আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে নববী নির্দেশনা

প্রশ্নঃ ১৩৯৬৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অামি একজন অবিবাহিত মেয়ে। বয়স ২৪।শহরে পড়াশোনা করেছি।যদিও অামি ওতো প্র্যাক্তিসিং মুসলিম পরিবারের না, তবে বাবা নিয়মিত নামাজ পড়েন,মাবোনও নামাজ পড়েন অালহামদুলিল্লাহ। তবে ইসলামের সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলাটা হয়না, বিশেষ করে পর্দাটা.. অামি ২০২০সালে দ্বীনের বুঝ পেয়েও হারায় এখন অালহামদুলিল্লাহ নিজেকে অাবার গুছিয়ে নিতে পারতেছি দ্বীনের পথে। অামার পূর্বের সমস্ত গুনাহের কথা মনে পড়ে এবং ভয় হয় অাল্লাহর শাস্তির। অামি না বুঝে অাল্লাহর জমিনে অনেক গুনাহ করে ফেলেছি এবং তওবা করার পরও বারবার একিই গুনাহে নিজেকে জড়িয়েছি। অামি এখন ক্ষমা চাই অাল্লাহর কাছে এবং নিজেকে বুঝতে পারি। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী বলে দুনিয়ার মোহে না জড়ানোর স্বার্থ্যে একজন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী চাই। অাল্লাহ কি অামায় ক্ষমা করবেন অার এতো গুনাহ করা সত্ত্বেও উনি কি অামাকে দ্বীনদার জীবনসঙ্গী নসিব করবেন??জাজাকাল্লাহ

২৮ জানুয়ারী, ২০২৫
সুবর্ণচর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতামাতাকে উদ্দেশ্য করে গুরুত্বের সাথে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাদের সন্তানদের সাবালক হয়ে গেলে বিবাহ করিয়ে দাও।

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه

তোমাদের মাঝে যার কোন (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোন পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)

সেই হিসেবে আপনার আরও বহু পূর্বেই বিবাহ হওয়া উচিত ছিল।
আল্লাহ তায়ালা রহমান রহিম। তিনি গুনাহ ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যখন বান্দা অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে ফিরে এসে তাওবাহ করে।
আপনি অতীতের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাইতে থাকুন। তিনি অবশ্যই আপনাকে মাফ করে দেবেন।
পাক পবিত্রতা, হালাল-হারাম, পর্দা-পুশিদা, নামাজ-রোজা, কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত ইত্যাদি আমলের প্রতি যত্নশীল হোন।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর এবং বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের সময় ন্যূনতম দু'রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে পড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনার দিলের নেক তামান্না পূরণের জন্য দোয়া করতে থাকুন। উত্তম জীবনসঙ্গী দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার অন্যতম সোপান। আল্লাহর কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী চাইতে থাকুন। তিনি অবশ্যই মিলিয়ে দেবেন।
আমরা আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন আপনার জন্য আপনার মনের মত উত্তম জীবনসঙ্গী মিলিয়ে দেন। যার সঙ্গে আপনার দুনিয়ার জীবন শেষে জান্নাতুল ফেরদাউসেও জীবন যাপন হবে।
---
দ্রুত সময়ে উত্তম পাত্র লাভের জন্য যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক ইস্তিগফার করুন। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
কোনো কোনো আলেম বলেন, যেসব যুবক-যুবতীদের বিবাহের বয়স অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, তাদের মধ্যে যুবকেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রত্যহ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে ৪০ বার হিসাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ইয়া ফাত্তাহু’ (يا فتّاح) -অর্থ হে উন্মুক্তকারী বা প্রস্তুতকারী-পড়লে দ্রত বিয়ে হয়।
কোনো কোনো আলেম বলেন, চল্লিশ দিন সূরা মুমতাহিনা তিলাওয়াত করলে দ্রত বিয়ে হয়।
আমলের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বৈধ পন্থায় পাত্রের সন্ধান ও চেষ্টা করুন।
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক ৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ : ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ

অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (তিরমিযী ১৬৫৫, নাসায়ী ৩২১৮)

এরপর দীনদার ও চরিত্রবান পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী ১০৮৪)

পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনার সকল পেরেশানি দূর করে দিন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন