সাহরির জন্য ডাকাডাকি
প্রশ্নঃ ১৬৫৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত আমার প্রশ্ন হল সেহরির সময় মাইকে ডাকাডাকি করা, মাহফিল গজল বাজানো কি জায়েজ দয়া করে জানালে উপকৃত হব যে দায়িত্ব পালন করে।
৩০ জানুয়ারী, ২০২৫
পটুয়াখালী
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
অন্য কারো ইবাদতে ক্ষতি হলে মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির করাই জায়েজ নয়। পরিস্কার হাদীসে ইরশাদ হয়েছেঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ، فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ، فَكَشَفَ السِّتْرَ، وَقَالَ: «أَلَا إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ، فَلَا يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلَا يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ»
হযরত আবু সাঈদ রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে “ইতিকাফ” করাকালীন সাহাবীদের উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করতে শুনে পর্দা উঠিয়ে বলেন, জেনে রাখ! তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের রবের সাথে গোপন আলাপে রত আছো। অতএব তোমরা [উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠের দ্বারা] একে অন্যকে কষ্ট দিও না, এবং তোমরা একে অন্যের চেয়ে উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করো না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৩৩২]
এ হাদীস পরিস্কার প্রমাণ করে অন্যের কষ্ট হলে মসজিদেই জোরে কিরাআত পড়া ঠিক নয়। সেখানে মসজিদের বাইরের লোকদের ইবাদতে বিগ্ন ঘটিয়ে অহেতুক গজল গাওয়া কিভাবে বৈধ হতে পারে?
এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল রয়েছে। রয়েছে সময় দেখার জন্য পর্যাপ্ত ঘড়ি। এলার্ম দেবার পদ্ধতি। সুতরাং মসজিদের মাইকে এলানের মাধ্যমে সেহরীর সময় বলে দেয়া অহেতুক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো কোনো মসজিদে তো রাত দুইটা থেকেই সেহরী রান্নার জন্য ডাকতে শোনো যায়! আসতাগফিরুল্লাহ! এটা কি কোনো মানুষের কাজ হতে পারে? যিনি রোজা রাখবেন তিনি কি করে সেহরির ইন্তেজাম করা ছাড়া রাতে ঘুমাবেন? তিনি তো রোজা রাখার তাড়নায় এমনিতেই ঘুমাতে পারবেন না! তাকে বারবার জাগাতে হবে? একই মসজিদের মাইক থেকে ১০-১২ বারও ডাকতে শোনা যায়। এটা নিতান্তই নিন্দনীয়।
মাঝে মাঝে সময় বলারও কিছুটা অবকাশ আছে বলা যায়, কিন্তু শেষ রাতে, হামদ-নাত, গজল ইত্যাদি পাঠ করে বারবার এলান করে মানুষকে ইবাদতে ডিষ্টার্ব করা কিছুতেই বৈধ হবে না।
এর মাধ্যমে কয়েকটি দোষণীয় কাজ করা হয়। যেমন-
১. অহেতুক এ কর্মের দ্বারা একাগ্রতার সাথে আমল করার মাঝে বিপত্তি সৃষ্টি হয়।
২. তাহাজ্জুদসহ নফল ইবাদতে খুশুখুজু নষ্ট হয়।
৩. একাগ্রচিত্তে দুআ করার মাঝে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
৪. অসুস্থ্য ও নাবালেগ সন্তানদের ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
উপরোক্ত কর্মের দ্বারা মুমিনদের কষ্ট দেয়া হয়। আর মুসলমানদের কষ্ট দেয়া হারাম। একাধিক আয়াতে ও হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। সুতরাং এহেন অহেতুক হারাম কাজ করা থেকে প্রতিটি মসজিদ কর্তৃপক্ষেরই বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য।
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا [٣٣:٥٨
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। [সূরা আহযাব-৫৮]
والله اعلم بالصواب
মুফতী মাহমুদুল হাসান
'মুসলিম বাংলা' ফাতওয়া বিভাগ।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১