আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কাজা নামাজ আদায়ের সময়

প্রশ্নঃ ১১৬০৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, যোহরের ক্বাযা আদায় করার সঠিক সময় ও নিয়ম জানতে চাই। পাশাপাশি ক্বাযা নামাজ আদায়ের মৌলিক ও বুনিয়াদি নিয়ম জানতে চাই। জাযাকাল্লাহ। ধন্যবাদ মুসলিম বাংলা টিমকে।,

২০ জানুয়ারী, ২০২৫

Dhaka

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


[১] সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ব্যতীত যে কোনো সময় কাজা নামাজ পড়া যাবে। (আদদুররুল মুখতার ২/৫২৪, মাকতাবা যাকারিয়া দেওবন্দ)

কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে, উকবা বিন আমের জুহানী রাযি. বলেন,

ثَلاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ

তিনটি সময়ে রাসুল ﷺ আমাদেরকে নামাজ পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়। (সহীহ মুসলিম ১৩৭৩)

[২] এক- প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মনে রাখতে হবে, শরিয়তে নামায কাযা করার বিধান থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করা কবিরা গুনাহ। হাদিস শরিফে এসেছে,

عن أم أيمن أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا تترك الصلاة متعمدا فإنه من ترك الصلاة متعمدا فقد برئت منه ذمة الله ورسوله

উম্মে আইমান রাযি.হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন,তোমরা ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করো না। কেননা যে ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করে,আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার থেকে জিম্মা মুক্ত হয়ে যান। (মুসনাদে আহমদ,হাদিস নং ২৭৩৬৪)

দুই- তবে কোনো ব্যক্তি কোনো কারণে কোনো ওয়াক্তের নামায আদায় না করলে তা কাযা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম মূলনীতি হলো, যখনই কাযা নামাযের কথা মনে পড়বে তখনই পড়ে নিবে। এ সম্পর্কে হাদিসের বাণী-
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا، لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلاَّ ذَلِكَ فإن الله يقول {‏وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي‏}‏
আনাস ইবনু মালিক রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন, যদি কেউ কোনো নামাযের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে নামাযের অন্য কোনো কাফ্ফারা নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, {‏وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي‏} আমাকে স্মরণের উদ্দেশে নামায কায়েম কর। (মুসলিম, হাদিস নং ৬৮৪)
দ্বিতীয় মূলনীতি হলো, ছুটে যাওয়া নামায পরবর্তী নামায পড়ার আগে পড়ে নিবে। অর্থাৎ ফজর ছুটে গেলে ঘুম থেকে উঠার পরপরই অথবা যোহরের আগে, যোহর ছুটে গেলে আসরের আগে, আসর ছুটে গেলে মাগরিবের আগে, মাগরিব ছুটে গেলে এশার আগে এভাবে নামায পড়ে নিবে। এ প্রসঙ্গে হাদীসের বাণী-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، جَاءَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَجَعَلَ يَسُبُّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا كِدْتُ أُصَلِّي الْعَصْرَ حَتَّى كَادَتِ الشَّمْسُ تَغْرُبُ‏.‏ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ وَاللَّهِ مَا صَلَّيْتُهَا ‏”‏‏.‏ فَقُمْنَا إِلَى بُطْحَانَ، فَتَوَضَّأَ لِلصَّلاَةِ، وَتَوَضَّأْنَا لَهَا فَصَلَّى الْعَصْرَ بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَهَا الْمَغْرِبَ‏.‏
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাযি. হতে বর্ণিত, খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ওমর ইবনু খাত্তাব রাযি. এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভৎর্সনা করতে লাগলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখনও আসরের নামায আদায় করতে পারি নি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায় অবস্থা। রাসূল ﷺ বললেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি নামাযের জন্য উযূ করলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে আসরের নামায আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের নামায আদায় করেন। (বুখারী, হাদিস নং ৫৯৬)

তৃতীয় মূলনীতি হল, যদি কারো পাঁচ ওয়াক্তের বেশী কাযা হয়ে যায় – সেটা কয়েক দিন কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে-তাহলে তার উচিত কাযা নামাযগুলো একটা অনুমান করে কোন নামায কত ওয়াক্ত কাযা হয়েছে তা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর একে একে তা আদায় করবে। যত দ্রুত এবং যত বেশি সম্ভব এই কাযাগুলো আদায় করতে হবে। প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাযা আদায় করলেও ভালো। এ ছাড়া সুবিধামতো সময়ে যখন যে নামাযের কাযা আদায়ের সুযোগ হয় আদায় করা যাবে। তবে প্রতি ওয়াক্তে ওই ওয়াক্তের কাযা আদায় করলে হিসাব রাখা সহজ। এভাবে আদায়কৃত নামায আনুমানিক হিসাব থেকে কমতে থাকবে। এ নিয়মে ছুটে যাওয়া নামায আদায় হয়ে গেলে ভালো। নতুবা জীবনের শেষ মুহূর্তে অবশিষ্ট নামাযের ফিদয়া দেয়ার ওসিয়ত করতে হবে।

এ অবস্থায় কাযা নামায আদায়ের নিয়ম এই যে, সে যে ওয়াক্তের কাযা আদায় করতে চাইবে সে ওয়াক্তের নিয়ত করবে যে, অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামায আদায় করছি। যেমন- কাযা হওয়া নামাযের মধ্যে ফজরের নামাযের কাযা আদায় করতে চাই। তাহলে নিয়ত করবে, আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা আছে, তার সবচেয়ে প্রথম অথবা শেষটা আদায় করছি। এভাবে আদায় করবে যাতে সকল কাযা নামায পুরো হয়ে যায়।

এভাবে বাকি নামায আদায় করবে। যোহর, আছর, মাগরিব, ইশাও এভাবে আদায় করবে।

উল্লেখ্য, সুন্নাত নামাযের কাযা করা যায় না, কেবল ফরজ ও বেতরের নামাযের কাযা করার সুযোগ থাকে। (আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৬৮; ফাতাওয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৩২)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৩৩১৯

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো মৃত লোকের নামাজের কাফফারা কিভাবে দিতে হয়?

৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

কিশোরগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৫০৬৬৪

আসরের পর কাজা নামাজ পড়ার বিধান


৩ জানুয়ারী, ২০২৪

কালিয়াকৈর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২০৭৮৯

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অতীতের প্রায় ৩ -৪ বছরের নামাজের ব্যাপারে কি করতে হবে

২৫ জুলাই, ২০২২

নাটোর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২৫০১২

বিতর নামাযের ওয়াক্ত


২৪ নভেম্বর, ২০২২

পঞ্চগড়

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy