و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

‘‘যে ব্যক্তির উপর আর্থিক সামর্থ্যের কারণে হজ্ব ফরয হয়েছে এবং সে হজ্বের মৌসুম পেয়েও কোনো কারণে হজ্ব সম্পন্ন করতে পারেনি, এরপর এমন কোনো অজুহাত দেখা দিয়েছে যার কারণে তার পক্ষে নিজে হজ্ব করা আর সম্ভব নয়, যেমন: এমন অসুস্থ হয়ে পড়া যার থেকে আরোগ্যের আশা নেই, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া, পঙ্গু হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া, বা বার্ধক্যের কারণে এমন দুর্বল হয়ে যাওয়া যে নিজে ভ্রমণ করতে সক্ষম নয়, তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো নিজের পক্ষ থেকে অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ্ব বদল করানো। অথবা তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি থেকে তার পক্ষ থেকে হজ্ব বদল করানোর জন্য ওসিয়ত করা। ওসিয়ত করার জন্য তার এভাবে বলতে হবে: ‘‘আমার মৃত্যুর পর আমার মাল থেকে আমার পক্ষ থেকে হজ্ব বদল সম্পন্ন করা হবে।’’

বদলী হজ্ব করানোর সময় বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি

১. মৃত ব্যক্তি বা জীবিত অক্ষম ব্যক্তির অবস্থানের শহর থেকে বদলী হজ্ব করানো
যে মৃত ব্যক্তি বা জীবিত অক্ষম ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্ব বদল করা হচ্ছে, তা তার অবস্থানের শহর থেকে শুরু করা উচিত। কারণ, তারা যদি নিজেরা হজ্ব করতেন, তবে নিজ শহর থেকেই করতেন।

২. ইহরাম বাঁধার সময় সঠিক নিয়ত করা
ইহরাম বাঁধার সময় যাঁর পক্ষ থেকে হজ্ব করা হচ্ছে, তাঁর পক্ষ থেকে নিয়ত করতে হবে।
মুখে এভাবে বলতে হবে: "আমি অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্বের নিয়ত করছি।"
যদি নাম ভুলে যান, তবে বলতে হবে: "যার পক্ষ থেকে আমাকে হজ্ব করতে পাঠানো হয়েছে, তার পক্ষ থেকে হজ্বের নিয়ত করছি।"
যদি নিয়ত ভুল হয় বা অন্য উদ্দেশ্যে হজ্ব করা হয়, তাহলে হজ্ব বদল সম্পন্ন হবে না এবং দায়িত্ব আদায় হবে না।
৩. হজ্বের ধরন (ইফরাদ, তামাত্তু বা কিরান) নির্বাচন
হজ্ব বদলের ক্ষেত্রে ইফরাদ (শুধু হজ্বের ইহরাম) করা উচিত।
তামাত্তু বা কিরান করার জন্য প্রেরকের অনুমতি নেওয়া উচিত। যদি অনুমতি থাকে, তবে তামাত্তু বা কিরান করা যায়।
তামাত্তু বা কিরানের ক্ষেত্রে যে কুরবানী (দমে শোকর) প্রয়োজন হয়, সেটি প্রেরক নিজের থেকে দিলে ভালো। না দিলে, হজ্ব বদলকারীকে নিজের থেকে তা করতে হবে।
৪. প্রেরকের জন্য সাধারণ অনুমতি থাকা
হজ্ব বদল করানোর জন্য প্রেরকের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ অনুমতি থাকা উচিত, যাতে খরচ, তামাত্তু, কিরান, কুরবানি, কোনো অসুবিধা বা রোগের সময় আলাদা অনুমতির প্রয়োজন না হয়।
প্রেরক বলতে পারেন: "আমার পক্ষ থেকে যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে হজ্ব সম্পন্ন করো।"
৫. প্রেরকের সম্পদ থেকে খরচ করা
হজ্ব বদল বৈধ হওয়ার জন্য অধিকাংশ খরচ প্রেরকের সম্পদ থেকে বহন করতে হবে।
হজ্ব বদলকারী যাত্রা থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তার সব খরচ বহন করতে হবে, এমনকি হজ্ব বদলকারীর পেছনে থাকা পরিবারের ব্যয়ও বহন করতে হবে।
৬. খরচে সততা ও সতর্কতা
হজ্ব বদলকারীকে অবশ্যই খরচে সততা এবং বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে।
ভ্রমণের পরে অতিরিক্ত টাকা থাকলে তা ফেরত দিতে হবে।
প্রেরক যদি আগেই বলে দেন যে খরচে কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে তা তিনি ক্ষমা করবেন, তবে এটি আরও ভালো।
৭. যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন
হজ্ব বদলকারীকে অবশ্যই বুদ্ধিমান, প্রাপ্তবয়স্ক, ধর্মপরায়ণ এবং বিশ্বস্ত হতে হবে।
নাবালক বা মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি হজ্ব বদল করতে পারবেন না।
পূর্বে হজ্ব সম্পন্ন করেছে এমন কাউকে হজ্ব বদল করার জন্য নির্বাচন করা উচিত।
৮. বেশি লাভের জন্য হজ্ব বদল না করা
হজ্ব বদল কোনও আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে বা ব্যবসা হিসেবে করা যাবে না।

৯. নির্দেশনার অনুসরণ
হজ্ব বদলকারীকে অবশ্যই প্রেরকের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে হজ্ব সম্পন্ন করতে হবে।

১০. একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একসঙ্গে হজ্ব করা যাবে না
হজ্ব বদলকারী একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্বের ইহরাম বাঁধতে পারবেন না।

والله اعلم بالصواب