অসুস্থ বাবার মৃত্যু কামনা করা
প্রশ্নঃ ১০৪৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, প্রশ্ন: আমার নানা গুরুতর অসুস্থ বেশ কয়েকবছর ধরেই। উনার পিছনে মাসে একটা ইনজেকশন এ ৬০০০ টাকা করে খরচ করতে হয়, এছাড়াও আনুষাঙ্গিক আরও অনেক খরচ আছে , আমার নানী দু'জন, আমার নানার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে ( আমার মা ) তিনি বিয়ে দিয়েছেন তৎকালীন ( সৌদিতে ছিলেন স্বস্ত্রীক আমার বাবা ) বড়লোক জামাইয়ের কাছেই ( কিন্তু এখন ঋণগ্রস্থ )। তাঁর (নানার) ছেলেকে ( আমার মামা ) তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন , অনেক টাকা খরচ করে । ঐ সময়ই ২০০৫ সালে মাসে ৮০০০ এর বেশি টাকা পাঠাতেন তাঁর ছেলেকে তবু কৃষি করে, অনেক জমিও বিক্রি করেছেন। ছেলের শখ আল্লাদ পূরণে মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছেন জমি বিক্রি করে। তথা বলা যায় ঘুষ দিয়ে হলেও চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। এখন মামার বেতন এখনো চালু হয়নি। কাজ কারবার তেমন কিছু করতে পারেন না। অনেকটাই অলস ধরনের। এক্ষেত্রে অনেক সময় আমার বাবার থেকে টাকা নেন। এতে অনেক দায়ের মধ্যে পড়েন, আমার মা তিনি এমনটা মনে করেন। আর ছেলের জন্য টাকা খরচ করলেও আমার বাবার বিপদে নানা তেমন কোনো সাহায্য না করাতেও মায়ের একটা ক্ষোভ রয়েছে বলে ধারনা করা যায়।এখন আসি মূল কথায় অনেক দিন যাবৎ অসুস্থ হলেও ইদানিং বেশিই অসুস্থ। তিনি নিজেই ডাক্তার দেখানোর কথা বলেন। তো গতকাল মা এবং মামা সহ বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার ঔষধ দেন দিনে দুবেলা ১০০টাকার ট্যাবলেট এবং আগের ইনজেকশনই মাসে দুইবার ( ১২০০০ ) তো এসব নিয়ে আলোচনাতে আমার মা আমার নানার হয়ে বলেন " এতো কাঙাল হওয়ার চিকিৎসা, কোত্থেকে টাকা আসবে সেই দিকে তাঁর খেয়াল নাই , তাঁর এখনো বাঁচার ইচ্ছা এখনো কি মরবে না, মরবে না কি ( আক্ষেপ নিয়ে বলেন ) যখন ইনজেকশন এর ডেট আসে তখন ঠিকই সব মনে থাকে" । নানার বয়স ৯০ হবে।এসব শোনার পরে আমি তাকে কিছুই বলতে পারি নি। ইসলামে নিজের বাবাকে মারা যাওয়ার দিকে আহবান করা কতটা ভুল (ঠিকতো মোটেও না)। আমি অত ইসলামের হাদিস জানি না, কিন্তু সবসময় ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই সবকিছুর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে এখন বাবা যা ই করুক না কেন, বাবা তো বাবাই, অধিক সম্মানের; এখন আমি তাঁকে( আমার মা কে ) কিভাবে ইসলামে এই বিষয়টির পাপ , প্রায়শ্চিত্ত বা এটি যে তাঁর ভুল, এটি কিভাবে তাকে বোঝাবো।মুহতারম, আমাকে অবশ্যই সহীহ হাদিসের দলিল এবং কুরআন এর আয়াত বর্ণনা করুন যা থেকে আমি এটির সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারি।আর বেয়াদবি না নিলে আমাকে কিছু হাদিসের বই সাজেষ্ট করুন যে থেকে আমি ইসলামের নিয়মে নিজের জীবনকে সাজিয়ে তুলতে পারবো।,
১০ অক্টোবর, ২০২৩
Nekmarad
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের দৃষ্টিতে কারও মৃত্যু কামনা করা জায়েজ নাই। আপনার মা যেটা করছেন এটা তিনি অন্যায় করছেন। আপনি তাকে মাতাপিতার হক সম্বলিত কুরআন হাদিসের আয়াত- হাদিস শোনাতে পারেন।
নিচের প্রবন্ধটি লক্ষ করুন।
পিতা–মাতার খেদমত অন্যতম ইবাদত। মেরাজ রজনীতে নামাজ ও রোজা ফরজ হয় এবং মেরাজের চৌদ্দটি সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা ও দ্বিতীয় হলো পিতা–মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।
আল্লাহর হক হলো মানুষ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবে না। বান্দার হকের মধ্যে পিতা–মাতার হক সর্বাগ্রে। সন্তানের প্রতি পিতা–মাতার হক বা অধিকার হলো সন্তান পিতা–মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদের কষ্ট দেবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক করো না এবং পিতা–মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)। ‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার পিতা–মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)। ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে তুমি আমার এবং তোমার পিতা–মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
একজন সাহাবি নবীজি (সা.)–কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার সবচেয়ে বেশি কার? নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। সাহাবি পুনরায় প্রশ্ন করলেন, নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। সাহাবি আবারও জানতে চাইলেন, নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। এরপর সাহাবি জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বললেন, তোমার বাবার। (বুখারি ও মুসলিম)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পিতা–মাতা হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম অর্থাৎ তুমি ইচ্ছা করলে তাদের খেদমত করে উত্তম আচরণের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারো; আবার ইচ্ছা করলে তাদের অবাধ্য হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারো।’ (ইবনে মাজাহ)। পিতা–মাতার অবাধ্যতার জন্য যেমন রয়েছে অভিসম্পাত, তেমনি তাঁদের আনুগত্যের জন্য রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি)।
এক সাহাবি (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমার পিতা–মাতা ইন্তেকালের পরেও কি তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো কিছু দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে?’ তখন নবী করিম (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তা হলো তাঁদের জন্য দোয়া করা, তাঁদের গুনাহের জন্য তওবা–ইস্তিগফার করা, তঁাদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো আদায় করা, তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাঁদের বন্ধুবান্ধবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো পিতা–মাতার মৃত্যুর পরও তঁাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল।’ (আবু দাউদ)। অন্য হাদিসে আছে, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি)। পিতা–মাতার জন্য দোয়া করতে কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শিখিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি তঁাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ (সুরা-১৭ বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৪)।
সন্তানের ওপর পিতা–মাতার প্রতি ১৪টি হক বা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি তাঁদের জীবদ্দশায় আর সাতটি তাঁদের ইন্তেকালের পর। জীবিত অবস্থায় ৭টি করণীয় কর্তব্য হলো সম্মান ও শ্রদ্ধা করা, ভালোবাসা, মান্য করা, সেবাযত্ন করা, সুখ–শান্তির চিন্তা ও ব্যবস্থা করা, প্রয়োজন পূরণ করা ও দূরে থাকলে দেখা–সাক্ষাৎ করা। ইন্তেকালের পর ৭টি করণীয় হলো তঁাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনামূলক দোয়া করা, ইবাদতের মাধ্যমে সওয়াব রেসানি করা, তাঁদের বন্ধুবান্ধব ও নিকট স্বজনদের সম্মান করা, তঁাদের বন্ধুবান্ধব ও নিকট স্বজনদের সাহায্য–সহযোগিতা করা, তঁাদের ঋণ থাকলে পরিশোধ করা ও তাঁদের কাছে কারও গচ্ছিত আমানত থাকলে তা প্রত্যর্পণ করা, বৈধ অসিয়ত পূর্ণ করা, কবর জিয়ারত করা।
পিতা–মাতার জন্য করণীয় বিশেষ কিছু আমল: পিতা–মাতার মৃত্যুর পর বা বার্ষিকীগুলোতে প্রচলিত নিয়মে খাওয়া মেজবানির আয়োজন না করে নগদ টাকা গরিব–মিসকিনকে দান করা অধিক উপকারী। পিতা–মাতার জন্য ফরজ ও নফল বদলি হজ ও ওমরাহ করা যায় এবং তাঁদের পক্ষে কোরবানিও করা যায়।
(সংগৃহীত)
والله اعلم بالصواب
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৩৫৮৮১
ঋণ প্রদানকরী সাহেবে নেসাবের কুরবানীর বিধান
২৩ জুলাই, ২০২৩
নবীনগর

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
৭৭৫৮৪
দুই জোড়া মেয়ে/ ছেলে/ একজন ছেলে একজন মেয়ে যাদেরকে অপারেশন করে পৃথক করা যায় না? বিবাহের বিধান কি?
৪ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে