و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

Binary Trading (বাইনারি ট্রেডিং) এর পরিচয়:
বাইনারি ট্রেডিং হলো, এমন এক ধরনের লেনদেন যেখানে আপনি কোনো পণ্যের (যেমন: ডলার, সোনা, তেল ইত্যাদি) দাম ভবিষ্যতে বাড়বে না কমবে এই অনুমান বা পূর্বাভাস দিয়ে টাকা বিনিয়োগ করেন। যেমন, এই লেনদেনে যদি আপনার অনুমান সঠিক হয়, আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পাবেন।
যদি অনুমান ভুল হয়, তাহলে আপনি আপনার পুরো টাকা হারাবেন।
এটি মূলত জুয়া ধরনের লেনদেন, যেখানে পণ্যের মালিকানা লেনদেনকারীর হয় না, শুধু দামের উপর বাজি ধরা হয়।

Forex Trading (ফরেক্স ট্রেডিং) এর পরিচয়:
ফরেক্স ট্রেডিং অর্থাৎ Foreign Exchange Trading হলো বিভিন্ন দেশের মুদ্রা (কারেন্সি) একে অন্যের সঙ্গে কেনা-বেচার একটি অনলাইন ব্যবসা। যেমন: আপনি ডলার দিয়ে ইউরো কিনলেন, পরে দাম বাড়লে আবার ইউরো বিক্রি করে ডলার নিলেন এইভাবে লাভ করেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুদ্রা বাজার।
ফরেক্স ব্যবসায় সোনা, চাঁদী, মুদ্রা (কারেন্সি), কাপাস, গম, গ্যাস, তেল, পশু ও অন্যান্য অনেক পণ্যের কেনাবেচা হয়।

১নং প্রশ্নের উত্তর:
বাইনারি ট্রেডিংও কোনো বস্তু সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে টাকা বিনিয়োগ করা হয় যে, নির্দিষ্ট সময়ে সেটি দাম বাড়বে নাকি কমবে।
যদি পূর্বাভাস সঠিক হয়, তাহলে পূর্বাভাসদাতা অতিরিক্ত অর্থ পায়, আর ভুল হলে বিনিয়োগকৃত অর্থ হারায়।
অতএব, এটিও এক ধরনের জুয়া এবং জুয়া ইসলামী শরীয়তে হারাম।
সুতরাং, এই ধরনের ব্যবসায় অংশগ্রহণ করা নাজায়েজ এবং হারাম। এ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা জরুরি।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَیۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ৬৯ ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। (আল মায়িদাহ-৯০)
কারণ:
১-জুয়া আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকেই হারাম করা হয়েছে।
২-এতে একজনের লাভ মানেই অন্যজনের ক্ষতি এটা একপাক্ষিক সুবিধা, যা শোষণমূলক।
৩-একপক্ষ হারায়, অন্যপক্ষ জেতে ফলে হিংসা, বিদ্বেষ ও পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়।
৪-একজন মানুষ জুয়া খেলতে খেলতে পুরো সম্পদ হারাতে পারে, যা তাকে ঋণগ্রস্ত, হতাশ, অপরাধী ও আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে।
৫-পরিবার, সমাজ ও জীবনের স্থিতি নষ্ট হয়।

২নং প্রশ্নের উত্তর:
আমাদের জানামতে বর্তমান সময়ে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের যে পদ্ধতিগুলো প্রচলিত আছে, সেগুলো ইসলামী শরীয়তে পূর্ণ সমর্থিত নয় এবং এতে কিছু বড় শর্তগত ত্রুটি রয়েছে, যার কারণে এগুলো নাজায়েজ বলেই বিবেচিত হবে।

শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরেক্স ব্যবসার সমস্যাসমূহ:
(১) কারেন্সি কেনাবেচা শরীয়তের দৃষ্টিতে "বাই'স-সরফ" (মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা লেনদেন) হিসেবে গণ্য হয়, যার মধ্যে দু’পক্ষের পক্ষ থেকেই লেনদেনের একই বৈঠকে (মজলিসে) মালিকানা (কবজা) অর্জন করা জরুরি। উভয় পক্ষ অথবা কোনো এক পক্ষ যদি তাৎক্ষণিক কবজা না করে কিংবা যদি লেনদেন বাকি রেখে করা হয়, তাহলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ হয়। তাই স্পট ট্রেড হোক বা ফিউচার ট্রেড যেসব কারেন্সি লেনদেনের মধ্যে কোনো পক্ষ বা উভয় পক্ষ সম্পূর্ণ মালিকানা গ্রহণ না করে বা বাকিতে লেনদেন করে, সে সকল লেনদেন শরীয়তসম্মত নয়।
সংক্ষেপে, যখন উভয় পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক মালিকানা (তাকাবুজ) অর্জন না হয়, তখন সে লেনদেন ফাসিদ বলে বিবেচিত হয় এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত লাভ হালাল নয়।

(২) একটি স্বীকৃত ইসলামী নীতিমালা হলো, যে বেচাকেনায় অবৈধ শর্ত আরোপ করা হয়, তা ফাসিদ বা অবৈধ হয়ে যায়। ফরেক্স লেনদেনে বহু অনৈসলামিক শর্ত আরোপ করা হয়। যেমন: ‘সোয়াপস’ (Swaps) বা "বাই بشرط الاقالہ" এতে এই শর্ত থাকে যে নির্দিষ্ট একটি সময় পর বেচাকেনা বাতিল করা হবে; অথচ ইসলামি শরীয়তে একটি সম্পূর্ণ বেচাকেনা সম্পন্ন হয়ে গেলে তা চূড়ান্ত হয়ে যায় এবং দুই পক্ষের ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বদলের অধিকার থাকে না।

(৩) তদ্রূপ, ‘অপশনস’ (Options)-এর লেনদেনেও এক প্রকার অবৈধ শর্ত থাকে, যেমন: ক্রেতাকে এমন অধিকার দেওয়া যে, সে বিপরীত পক্ষের সম্মতি ছাড়াই পূর্বের বেচাকেনা বাতিল করতে পারে, যা ‘إقالہ’ (পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে লেনদেন বাতিল) নিয়মের পরিপন্থী। ইসলামি শরীয়তে ‘إقالہ’ শুধুমাত্র উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই বৈধ।

(৪) উপরোক্ত ফিউচার সেলের ধরণও শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ, কারণ ইসলামে বেচাকেনা তাৎক্ষণিক হওয়া জরুরি। ভবিষ্যতের তারিখ নির্ধারণ করে পণ্য বিক্রি করা বৈধ নয়।

(৫) ফরেক্স লেনদেনের আরেকটি বড় সমস্যা হলো "বাই কাবল আল-কবজ" অর্থাৎ মালিকানা অর্জনের আগেই তা অন্যকে বিক্রি করে দেওয়া। বাস্তবে দেখা যায়, ফরেক্স মার্কেটে প্রায় ৭০-৮০% লোক শুধুমাত্র কারেন্সি রেটের ওঠানামা থেকে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। তারা বাস্তবে কোনো কারেন্সি হাতে পায় না এবং মালিকানাও অর্জন করে না, বরং শুধুমাত্র লাভের আশায় তা আবার অন্যকে বিক্রি করে দেয়।

কারেন্সি ছাড়া ধাতু বা অন্যান্য পণ্যের বেচাকেনা যদিও "বাই’স-সরফ" না হওয়ায় সেখানে উভয় পক্ষের তাত্ক্ষণিক কবজা (তাকাবুজ) বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এসব লেনদেনেও অন্যান্য অনেক শরীয়তবিরোধী দিক রয়েছে, যেমন:
* মালিকানা অর্জনের আগেই পণ্য বিক্রি করা,
* ভবিষ্যতের তারিখে বিক্রির চুক্তি করা,
* অবৈধ শর্ত আরোপ করা, ইত্যাদি।
এছাড়া, এক বড় ধোঁকার দিক হলো, ব্রোকারের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীকে মালিক মনে করিয়ে শুধু ডিপোজিটের মাধ্যমে পণ্য কেনার সুযোগ দেওয়া। অথচ বাস্তবে সেই পণ্য তার মালিকানায় আসে না। এমনকি যখন দাম কমে যায়, তখন ব্রোকার সেই লেনদেন একতরফাভাবে বাতিল করে দিতে পারে। অথচ ইসলামে ব্রোকার শুধুমাত্র পরিষেবার বিনিময়ে পারিশ্রমিক পেতে পারে, কিন্তু লেনদেন বাতিলের কোনো একতরফা অধিকার রাখে না। একজন ব্যক্তি কোনো কিছু কিনলে তার লাভ ও ক্ষতির দায় তার নিজের উপর বর্তায়; ক্ষতি দেখেই সে একতরফাভাবে লেনদেন বাতিল করতে পারে না, যতক্ষণ না অপর পক্ষ সম্মত হয়।

উপরোক্ত সকল শরীয়তবিরোধী দিক ও দুর্নীতিপূর্ণ ব্যবস্থার কারণে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

قال الله تعالى : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ( سورة المائدة، الأية : 90)-
و في صحيح مسلم : عن عمرو بن دينار عن طاوس عن ابن عباس أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال « من ابتاع طعاما فلا يبعه حتى يستوفيه ». قال ابن عباس وأحسب كل شىء مثله. ( كتاب البيوع، باب بطلان بيع المبيع قبل القبض، ص 538، ط : مؤسسة الرسالة)-
و في الدر المختار : ( إن شرط المال ) في المسابقة (من جانب واحد وحرم لو شرط ) فيها ( من الجانبين ) لأنه يصير قمارا ( إلا إذا أدخلا ثالثا ) محللا ( بينهما ) ( كتاب الحظر و الإباحة، فصل في البيع، ج 6، ص 403، ط : سعيد)-
و في فتاوى الهندية : السباق يجوز (إلى قولى) وإنما يجوز ذلك إن كان البدل معلوما في جانب واحد بأن قال: إن سبقتني فلك كذا، وإن سبقتك لا شيء لي عليك أو على القلب، أما إذا كان البدل من الجانبين فهو قمار حرام إلا إذا أدخلا محللا بينهماالخ (الباب السادس في المسابقة، ج 5، ص 324، ط : ماجدية)-
و في رد المحتار : تحت ( قوله : و شرطه أهلية المتعاقدين ) و شرط المعقود عليه ستة : كونه موجودا مالا متقوما مملوكا في نفسه ، وكون الملك للبائع فيما يبيعه لنفسه ، وكونه مقدور التسليم فلم ينعقد بيع المعدوم وما له خطر العدم كالحمل واللبن في الضرع و الثمر قبل ظهوره ( مطلب شرائط البيع أنواع أربعة، ج 4، ص 505، ط : سعيد)-

والله اعلم بالصواب