আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১০৯৩৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কেউ মিলাদ পড়লে তাকে যদি আমি বুঝাতে না পারি অথবা না বুঝাই কারন বুঝালে আরও বেশি সমস্যা হতে পারে সেক্ষেত্রে কি আমার বুঝানোর দরকার।এতে না বুঝালে কি আমিও গুনাহগার হব এই বিদআতের?,

২৮ নভেম্বর, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





না, আপনি গুনাহগার হবেন না ।

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»

“তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখবে সে যেন তা তার হাত দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি হাত দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন মুখ দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি মুখ দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন অন্তর দিয়ে বাধা দেয়, আর এটি হলো দুর্বল ঈমানের পরিচয়।”[1]

তিনি এখানে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন:

প্রথম স্তর:

শক্তি থাকলে হাত দিয়ে বাধা দেওয়া। যেমন, মদের পাত্র ঢেলে ফেলে দেওয়া, বাদ্যযন্ত্র ভেঙ্গে ফেলা, শাসক ও শক্তিধরদের মধ্য হতে শাসকের মতো ব্যাক্তিদের সামর্থ্য থাকলে তাদের সে ব্যক্তিকে নিষেধ করা যে মানুষের প্রতি অন্যায় করতে চায় ও তাদের প্রতি নিজের ইচ্ছাকে ব্যাবহার করে যুলুম অত্যাচার করে। আরো যেমন সালাত, আল্লাহর অবশ্যই পালনীয় বিধান ও এ ছাড়া অন্যান্য আরো বিধিবিধান যা আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন তা সামর্থ্যবান মানুষের ওপর করতে বাধ্য করে দেওয়া।

প্রত্যেক মুমিনের নিজ পরিবার ও ছেলেমেয়ের সাথে অনুরূপ অবস্থা। সে তাদের ওপর আল্লাহর বিধান চাপিয়ে দিবে এবং সে তাদেরকে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা থেকে হাত দ্বারা বাধা প্রদান করবে যদি তাদের ব্যাপারে তার কথা কাজে না লাগে। অনুরূপ অবস্থা তার যাকে কোনো পক্ষ থেকে শক্তি দেওয়া হয়েছে বা সে মুহতাসিব (যে বিনা বেতনে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের কাজে নিয়োজিত) বা গোত্রের শাইখ বা এরা ছাড়া অন্যরা যাদেরকে শাসকের পক্ষ থেকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বা (ইসলামী রাষ্ট্রের অবর্তমানে) গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে শক্তি দেওয়া হয়েছে, (এদের) প্রত্যেকেই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এ ওয়াজিবটিকে বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠা করবে। এ স্তর বাস্তবায়নে অক্ষম ও অপারগ হলে নিম্নের স্তরের দিকে অগ্রসর হবে।

দ্বিতীয় স্তর:

আরো তা হলো মুখ, জনগণকে মুখের দ্বারা আদেশ ও নিষেধ করবে, যেমন বলবে: হে জাতি আল্লাহকে ভয় কর, হে আমাদের ভাইয়েরা তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সালাত আদায় কর, যাকাত দাও, এ অন্যায়টি ছেড়ে দাও, এ রকম কর, আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা ছাড়, তোমাদের মাতা-পিতার সাথে সৎ ব্যবহার কর, তোমাদের আত্মীয়তা বন্ধনকে বজায় রাখ, এ ছাড়া আরো অন্য বিধান পালন করার ও নিষেধ বর্জন করার আদেশ দিবে। মুখের দ্বারা তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায়ের নিষেধ করবে এবং তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করবে ও উপদেশ দিবে, তারা যা সম্পাদন করে তা খোঁজে বের করে তার ওপর তাদেরকে সতর্ক করবে।

আর তাদের সাথে নম্রতার সাথে উত্তম আচরণ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّهِ».

“নিশ্চয় আল্লাহ সব ব্যাপারে কোমলতা পছন্দ করেন”।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

«إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ، وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا شَانَهُ».

“যার মধ্যেই নম্রতা থাকবে তা সুন্দর হবে আর যার মাঝেই নম্রতা থাকবে না তা অসুন্দর হবে।”[2]

«كَانَ اليَهُودُ يُسَلِّمُونَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُونَ: السَّامُ عَلَيْكَ، فَفَطِنَتْ عَائِشَةُ إِلَى قَوْلِهِمْ، فَقَالَتْ: عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَهْلًا يَا عَائِشَةُ، إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّهِ» فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا يَقُولُونَ؟ قَالَ: "أَوَلَمْ تَسْمَعِي أَنِّي أَرُدُّ ذَلِكِ عَلَيْهِمْ، فَأَقُولُ: وَعَلَيْكُمْ».

“ইয়াহূদীদের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রবেশ করে বললো: (আসসামু আলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ) হে মুহাম্মাদ তোমার মৃত্যু হোক, তাদের উদ্দেশ্যে ছিল রাসূলের মৃত্যু কামনা করা, আসসালামু উদ্দেশ্য ছিল না। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাদের কথাকে শুনতে পেয়ে বললো: (আলাইকুমুস সামু ওয়াল্ লা‘নাতু)। অন্য শব্দে এসেছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, (ওয়া লা‘আনাকুমুল্লাহু ওয়া গাদিবা আলাইকুম) তোমাদের ওপর মৃত্যু ও লা‘নত হোক। অন্য শব্দে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তোমাদেরকে লা‘নত করুন ও তোমাদের ওপর রাগান্নিত হউন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আয়েশা, থাম! আল্লাহ কোমল, প্রত্যেক বিষয়েই তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন। আয়েশা বললেন, আপনি কি শুনেছেন তারা কী বলেছে? রাসূল বললেন তুমি কী শুনেছ আমি তাদেরকে কী বলেছি? আমি তাদেরকে বলেছি: (ওয়া ‘আলাইকুম) তোমাদের ওপরও মৃত্যু হোক। কারণ, তাদের ব্যাপারে আমাদের দো‘আ গ্রহণ হবে। আমাদের ব্যাপারে তাদের দো‘আ গ্রহণ হবে না।”[3]

এ আচরণ, অথচ তারা ছিল ইয়াহূদী সম্প্রদায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে কোমল ব্যবহার করেছেন; যাতে তারা হিদায়াত পায়, আর যাতে তারা হক গ্রহণ করে। আর যাতে তারা ঈমানের আহ্বানকারীর আহবানে সাড়া দেয়।

অনুরূপ আল্লাহর তাওফীক প্রাপ্ত ন্যায়ের আদেশকারী ও অন্যায়ের নিষেধকারী ব্যক্তি নম্রস্বভাব, উপযুক্ত বাক্যসমূহ ও উত্তম শব্দসমূহ ব্যবহার করবে, যখন সে বৈঠক, রাস্তা ও কোনো স্থান দিয়ে এমন লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে যাদের এ ব্যাপারে ত্রুটি রয়েছে। সে তাদেরকে নম্রভাবে ও উত্তম বাণীর দ্বারা আহ্বান করবে এমনকি যদিও তারা তাদের নিকট অস্পষ্ট বিষয়ে তার সাথে তর্ক করে বা তারা সে বিষয়ে অহংকার করে (তা সত্ত্বেও) সে তাদের সাথে উত্তম পন্থায় তর্ক করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ﴾ [النحل: ١٢٥]

“আপনি (তাদেরকে) হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আপনার রবের রাস্তার দিকে আহ্বান করুন এবং উত্তম পন্থায় তাদের সাথে তর্ক করুন।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন:

﴿وَلَا تُجَٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ﴾ [العنكبوت: ٤٦]

“তোমরা কেবল উত্তম পন্থার মাধ্যমেই আহলে কিতাবদের সাথে তর্ক কর।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৬]

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৩৩৪১

কুরআন খতমের মান্নত করা


২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১৪১৩০

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা অনেক সময় লক্ষ করি অনেক আলেম দের নামের পর দা:বা: লেখা হয় ।এই শব্দটির অর্থ কী...

২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,

২৫৪৮১

কবরের চার কোণে চার কুল পড়া এবং...


৪ ডিসেম্বর, ২০২২

চর কলমী ইউনিয়ন

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৫৯৭০৬

আকিদা


২৬ মে, ২০২৪

বরিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy