আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৭৬৭৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নারীদের আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট কি কি অধিকার দিয়েছেন দলিল সহ জানতে চাই?? নারীরা কি পড়াশোনা, চাকরি করা, নিজে থেকে তালাক দেয়া, সম্পত্তির ভাগ, এসবের অধিকার পেয়েছে কিনা??? দলিল সহ জানতে চাই??? অনেকে বলেন আল্লাহর তাআলার নির্দিষ্ট করে নারীদের ৭টি অধিকার দিয়েছেন এটা ঠিক কিনা জানতে চাই।,

২৯ এপ্রিল, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





পবিত্র কুরআনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অধিকার নিশ্চিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নারীর অধিকার রক্ষায় পুরুষকেই নির্দেশনা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআন নারীদের যেসব সম্মান ও অধিকার দিয়েছে নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

বেঁচে থাকার অধিকার :
ইসলাম-পূর্ব নারীরা ছিল চরম অবহেলিত, ঘৃণিত। কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদ শোনামাত্র তাদের মুখ অন্ধকার ও মলিন হয়ে যেত। এমনকি কন্যাসন্তানকে জীবিত মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্মম ঘটনাও ঘটেছিল সে সময়। বর্তমানেও কোনো কোনো অঞ্চলে এ ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। মেয়েদের প্রতি তাদের এই ঘৃণ্য আচরণের নিন্দা জানিয়ে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার থেকে বাঁচতে সে নিজ সমপ্রদায় থেকে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে, তা কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

উপার্জিত সম্পদে মালিকানার অধিকার:
তৎকালীন সময়ে নারীদের অবস্থা সংক্ষেপে তুলে ধরে মোহাম্মদ রশিদ রেজা (রহ.) বলেন, সে সময় নারীদের জন্তু-জানোয়ারের মতো কেনাবেচা হতো। স্বামীরা তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত। মিরাস (উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি) তো পেতই না; উপরন্তু তারাও মিরাস হিসেবে বণ্টিত হতো। তারা অধিকারী ছিল না; ছিল অধীনস্থ। এমনকি স্বীয় উপার্জিত সম্পদে তাদের মালিকানা ছিল না, উপার্জন করে আনলেও স্বামীরা লুট করে নিত। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।’ (সুরা: নিসা, আয়াত : ৩২)

হালাল-হারামের বিধানে বৈষম্য পরিহার:
জাহিলি যুগের পুরুষরা মনে করত নারী হলো অনুভূতিহীন প্রাণীর মতো। যার নিজস্ব কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই; কিন্তু দায়িত্ব আছে অনেক। তার জন্য মতামত কিংবা কথা বলার অধিকার নেই। নির্বাক প্রাণীর মতো সর্বদাই মুখ বুঝে সহ্য করতে হবে তাদের। পুরুষের জন্য যা জায়েজ নারীর জন্য তা হারাম। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক এ আচরণ বর্তমানেও দেখা যায়। কুরআনুল কারিমে তাদের এ বিদ্বেষমূলক আচরণের বর্ণনা এভাবে এসেছে, ‘তারা বলে, এসব চতুষ্পদ জন্তুর পেটে যা আছে, তা বিশেষভাবে আমাদের পুরুষদের জন্য এবং আমাদের মহিলাদের জন্য হারাম। যদি তা মৃত হয়, তবে তার প্রাপক হিসেবে সবাই সমান। অচিরেই তিনি তাদেরকে তাদের বর্ণনার শাস্তি দেবেন। তিনি প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৩৯)


ইবাদত ও পুণ্যের ক্ষেত্রে নারীও সমান:
জাহিলি যুগের পুরুষরা মনে করত ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভিন্নতা আছে। তাদের ধারণা ছিল, পুরুষের ইবাদত আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়, এর বিনিময়ে আছে সওয়াব। তবে নারীরা এর ব্যতিক্রম, তাদের ইবাদতে সওয়াব নেই। মহান আল্লাহ তাদের এ ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক।’
(সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১৯৫)

পিতার সম্পত্তিতে নারীর অংশের অধিকার:
বর্তমানে নারীদের অবহেলিত একটি অধিকার হলো পিতার সম্পত্তিতে নারীর অংশ না দেওয়া বা ছলচাতুরি করে সম্পদের অংশের ভাগ থেকে তাকে দূরে রাখা। অথচ এই সম্পত্তিতে পুরুষ-নারীর উভয়েরই অংশ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশি। এ অংশ নির্ধারিত।’ (সুরা: নিসা, আয়াত : ৭)

মোহরের মাধ্যমে সম্মান প্রদান:
জাহেলি যুগে নারীদের মনে করা হতো সস্তা পণ্য। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ইসলাম তাদের দিয়েছে অনন্য সম্মান। কেউ যদি তাদের পেতে চায় তাহলে ওই ব্যক্তিকে সম্পদের কিছু অংশ ব্যয় করতে হবে তথা মোহর দিয়ে তাকে ব্যবহারের সুযোগ পাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)

নারীর সম্পদে হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ:
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমাণদাররা, বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকার গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদের আটক রেখো না, যাতে তোমরা তাদের যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও। আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছা করো এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তাহলে তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গুনাহর মাধ্যমে গ্রহণ করবে?’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯-২০)

তালাকপ্রাপ্তা নারীর খরচ বহন:
বিচ্ছেদের পর পুরুষকে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর মানসিক ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে তার ওপর ইহসান করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ এটা নারীর অধিকার। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেওয়া পরহেজগারদের ওপর কর্তব্য।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৪১)

দুগ্ধদানকারিণী মায়েদের পারিশ্রমিক:
বিচ্ছেদের পর দুগ্ধদানকারিণী মায়েদের দুধ পান করানোর যথাযথ পারিশ্রমিক দেওয়া—এটা তাদের প্রাপ্য অধিকার। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তারা তোমাদের সন্তানদের স্তন্যদান করে, তবে তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ করো, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

সার কথা, এমন কোনো সভ্যতা, ধর্ম বা আইন-কানুন নেই, যা নারীকে এতটা অধিকার দিতে পেরেছে। পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে ইসলামই তাদের অধিকার যথাযথ নিশ্চিত করেছে। ইসলামের মহত্ব ও সৌন্দর্য এখানেই।

মহান আল্লাহ আমাদের নারীদের যথাযথ অধিকার রক্ষার তাওফিক দান করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫৩৭৬

গালি দেওয়ার হুকুম


১৭ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৫৬২৪

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য


২২ নভেম্বর, ২০২২

মানিকগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

১৪৫৭২

চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ


২৩ মে, ২০২৪

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

২৬৯১৫

বিবাহিত মেয়ের ওপর অর্পিত মা-বাবার হক কী কী?


২৫ ডিসেম্বর, ২০২২

গাজীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy