে!
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আপনার ধারণা এবং প্রশ্নোক্ত চিন্তাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। এগুলোর সবই শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান সারাক্ষণ মানুষের মনে কুপ্রবঞ্চনা দিতে তৎপর। সরাসরি ধোঁকা দিয়ে যখন শয়তান কুলিয়ে উঠতে পারে না তখন নেক সুরতে সে মানুষের দিলে ওয়াসওয়াসা দিতে শুরু করে।
নেক সুরতে শয়তানের ওয়াসওয়াসাগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশ থাকে মানুষের মনে কিবির বা অহংবোধের সুড়সুড়ি জাগিয়ে তোলা। এর মাধ্যমে সে মানুষকে কোনো নেক কাজ করার সুযোগ দেয় না। বরং পদেপদে তাকে বাধাগ্রস্থ করে তোলে।
আরেকটি বিষয় থাকে তাহলো, সারাক্ষণ সে মানুষের মনে রিয়া বা লৌকিকতার ধোঁকা দিতে থাকে। যার ফলে মানুষ যখনই কেনো নেকের কাজ করতে চায় তখন শয়তান তার ওই দুইটি হাতিয়ার ব্যবহার করে। ফলে লোকটির দ্বারা আপতত ওই আমলটি করার সুযোগ হয় না।
রিয়া এবং অহংকারের ভয়ে সে নামাজ পড়তে পারে না। করণ নামাজ পড়লে মানুষ তাকে নামাজী বলবে! রোজা রাখলে, হজ করলে, যাকাত দিলে, দান সদকা করলে, জিকির আজকার-কুরআন তেলাওয়াত করলে, হালাল হারাম তমিজ করে পর্দা পুশিদা করে চললে মানুষ তাকে প্রশংসা করবে! এই ভয়ে শরীয়তের প্রায় সকল আমলই ছেড়ে দেয়। প্রথম দিয়ে শরীয়তের বিধিবিধানের প্রতি তার মোহাব্বত ভালোবাসা থাকলেও একটা সময় গিয়ে সেগুলোর কিছুই তার কাছে আর ভালো লাগে না। বরং পুরো শরীয়তী তার কাছে বিরক্তিকর, অর্থহীন ও বেকার মনে হয়। এভাবেই একজন ইমানদার মুমিন বেইমান-নাস্তিকে পরিণত হয়। (নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক)।
এসব ক্ষেত্রে করণীয় হলো,
১.যেসকল ইবাদত প্রকাশ্যে করতে হয় সেগুলো প্রকাশ্যই করতে হবে। ইবাদত শুরুর আগে এই নিয়ত করে নিতে হবে যে, এটা আল্লাহর বিধান তাই আমি করছি। লোকে দেখুক বা না দেখুক!
২.সহিহ নিয়ে ইবাদত শুরু করার পর রিয়ার বিষয়টিকে একেবারেই পাত্তা না দেওয়া। যদি কখনো এসেই যায় তাহলে
لا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম) পড়া।
৩. ইবাদতের সময় আল্লাহর অস্তিত্বের স্মরণ করা। এটা চিন্তা করা যে আল্লাহ আমার মনের খবর জানেন; আমি কেন করছি, কী করছি সব তিনি দেখছেন। হাদিসে যেমন বর্ণিত হয়েছে
ان تعبد الله كأنك تراه فإن لم تكن تراه فإنه يراك
‘তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কোরো যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)
৪. রিয়ার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা। প্রদর্শন বা লোক দেখানো এটা আল্লাহর ক্রোধের কারণ।এই কথা সবসময় স্মরণ রাখা।
৫.রিয়ামুক্ত আমলের পুরস্কারের কথা স্মরণ করা এবং তা অর্জনের প্রত্যয় গ্রহণ করা।
৬.আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা যাওয়া, যেন তিনি অনুগ্রহ করে আমলটি কবুল করে নেন.
৭. রিয়ামুক্ত আমলের তাওফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন