শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী

(شيخ الاسلام مفتي محمد تقي عثماني) শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। 
style="font-weight: bolder;"> size="4">জন্ম

মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। 

style="font-weight: bolder;">শিক্ষাজীবন

শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। 

style="font-weight: bolder;"> size="4">কর্মজীবন 

বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন।

style="font-weight: bolder;"> size="4">রচনাবলি 

তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

style="font-weight: bolder;"> size="4">বিস্তারিত জীবনী

বিচারপতি মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি হাদিস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক ছিলেন। তাকী উসমানীর জন্ম মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী শাওয়াল ১৩৬২ হিজরী মোতাবেক ১৯৪৩ সালের অক্টোবর ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের মে তার পরিবার হিজরত করে পাকিস্তান গমন করেন। তার বাবা হলেন পাকিস্তানের বিখ্যাত আলেম মুফতি শফি রহঃ। মাওলানা তাকী উসমানী পাঁচ ভাইবোনের মাঝে দ্বিতীয়। তাঁর বংশধারা ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাযিঃ সাথে মিলিত হয়েছে। শিক্ষাজীবন পরিবারে মায়ের কাছেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মার কাছেই তিনি উর্দু ফার্সি ভাষার প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে দশ বছর বয়সে তিনি দারুল উলুম করাচীতে ভর্তি হন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকেই দরসে নেযামী সিলেবাসের সর্বোচ্চ স্তর দাওরা হাদীস সমাপন করেন। দাওরা হাদীসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় তিনি সর্বকালের সেরা নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি তাঁর পিতা মুফতি শফী উসমানী রহঃ এর তত্ত্বাবধানে ইসলামী ফিকহে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি দারুল উলুম করাচী থেকে ফিকহ ফতোয়ার উপর তাখাসসুস (পি এইচ ডি এর সমমানের ডিগ্রি) সম্পন্ন করেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি রাজনীতি বিজ্ঞানে বি. কম এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি. পাশ করেন। এছাড়া তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রিও অর্জন করেন। তিনি শায়খ হাসান মাশাত, মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানী, মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভি, মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী এবং শায়খুল হাদীস মুহাম্মদ যাকারিয়া কান্ধলভির কাছ থেকে হাদীস বর্ণনার ইজাযত (অনুমতি) গ্রহণ করেন। তাসাউফ তাসাউফের গুরুত্ব অনুধাবন করে দেওবন্দের আলিমদের ধারা অনুসারে তিনি আশরাফ আলী থানভী রহঃ এর খলিফা শায়খ ডা. আব্দুল হাই আরিফী রহঃ এর হাতে বায়আত হন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ডা. আব্দুল হাই আরিফী রহঃ মৃত্যুবরণ করেন। তখন তিনি হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহঃ এর আরেক খলিফা মাসীহুল্লাহ খান রহঃ থেকে বায়আত গ্রহণ করেন। কর্মজীবন ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দাওরা হাদিস সমাপনের পর থেকেই তিনি দারুল উলুম করাচি অধ্যাপনা করে আসছেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০২ খ্রিস্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘মিজান ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেন। তাকী উসমানী আন্তর্জাতিক একাডেমী( ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এর একজন স্থায়ী সদস্য। বছর তিনি আন্তর্জাতিক একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে মাওলানা তাকী উসমানীকে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতি সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান অর্জনের কারণে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার তিনি করাচির দারুল উলুম মাদ্রাসায় তাজকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে বয়ান করেন। বর্তমানে তিনি দারুল উলুম করাচিতে সহীহ বুখারী এবং ইসলামী অর্থনীতির দরস দেন। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর আমলে পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলি কর্তৃক কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার ব্যাপারে আলেমদের মধ্য হতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে হদ্দ, ক্বিসাস এবং দিয়ত সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে তিনি অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি উর্দু মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ এবং ১৯৯০ সাল থেকে ইংরেজি মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ ইন্টার্নেশনাল এর প্রধান সম্পাদক পদে আছেন। ইসলামী ব্যাংকিং অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন পত্রিকা সাময়িকীতে বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি আরবি, উর্দু এবং ইংরেজি ভাষায় ষাটের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর রচিত অধিকাংশ বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে।

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী -এর কিতাবসমূহ

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী -এর লেকচারসমূহ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy