আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৩- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৭৩৭
আন্তর্জতিক নং: ৫১০৪

পরিচ্ছেদঃ ২৬৬৯. দুধমাতার সাক্ষ্য গ্রহণ

৪৭৩৭। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... উকবা ইবনে হারিস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শাদী করলাম। এরপর একজন কালো মহিলা এসে বলল, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি। এরপর মহানবী (ﷺ) -এর কাছে এসে বললাম, আমি অমুকের কন্যা অমুককে শাদী করেছি। এরপর জনৈকা কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এসে আমাদেরকে বলল যে, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি; অথচ সে মিথ্যাবাদিনী। এই কথা শোনার পর মহানবী (ﷺ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি আবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সামনে এসে বললাম, সে মিথ্যাবাদীনী। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কেমন করে তোমার সাথে শাদী হল; অথচ তোমাদের উভয়কে ঐ মহিলা দুধ পান করিয়েছে- এ কথা বলছে। অতএব, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও।
রাবী ইসমাঈল শাহাদাত এবং মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় উত্তোলন করে ইশারা করেছে যে, তার উর্ধ্বতন রাবী আইয়ুব এইরূপ করে দেখিয়েছেন।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছটি তাকওয়া-পরহেযগারী সম্পর্কিত। কোনও কাজ সুস্পষ্ট হারাম না হলেও যদি হারাম হওয়ার আভাসমাত্রও থাকে, তবে মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির উচিত তা থেকে বিরত থাকা। হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. যে মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি যে তাঁর দুধবোন তা প্রমাণিত হয়নি। একজন স্ত্রীলোকের কথায় তা প্রমাণিত হয়ও না। এর জন্য দু'জন সাক্ষী দরকার। কিন্তু এ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা এসে দাবি করেছেন যে, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধপান করিয়েছি। তিনি বলতে চাচ্ছিলেন যে, তারা দু'জন দুধভাইবোন। এ কারণে তাদের মধ্যে বিবাহ হতে পারে না। কিন্তু সে স্ত্রীলোকটি তার দাবির পক্ষে কোনও সাক্ষী পেশ করতে পারেনি। তাই তাদের দু'জনের দুধভাইবোন হওয়া প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু যেহেতু স্ত্রীলোকটি এরকম এক দাবি করে বসেছেন, তাই হযরত উকবা রাযি.-এর অন্তরে খটকা দেখা দিয়েছে যে, তিনি যাকে বিবাহ করেছেন তাকে স্ত্রীরূপে রাখবেন না ছেড়ে দেবেন। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাই এ বিষয়ে নিজে নিজে ফয়সালা না নিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরামর্শ নেওয়া জরুরি মনে করলেন। সুতরাং অবিলম্বে মক্কা মুকাররামা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারার সফর করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্ত্রীলোকটির দাবির কথা তাঁকে শোনালেন এবং এ অবস্থায় তাঁর কী করণীয় তা জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- كَيْفَ؟ وَقَدْ قِيلَ ‘কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)'? অর্থাৎ এ অবস্থায় স্ত্রীরূপে তাকে রেখে দিলে তোমার দাম্পত্য জীবন সুখকর হবে না। তোমাদের অন্তরে সবসময় একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব লেগে থাকবে যে, বাস্তবিকই তোমরা দুধভাইবোন কি না। ফলে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তোমরা পরস্পর ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। তাছাড়া লোকেও এ নিয়ে কানাঘুষা করবে। নানাজনে নানা কথা বলবে। তাতে সামাজিকভাবে তুমি হেয় হয়ে যাবে। তোমার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। যে কাজে মর্যাদাহানী হয়, তা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। কাজেই তোমার বিবাহিতাকে স্ত্রীরূপে রেখে দেওয়াটা হারাম না হলেও তাকওয়া-পরহেযগারী ও মার্জিত রুচির পরিপন্থী অবশ্যই। সুতরাং তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তাতে তোমারও মান-সম্মান রক্ষা পাবে এবং তোমার স্ত্রীরও। তারপর তোমরা প্রত্যেকে নতুন বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হলে সুখের ও স্বস্তিকর জীবন উপভোগ করতে পারবে। হযরত উকবা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ পরামর্শ গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁর এ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি নিজেও নতুন বিবাহ করলেন এবং তার এ স্ত্রীও নতুন স্বামী গ্রহণ করলেন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. যে কাজ করার দ্বারা মানুষের পক্ষ থেকে অবৈধতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। খ. যে বিষয় জানা জরুরি, তা জানার জন্য যদি সফর করার দরকার হয় এবং তা করা সম্ভবও হয়, তবে অবশ্যই তা করতে হবে। ইমাম শা‘বী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তি যদি এমন একটি কথাও জানার জন্য শামের এক প্রান্ত থেকে ইয়ামানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সফর করে, যে কথাটি তার পরবর্তী জীবনে উপকারে আসবে, তবে আমি মনে করি না তার সে সফর ব্যর্থ গেছে। গ. দাম্পত্য জীবন যাতে সুখকর হয়, সে লক্ষ্যে বিবাহের আগেই বৈধ-অবৈধের বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। ঘ. বিবাহের পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুধভাইবোনের সম্পর্ক থাকার কোনও সন্দেহ দেখা দেয়, তবে নিশ্চিতভাবে তা প্রমাণিত না হলেও স্বস্তিকর জীবন উপভোগের উদ্দেশ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোই শ্রেয়। এটা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষেই কল্যাণকর।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy