আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৬৯৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সালামা ইবনু শাবীব, আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর, আহমদ ইবনু ইবরাহীম আদ দাওরাকী, হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী এবং আরো একধিক রাবী (রহঃ) ..... ওয়াইল ইবনু হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন আমি রাসূল কে দেখেছি, তিনি যখন সিজদা করছিলেন তখন দুই হাত রাখার আগে দুই হাটু রাখছিলেন। আর যখন সিজদা থেকে উঠছিলেন তখন দুই হাটুর আগে দুই হাত তুলছিলেন।[জামে আত তিরমিযী:২৬৮]এই হাদীসের সনদ কি সহিহ?,

১১ জানুয়ারী, ২০২২

শংকরচন্দ্র

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





হযরত ওয়াইল রা. বর্ণিত হাদীসটিকে ছয়জন শীর্ষ মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন।

১. ইবনে খুযায়মা,
২. ইবনে হিব্বান,
৩, হাকেম আবু আব্দুল্লাহ,
৪. ইবনুস সাকান,
৫. হাফেয যাহাবী,
৬. ইবনুল মুলাক্কিন,আল বাদরুল মুনীর গ্রন্থকার।
৫. হাফেয যাহাবী,

এছাড়া যারা এটিকে হাসান আখ্যা দিয়েছেন তারা হলেন :

৭. ইমাম তিরমিযী।
৮. মুহিয়ুস সুন্নাহ বাগাবী, তার ‘শারহুস সুন্নাহ’য় (নং ৬৪২)
৯. আবু বকর আল হাযেমী, তার আল ইতিবার গ্রন্থে,
১০. ইবনে সাইয়্যেদুন্নাস, তার তিরমিযীর ভাষ্যে।

এটিকে ছাবিত বা প্রমাণিত বলেছেন একজন। তিনি হলেন,

১১. ইমাম ইবনুল মুনযির।

এটিকে আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসের তুলনায় মজবুত আখ্যা দিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন,

১২. আবু সুলায়মান খাত্তাবী। তিনি বলেছেন, حديث وائل أثبت من هذا ওয়াইল রা. বর্ণিত হাদীসটি এটির (আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীসের) চেয়ে মজবুত।
১৩. ইবনুল জাওযী।
১৪. আমীর ইয়ামানী। তার বক্তব্য সরাসরি এমন না হলেও তার আলোচনা থেকে তাই বোঝা যায়। (দ্র. সুবুলুস সালাম, সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ)

এছাড়া ১৫. ইমাম নববী ও ১৬.যুরকানী দুজনের দৃষ্টিতে এটির সনদ জায়্যিদ বা উৎকৃষ্ট। কারণ তারা আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসটির সনদকে জায়্যিদ বা উৎকৃষ্ট বলেছেন। আবার ইমাম নববী রহ. বলেছেন, দুটি মতের একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না। তার এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে যুরকানী তার আলোচনা শেষ করেছেন। (দ্র. শারহুল মাওয়াহিব) বোঝা গেল, উভয় হাদীস তাদের দৃষ্টিতে সমমানের ছিল।

আরেকজন শীর্ষ মুহাদ্দিস হাফেজ জিয়া আলমাকদিসী। তিনি তার আল মুখতারা নামক হাদীসগ্রন্থে শরীক বর্ণিত একাধিক হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, إسناده حسن এর সনদ হাসান। আর একটি হাদীস সম্পর্কে বলেছেন, إسناده صحيح এর সনদ সহীহ। (দ্র. নং ১০৫৭, এটি ইয়াযীদ ইবনে হারুন শরীক থেকে বর্ণনা করেছেন।)

সেই সঙ্গে ইমাম তিরমিযী খাত্তাবী, বাগাবী, আমীর ইয়ামানী ও শাওকানী প্রমুখ যে বলেছেন, ‘এ হাদীস অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মত’ সে হিসাবে বলা চলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মতে এ হাদীসটি সহীহ বা হাসান মান সম্পন্ন।

উল্লেখ্য, সেজদায় যাবার সুন্নাহ সম্মত বিশুদ্ধ পদ্ধতি হল, প্রথমে দুই হাটু জমিনে রাখবে, তারপর হাত রাখবে।

হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার দলিল

১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন :

رَأَيْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا سَجَدَ وَضَعَ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ. رواه الأربعة وابن خزيمة وابن حبان وابن السكن وحسنه الترمذي.

অর্থ- আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি তিনি যখন সেজদায় যেতেন তখন হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতেন। আর যখন সেজদা থেকে উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৮৩৮; তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৬৮; নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১০৮৯; ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং ৮৮২; ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং ৬২৬; ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ১৯০৯ ও ইবনুস সাকান (দ্র. আছারুস সুনান,পৃ. ১৪৮) তিরমিযী বলেছেন এটি হাসান গারীব ।

২.

হযরত আনাস রা. বলেন,
عن أنس رض قال: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم انحط بالتكبير فسبقت ركبتاه يديه. رواه الدارقطني والحاكم والبيهقي وقال الحاكم: هو على شرطهما ولا أعلم له علة. وقال البيهقي : تفرد به العلاء بن إسماعيل وهو مجهول.

অর্থ: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলাম, তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় গেলেন এবং হাত রাখার আগে হাঁটু রাখলেন। দারাকুতনী, হাদীস ১৩০৪, হাকেম, হাদীস ৮২২ ও বায়হাকী, হাদীস ২৬৩২ ।

৩.

হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. বলেন,
كنا نضع اليدين قبل الركبتين فأمرنا أن نضع الركبتين قبل اليدين. أخرجه ابن خزيمة في صحيحه (٦٢٨) وفيه إبراهيم بن إسماعيل بن سلمة بن كهيل عن أبيه وهما ضعيفان.

অর্থ: আমরা হাঁটুর পূর্বে হাত রাখতাম। পরে আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হল, হাতের পূর্বে হাঁটু রাখবে। সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং ৬২৮। এর সনদ দুর্বল।

৪.

আসওয়াদ র. বলেন,
أن عمر كان يقع على ركبتيه . أخرجه ابن أبي شيبة (٢٧١٩)

অর্থ: হযরত উমর রা. আগে হাঁটু রেখেই সেজদায় যেতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৭১৯।

তাহাবী র. আলকামা ও আসওয়াদ র. দুজনের সূত্রেই হযরত উমর রা. এর এই আমল উল্লেখ করেছেন। সেখানে একথাও আছে, তিনি হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখতেন। এর সনদ সহীহ।

৫.

নাফে র. হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেন,
كان يضع ركبتيه إذا سجد قبل يديه ويرفع يديه إذا رفع قبل ركبتيه أخرجه ابن أبي شيبة (٢٧٢٠)

অর্থ: তিনি যখন সেজদায় যেতেন, তখন হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখতেন। আর যখন সেজদা থেকে উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত ওঠাতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৭২০। এর সনদ হাসান।

৬.

ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেছেন,
حُفِظَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: ” أَنَّ رُكْبَتَيْهِ، كَانَتَا تَقَعَانِ إِلَى الْأَرْضِ قَبْلَ يَدَيْهِ ”

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সম্পর্কে স্মরণ রাখা হয়েছে যে, তাঁর হাতের পূর্বে হাঁটু জমিনে লাগত। (১৫২৯)

এর সনদে হাজ্জাজ ইবনে আরতাত আছেন। তার বিশ্বস্ততা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।

তবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর শিষ্যগণের তদনুরূপ আমল প্রমাণ করে যে, তিনিও তাই করতেন। ইবনে আবী শায়বা তার মুসান্নাফ গ্রন্থে আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন,
كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ إذَا انْحَطُّوا لِلسُّجُودِ وَقَعَتْ رُكَبُهُمْ قَبْلَ أَيْدِيهِمْ

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা.এর শিষ্যগণ যখন সেজদা করতেন, তখন তাদের হাতের পূর্বে হাঁটু পড়ত। (২৭১১)

সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের আমল :

ইমাম তিরমিযী র. হযরত ওয়াইল রা. এর হাদীসটি উল্লেখপূর্বক বলেন,
والعمل عليه عند أكثر أهل العلم يرون أن يضع الرجل ركبتيه قبل يديه وإذا نهض رفع يديه قبل ركبتيه.

অর্থাৎ এ হাদীস অনুসারে অধিকাংশ আলেমের আমল। তারা মনে করেন হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখবে। এবং হাঁটুর পূর্বে হাত ওঠাবে।

ইবনে হিব্বানও এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তিনি হাদীসটির উপর এই অনুচ্ছেদ-শিরোনাম দিয়েছেন,
باب ذكر ما يستحب للمصلي وضع الركبتين على الأرض عند السجود قبل الكفين

অর্থাৎ অনুচ্ছেদ-মুসল্লির জন্য সেজদার সময় যমীনে হাত রাখার আগে হাঁটু রাখা মুস্তাহাব হওয়ার আলোচনা সম্পর্কে। এমনিভাবে তার উস্তাদ ইবনে খুযায়মা র.ও এই হাদীস অনুসারে আমল করাকে সুন্নত বলেছেন। তিনি এই হাদীসকে রহিতকারী (ناسخ) এবং হাত আগে রাখার হাদীসকে রহিত (منسوخ) আখ্যা দিয়েছেন।

ইবনুল মুনযির র. ‘আলআওসাত’ গ্রন্থে লিখেছেন,
وقد تكلم في حديث ابن عمر ، قيل إن الذي يصح من حديث ابن عمر موقوف وحديث وائل بن حجر ثابت وبه نقول (٣/٣٢٧)

অর্থাৎ ইবনে উমরের হাদীসটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, সহীহ কথা হলো এটি ইবনে উমরের নিজস্ব আমল। আর ওয়াইল ইবনে হুজর রা. এর হাদীসটি প্রমাণিত। আমাদের মতও অনুরূপ।
ইবনে বাযের ফতোয়া

সৌদি আরবের প্রধান মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায রহ. বলেছেন,
والأفضل أن يقدم ركبتيه قبل يديه عند انحطاطه للسجود هذا هو الأفضل ،

অর্থাৎ সেজদায় যাওয়ার সময় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখাই উত্তম। (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৩৩৬

ভালোভাবে ধৌত করার পরও নাপাকির দাগ কাপড়ে লেগে থাকলে সে কাপড়ে নামায হবে কি?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Kaliganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৬৬৫১৬

জুমার নামাজে ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয়


৫ জুলাই, ২০২৪

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬২৫১৬

নামাযীর বরাবর সামনে থেকে সরে যাওয়ার হুকুম।


২৮ মে, ২০২৪

Panchapukur

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৫০৬৬৪

আসরের পর কাজা নামাজ পড়ার বিধান


৩ জানুয়ারী, ২০২৪

কালিয়াকৈর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy