و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১. পাঁয়ে হেঁটে মুজদালিফায় যাওয়া মুস্তাহাব। আজকাল ভীড়ের কারণে আরাফা থেকে মুজদালিফায় গাড়ীতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। পায়ে হেঁটে সময় কম লাগে। সাথে নারী, শিশু, দুর্বল বা অসুস্থ হাজ্বী থাকলে পায়ে হেঁটে যাওয়া সহজ হবে না। বর্ণনাতীত ভোগান্তির আশঙ্কা থাকে। আদ্দুররুল মুখতার-৩/৫২৪
২. মুজদালিফায় যাওয়ার পথে কোথাও অবস্থান করবে না। সরাসরি মুজদালিফায় গিয়ে অবস্থান করবে। ক্লান্ত হলে ক্ষণিকের জন্য পথে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬২; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৩
৩. ৯ যিলহজ্ব সূর্য ডুবার পর আরাফা থেকে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হবে। গুনইয়াতুন নাসিক: ১৬১; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৩
৪. আরাফা থেকে মুজদালিফা পর্যন্ত পথে তালবিয়া, তাকবীর, তাসবীহ-তাহলীল, ইস্তিগফার, দু'আ, দরূদ খুব বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬২; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৩
৫. মুজদালিফার মধ্যে চলাচলের রাস্তা রুদ্ধ করে অবস্থান করা মাকরূহ। রাস্তা বন্ধ করে বসার কারণে লক্ষ লক্ষ লোকের ভীড় হয়। আর এতে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬২, মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৪, আল বাহরুল আমীকু-৩/১৬০২
৬. মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায়ের নিয়ম: মুজদালিফায় পৌঁছার পর প্রথম কাজ হলো ইশার ওয়াক্তে মাগরিব ও ইশা একসঙ্গে আদায় করা। হানাফি মাজহাব মতে জামাতের সাথে পড়লে উভয় নামায এক আযান ও এক ইকামতে আদায় করবে। মাঝখানে সুন্নত ও নফল পড়বে না। তাবরানী আল মুজামুল কাবীর-৪/১৩০, গুনইয়াতুন নাসিক-১৬২, মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৪)
৭. মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করা ওয়াজিব। তবে এর জন্য ৬টি শর্ত আছে- (ক) হজ্বের ইহরাম অবস্থায় থাকা। (খ) মুজদালিফার পূর্বে আরাফায় অবস্থান করা। (গ) সময়টি ১০ যিলহজ্বের রাত হওয়া। (ঘ) স্থানটি মুজদালিফার সীমানায় হওয়া। (ঙ) ইশার ওয়াক্ত হওয়া। (চ) প্রথম মাগরিব তারপর ইশা আদায় করা। উপরোক্ত শর্ত পূরণ না হলে মাগরিবের সময় মাগরিব ও ইশার সময় ইশা আদায় করতে হবে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৩; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৫: আদ্দুররুল মুখতার-৩/৫২৬)
৮. মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা এক সাথে আদায়ের ক্ষেত্রে জামাত ও হজ্বের ইমাম থাকার কোন শর্ত নেই। একাকী পড়লেও দুই নামায একসাথে পড়তে হবে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৫; ফতোয়া হিন্দিয়া-১/২৩০
৯. কেউ মুজদালিফায় পৌঁছার আগে অথবা মুজদালিফা অতিক্রম করে মিনায় মাগরিব ও ইশা আদায় করলে বা দুটির কোন একটি আদায় করলে ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর নিকট নামায হবে না বরং সুবহে সাদিকের আগে মুজদালিফায় গিয়ে নামায আদায় করা ওয়াজিব। যদি সুবহে সাদিকের আগে মুজদালিফায় পৌঁছতে না পারে কিংবা পৌঁছল কিন্তু পূণরায় নামায আদায় করতে পারল না। তাহলে ঐ নামাযই তার জন্য যথেষ্ট হবে। গুনাহগার হওয়া সত্ত্বেও কাজা আদায় করতে হবে না। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৩; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৫
১০. রাস্তায় ভীড়ের কারণে অথবা রাস্তা না চেনার কারণে বা অন্য কোন কারণে রাস্তার মধ্যে সুবহে সাদিক হওয়ার আশংকা হলে মাগরিব ও ইশা রাস্তায় আদায় করে নিবে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৪; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৬
১১. দশ যিলহজ্বের রাতটি মুজদালিফায় কাটানো হানাফি মাজহাব মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৫; ফতোয়া তাতারখানিয়াহ-৩/৫২০
১২. রাসূলুল্লাহ ﷺ এই রাতে মুজদালিফায় পৌছে মাগরিব-ইশার সালাত একত্রে আদায় করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ঘুমিয়েছেন। যেহেতু আগামীকাল হজ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং:১২১৮
১৩. মুজদালিফায় ফজরের নামায সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে অন্ধকারে আদায় করা উত্তম। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬১। মানাসিকে মোল্লা আলী-২২০
১৪. দশ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যেবর্তী সময়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। অন্তত মুজদালিফার উপর দিয়ে অতিক্রম করলেও ওয়াজিব আদায় হবে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৬; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৯; কানযুদ দাক্বায়েকু-২/৫৯৯
১৫. মুজদালিফায় আউওয়াল ওয়াক্তে ফজর আদায় করে জিকির, দু‘আ, তাসবিহাত ইত্যাদিতে মশগুল থাকা ও সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নত। সহীহ মুসলিম-১/২৯৮; গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৬
১৬. মুজদালিফায় নির্দিষ্ট সময় অজ্ঞান কিংবা ঘুমন্ত থাকলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৬; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৯
১৭. শরঈ ওজর ছাড়া মুজদালিফার অবস্থান ছেড়ে দিলে একটি দম ওয়াজিব হবে। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৬; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৯
১৮. শরঈ ওজরের কারণে মুজদালিফায় অবস্থান করতে না পারলে কোন জরিমানা ওয়াজিব হবে না। যেমন- অত্যাধিক দুর্বলতা, মারাত্মক অসুস্থতা এবং অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে নারীদের মুজদালিফায় অবস্থান না করে মিনায় চলে যাওয়া। শরহু মায়ানীর আছার- ২/২৯১: মুসনাদু আহমাদ-১/৩৪৪; গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৬
১৯. নারীদের সাথে সুস্থ-সবল পুরুষরাও যদি মুজদালিফায় অবস্থান ছেড়ে দেয়, তাহলে তাদের ওপর দম ওয়াজিব হবে। কাজেই তাদের জন্য আবশ্যক হলো, নারী, শিশু, অসুস্থ ও দুর্বলদের মিনার তাঁবুতে পৌঁছে দিয়ে উকুফের সময়ের মধ্যে মুজদালিফায় চলে আসা। গুনইয়াতুন নাসিক-১৬৬; আহসানুল ফতোয়া-৪/৫৩০

والله اعلم بالصواب