আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মিলনে অস্থায়ী প্রোটেকশন গ্রহন

প্রশ্নঃ ১২৪৮০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্নটি হচ্ছে... আমার বয়স ১৯ মাদ্রাসায় কাফিয়া জামাতে পড়াশুনা করছি।বর্তমান এ একটি অস্থায়ী চাকরি করছি যেটার বেতন এর পরিমান খুবই কম যেটার সম্পুর্ন টা আমার ফ্যামিলির পিছনে চলে যায় আর যেকোনো সময় চাকরি টি চলে যেতে পারে এ ছাড়া আর কোনো আর্থিক ইনকাম আমার নেই। সদ্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।এমতাবস্থায় আমি কি আমার স্ত্রীর সাথে মেলামেশার জন্য অস্থায়ী কোনো প্রটেকশন (কনডম) ব্যবহার করতে পারবো?,

১৯ জুন, ২০২৪

সাভার

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত ভাই!
আমি সন্তানদের খাওয়াব কীভাবে, পরাব কীভাবে, এই চিন্তা থেকে যদি কেউ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করেন, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ হারাম। কারণ রিজিকের মালিক হলেন আল্লাহ রাব্বুলআলামিন, রিজিকদাতা আল্লাহতায়ালা।

কিন্তু আমাদের সম্মানিত ওলামায়ে কেরামগণ বলেছেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ শুধু দুটি অবস্থায় করা যাবে। প্রথমত, এই মুহূর্তে যদি স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসে, তাহলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে, অর্থাৎ শারীরিক কারণে এই অবস্থায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আগে যে সন্তানটি হয়েছে তাঁর অধিকার রয়েছে দুই বছর বুকের দুধ পান করার। ‘মায়েরা সন্তানদের দুধ পান করাবে দুই বছর’। এই দুই বছরের মধ্যে যদি মা গর্ভধারণ করেন, তাহলে আগের সন্তান অসুস্থ হয়ে যেতে পারে অথবা তাঁর অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

এই দুটি কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, এই দুই কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কিন্তু খাওয়ানো, পরানোর কথা ভেবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েজ নেই। এটি হারাম কাজ। ইসলামে যৌক্তিক কারণে, শরিয়া সম্মত কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণের অবকাশ রয়েছে।
*************************

মৌলিকভাবে এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে—

এক. স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি। এ পদ্ধতি কেবল নিম্মোক্ত ক্ষেত্রে বৈধ হবে।

—দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয়।

— কোন কারণে মহিলার বাচ্চা লালন-পালনের সামর্থ না থাকলে।

—মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে।

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

তিন. গর্ভপাত ঘটানো (Abortion)।এটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বহু পুরাতন একটি পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণের (Contraceptives) উপায়-উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও আজ অবধি দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতিও চালু আছে। এ পদ্ধতিও নাজায়েয। তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, (রূহ আসার পর) গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এটা الوأد (সূক্ষ সমাহিত) এর অন্তরভুক্ত; যে ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ যখন(কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে…….’ (তাকবীর ৮-৯)।ফিকহী মাসায়েল সূত্রে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/২১৭ফাতাওয়া দারুল ইফতা; মিশর। তাং-১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ ইং)

উক্ত আলোচনা থেকে আশা করি এটা পরিস্কার হয়েছে যে, ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল পদ্ধতি নয়;বরং বিশষ পদ্ধতির এবং সাধারণ অবস্থাতে নয়; বরং বিশেষ অবস্থাতে এর অনুমোদন দেয়। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)

সুতরাং খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে, দৈহিক সৌন্দর্য বা ফিগার ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে ,কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার ভয়ে (যাতে পরবর্তীতে এদের বিয়ে শাদীর ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়),অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করে পরিবার পরিকল্পনার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষত অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেছেন, ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. ‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)অন্যত্র তিনি বলেন, الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . “শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল যদিও সন্তান হত্যার পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ। সুতরাং এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই। আল্লাহ সহীহ সমঝ দান করুন । আমীন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৪৭৯৪

স্ত্রীর স্তন মুখে নেওয়া জায়েজ?


১৪ জুন, ২০২৩

খুলনা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৪৮৬১০

তুই যদি খালেকের বাড়ী যাস তাহলে তুই তালাক হয়ে যাবি


২৪ মে, ২০২৪

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী হিফজুর রহমান

২৯১৭৬

স্ত্রীর সাথে ভিডিও কলে কথা বলে তৃপ্ত হওয়া হওয়া যাবে কি?


১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

Maharashtra ৪০০০০৩

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৮৯০৭

স্ত্রীর নামের সঙ্গে স্বামীর নাম-পদবি যোগ করা যাবে কি?


৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

আশুগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy