আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মুমিন নারীর জীবন

প্রশ্নঃ ১১২২৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আশা করি ভালো আছেন।আমার প্রশ্ন হলো ইসলামের পথে জিহাদ, ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, এগুলো পুরুষের উপর হুকুম এসেছে, নারীদের উপরেও এসেছে but এই টাইম এ নারীদের করণীয় কী? ইসলাম প্রচার করতে আমাদের মেয়েদের করণীয় কী?আর একটা কথা- আমার বয়স 12,আমি জেনারেল একজন ছাত্রী।আমি কিভাবে কুরআনের দাওয়াত, ইসলামের দাওয়াত দিতে পারবো? আমাকে কিছু টিপস দিবেন? jazakallah Khairan 🎀,

৪ জানুয়ারী, ২০২৪

চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আপাতত আপনি শরিয়তের বিধানগুলো পুরোপুরি নিজের লাইফে অ্যাপ্লাই করতে চেষ্টা করুন। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এহতেমাম, নিয়মিত জিকির আজকার শতভাগ পর্দা পালনে চেষ্টাসহ দ্বিনী ইলম শিখতে থাকুন। আপনার পরিবারের লোকদের মাঝে দ্বীনের প্রচার, তালিম ইত্যাদী করতে পারেন। সাথে সাথে পড়াশোনায় মনোযেগী হোন। সময় নষ্ট, অহেতুক গল্পগুজব মোবাইলের অপব্যবহার, ইন্টারনেটের অপ্রয়োজনীয় ব্রাউজিং ইত্যাদী পরিহার করুন। একজন মুমিন নারীর জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের প্রবন্ধটি সময় নিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করুন।

মুমিন নারীর জীবন
মাওলানা সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.

[বক্ষমাণ লেখাটি হযরতের একটি বয়ান। বয়ানের আন্দাযে মনে হয়, পশ্চিমের কোনো রাষ্ট্রে দ্বীনদার মুসলিম নারীদের উদ্দেশ্য করে হযরত আলোচনা রাখেন। দাওয়াত ও তাবলীগের নিসবতে যাদের জমায়েত হয়। সাবলীলভাবে দিলের দরদ দিয়ে কথাগুলো বলে যান হযরত। জাগিয়ে তোলেন ব্যক্তির মুসলিম সত্তাকে। এতে বিশেষ রাহনুমায়ী রয়েছে প্রবাসে অবস্থানরত মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য; বিশেষকরে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য। নিজেদের দ্বীনদারীর হেফাযত এবং পরবর্তী প্রজন্মের ঈমানী সুরক্ষা বাকি রাখতে বয়ানটিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।

যেহেতু হযরতের মূল সম্বোধন দাওয়াত ও তাবলীগের নিসবতে সমবেত মুসলিম মা-বোনদের প্রতি, তাই কোথাও কোথাও স্পষ্টভাবেই তাবলীগের কথা বলা হয়েছে। আশা করি, স্বদেশে-প্রবাসে যে যেখানেই আছেন, দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে সম্পর্কিত হন বা না হন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই বয়ানটি পড়ে উপকৃত হবেন। মাসিক আলকাউসারে বাংলাভাষী পাঠকের খেদমতে উর্দু বয়ানটির বঙ্গানুবাদ পেশ করা হল।]



আল্লাহ তাআলার শোকর, তিনি আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন। মুসলিম ঘরে আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। আমাদেরকে ঈমানের দৌলত নসীব করেছেন। আল্লাহ তাআলার আরো শোকর, সম্ভ্রান্ত পরিবারে আমরা চোখ মেলেছি। দ্বীনী পরিবেশে আমাদের প্রতিপালন হয়েছে। আল্লাহ তাআলার অনেক বড় ইহসান, পুরুষদের মাধ্যমে তাবলীগের কাজ আরম্ভ করেছেন আর আজ এর খায়ের ও বরকত আমাদের ঘর পর্যন্ত পেঁৗছে গেছে; ঘরের মেয়েরা উপকৃত হচ্ছেন। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে আজ আমাদের ঘরের মেয়েরা-মায়েরা দ্বীনী-তাবলীগী কাজ করে যাচ্ছেন। এ ওসিলায় আমরা আজ কিছু ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছি। হালাল-হারাম, ভালো-খারাপ, জায়েয-নাজায়েয এবং আল্লাহ কোন্ কাজে খুশি হন আর কোন্ কাজে নারাজ হনÑ এগুলোর কিছু উপলব্ধি আমাদের মাঝে জাগ্রত হতে শুরু করেছে। এখন এ ধরনের জিজ্ঞাসা সামনে আসছেÑ জীবনের কোন্ কোন্ বিষয়গুলো আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় আর কোন্ বিষয়গুলো তাঁর অপছন্দের। আমাদের জীবন যাপন কেমন হওয়া উচিত? পারিবারিক জীবন কেমন হবে? ব্যক্তিগত জীবন কেমন হবে? পোশাক আশাক কোন্গুলো শরীয়ত সমর্থিত আর কোন্গুলো নয়? এ ধরনের বিষয়গুলো এখন পারিবারিকভাবেই চর্চায় আসছে। দ্বীনী কিতাবাদি পড়ার মানসিকতা এবং আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছেÑ আলহামদু লিল্লাহ।

আমাদের হিন্দুস্তান-পাকিস্তানে তো আল্লাহর মেহেরবানীতে এ কাজ অনেকটা অগ্রসরমান। সেখানে দ্বীনী সচেতনতা জাগ্রত হচ্ছে। এখানে যে পরিবারগুলো আগে থেকেই অবস্থান করছে তাদের ব্যাপারে তো আমার জানা-শোনা নেই। কিন্তু এখন যে পরিবারগুলো আসছে, বিশেষ করে গুজরাটি যারা, তাদের মধ্যে এ অনুভূতি প্রশংসনীয়। গুজরাটের সূরত, ভ্রম্নচ প্রভৃতি এলাকার ভাইদের মধ্যে তাবলীগী কাজের বেশ প্রভাব লক্ষণীয়। তাদের নারীদের মাঝেও মাশাআল্লাহ দ্বীনী জযবা পয়দা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে এখানে ভালোই কল্যাণ ও বরকত নজরে পড়ছে।

পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি দর্শন : খাও দাও মাস্তি করো

বোনেরা আমার! আপনারা এ এলাকায় বসবাস করছেন। এখানে কেউ হয়তো এসেছেন স্বামীর হাত ধরে। কেউবা ভাইয়ের সাথে। আবার কেউ বাবা-মা’র সাথে এখানে চলে এসেছেন। দীর্ঘদিন থেকে এখানকার কালচার হলÑ খাও দাও ফুর্তি করো। আল্লাহর ভয়, হায়া-শরম, সভ্যতা ও সাধুতার চর্চা এখানে নেই। তাদের আচরণ-উচ্চারণে একটাই কথাÑ খাও দাও ফুর্তি করো। এখানে জীবনের একটাই দর্শনÑ আমোদ-প্রমোদে মেতে থাকো। আনন্দ-উল্লাস ও মৌজ-মাস্তিতে বঁুদ হয়ে থাকাই তাদের নীতি। যে ব্যক্তি এভাবে কোনো কিছুতে বঁুদ হয়ে থাকে তার মাঝে এ অনুভূতি ভুলেও জাগ্রত হবে নাÑ একদিন আমাকে মরতে হবে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এখানে যে আমোদ-প্রমোদে মেতে আছি, একদিন এর জবাব আমাকে দিতে হবে। আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের পাই পাই হিসাব দিতে হবে। এ বাস্তব সত্য কথাগুলো এদের মন-মগজ থেকে এভাবেই বিস্মৃত হয়েছে যে, মনে করিয়ে দেওয়ার পরও তারা মনে করতে পারে না, তাদের সে অনুভূতি জাগ্রত হয় না!

এখানে তাদের জীবন-নীতিই এরকম, মানুষ আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকবে। মৃত্যুকে ভুলে থাকবে। আখেরাত ভুলে থাকবে। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভুলে থাকবে। জীবনের একটাই লক্ষ্য, ভালো খাব, ভালো পরব, উন্নত জীবন যাপন করব। মোটাতাজা শরীর বানাবো, যৌবনের রঙ উড়াব। মৌজ-মাস্তি করব। ব্যস এর নামই জীবন!

মুমিনের জীবন-দর্শন কী?

আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহ, যেই পবিত্র দ্বীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক, যেই ভূখণ্ডের সাথে আমাদের সম্পর্ক, যে মহান ব্যক্তিবর্গের সাথে আমাদের সম্পর্ক তাদের জীবনদর্শন আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় না। আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছেÑ ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়া তো কাফেরের জন্য জান্নাত আর মুসলমানদের জন্য এটা কয়েদখানা। কয়েদখানায় তো কেউ ফুর্তি করে না। উল্লাস করে না। আমোদে থাকে না। সেখানে তো কারো স্বাধীনতা থাকে না। মনে চাইল কোথাও ঘুরতে চলে গেল। কিছু খেতে ইচ্ছা করল খেয়ে ফেলল। মনে যা চাইল ব্যস করে ফেলল। কোনো বাধা নিষেধ নেই, এগুলো তো জেলখানায় চলে না। জেলখানায় বিচরণ করবে, একটি নিয়মের অধীনে বিচরণ করতে হবে। খাবার-দাবার গ্রহণ করবে, সময়মতো পরিমাণমতো; এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কখনো কিছু খেতে মনে চায়, কিন্তু পাওয়া যায় অন্যটা। এক খাবার পছন্দ, কিন্তু দেওয়া হয় আরেক খাবার। কখনো কিছু পরিধান করতে মনে চায়, কখনো কোথাও ঘুরতে মনে চায়, কখনো কাউকে দেখতে মনে চায়, কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারণ তুমি তো চার দেয়ালে আবদ্ধ। এটা দুনিয়া। এটা মুমিনের জন্য জেলখানা।

এই একই দুনিয়া। কাফেরের জন্য কী? কাফেরের জন্য এটা মহা উল্লাসের কেন্দ্র। বিরাট সুসজ্জিত পার্ক। মনোরম উদ্যান। অবারিত সুযোগ সুবিধা। এখানে যা ইচ্ছে তাই করো। যা চাও খাও। যেভাবে খুশি ঘুরে বেড়াও। হাসি-তামাশায় মত্ত থাকো। আনন্দ-ফুর্তিতে গা ভাসিয়ে দাও। গতরে বসন থাকুক, না থাকুক, কোনো পরোয়া নেই। পশুর মতো জীবন হোক, কোনো সমস্যা নেই। কেউ বলা-কওয়ার নেই। এজন্যই দুনিয়া কাফেরের জন্য জান্নাত আর মুমিনের জন্য কয়েদখানা।

দুনিয়াতে তুমি এভাবে থাকো যেন তুমি প্রবাসে

মুমিনের জীবন কেমন হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

كُنْ فِي الدّنْيَا كَأَنّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ.

তুমি দুনিয়ায় থাকো ভিনদেশীর মতো, অথবা পথিকজনের মত। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪১৬

মুসাফির পথ চলছে। কোথাও তার মন বসছে না। কোথাও নিজের জন্য ঘর তৈরি করছে না। কোনো স্টেশনেই সে থামছে না। সে গন্তব্য পানে ছুটে চলছে। চলার পথে সে সবকিছুই দেখছে। প্রতিটা স্টেশনই সে পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও তার মন বসছে না। থেকে থেকে তার মনে পড়ছে ফেলে আসা বাড়ির কথা, স্ত্রী-পুত্রের কথা। মাথায় তার একটাই চিন্তাÑ গন্তব্যে পেঁৗছাতে হবে। সে কাজের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে, কাজ শেষে আবার তাকে ঘরে ফিরতে হবে।

চড়ুই, শালিক, ময়না, কত ধরনের পাখি আছে। দিনভর তারা ছুটতে থাকে এদিক সেদিক। খাবারের অন্বেষায়। দিনশেষে সন্ধ্যায় সেই লতাপাতার ঝুপড়িতেই আশ্রয় নেয়। সারাদিন কত বিরাট বিরাট অট্টালিকায় ছিল! এক ইমারত থেকে আরেক ইমারতে ছুটে বেড়িয়েছে। কত বড় বড় আমিরের চৌহদ্দিতে খাবার কুড়িয়ে এসেছে! কিন্তু সেখানে মন বসেনি। সন্ধ্যা হয়েছে। সেই ছন-বনের ঝুপড়িতেই ফেরত এসেছে। ছানাগুলোর কথা মনে পড়েছে। সাথী-সঙ্গিকে মনে পড়েছে। তাই সন্ধ্যা নামতেই সোজা উড়াল দিয়ে চলে এসেছে নিজের নীড়ে।

মুমিনের অবস্থাও তাই। দুনিয়াতে সে কর্মব্যস্ত থাকে। প্রয়োজনে সারাদিন ঘুরাফেরা করে। কাজ-কর্ম করে। দোকান-পাট করে। চাকরি-বাকরি করে। আট ঘণ্টা-দশ ঘণ্টা ডিউটি করে। কিন্তু আসল গন্তব্য সে ভুলে বসে না। কবরের অন্ধকার গহ্বরের কথা তার মনে থাকেÑ সেখানে হাজার হাজার বছর শুয়ে থাকতে হবে। সে সেখানে আলো জ্বালবার ফিকির করে। আখেরাতের কথা তার স্মরণ থাকেÑ সেখানে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। ব্যস, যখন সন্ধ্যা নেমে এল, জীবন-বাতি নিভে এল সে গন্তব্যের পথ ধরে। দুনিয়াতে থাকতেই সে গুছিয়ে নেয় আখেরাতের পাথেয়।

মুসলমান তার বাড়ি ভুলে থাকতে পারে না

মুসলমানের জীবন এমনই হওয়া উচিত। আমাদের জন্য হিন্দুস্তান, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকা, কানাডাসহ আরো যত বড় বড় রাষ্ট্র রয়েছে সবই বরাবর। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের বাড়ির কথা ভুলতে পারি না। আমরা যেখানেই থাকি, আমাদের মনে রাখতে হয় সাঁঝে নীড়ে ফেরার কথা। দুনিয়াতে যার যেখানে বসবাসের ব্যবস্থা হয়, কেউ ঝুপড়িতে, কেউ অট্টালিকায়, দেহ আমার যেখানেই পড়ে থাকুক, আমার দিল যেন আল্লাহর সাথে জুড়ে থাকে। সেই আসল বাড়ির কথা যেন কখনো বিস্মৃত না হই।

সেই কবরই আমার ঘর। শহর-নগর থেকে দূরে নির্জন উপত্যকা। সুনসান নীরব। নেই লোকালয়ের কোলাহল, বাচ্চাদের কান্নাকাটি আর বড়দের সান্ত¦না। একটি গর্ত করে যে আমাকে শুইয়ে দেওয়া হবে সেখানে তো পাশ ফেরাবার সুযোগটাও নেই! সেখানে আমি পড়ে থাকব একাএকা। সাথে থাকবে শুধু আমার আমল। টুটাফাটা যে নামায কালাম পড়তাম, কালেমা-দরূদ পড়তাম তা-ই সেখানে কাজে আসবে। আমলগুলোই হবে আমার আপন। আমার ঘরের বিছানা-বালিশ, আলো-বাতাস হবে এই আমলই। দুনিয়ার যিন্দেগীতে করে যাওয়া আমলের উপরই নির্ভর করবে ঘরের সংকীর্ণতা-প্রশস্ততা।

কোনো পরিচয় সেখানে কাজে আসবে না। সেখানে চলবে না কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি। যা কাজে আসবে তা তোমার ঈমানের নূর। দুনিয়াতে যতটুকু আল্লাহর নাম নিয়েছিলে তা কাজে আসবে। আল্লাহর সাথে যতটুকু সম্পর্ক করতে পেরেছিলে ততটুকু কাজে লাগবে। এখানে যদি নামাযে মন বসে তাহলে ওখানে দিল খোশ থাকবে। আর যদি কালেমা-নামাযের প্রতি দিল না লাগে, দ্বীন-ঈমানের সাথে সখ্যতা না জমে, মন শুধু পড়ে থাকে সেই বসন-ভূষণের প্রতি, দিল যদি লেগে থাকে শুধু বাড়ি-গাড়ির সাথে তাহলে সেখানে কোনো গতি থাকবে না, কেবলই দুর্গতি। বাড়ি-গাড়ি, অর্থ-কড়ি, জামা-কাপড়, রসদ-সামান কোনো কিছুই তো সেখানে থাকবে না। সেখানে থাকবে শুধু তুমি আর তোমার আমল।

এগুলো থাকবে তো দূরের কথা, ঘনিষ্ঠজনেরাও সেখানে কোনো কাজে আসবে না। মায়ের মমতা পাওয়া যাবে না। বাবার স্নেহ থাকবে না। আদরের কন্যাকে পাশে পাওয়া যাবে না। থাকবে না যুবক পুত্রের কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা। কিছু বলতে কিছুই তোমার কাজে আসবে না। যা কাজে আসবে তা শুধু তোমার ঈমান এবং আমল। ওই যতটুকু আল্লাহকে ডেকেছিলে তা কাজে আসবে। ঈমানের নূর কাজে লাগবে। নামায-রোযার নূর কাজে লাগবে। কুরআনের নূর কাজে লাগবে। সে নিঃসঙ্গ মুহূর্তে তোমার আমলগুলোই হবে তোমার আপন।

হাদীসে এসেছে, কবর হয়তো তোমার জন্য জান্নাতের একটি বাগান হবে, নতুবা হবে জাহান্নামের একটি গর্ত। এটা কীভাবে? একই জায়গা দুইজনের জন্য দুই রকম হয় কী করে? হাঁ, কবর জান্নাত বা জাহান্নাম হওয়া নির্ভর করবে তোমার আমলের উপর। এখানকার ভালো আমলগুলো সেখানে বাগান হবে, ফুল ফোটাবে। কবরের সাথে জান্নাতের সংযোগ করে দেওয়া হবে। জান্নাত থেকে শীতল হাওয়া প্রবাহিত হবে। জান্নাতী ঘ্রাণে মোহিত হবে তোমার কবর। দেখানো হবে জান্নাতে তোমার ঠিকানা!

হাদীসে এও এসেছে, মৃত্যুর সময় এবং মৃত্যুর পর তার ঠিকানা কোথায় হবে, জান্নাত নাকি জাহান্নামÑ তা তাকে দেখিয়ে দেওয়া হয়। যার আমল ভালো, ঈমান নিয়ে কবরে গেল তাকে বলা হবে, নববধূর মতো ঘুমাতে থাক। যদি হালত এমনটি না হয় তাহলে দুর্গতির আর সীমা থাকবে না। আল্লাহ রক্ষা করুন!

কবরের ফিকিরই আসল ফিকির

তো আসল বাড়ির ফিকির করা চাই। সেখানে যে আসবাবপত্রের প্রয়োজন হবে সেগুলো যোগাড় করা চাই। দুনিয়ার হালত কী? শৈশবের জিনিসগুলো যৌবনে কাজে লাগে না। যৌবনের সামানপত্র বার্ধক্যে কাজ দেয় না। শৈশবের কাপড়গুলো কি যৌবনে পরা যায়! যৌবনের পোশাকগুলো বার্ধক্যে পরলে কেমন দেখায়! এখন তো যমানা আরো ‘অগ্রসর’ হয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতার ‘বদান্যতায়’ এমন মসিবত সওয়ার হয়েছে, দিনে দিনে মডেল-ফ্যাশন পরিবর্তিত হতে থাকছে। দুদিন আগের জামা দুদিন পর পুরাতন হয়ে যায়। আজ এক ফ্যাশনে জামা বানাল। কাল নতুন মডেল আসল। ব্যস নতুন এ জামাটাই এখন পুরাতন হয়ে গেল! শুধু পুরাতন নয়; একেবারে সেকেলে বনে যায়। এখন গায়ে দিতেও লজ্জা বোধ হয়। কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে এমন পোশাক পরে গেলে নিজেকে ছোট মনে হতে থাকে। বলুন, একটা সংস্কৃতি যদি এতটা ক্ষণস্থায়ী এবং এতটা রূপবদলী হয় তাহলে এরচে অযাচ্য আর কী হতে পারে! আর এমনসব মডেল-ফ্যাশনকে ঘিরে যার জীবন আবর্তিত হয় তারচে নির্বোধ আর কাকে বলা যেতে পারে!

হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা

কুরআনে কারীমে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনার বিবরণ এসেছে। আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন রাতের আকাশে তারকা দেখতে পেলেন তখন তার চাকচিক্যে অভিভূত হলেন। তিনি বললেন, এই তো তাহলে আমার রব। এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু যখন সে নক্ষত্র অস্তমিত হল তিনি বলে উঠলেনÑ না না, যা ডুবে যায় তা খোদা হয় কী করে! এর নিজের অস্তিত্বই তো সংকটাপন্ন!

এরপর যখন চাঁদ দেখলেন বলে উঠলেনÑ সুবহানাল্লাহ! চাঁদের সৌন্দর্যের তো তুলনাই চলে না। কী চমৎকার কীরণমালায় রাতের দুনিয়াটাকে আলোকিত করে রেখেছে! এ-ই তাহলে আমার রব। এরপর যখন চাঁদ ডুবে গেল তিনি বললেনÑ না না, যা হারিয়ে যায় তা রব হয় কী করে! এর উপর তো কোনোভাবেই আস্থা রাখা যায় না!

এরপর যখন সূর্য উদিত হল তিনি এর রশ্মি-রাগে ও তেজদীপ্ততায় মুগ্ধ হলেন। গোটা দুনিয়াটা এর আলোয় জ্বলজ্বল করছে। এর সামনে তো চাঁদ-তারার তুলনাই হতে পারে না। কিন্তু দিনভর এত প্রতাপ-দাপট দেখানোর পর সাঁঝের বেলা যখন পশ্চিমাকাশে সেই সূর্যটিই ম্রিয়মাণ হতে লাগল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বলে উঠলেনÑ না না, যা ডুবে যায়, যা অস্তমিত হয়, যা লুকিয়ে যায়, যা হারিয়ে যায়, যার নিজের অস্তিত্বই হুমকির মুখে এগুলো তো কখনই পূজ্য হতে পারে না। এগুলো সবই ক্ষয়শীল, ধ্বংসশীল। এগুলোর সাথে আমার দিল লাগতে পারে না। আমার দেহমন তো উৎসর্গিত হবে সেই সত্তার প্রতি, যিনি চিরস্থায়ী চিরঞ্জীব। যিনি সর্বদা ছিলেন, সর্বদা আছেন এবং সর্বদা থাকবেন। যিনি এ সবকিছুর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং একমাত্র প্রতিপালক।

সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শিক্ষা

হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আমাদের সবার বাবা। আমাদের নবী আখেরী পয়গম্বর হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা তিনি। তিনি আমাদের কত সুন্দর উপস্থাপনে তাওহীদ শিখিয়ে গিয়েছেনÑ যা ক্ষয়প্রাপ্ত, যার লয় রয়েছে, যা হারিয়ে যায়, যার অস্তিত্বের কোনো ভরসা নেই এমন বিষয়ের প্রতি কখনো মন বসিও না। তোমার যৌবনের দিকে তাকাও। দেখ, সে কতজনের সাথে নিমকহারামী করেছে। যেই যৌবনকে তুমি সযত্নে প্রতিপালন করেছ সে তোমাকে বার্ধক্যে ঠেলে দিয়ে চলে গিয়েছে। তোমার জীবনের দিকে তাকাও। যেই জীবন রক্ষার জন্য তুমি এতকিছু করেছ সেই জীবনই তোমার সঙ্গ ত্যাগ করবে। দুনিয়ার দিকে তাকাও। যেই দুনিয়াকে নিয়ে তোমার এত স্বপ্ন ছিল সেই তোমাকে ধূলি দিবে। যে ম্যাচিং সেটিং-এর পিছনে তুমি ছুটছ সেও তোমাকে প্রতারিত করছে। মোটকথা, যার সাথেই তুমি সখ্যতা তৈরি করতে চাচ্ছ সে-ই তোমার সাথে আড়ি করছে। তাই এগুলোর প্রতি আকর্ষিত হওয়া, এতে দিল-মন বসানোÑ এরচে মূর্খতা আর বোকামি কী হতে পারে!

কেউ তার যৌবনে প্রবঞ্চিত হয়। রূপ-লাবণ্যে প্রতারিত হয়। আখের দেখা যায়, যখন যৌবনে ভাটা পড়ে তার শক্তি-সামর্থ্য সক্ষমতা মিলিয়ে আসে, রঙ রূপ-সৌন্দর্য ম্লান হতে থাকে। তখন বুঝে আসে, আমার সযত্নে প্রতিপালিত যৌবন আমার সাথে কেমন গাদ্দারী করেছে! আমি এই যৌবনের তাড়নায় তো রহমান রহীম রবের নাফরমানী করেছি!

বন্ধু! আল্লাহর রহমত কখনো বান্দাকে ছেড়ে চলে যায় না। সবসময় সে বান্দার কাজে আসে। বিপদ-আপদ, সুখ-দুখ, আলো-অঁাধার, সচ্ছলতা-সংকীর্ণতা, স্বদেশে-প্রবাসে সর্বাবস্থায় যিনি আমাকে রহমতের চাদরে আচ্ছাদিত রাখেন তিনি হচ্ছেন আমার রব আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেনÑ وَالله مَعَكُمْ আল্লাহ তোমাদের সাথে থাকেন।

তিনজন একত্রে রয়েছ। চতুর্থজন হচ্ছেন আল্লাহ। চারজন একসাথে আছ পঞ্চমজন হচ্ছেন আল্লাহ। নিঃসঙ্গ থাক বা কারো সঙ্গে, ঘরে থাক কিংবা বাইরে, মসজিদে অথবা মার্কেটে সর্বাবস্থায় যিনি তোমার সাথে থাকেন তিনি হচ্ছেন তোমার রব আল্লাহ। আল্লাহ সবাইকে দেখেন। সবার সাহায্য করেন। আল্লাহ বলেনÑ

وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ فَلْیَسْتَجِیْبُوْا لِیْ وَ لْیُؤْمِنُوْا بِیْ لَعَلَّهُمْ یَرْشُدُوْنَ.

আর যখন আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে তখন (আপনি বলুন,) আমি তো কাছেই আছি। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার ডাকে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক যাতে তারা সৎ পথে চলতে পারে। Ñসূরা বাকারা (০২) : ১৮৬

তো আমার আল্লাহ তো আমার নিকটেই আছেন; আমি ডাকলেই তিনি শোনেন। তাহলে কেন আমি আমার আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কায়েম করছি না! তিনি তো রহমান-রহীম, দয়ালু-মেহেরবান, সাহায্যকারী, উদ্ধারকারী, পরিত্রাণকারী মহান রাব্বুল আলামীন। তাঁকে ছেড়ে আমি ভাব জমাচ্ছি বে-ওয়াফা জোয়ানীর সাথে, খেয়ানতকারী রূপ-লাবণ্যের সাথে। আমি সম্পর্ক গড়ছি বন্ধু-বান্ধবের সাথে, কঠিন বিপদের সময় যাদের আমি পাশে পাব না। সমবয়সী সাথী-সঙ্গীদের সাথে আমার সখ্যতা, অথচ গল্প-গুজবে সময় নষ্ট ব্যতীত তারা আমার কোনো উপকারে আসে না। আমি পড়ে আছি মডেল-ফ্যাশন নিয়ে, মেকআপ-ম্যাচিং নিয়ে, যা সকালে বাজারে হৈচৈ ফেললেও সন্ধ্যায় আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়, অথচ এ সবকিছু আমার সাথে কেবল ছলচাতুরিই করে। ধ্বংসশীল এ পার্থিব উপকরণকে ঘিরেই আমার যত জল্পনা-কল্পনা। অথচ আমি এগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে মহান চিরস্থায়ী দয়ালু মেহেরবান সত্তা রহমান রহীমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছি! তাঁর নাফরমানীতে লিপ্ত হচ্ছি! বলুন, এরচে দুর্গতি ও মূর্খতা আর কী হতে পারে! আমি সেই রবের সাথে কেন সম্পর্ক করছি না, যিনি এই দুনিয়াতেই আমার সঙ্গে আছেন, আমাকে রহম করছেন। কবরে তিনিই আমাকে উদ্ধার করবেন। হাশরের ময়দানে তো কেবল তাঁরই রাজত্ব! এমন মহান রাজাধিরাজের সাথে সম্পর্ক করতে কেন আমি পিছপা থাকছি!

বোনেরা আমার! আল্লাহকে আমাদের এমনভাবে চেনা উচিত, তাঁর যাত ও সত্তার প্রতি এমন মজবুত ইয়াকীন পয়দা করা উচিত, তাঁর সাথে আমাদের এমন গভীর সম্পর্ক কায়েম করা উচিত, তাঁর কুদরতের উপর এমন আস্থার সাথে ভরসা করা উচিত, যাতে সর্বদা আমার অন্তরে একথা জাগরূক থাকেÑ আমার আল্লাহ আমার সাথে আছেন। আমি তাঁর নজরে আছি। তাঁর নাফরমানী করা যাবে না। সুখে দুঃখে আমি আল্লাহকে পাচ্ছি। তিনি আমাকে সাহায্য করবেন। কেউ আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে, আমি ভেঙে পড়ব না। আমার ঈমান তো সে কেড়ে নিতে পারেনি! আমার যৌবন শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমার ঈমানী সফর তো থেমে যায়নি! আল্লাহর সাথে আমার সম্পর্ক তো কমে যায়নি! সম্পদ যদি আমার হাতছাড়া হয়ে যায়, আমার বন্ধুরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমার স্বামী-সন্তান যদি আমাকে পরিত্যাগ করে তাহলে এতে আমি বিমর্ষ নই। কারণ আমার রব আমার সাথে আছেন। আমার রব যদি আমার সাথে থাকেন তাহলে আমার সব আছে। পুরো দুনিয়া আমার সাথে আছে, আসমান-যমীন আমার সাথে আছে। কিন্তু আমার রব আমার সাথে নেই তো আমার আর কোনো কিছুই নেই।

যে বাদশাহকে পেয়ে গেল সে সবকিছুই পেয়ে গেল

মা ও বোনেরা আমার! একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা আছে। আগের দিনের রাজা-বাদশাহদের ঘটনা। রাজাদের যে কখন কী হালত হয় বলা মুশকিল। একবার এক রাজার মনে কেন যেন রঙ ধরল, হয়তো ঘরে পুত্র সন্তান জন্মেছিল কিংবা কোনো এলাকা বিজিত হবার সংবাদ এসেছিল। তিনি আপ্লুত হয়ে ঘোষণা করলেন, আজ যে ব্যক্তি যে জিনিসের উপর হাত রাখবে সে সেটার মালিক হয়ে যাবে। ব্যস, এখন কে আর কাকে দেখে! হঠাৎ যেন ভাগ্যের দুয়ার খুলে গেল। রাজ দরবারের উজির-নাজির, গোলাম-বাদী, আমলা-কামলা সবাই হরিলুট অবস্থা। কেউ দরবারের ঝালর ধরল, কেউ হাত রাখল মনি মানিক্য খচিত আসবাবপত্রের উপর, কেউ মূল্যবান বাতিগুলো হাতিয়ে নিল। আর কেউ তো সুযোগ পেয়ে রাজার সিংহাসনটাই ধরে বসল। কেউবা হাত রাখল রাজার মুকুটের উপর। এমন সুযোগ কে হাতছাড়া করে! বাদশাহ আজ দিল দরিয়া। যে যেটাতে হাত রাখছে তাকে তাই দিয়ে দিচ্ছেন। সোনা-রূপা, হীরা-জহরত কোনো কিছু দিতে কার্পণ্য করছেন না।

এদের মধ্যে এক গোলাম ছিল বুদ্ধিমান। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কোনো সাড়া শব্দ নেই। তার প্রতি নজর পড়তেই বাদশাহ হতবাক। আরে, তুমি এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছ যে! তোমার কি কিছুর দরকার নেই? দেখছ না, যে যেটা চাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে। বাদশাহর এমন প্রশ্নে সে আরো বোকা সেজে জিজ্ঞাসা করল, জাহাঁপনা! আপনি কি সত্যি সত্যি বলছেন? এভাবে সে রাজাকে আরো উত্তেজিত করে তুলল। বাদশাহ বললÑ আরে, আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না! দেখছ না, যে যা ইচ্ছা নিয়ে যাচ্ছে। সে বলল, তাহলে আমি যেখানে হাত রাখব তা আমার হয়ে যাবে?! বাদশাহ বলল, কেন নয়। আমি মুখে বলেছি বলে আমার কথার দাম নেই! লিখে দিতে হবে নাকি! এভাবে সে বাদশাহর ঘোষণাকে আরো পোক্ত করে নিল।

এখন সে দেখাতে শুরু করল তার বোকামিপনার তেলেসমাতি। সে বলতে শুরু করলÑ মহারাজা! এরা সবাই দেখছি আস্ত বোকা। এদের কেউ ঝালর নিয়েছে, কেউ বাতি নিয়েছে, কেউ পালঙ্ক নিয়েছে, কেউ সোনা-রূপা নিয়েছে, কেউ হীরা-মানিক নিয়েছে, কেউ ঘোড়া নিয়েছে। যে যা ধরেছে সে অতটুকুই পেয়েছে। অন্য অনেক কিছু থেকে সে বঞ্চিত হয়েছে। সোনা নিলে হীরা পায়নি। ঝালর নিলে ফানুস পায়নি। ঘোড়া নিলে আস্তাবল কোথায়? এরপর এর খাবার দাবারের খরচ। তো দেখছি, এরা সবাই জনমের বোকা। আপনি যা বলেছেন তা যদি ঠিক হয় তাহলে এই যে আমি আপনার মাথায় হাত রাখলাম। এখন মহামান্য রাজার মহান ঘোষণা অনুযায়ী রাজা মহাশয় আমার হয়ে গিয়েছেন। ফলে রাজার পুরা রাজত্ব এখন আমার। যেহেতু মহারাজা আমার তাই আমার বাড়ি-ঘরের পেরেশানী নেই। নেই অর্থকড়ির চিন্তা। রাষ্ট্রের সকল প্রাচুর্য এখন আমার কব্জায়। সম্মানের তাজ এখন আমার মাথায়।

বুঝবার জন্য ঘটনাটি বললাম। আমাদের অবস্থাও এমনটা হওয়া উচিত। আজ কেউ ফ্যাশনের জন্য জীবন কোরবান করে দিচ্ছে। কেউ প্রাচুর্য ও বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। কেউ দামি দামি গাড়ি-বাড়ির ফিকিরে বিভোর। কেউ চেয়ার দখল করায় ব্যস্ত। কেউ রূপচর্চায় মগ্ন। কেউ সৌন্দর্য প্রদর্শনে অস্থির। কেউ ভালবাসা অর্জনে বেচাইন। কেউ অর্থ উপার্জনে ব্যতিব্যস্ত। কেউ নতুন কোনো সংস্কৃতিতে মত্ত। আরো কতজন কত নেশায় যে বুঁদ হয়ে আছে! আরে আল্লাহর বান্দা-বান্দী! পার্থিব সব হীন বিষয় অর্জনে যিন্দেগী বরবাদ করছ! এক আল্লাহর তালাশে লেগে যাও না! আল্লাহর মহব্বত লাভে বিভোর থাকো না! ওই বুদ্ধিমান গোলামের মতো এক আল্লাহ্কে যদি তোমার বানাতে পার তাহলে কুল কায়েনাতের সবকিছুই তো তোমার গোলামী করবে!!

বিবি! মুরগি পাল গিয়ে

মুজাদ্দেদী খান্দানের এক বুযুর্গ ছিলেন শাহ মুহাম্মাদ ইয়াকুব ছাহেব মুজাদ্দেদী। তিনি ঘটনার মাধ্যমে সুন্দর সুন্দর উপদেশ তুলে ধরতেন। তিনি একটি গল্প বলেছেন। সাধারণত নারীদের মজলিসে গল্পটি আমি শুনিয়ে থাকি।

ভুপালে বেগমদের একটা যমানা ছিল। একবার এক বেগম ছাহেবা খুব পেরেশান ছিলেন। অস্থির হয়ে এক পীর সাহেবের নিকট আসলেন। বলতে লাগলেনÑ পীর ছাহেব হুযুর! আমি অনেক পেরেশানীতে আছি। আমার স্বামী আমাকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করেন না। কোনো খোঁজ-খবর নেন না। আগে তো তার ভালবাসার অন্ত ছিল না, কিন্তু এখন কোনো খবরই নেই। আমার মনে এখন ভীষণ কষ্ট। বাচ্চারাও আমার কথাবার্তা শোনে না। স্বামীর অবহেলা আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। দুনিয়ার যত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এখন আমার নিকট বিষ লাগছে। হুযুর! আপনি আমার জন্য দুআ করে দিন।

পীর ছাহেব সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। বললেন, তুমি এক কাজ কর; ঘরে গিয়ে মুরগি পাল। এ শুনে তো বেগমের মাথায় হাত। আমি বললাম কী আর হুযুর বলছেন কি! কালও তো হুযুর ঠিকঠাক শুনতেন। আজ আবার কী হল? এ মনে করে বেগম সাহেবা আরো উঁচু আওয়াজে বললেন, হুযুর! আমি অনেক পেরেশানীতে আছি। এই এই আমার ঘটনা। আমার জন্য মেহেরবানী করে দুআ করে দিন। পীর সাহেব এখনও আস্তে করে বললেন, তুমি ঘরে গিয়ে মুরগি পাল। বেগম সাহেবা কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। বললেন, হুযুর! আমাদের বাড়িতে তো মুরগি আছেই। আমার চাকর-বাকরদের ওখানেও মুরগি থাকবে। মুরগি দিয়ে আমার কী হবে? আমার না মুরগির গোস্তের প্রয়োজন আছে আর না ডিমের। খানাপিনায় আমার কোনো কমতি নেই। প্রতিদিনই তো পোলাও, কোরমা, বিরিয়ানী খাই। ডিমেরও কত আয়োজন থাকে। আর ঘরে তো মুরগি আছেই। লাগলে বাজার থেকে না হয় আরো কিনে নেব। কিন্তু পীর সাহেব হুযুর! আমি তো পেরেশানীতে আছি। আমার জন্য আপনি দুআ করবেন। বারবার মুরগি পালার কথা বলছেন কেন?

পীর ছাহেব বলা শুরু করলেনÑ বেগম সাহেবা! একটি ঘটনা শোনাই। ঘটনা শুনলে কথা বুঝতে সহজ হয়। এক জায়গায় পাশাপাশি দুটি পরিবার বসবাস করত। একটি ছিল ধনী পরিবার। তাদের ঘরে প্রাচুর্য ছিল। আরেকটি পরিবার ছিল কিছুটা দরিদ্র। কষ্টের মাঝে তাদের দিন কাটত। দুই ঘরের মাঝে একটি দেয়াল ছিল। সেই দেয়ালে আবার একটা জানালাও ছিল। ওই গরীব ঘরে কোনো মেহমান এলে ঘরের স্ত্রী জানালা দিয়ে মুখ বের করে ধনী প্রতিবেশীকে বলত, ভাবী! অসময়ে মেহমান চলে এসেছে। কী আর করব! ঘরে কিছু নেই। যদি একটা ডিম দিতেন তাহলে তা ভেজে মেহমানের সামনে পরিবেশন করতে পারতাম। এ শুনে প্রতিবেশি ভাবী তাকে একটা ডিম দিয়ে দিত। এভাবে একবার দুইবার তিনবার কয়েকবার হওয়ার পর ভাবী বিরক্ত হয়ে বলল, এত ডিম নিতে হয়, একটা মুরগি পাললেই তো পারেন। তাহলে তো আর বারবার মানুষের কাছে চাইতে হয় না।

তো বেগম সাহেবা! আমি তোমাকে সেই মুরগি পালার কথাই বলছি। এক একটি ডিমের পিছে না ঘুরে একটি মুরগি পাললেই বহু ডিম পাওয়া যাবে। তেমনি এক একটি সমস্যার সমাধানে পেরেশান না হয়ে সকল সমস্যার সমাধানকারী আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কায়েম কর। তাহলে তোমার সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তাই এক আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোল। তাঁর কাছে দুআ কর। চাইতে থাক। সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে।

সফলতার মূলকথা তাআল্লুক মাআল্লাহ

এখন প্রশ্ন হল, আমি আল্লাহর কাছে কী চাইব? আমি আল্লাহর কাছে সবকিছু চাইব। আজ স্বামী আমার প্রতি অসন্তুষ্ট। আমি আল্লাহর কাছে বলবÑ আয় আল্লাহ! আপনি এর সুরাহা করে দিন। সন্তানরা কথা শোনে না। আমি আল্লাহর কাছে বলব, আয় আল্লাহ! ছেলেগুলোকে ফরমাবরদার বানিয়ে দিন। শরীর অসুস্থ, অর্থসংকট মোটকথা সকল প্রয়োজনের দরখাস্ত আমি আল্লাহর কাছে পেশ করব। এখন করে কী, পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যায়। আরে আল্লাহর সাথে তুমি নিজে সম্পর্ক করো। আল্লাহর কাছে চাইতে শেখ এবং চাইতে থাক।

এখন মেয়েরা বাইরে ঘোরাফেরা শুরু করেছে। বাইরের দুনিয়ায় তাদের মন-দিল পড়ে থাকে। ফলে ঘরের রহমত বরকত দিনদিন খতম হতে চলেছে। যত বাইরে বের হবে তোমার মন তত বিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। মনে সবসময় একটা অস্থিরতা কাজ করবেÑ এটা কিনতে পারলাম না, ওটা কিনতে পারলাম না। ওই দোকানে ওই জিনিসটা দেখলাম, কিনতে পারলে ভালো হত। এই গয়নাটা যদি সংগ্রহ করতে পারতাম! আহা, এ কয়টা টাকা থাকলে এ জিনিসগুলো কিনতে পারতাম। এভাবে একটা অস্থিরতা কাজ করতে থাকে। আজকাল মেয়েদের দিল পেরেশান। ঘরে মন বসে না। বিকালে হাওয়া-বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য বাইরে বের হতে হয়। কয়টা টাকা হলে মার্কেটের দিকে ছোটে। মুসলিম ঘরানার মেয়েদের অবস্থা তো এমন হতে পারে না।

এখন তো একেকজন একেক মডেল গ্রহণ করে। নারীদের চিন্তা করা উচিত, তারা কাদের আদর্শে জীবন গঠন করবে। আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সহধর্মিণীগণের জন্য যা যা পছন্দ করেছেন তা-ই আমাদের জন্য আদর্শ। নবীপত্নীদের উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

وَ قَرْنَ فِیْ بُیُوْتِكُنَّ وَ لَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِیَّةِ الْاُوْلٰی وَ اَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتِیْنَ الزَّكٰوةَ وَ اَطِعْنَ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ .

আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর এবং আগের জাহিলিয়াতের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না। আর সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাক। Ñসূরা আহযাব (৩৩) : ৩৩

ইসলামের পূর্বে যখন জাহিলিয়াতের যমানা ছিল, অশালীন ও অসভ্য সমাজব্যবস্থা ছিল ওইসময় নারীরা যেভাবে সেজেগুজে দেহ প্রদর্শন করত তোমরা অমনটা হতে যেও না। তোমরা নামায কালাম নিয়ে থাক। যাকাত আদায় কর। সদকা-খয়রাত কর। তাসবীহ-তাহলীল পড়। দ্বীনী কিতাবাদি অধ্যয়ন কর। নিজ সন্তানদের দ্বীনের কথা শেখাও। স্বামীর সেবায় মন দাও। ছেলে সন্তানের তালীম তরবিয়তের প্রতি মনোযোগী হও। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের গোলামীতে থাকে।

হিন্দুস্তান থেকে যে পরিবারগুলো এখানে বসবাস আরম্ভ করেছে তাদের ঘরের ভেতর যেন দ্বীনী পরিবেশ বিরাজ করে। তবেই নতুন প্রজন্ম কিছুটা দ্বীন-ধর্ম ধরে রাখতে পারবে। মুসলমান হয়ে থাকতে পারবে। আর যদি ঘরের পরিবেশটাই হয় উল্টো, তাহলে হাজারো ওয়ায নসীহতে, হাজারো তালীম তরবিয়তে, আমার ভাইদের হাজারো চিল্লা দেওয়ার পরও কাজ হবে না। তাদের সন্তানরা মানুষ হবে না, মুসলমান বনবে না। এজন্য সবার আগে জরুরি হল, ঘরের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। ঘরে দ্বীনী পরিবেশ কায়েম করতে হবে।

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ., হযরত মাওলানা ইউসুফ রাহ., শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ. প্রমুখ বুযুর্গানে দ্বীনের মায়েদের জীবনীগুলো আপনারা পড়–ন। তাঁদের ঘরের নারীদের হালত অধ্যয়ন করুন। তারা কত ইবাদতগুযার ছিলেন! দুনিয়াবিমুখ ছিলেন! যমানার রাবেয়া বসরিয়া ছিলেন। তাদের রাতগুলো কীভাবে কাটত? দিনগুলো কীভাবে অতিবাহিত হত? তাদের তিলাওয়াতের কী পাবন্দি ছিল? ওযীফা আযকারের কী রুটিন ছিল? রমযানের দিনগুলো তারা কীভাবে কাটাতেন? ইবাদতের প্রতি তাদের সেই আগ্রহ ও হিম্মত দেখে তো পুরুষদেরও লজ্জা পেতে হয়। নারী হয়ে তারা এ পরিমাণ ইবাদত করতেন যে, আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না। ফলাফল কী দাঁড়াল? আল্লাহ তাআলা এমন এমন নক্ষত্র দিয়ে তাঁদের কোল উজালা করলেন যে, সেসকল নক্ষত্রের নূরে বহু দেশ আলোকিত হল এবং আজও হচ্ছে। হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের মাধ্যমে হেদায়েতের পথ দেখেছে এবং দেখছে। এগুলো সব হয়েছে তাঁদের আমলের ওসিলায়, নিয়তের বরকতে, ইখলাসের বদৌলতে এবং তাআল্লুক মাআল্লাহর (আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করার) মাধ্যমে।

আজকের শিশুরা বড় হয়ে কী হবে? স্পষ্ট কথা, যেমন বৃক্ষ তেমন ফল, যেমন কোল তেমন সন্তান। সন্তান যদি তার মা’র যবানে আল্লাহর নাম না শেখে, তিলাওয়াতের শব্দ না শোনে, নেকী ও ইবাদতের সুন্দর সুন্দর কথা যদি তার কানে না পড়ে তাহলে বড় হয়ে সে এগুলো কোত্থেকে রপ্ত করবে!

মায়েদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

বোনেরা আমার! আমলের জন্য খুব বেশি কথার প্রয়োজন নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়, স্বামীর হকের প্রতি যত্নবান হও, সন্তানদের হকের প্রতি খেয়াল রাখ, আল্লাহর হকগুলো আদায় কর এবং সাদাসিধে জীবন যাপন কর। ব্যস, এ দেশেও তুমি শান্তিতে থাকবে। দ্বীনী প্রশান্তি অনুভব করবে। তোমরা তাবলীগের আমলে লেগে থাক। তাহলে তোমাদের দেখাদেখি অন্যান্য নারীরাও দ্বীনের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে। অন্যথায় এসব দেশে তোমাদের অবস্থানটাই অনেক বড় মসিবত এবং দুর্গতি ডেকে আনবে।

এমন যেন না হয়Ñ তোমরা এদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে। এখানে ‘সভ্যতা’র নামে যে প্লাবন চলছে, আশঙ্কা হয়, খোদা না করুন, তোমরা এতে হারিয়ে যাও। এজন্য জরুরি হল, তোমরা সাদাসিধে জীবন যাপন কর। যদি স্বাভাবিক জীবন ধরে রাখ তাহলে আল্লাহর রহমত থাকবে, সুখে শান্তিতে দিন পার করতে পারবে। রিযিকে বরকত হবে। নেক সন্তান ঘরে আসবে। আর যদি তথাকথিত ‘সভ্যতা’য় গা ভাসিয়ে দাও, আড়ম্বরপূর্ণ জীবন আরম্ভ কর, মিতব্যয়ী না হও, অপচয় করতে থাক, ফ্যাশন-ভূষণে মত্ত থাক, এদিক সেদিক ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়, ওদের অনুকরণে জীবন সাজাও, জীবনের চাহিদা বাড়াতে থাক তাহলে তোমার জীবন কণ্টকময় হয়ে উঠবে। তোমার ঘর হবে নরক।

এজন্য বোনেরা আমার! তোমরা পুরুষদের মাঝে তাবলীগের আগ্রহ পয়দা কর। তাদেরকে সাহস যোগাও। বল, আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করে দ্বীনের কাজে বের হন। আমি ঘর সামলে রাখব, বাচ্চাদের খেয়াল করব, ইনশাআল্লাহ। আপনি তাবলীগে যান। ঈমান-ইসলাম ও তাকওয়ার আলোকে নিজের জীবন সাজান। আল্লাহ আপনার উপর খুশি হবেন। আল্লাহ তাআলা আপনারও হেফাযত করবেন এবং আমাদেরও দেখভাল করবেন।

আমি আল্লাহ তাআলার নেক বান্দীদের উদাহরণ দিচ্ছিলাম। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর আম্মাজানের জীবনী পড়–ন। তাঁর রাতদিনের যে মামুল ছিল, আল্লাহু আকবার, হয়রান হতে হয়। কী পরিমাণ আল্লাহ তাআলার যিকির করতেন! মাওলানা ইউসুফ রাহ.-এর আম্মাজানের জীবনী পড়–ন। হযরত শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রাহ.-এর কন্যা যিনি মাওলানা ইউসুফ রাহ.-এর বিবি ছিলেন, তাঁদের জীবনীগুলো পড়ে দেখুন না! দেখতে পাবেন, তাঁরা দুনিয়াতে অবস্থান করেছেন, তবে তাতে মন বসাননি। তাঁদের দিলে একথা ছিল, আমাদেরকে অন্য কোথাও যেতে হবে। আমরা এখানে সাময়িকের জন্য আছি। প্রচণ্ড অসুস্থতায় ভুগছেন তারপরও এ পরিমাণ মেহমানদারী করতেন, বিস্মিত হতে হয়। এই পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চীদের ইবাদতের কারগুযারী পড়–ন। যিকরুল্লাহর কী হালত, মেহমানদারীর কী অবস্থা, তিলাওয়াতের কী কাইফিয়্যাত! ছোট ছোট ঝুপড়িতে বাচ্চাদের লালন পালন করছেন। কোনো শেকায়েত নেই। কোথাও ঘুরতে যাওয়া নেই।

আমার আম্মাজানের কথা বলি। এই মাত্র বছর খানেকও হয়নি, তিনি আমাদের এতিম করে চলে গিয়েছেন। আমরা আম্মাজানের যৌবন দেখেছি। সত্যি বলতে কী, তাঁর ঈমানের সামনে, তাঁর ইয়াকীনের সামনে, তাঁর নামাযের সামনে নিজেদের কথা বলতে লজ্জা হয়।

তাঁর সর্বদা ফিকির ছিল, কীভাবে ইসলামের সম্মান ও বিজয় সাধিত হয়। তাঁর সন্তানরা কামাই করুক, না করুক, ব্যস তারা দ্বীনের খেদমতে লেগে থাকুক, এটাই ছিল তাঁর একমাত্র ইচ্ছা। আল্লা্হ তাআলা আম্মাজানের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন এবং তাঁর সন্তান হিসাবে আমাদেরও। ওই যামানায় আম্মাজান ধনাঢ্য পরিবারের কন্যা ছিলেন। বেশ সচ্ছল ছিল নানাবাড়ি। এমন বাড়ির মেয়ে এমন ঘরে এল, যেখানে ইলম ছিল আর ইলমের সম্মান ছিল। আমি আম্মাজানের মাঝে যে জিনিসটি দেখেছি তা হচ্ছে, ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় কখনো তাঁর দিল লাগেনি। এ ব্যাপারে তো আম্মাজানের চরণই রয়েছেÑ

اپنا وطن عدم ہے جاکر وہیں بسیں گے۔

এখানে আমার আর কী ঘর-বাড়ি! আমি তো সেখানে গিয়েই রইব।

বাস্তবিকই মনে হত, তিনি যেন প্রবাসে আছেন। দুনিয়ার কোনো কাজে তাঁর মন বসত না। তাঁর দিল লাগত কেবল নামায, দুআ, কান্নাকাটি ও রোনাযারীতে। আল্লাহ তাআলা আম্মাজানকে দুআ করার আজীব যোগ্যতা দান করেছিলেন। যেখানেই কোনো পেরেশানীতে পড়তেন দুআয় লেগে যেতেন। তাঁর মনদিল লেগে থাকত ইবাদতেই। অন্যদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল কেবল নাম কে ওয়াস্তে, সৌজন্যমূলক। আল্লাহ তাআলা সেসকল মহীয়সীদের নূরানী জীবন থেকে আমাদেরও নূর হাছিল করার তাওফীক দান করুনÑ আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২২৭৮২

ইমাম আবু হানীফা : একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস


৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

২FJP+WV৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

১৩৮৩৯

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মাওলানা এই উপাধিটা কোন সময় থেকে চালু হয়েছে?

১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মতলব বাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy