মৃত ব্যক্তির প্রতি জীবিতদের কর্তব্য
প্রশ্নঃ ১০৬৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মৃত ব্যক্তির খারাপ বিষয় নিয়ে কি আলোচনা করা উচিত?
২১ জানুয়ারী, ২০২৫
ঢাকা ১২২৯
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মৃত ব্যক্তির প্রতি জীবিতদের কর্তব্য
সাইফুল ইসলাম হাফিজ
আজ কিংবা কাল সবাইকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। নশ^র পৃথিবী থেকে অবিনশ^র জীবনে পদার্পণের মাধ্যমই হলো মৃত্যু। কোনো প্রাণীই এই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না। আজ যারা মারা গেলেন, পরপারে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই তাদের প্রতি জীবিতদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। যেগুলো পালন করার কথা ইসলামে বলা আছে। একই সঙ্গে একজন মানুষ ও মুমিন হিসেবে যেসব আচরণ মৃত ব্যক্তির সঙ্গে করা যাবে না তারও নির্দেশনা ইসলামে এসেছে। একজন মুসলমান মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ এই কোরআনি দোয়াটি পাঠ করে তার মঙ্গল কামনা করতে হয়। যার অর্থ, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। বন্ধু হোক বা শত্রু হোক কারো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। কারণ, সব মুসলমান ভাই ভাই।
কারো মৃত্যুর কথা শুনে হাসি-তামাশা বা ঠাট্টা করা ভীষণ জাহেলিয়াতি কাজ। যেটা শুধু মুসলমান নয়; কোনো মানুষেরই শোভা পায় না। এর শাস্তিও বেশ ভয়ঙ্কর। অন্যের মৃত্যুতে হাস্যকর আচরণ করলে নিজের মৃত্যুতেও মানুষ হাসবে। মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়া, কবর জিয়ারতের কথা হাদিস শরিফে এসেছে। যাতে আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করে ভালো কর্ম সম্পাদন করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতার এক থাবা এক হাজার তরবারির আঘাতের চেয়েও কঠিন।’ (শরহুস সুদুর : ২০৩)। মৃত্যু সম্পর্কে যার হেন বিশ^াস রয়েছে সে কখনই আরেকজনের মৃত্যুতে তামাশা করতে পারে না। কারণ, আমরা কেউই অবগত নই যে, আমাদের কার মৃত্যু কখন হবে। তারপর, মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো আলোচনা করা। হজরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা কর এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ : ৪৯০০)
কোনো মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়; জীবিতাবস্থায় ভালো-মন্দ কাজ সবারই হয়ে থাকে। তার ভালো কাজগুলো উল্লেখ করে তার জন্য দোয়া করা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মাঝেমধ্যে কেউ কেউ ক্রোধের বশীভূত হয়ে মৃত ব্যক্তির সমালোচনা করে থাকেন। অথচ যিনি করেন তিনিও কিন্তু ভুলের ঊর্ধ্বে নন। অন্যের দোষ গোপন রাখা একজন মুমিনের কর্তব্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিতÑ একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য মানুষের দোষ-ত্রুটি এ পার্থিব জীবনে গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম : ২৫৯০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘আমার সব উম্মতের গুনাহ মাফ হবে। কিন্তু দোষ-ত্রুটি প্রকাশকারীর গুনাহ মাফ হবে না।’
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের কুকীর্তিগুলো খুব সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এটি জঘন্য কাজ এবং শাস্তিও খুব কঠিন। তাই সমালোচনামূলক কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ, এটা ইসলাম সমর্থন করে না।
হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী একজন মুসলমানের প্রতি আরেক মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে; তার মধ্যে একটি হলোÑ ‘কেউ মারা গেলে তার জানাজায় উপস্থিত হওয়া।’ (ইবনে মাজা : ১৪৩৩)। যদি বৈরীও হয়ে থাকে বিভেদ ভুলে সম্ভব হলে তার জানাজায় উপস্থিত হওয়া এবং দোয়া করা। মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। একটা কথা স্মরণ রেখে এই আচরণগুলো করতে হবে যে, আমরাও কিন্তু মৃত্যুপথ যাত্রী। আজ আমি অন্যের প্রতি যে আচরণ করব প্রাকৃতিকভাবে একই আচরণ কিন্তু আমার সঙ্গেও করা হবে।
মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। শুধু মানুষের ইন্তেকালেই নয়, কোনো মুমিন ভাই যদি বালা-মুসিবতে পতিত কিংবা বিপদগ্রস্ত হয় তখনও তাকে সান্ত্বনা দেওয়া ইসলামের বিধান এবং ভ্রাতৃত্ববোধের লক্ষণ। এটি খুবই সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি তার মুমিন ভাইকে বিপদে সান্ত্বনা দেয় তবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন মহামূল্যবান সবুজ রাজপোশাক পরাবেন।’ (তিরমিজি : ২৮৩৫)। তাই কোনো মুসলমান মারা গেলে তার প্রতি উত্তম আচরণ এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের সকলের লক্ষ্য হোক।
والله اعلم بالصواب
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১