আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

তাকবীরে তাশরীক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

প্রশ্নঃ ১০৩৯৮৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, তাকবীরে তাশরিক কখন থেকে পড়তে হবে? প্রত্যেক ফরয নামাজের পর কয়বার করে তাকবীর দিতে হবে? জোরে পড়তে হবে নাকি মনে মনে পড়তে হবে?,

২২ মে, ২০২৫

ঢাকা ১২০৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


জ্বিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হল, তাকবীরে তাশরীক। ফিকহের কিতাবে এবিষয়ে সবিস্তার আলোচনা এসেছে।

এটি কখন পড়তে হয়?
আইয়ামে তাশরীকের সময়ে পড়তে হয়। যিলহজ্ব মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে ফিকহী পরিভাষায় ‘আইয়ামে তাশরীক’ বলা হয়। এই দিনগুলোর অন্যতম প্রধান আমল হল আল্লাহর যিকির ও তাকবীর পাঠ।
৯ই যিলহজ্ব ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে ১৩ই যিলহজ্ব আসরের নামায পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর একবার করে এই তাকবীর বলা ওয়াজিব।

কারা পড়বে?
ফরয নামায আদায়কারী প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি। চাই সে জামাতে নামাজ আদায় করুক (মুক্তাদী,মাসবুক) বা একাকি, মুকীম হোক বা মুসাফির, নারী হোক বা পুরুষ, গ্রামবাসী কিংবা শহরবাসী।
এমনকি এই দিনগুলোতে কোনো নামাজ কাজা হয়ে গেলে এবং তা এই সময়ের মধ্যেই (৯ই যিলহজ্ব ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে ১৩ই যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত) আদায় করা হলে, সেই নামাজের পরও তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।
নোট: পুরুষদের জন্য তাকবীর উচ্চ স্বরে বলা সুন্নত। নারীদের জন্য নিম্নস্বরে বলা উচিত।

তাকবীরে তাশরীক:
اللّٰهُ أَكْبَرُ اللّٰهُ أَكْبَرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَاللّٰهُ أَكْبَرُ اللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।"
নোট: এই তাকবীরের প্রতিটি শব্দে আল্লাহর তাওহীদ, বড়ত্ব ও প্রশংসা নিহিত রয়েছে।

কয়বার পড়বে?
তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব।
সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে কোথাও একাধিকবার তাকবীর বলার কথা উল্লেখ নেই।
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৯৮, ৫৬৯৯, আল আওসাত, হাদীস: ২১৯৮, ২২০০

অনেকে তিনবার পড়াকে মুস্তাহাব বলে থাকেন। ও সমাজে কিছু মানুষ এনিয়ে খুব বাড়াবাড়িও করে থাকেন। তিনবার পড়া মুস্তাহাব-একথা বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সঠিক নয়। অবশ্য এ নিয়ে ফিকহবিদগণের মাঝে মতানৈক্য আছে। তাই এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল:
তাবেঈ ইব্রাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন: সাহাবায়ে কেরাম আরাফার দিন নামাজের পর তাকবীর বলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৯৬)

কিন্তু পূর্ণ তাকবীরে তাশরীক তিনবার পড়ার ব্যাপারে কোন সহীহ ও প্রসিদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ফিকহবিদগণও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না।
অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়।

কিছু সাহাবী থেকে তাকবীরে তাশরীকের সাথে অন্য কিছু যুক্ত করে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন, হযরত ইবনে উমর রা. তাকবীরে তাশরীকের আগে তিনবার "আল্লাহু আকবার" বলতেন (আল আওসাত, হাদীস: ২২০১)।

আল আওসাত, হাদীস : ২১৯৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/১৫২, ১/১৫৩
আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৭৭, আল বাহরুর রায়েক: ২/১৬৫, রদ্দুল মুহতার: ২/১৭৮, মাজমাউল আনহুর: ১/২৬০, তাহতাবী আলাল মারাকী: পৃষ্ঠা ২৯৪, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ১/৪৮৪

তাকবীরে তাশরীক সংক্রান্ত মাসায়েল:
১- মাসবুকের জন্য বাকি নামাজ আদায়ের পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। (মাজমাউল আনহুর ১/২৬০)
২- ফরয নামায আদায় করার পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক না বললে
(ক) মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে
(খ) অথবা নামায ফাসেদকারী কোনো কথা বা কাজ করলে
(গ) অথবা অযু নষ্ট হয়ে যায় এমন কোনো কাজ করলে তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সময় বাকি থাকে না। তাই এক্ষেত্রে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। আর নামাযের পর উপরোল্লিখিত কোনো কাজ না করলে বিলম্বে হলেও তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিতে পারবে এবং এর দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪৫ ফাতহুল কাদীর ২/৫০)

৩- তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। তাই তাশরীকের দিনগুলোর কাযা নামায এই সময়ের পরে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। তবে এ সময়ের ছুটে যাওয়া নামায যদি এ দিনগুলোতেই কাযা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাশরীকের দিনগুলোতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। (রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯,ফাতহুল কাদীর ২/৫৮)
নোট: উল্লেখ্য, উক্ত ৫দিন কোন মহিলা অসুস্থ থাকলে পরবর্তীতে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। যেহেতু উক্ত সময় নামাযেরই বিধান নেই। (আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫) তবে হায়েয বা নেফাস অবস্থায় নিজের প্রতিরক্ষার জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় এবং ঘুমানোর পূর্বে সুরাতুল ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা ফালাক, সূরা নাস আমল হিসেবে পড়া যায়। তিলাওয়াত হিসেবে নয়।

৪- ঈদের জামাতের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া জায়েয। ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১০৪)
৫- দুই ঈদের খুতবার শুরুতে বেশি বেশি তাকবীর পড়ার কথা বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যেমন উবায়দুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ রাহ. বলেন-ঈদের দিন মিম্বরে (ইমামের) তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। প্রথম খুতবার শুরুতে নয় বার ও দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে সাত বার তাকবীর বলবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৭৪, ৫৬৭২, ৫৬৭৩)
৬- খুতবার মধ্যে ইমাম সাহেব তাকবীরে তাশরীক পাঠ করলে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারণ করলে মুখে উচ্চারণ করে তাকবীর ও দরূদ শরীফ পড়া যাবে না। তবে মনে মনে পড়তে পারবে। উল্লেখ্য যে, জুমার খুতবার ন্যায় ঈদের খুতবাও চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ওয়াজিব। (ফাতহুল কাদীর ২/৩৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৯)
৭- সুন্নত, নফল, বিতর নামাযের পর তাকবীর ওয়াজিব নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬২; মাবসূত সারাখসী ২/৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৭৫৩২

জানাজা ও ঈদের নামাজে মাসবুক হলে করণীয়


১৯ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা ১৩১০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৩৪৬৭৭

ঈদের নামাযের এক রাকাত ছুটে গেলে করণীয়


১২ জুন, ২০২৩

সালথা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

১৬৩২৬

সমগ্র বিশ্বে একই দিনে চান্দ্রমাসের সূচনা : একই দিনে রোযা ও ঈদ


২৫ অক্টোবর, ২০২৩

বরিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy