আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৫২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখলুল মসজিদ নামাজ পড়া কি জায়েজ হবে? হানাফি মাযহাব অনুযায়ী।,

১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

ময়মনসিংহ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





দুখুলুল মসজিদ ও তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ পড়ার নিয়ম

---===---
দুখুলুল মসজিদ নামাজ আদায় করার নিয়ম, ফযীলত ও মাসায়েল

ওযুর সহিত মাসজিদে প্রবেশ করিলে, কারো সাথে কথাবার্তা না বলে বসার পূর্বে দুই রাক'আত নামাজ পড়া সুন্নাত। ইহাকে 'দুখুলুল মাসজিদ' বলে। এই নামাজদ্বয় জুম'আর দিনের জন্যে খাছ নয়। সবদিনেই পড়া যায় এবং সবাই পড়িতে পারে। সহীহ হাদীসে এই নামাজের অনেক ফযীলতের কথা উল্লেখ হয়েছে।

'তাহিয়্যাতুল মসজিদ' নামাজের নিয়তঃ
বাংলা নিয়তঃ
"আমি দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল মসজিদের' নামাজ আদায় করছি।'
নোটঃ
আরবীতে কিংবা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, বরং যে কোনো ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

নামাজ পড়ার নিয়ম সাধারণ সুন্নাত ও নফল নামাজের ন্যায় যেকোন সূরা-কিরাত দ্বারা ' তাহিয়্যাতুল মাসজিদ'-এর নামাজ আদায় করা যায়। উভয় রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং আখেরী বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

'তাহিয়্যাতুল মসজিদ' সম্পর্কে কতিপয় মাসায়েল
কেউ কেউ মনে করেন যে, মাসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে একটু বসে তারপর উঠে এই নামাজ পড়তে হয়। কিন্তু তাদের এই ধারণা ঠিক নয়। কেননা নিয়ম হলো বসার পূর্বেই আদায় করা। এর দ্বারা সাওয়াবও বেশী হয়। তবে কিছুক্ষণ বসার পরেও পড়া যায়। কিন্তু এর দ্বারা সাওয়াব কম হয়।

সময় কম হলে করণীয়

যদি কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে দেখে যে, সময় বেশী নেই। এখনর "তাহিয়্যাতুল মসজিদ" পড়তে গেলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়া যাবে না কিংবা ফরয নামাজ ছুটে যাবে, তাহলে সে তখন "তাহিয়্যাতুল মসজিদ" পড়বে না; বরং সুন্নাত বা ফরজ নামাজ আদায় করবে এবং সুন্নাত বা ফরয নামাজের মধ্যেই "তাহিয়্যাতুল মসজিদ" - এর নিয়ত করবে। ইনশাআল্লাহ, এর দ্বারা সুন্নাত এবং ফরয আদায়ের সাথে সাথে "তাহিয়্যাতুল মসজিদ" এর সাওয়াবও লাভ হবে।(আহকামে যিন্দেগী)

তাহিয়্যাতুল ওযু ও দুখুলুল মসজিদ এক সাথে আদায় করাঃ

ওযু করার পর মাসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাআত নফল নামজ আদায় করার দ্বারা তাহিয়্যাতুল ওযু ও দুখুলুল মসজিদ উভয়টি এক সাথে আদায় হয়ে যাবে। কোন কোন কিতাবে উল্লেখ্য আছ যে, মাসজিদে প্রবেশ করে যেকোন নামাজ আদায় করলেই 'তাহিয়্যাতুল মসজিদ' আদায় হয়ে যাবে। অনুরুপভাবে ওযু করার পর ওযুর পানি শুষ্ক হওয়ার পূর্বে কোন নামাজ আদায় করলেই 'তাহিয়্যাতুল ওযু' আদায় হয়ে যাবে।(আহসানুল ফাতওয়া ৩:৪৮১ পৃ ; রাদ্দুল মুহতার ১:৫০২ পৃ.)

'তাহিয়্যাতুল মসজিদ' সম্পর্কে কতিপয় হাদীস
' তাহিয়্যাতুল মসজিদ' -এর ফযীলতঃ

হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওযু করে, অতঃপর দুই রাকাআত নামাজ এমনভাবে আদায় করে যে, নামাজের মধ্যে কোন ভূল করে না। অর্থাৎ খুশু -খুজুর সাথে নামাজ আদায় করে, তাহলে তার পেছনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহীহ আবূ দাউদ, হাদীস নং ৯০৫)

মাসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু'রাকআত নামাজ পড়বে

দুখুলুল মসজিদ নামাজমসজিদে প্রবেশ করে বসবার পূর্বেই এ নামাজ পড়া হয় : হযরত আবু কাতাদা (রাজিঃ) থেকে বার্ণিত আছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বসবার পূর্বেই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া উচিত। (বুখারী শরীফ, ১ম খ-, ৬৩ পৃষ্ঠা)

হযরত ওসমান (রাজি.) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে এক নামাজ থেকে অন্য নামাজ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার সগীরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম শরীফ, ১ম খ-, ১২০ পৃষ্ঠা)
এই নামাজের সময় মাকরুহ সময় ছাড়া মসজিদে প্রবেশ করে এ নামাজ যে কোনো সময় পড়া যায়।


তাহিয়্যাতুল ওযু' এর নামাজ আদায় করার নিয়ম, ফযীলত ও মাসায়েল

তাহিয়্যাতুল ওযু-এর পরিচয়
ওযু করার পর কারো সাথে কথাবার্তা না বলে, ওযুর অঙ্গগুলো শুকানোর পূর্বেই দুই রাকাত নামাজ পড়া মোস্তাহাব। ইসলামী পরিভাষায় এই নামাজকে "তাহিয়্যাতুল ওযু" বলে। সহীহ বুখারীতে এই নামাজের অনেক ফযীলতের কথা বলা হয়েছে। এমনকি এক হাদীসে নিয়মিতভাবে এই নামাজ আদায়কারীর জন্য বেহেশতের সু-সংবাদ প্রদান করা হয়েছে। যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তবে দুই রাক'আত নামাজ পড়া। ইহাকে তাহিয়্যাতুল ওজুর নামাজ বলে।

তাহিয়্যাতুল ওযু' নামাজের নিয়তঃ
বাংলা নিয়তঃ
"আমি দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল ওযু' নামাজ আদায় করছি।'
নোটঃ
আরবীতে কিংবা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, বরং যে কোনো ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

নামাজ পড়ার নিয়ম

সাধারণ সুন্নাত ও নফল নামাজের ন্যায় যেকোন সূরা-কিরাত দ্বারা ' তাহিয়্যাতুল ওযু' আদায় করা যায়। উভয় রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং আখেরী বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

ওযুর পর দুই রাকাআত নামাজ পড়লে জান্নাত ওয়াজিব
তাহিয়্যাতুল ওজুর নামাজওজু করার পর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া এ সম্পর্কে হযরত ওকবা ইবনে আমের জুহানী (রাজি.) থেকে বর্ণিত আছে নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওজু করার পর একাগ্রতা ও আল্লাহর দিকে মনকে ধাবিত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব করে দেবেন। (নাসায়ী শরীফ, ১ম খ-, ৩৬ পৃষ্ঠা)। এই নামাজের সময়নামাজের নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোনো সময় ওজু করার পর এ নামাজ পড়া যায়। অর্থাৎ তিন সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। (১) সূর্য উদয়ের সময়, (২) ঠিক দুপুরে, (৩) সূর্য ডুবার সময়। (তিরমিযী শরীফ, ২য় খ-, ৩৪১ পৃষ্ঠা)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৮৫৮৩

যেসব পাপ নেক আমল নষ্ট করে দেয়


১৬ আগস্ট, ২০২৩

Laribari

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

২৫৫০০

সালাতুত তাসবিহ আদায় করার সঠিক নিয়ম


২০ নভেম্বর, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৫৪৬৬৮

মুক্তাদির দোয়ায়ে কুনুত পূর্ণ হওয়ার আগে ইমাম রুকুতে চলে গেলে করণীয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

V২৯৪+XQ৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

২৪৭৭৭

ফজর নামাজের আগে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়া যাবে কি?


৯ নভেম্বর, ২০২২

ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭৪৩৩৩০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy