و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

শরিয়তের পরিভাষায় তাওয়াফ হলো- বাইতুল্লাহ্ চতুর্দিকে সাত বার ঘুরাকে তাওয়াফ বলে।

তাওয়াফের ফযীলত
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন বাইতুল্লাহর উপর ১২০ রহমত নাযিল করেন, যার মধ্যে ৬০টি রহমত যারা তাওয়াফ করে তাদের জন্য, এবং যারা নামায পড়ে তাদের জন্য ৪০টি রহমত। আর যারা বাইতুল্লাহকে দেখে তাদের জন্য ২০টি রহমত। তাবারানী, হাদীস নং ১২৪,১২৫
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বলেন, আমি নবী করীম ﷺ থেকে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কাবা ঘর সাতবার তাওয়াফ করে, প্রতিটি কদম রাখা এবং উঠানোর ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহ মাফ করেন, তার জন্য নেকি লিখেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। ইবনে হিব্বান: হাদিস নং ৩৬৯৭
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ যদি ৫০ বার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করে সে তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে যাবে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৮৬৬
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করল এবং দুই রাকাত নামায পড়ল তা তার জন্য একটি গোলাম আজাদ করার সমতুল্য। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ২৯৫৬
কাজেই জামাতে নামাযের পর অধিক পরিমাণে তাওয়াফ করা উচিত।

তাওয়াফ মোট ৭ প্রকার
১. তাওয়াফে ক্বুদূম বা আগমনী তাওয়াফ: মীকাতের বাইরে থেকে আগত ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্ব পালনকারীদের জন্য তাওয়াফে ক্বুদূম করা সুন্নত। মক্কাবাসী ও তামাত্তু হজ্বকারীর জন্য সুন্নত নয়। ইফরাদ পালনকারীগণ মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করে প্রথমে তাওয়াফ করবে, আর ক্বিরান হজ্বকারীগণ উমরা পালনের পর হজ্বের আগে একটি তাওয়াফ করবে। এটাকে তাওয়াফে ক্বুদূম বলে।
২. তাওয়াফে উমরা: উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে প্রথমে বায়তুল্লার যে তাওয়াফ করা হয় তাকে তাওয়াফে উমরা বলে। এটি উমরাকারীদের জন্য ফরয। এ তাওয়াফে ইযতিবা ও রমল করা সুন্নত।
৩. তাওয়াফে নফল: নফল তাওয়াফ, নফল নামাযের মত। যে কেউ যখন খুশি তাওয়াফ করতে পারে। এর জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই।
৪. তাওয়াফে যিয়ারাহ বা ইফাদাহ: হজ্বের ফরয তাওয়াফকে তাওয়াফে যিয়ারাহ বা তাওয়াফে ইফাদাহ বলে। উকুফে আরাফার পর এটি হজ্বের শেষ ফরয। এর সময়সীমা হলো, ১০ই যিলহজ্ব থেকে ১২ই যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
৫. তাওয়াফে তাহিয়্যাহ: মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ না পড়ে একটি তাওয়াফ করা সুন্নত। এ তাওয়াফকে তাওয়াফে তাহিয়্যাহ বলে। যদি কেউ মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেই তাওয়াফে জিয়ারাহ বা উল্লিখিত যে কোন তাওয়াফ করে নেয়, তাহলে সেটিই তাওয়াফে তাহিয়্যার স্থলাভিষিক্ত হবে। আর যদি তাওয়াফের ইচ্ছা না থাকে তাহলে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ে নিবে ।
৬. তাওয়াফে সদর/বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ: মীকাতের বাইরের হাজ্বী সাহেবগণ হজ্ব শেষে মক্কা থেকে বিদায়ের আগে একবার তাওয়াফ করা ওয়াজিব। এ তাওয়াফকে তাওয়াফে বিদা বা তাওয়াফে সদরও বলে। হায়েয-নেফাসগ্রস্ত নারীর জন্য এই তাওয়াফ ওয়াজিব নয়।
৭. তাওয়াফে নজর বা মান্নত তাওয়াফ: যদি কেউ মান্নত করে যে, তার অমুক উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে এক বা একাধিক তাওয়াফ করবে, তাহলে তার ওই মান্নত পূর্ণ করা ওয়াজিব হবে। এ ধরণের মান্নতের তাওয়াফকে তাওয়াফে নজর বা মান্নতের তাওয়াফ বলে।

والله اعلم بالصواب